প্রতীকী ছবি।
অতিমারি শুরুর পর গত দেড় বছরে ঘরে বাইরে সব সময় মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়ানোয় শিশুদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমূহ ক্ষতি হচ্ছে। ফলে, এই সব বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পরপরই বিশ্বের শিশুরা ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক ঘটিত নানা ধরনের সংক্রমণের শিকার শিকার হতে পারে ভয়াবহ ভাবে। ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স (আরসিজিপি)-র সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে। রিভিউ পর্যায় পেরিয়ে গবেষণাপত্রটি এখন একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশের অপেক্ষায়।
জন্মের পর প্রথম ৩ থেকে ৬ বছরের মধ্যে শিশুরা নানা ধরনের সংক্রমণের শিকার হয়। সেই সংক্রমণ ঘটে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক থেকে। মা, বাবা, আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফলেই শিশুদের নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সেই সব সংক্রমণ আদতে উপকারই করে শিশুদের। শত্রু ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকদের চিনে নিতে শেখে শিশুদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
কিন্তু অতিমারি শুরুর পর গত দেড় বছরে সেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, অতিমারি পর্বে ঘরে বাইরে সর্বত্র সব সময় মাস্ক পরে থাকা, শিশুদের মাস্ক পরানো, ঘরের ভিতর ও বাইরে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা এমনকি শিশুদেরও সেই নিয়মে অভ্যস্ত করে তোলার ফলে শিশুদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আর আগের মতো মা, বাবা, আত্মীয় পরিজন, পরিবেশ থেকে নানা ধরনের সংক্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না। তার ফলে, শত্রু চেনার দক্ষতা অর্জন করতে অসুবিধা হচ্ছে শিশুদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার। এটাই শিশুদের উত্তরোত্তর দুর্বল করে দিচ্ছে।
ওয়েলসের জনস্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্যাথরিন মুর বলেছেন, “অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না বলে শিশুদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে, আগামী দিনে ইনফ্লুয়েঞ্জা-সহ নানা ধরনের সংক্রমণে বিশ্বের শিশুদের একটি বড় অংশের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠেছে। হয়তো এর পর দেখা যাবে, দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি বলে আগামী দিনে নতুন নতুন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাকের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারে তামাম দুনিয়ার শিশুরাই। যা আরও ভয়ঙ্কর এখনকার অতিমারি থেকে।”