মঙ্গলের চাঁদে ঘনাচ্ছে ঘোর ‘অমঙ্গল’

মঙ্গলের রাজত্বে ঘোর ‘অমঙ্গল’-এর ছায়া! পূর্ণিমা আর জ্যোৎস্না ছড়াবে না লাল গ্রহের পৃষ্ঠে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৫ ১৬:১৬
Share:

ফোবোসকে ঘিরে এমনই সব আঁচড়ের দাগ তৈরি হচ্ছে পর পর। ছবি: নাসা।

মঙ্গলের রাজত্বে ঘোর ‘অমঙ্গল’-এর ছায়া!

Advertisement

পূর্ণিমা আর জ্যোৎস্না ছড়াবে না লাল গ্রহের পৃষ্ঠে। অমাবস্যার শীতল আঁধারে দু’চোখের পাতা যে একটু এক করে নেবে লাল গ্রহটা, সে উপায়ও থাকবে না এক দিন।

নাসা’র পর্যবেক্ষণ বলছে, মঙ্গলের আকাশ থেকে খসে পড়তে পারে তার চাঁদ ‘ফোবোস’। মঙ্গলের দু’টি উপগ্রহ। তার মধ্যে ফোবোসই বড়। লাল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে তার দূরত্ব খুব বেশি নয়। মাত্র ৬০০০ কিলোমিটার। দিল্লি থেকে খুব বেশি হলে টোকিও যতটা, অনেকটা সে রকমই দূরত্ব। পৃথিবীর চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে। তাই মহাকাশযানে চড়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। মঙ্গলে মানুষ থাকলে হয়তো বিমানেই পৌঁছে যেতে পারতেন তাঁদের চাঁদে।

Advertisement

মঙ্গলের সেই অতি প্রিয় চাঁদ ফোবোস নাকি আর আকাশে থাকবে না। এই অমঙ্গলের কারণ নিজের চাঁদের প্রতি মঙ্গলের ‘অতিরিক্ত প্রেম’। ভালবাসার অত্যাচারে খসে পড়তে চলেছে ফোবোস। নাসা’র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ফোবোস মঙ্গলের খুব কাছে থাকায়, তার উপরে মঙ্গলের অভিকর্ষজ টান খুব বেশি। এর ফলে নিজের কক্ষপথ ছেড়ে রোজ ফোবোস একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে মঙ্গলের দিকে। প্রতি ১০০ বছরে মঙ্গলের সঙ্গে ফোবোসের দূরত্ব ২ মিটার করে কমে যাচ্ছে। এর ফলে অভিকর্ষজ টান আরও বাড়ছে। এই ভাবে সরতে সরতে মঙ্গলের বুকে ফোবোসের আছড়ে পড়তে যদিও এখনও বহু বহু বছর লাগবে। কিন্তু, তার চেয়েও বিপজ্জনক উপসর্গ দেখা দিয়েছে ফোবোসের শরীরেই। কেমন সে উপসর্গ? মঙ্গলের চাঁদকে ঘিরে তৈরি হয়েছে লম্বা লম্বা আঁচড়ের মতো দাগ। ক্রমশ সেই আঁচড় বাড়ছে। দূর থেকে দেখে যেগুলিকে আঁচড় বলে মনে হচ্ছে, আসলে সেগুলি গভীর এবং সুদীর্ঘ খাদের মতো। নাসা’র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রবল অভিকর্ষজ টানের কারণেই এই আঁচড়গুলির সৃষ্টি। ফোবোসের গঠন আলগা হওয়ায় খুব দ্রুত এমন ঘটনা ঘটনা ঘটছে বলে দাবি মহাকাশবিজ্ঞানীদের। তাঁদের ধারণা, ফোবোসের পৃষ্ঠদেশের আস্তরণ খুব পুরু নয়। তা মাত্র ১০০ মিটার গভীর। সেই আস্তরণও খুব জমাট নয়। বরং বেশ খানিকটা ধুলো ধুলো। ১০০ মিটার গভীরে যা রয়েছে, তা নাকি আরও আলগা। অসংখ্য আলাদা আলাদা মণ্ড বা নুড়ি-পাথরের মতো বস্তু তালগোল পাকিয়ে রয়েছে ফোবোসের পেটের ভিতর। উপরের অপেক্ষাকৃত মজবুত আস্তরণের মধ্যে থাকায় তারা এক সঙ্গে রয়েছে। না হলে ফোবোসের গর্ভে থাকা মণ্ডগুলির পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ কমই। অর্থাৎ, এক ঝুঁড়ি নুড়ি কাপড়ের পোঁটলায় বেঁধে রাখলে যেমন হবে, ফোবোসের গঠন অনেকটা সে রকম। বেশি টানাহেঁচড়া হলে পোঁটলা খুলে যেমন নুড়ি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনই দশা হচ্ছে মঙ্গলের চাঁদের। লাল গ্রহের টানে ক্রমশ তার কাছে যাওয়ার পাশাপাশি ফোবোসের নিজস্ব বাঁধনও আলগা হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। পৃষ্ঠদেশের দুর্বল আস্তরণ গর্ভের আলগা মালমশলাকে আর ধরে রাখতে পারছে না। ফলে ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছে ফোবোসের বাঁধন। গোটা উপগ্রহ জুড়ে চিড় ধরছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে লম্বা লম্বা আঁচড়ের দাগ।

নাসা জানাচ্ছে, ফোবোস ধ্বংসের পথে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। একটা সময় লাল গ্রহের আকাশ থেকে তার বড় চাঁদটাই উধাও হয়ে যাবে। একা একা ঘুরপাক খেতে থাকবে ছোটো চাঁদটা। বদলে যাবে মঙ্গলের পূর্ণিমা-অমাবস্যার হিসেব। বদলে যাবে লাল গ্রহের জ্যোৎস্না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement