এই প্রাণীরা ওই অন্ধকারের অতলে বাঁচে সম্ভবত খুব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শৈবাল খেয়ে। ছবি- ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালের সৌজন্যে।
সূর্যালোক পৌঁছনো সম্ভবই নয় সেই অতলে। খুব কাছেপিঠে জল বলতেও ১০০ কিলোমিটার দূরে। বাতাস ঢোকাও অসম্ভব। তবু আন্টার্কটিকার পুরু বরফের চাঙড়ের প্রায় ৬৫০ ফুট নীচে, অন্ধকারের অতলে মিলল প্রাণের হদিশ। এই প্রথম।
একটি-দু’টি নয়। ৭৭টি প্রজাতির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী। কিছু অণুজীব। তাদের ৪৯টি প্রজন্ম। তারা এখনও দিব্য টিকে রয়েছে সেই জমাট অন্ধকারের অতলে।
ব্রিটেন ও জার্মানির জীববিজ্ঞানীরা সেই বিরল প্রাণের হদিশ পেয়েছেন আন্টার্কটিকার একস্ট্রম আইসশেল্ফ বা বরফের পুরু চাঙড়ের নীচে।
সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘কারেন্ট বায়োলজি’-তে।
মূল গবেষক ব্রিটেনের আন্টার্কটিক সার্ভের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ডেভিড বার্নস বলেছেন, ‘‘যেখানে সূর্যালোক পৌঁছয় না, বাতাস ঢোকে না, জল নেই একফোঁটা, সেখানে পুরু বরফের চাঙড়ের এতখানি গভীরে এত বিভিন্ন ধরনের প্রাণ আর তাদের এতগুলি প্রজন্মের হদিশ আমাদের দারুণ অবাক করে দিয়েছে।’’
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্রাণীরা ওই অন্ধকারের অতলে বাঁচে সম্ভবত খুব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শৈবাল খেয়ে। কিন্তু ওই পরিবেশে শৈবাল কী ভাবে জন্মায়, সেই রহস্যের জট খোলা যায়নি এখনও।
অন্ধকারের অতল থেকে গবেষকরা বহু প্রাণীর এই সব দেহাবশেষ উদ্ধার করেছেন। ছবি- ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালের সৌজন্যে।
গবেষকরা ২০১৮ সাল থেকে অনুসন্ধান চালান ওই এলাকায়। একস্ট্রম আইসশেল্ফের এক জায়গায় তাঁরা ১৯২ মিটার (প্রায় ৬৫০ ফুট) খুঁড়ে ফেলেন। অন্য জায়গায় খোঁড়েন ১৯০ মিটার।
গবেষকরা জানিয়েছেন, অন্ধকারের অতল থেকে তাঁরা বহু প্রাণীর দেহাবশেষ উদ্ধার করেছেন। উদ্ধার করেছেন তাদের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। কার্বন ডেটিং পদ্ধতির সাহায্যে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, ওই প্রাণীগুলি ৬ হাজার বছর আগেও ছিল আন্টার্কটিকার পুরু বরফের চাঙড়ের নীচে। অতল অন্ধকারে যাদের পরের প্রজন্ম টিকে রয়েছে এখনও।