ভারতের তৈরি প্রথম স্পেস শাট্লের উৎক্ষেপণ সফল হল। শ্রীহরিকোটা থেকে সোমবার সকাল ৭টায় রওনা দিয়ে ৭০ কিলোমিটার উপরে পৌঁছে, সফল ভাবে বঙ্গোপসাগরে নেমে এল সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই মহাকাশ ফেরি। এই প্রথম মহাকাশ থেকে ফিরিয়ে আনার মতো মহাকাশযান তৈরি করতে সফল হল ভারত।
যে মহাকাশযানটি সোমবার সকালে উৎক্ষেপণ করা হল, তার নাম রি-ইউজেবল লঞ্চ ভেহিক্ল-টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেটর (আরএলভি-টিডি)। অর্থাৎ এই মহাকাশযান মহাকাশে থেকে পৃথিবীতে ফিরতে পারে। তাই এটি হাতে থাকলে মহাকাশে কোনও উপগ্রহ পাঠানোর জন্য প্রতি বার নতুন নতুন মহাকাশযান তৈরি করতে হয় না। বার বার এই যানই মহাকাশে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার ফিরে আসে। ভারত যে মহাকাশযানটি এ দিন পাঠিয়েছে, সেটি একটি উইংগ্ড স্পেস শাট্ল অর্থাৎ অনেকটা বিমানের মতো দেখতে এবং এর ডানা রয়েছে। শ্রীহরিকোটার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে রওনা হয়ে ৭০ কিলোমিটার উপরে ওঠে মহাকাশযানটি। তার পর ডানায় ভর করে ভাসতে শুরু করে। নির্দিষ্ট সময় সেখানে কাটিয়ে স্পেস শাট্ল আরএলভি-টিডি নির্বিঘ্নে শ্রীহরিকোটা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবতরণ করে।
মহাকাশ থেকে স্পেস শাট্ল ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না, এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে শুধু সেটুকুই পরখ করে দেখতে চেয়েছিল ইসরো। ৬.৫ মিটার লম্বা এবং ১.৭৫ টন ওজনের এই মহাকাশযান তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। এই স্পেস শাট্লের আরও কয়েকটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হবে বলে ইসরো জানিয়েছে। প্রথম বারে শুধু মহাকাশ থেকে ফিরে আসার ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সে পরীক্ষা সফল। এর পরের ধাপে মহাকাশে কোনও উপগ্রহ স্থাপন করে ফিরে আসার ক্ষমতা পরখ করা হবে এবং সম্ভবত সেটিকে শ্রীহরিকোটাতেই অবতরণ করানো হবে। আরএলভি’র চূড়ান্ত যে রূপটি মহাকাশ থেকে ঘুরে আসবে, সেটি ৪০ মিটার লম্বা হবে। তাতে মহাকাশচারীদেরও পাঠানো হবে বলে ইসরো জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
নাচতে নাচতে চাঁদ, সূর্যের ছবি তোলে গুবরে পোকা, দেখুন ভিডিও
তিরুঅনন্তপুরমের বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে পাঁচ বছরের চেষ্টায় ৬০০ মহাকাশ বিজ্ঞানী এই মহাকাশযানটি তৈরি করেছেন। আরএলভি’র উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানোর খরচ ৯০ শতাংশ কমে যাবে বলে ইসরো সূত্রে জানানো হয়েছে। বর্তমানে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরো মহাকাশে কিছু পাঠায়, সেই প্রযুক্তিতে এক কিলোগ্রাম বস্তুর মহাকাশযাত্রার খরচ দাঁড়ায় ২০ হাজার ডলার। আরএলভি প্রকল্প চূড়ান্ত রূপ পেলে সেই খরচ কমে দাঁড়াবে ২০০০ ডলারে।
পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ এই ধরনের উইংগড স্পেস শাট্ল আর মহাকাশে পাঠায় না। আমেরিকা ২০১১ সালেই তাদের উইংগড স্পেস শাট্লগুলিকে বসিয়ে দিয়েছে। রাশিয়া ১৯৮৯ সালে মাত্র এক বারই এই ধরনের মহাকাশযান পাঠিয়েছিল। ভারত এ বার সেই প্রযুক্তিকেই কাজে লাগিয়ে মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলতে চাইছে।