—ফাইল চিত্র।
পৃথিবীর পড়শি গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে হু হু করে বেরিয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন, কার্বনের মতো বিভিন্ন গ্যাসের আয়ন। হঠাৎ তা খেয়াল করলেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একটি মহাকাশযান থেকে বিজ্ঞানীদের এই বিষয়টি নজরে এসেছে। দেখা গিয়েছে, অক্সিজেন, কার্বনের মতো একাধিক গ্যাসের আয়ন বেরিয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে।
নেচার অ্যাস্ট্রোনমি নামক জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ইউরোপ এবং জাপান যৌথ ভাবে একটি মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করেছিল। ওই অভিযানের লক্ষ্য ছিল সূর্যের নিকটতম এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। ওই গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছনোর আগে শুক্রের পাশ দিয়ে এগিয়ে যায় মহাকাশযান। তখনই লক্ষ্য করা যায় শুক্রের বায়ুমণ্ডলের অস্বাভাবিকতা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের একটি বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও অনাবিষ্কৃত রয়ে গিয়েছে। ইউরোপীয় মহাকাশযানে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণে কার্বন এবং অক্সিজেনের আয়ন শুক্রের বায়ুমণ্ডলের ওই বিশেষ অংশ থেকে বেরিয়ে আসছে। তা ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে। শুক্র গ্রহ নিয়ে গবেষণায় এই পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রে এক সময় জল ছিল বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। সেই জল ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে শুক্র থেকে জল হারিয়ে গেল, তা জানতে গবেষণা চলছে। ইউরোপ, জাপানের অভিযান থেকে পাওয়া নতুন তথ্যটি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, কার্বন, অক্সিজেনের মতো গ্যাসের বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে গ্রহে জল না থাকার সম্পর্ক থাকতে পারে।
পৃথিবীর মতো শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কোনও অন্তর্নিহিত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নেই। তবে ওই গ্রহের চারপাশের বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে সৌরবায়ু এবং বৈদ্যুতিক কণা জড়ো হয়ে একটি ক্ষীণ চৌম্বকের বলয় তৈরি করেছে। একে বলে ম্যাগনেটোশিথ। সেখান থেকেই গ্যাসের কণা বেরিয়ে যাচ্ছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, সৃষ্টির মুহূর্তে শুক্র এবং পৃথিবী প্রায় একই রকম অবস্থায় ছিল। একই ভাবে তার বিবর্তনও হচ্ছিল। জল ছিল শুক্রের মাটিতেও। কিন্তু পরবর্তীতে পৃথিবীর চেয়ে বিবর্তনে আলাদা হয়ে যায় শুক্র। তা বর্তমানে অত্যন্ত শুকনো একটি গ্রহ। শুক্রের বায়ুমণ্ডল তৈরি হয়েছে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য গ্যাস নিয়ে। বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরবায়ুর ধাক্কাতেই শুক্রের বায়ুস্তর থেকে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে।