১৯৬৯ থেকে ২০১৯। ৫০ বছর ধরে বিজ্ঞানের নানা উপহার সারা বিশ্বের সামনে হাজির করে চলেছে ইসরো। শুরুতে সর্বাধিক ৪০ কেজি ওজনের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছিল ইসরো। সেখান থেকে আজ চন্দ্রযান ২ চাঁদের কক্ষপথে উড়ে গিয়েছিল ৪০০০ কেজি ওজন নিয়ে।
এই ৫০ বছরের পথে অনেক চড়াই-উতরাই হয়েছে। বারবার হোঁচট খেয়েছে ইসরো। কিন্তু কখনও দমে যায়নি। বরং বারবারই নতুন করে ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে আরও বড় আকারে সাফল্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছে ইসরো। দেখে নেওয়া যাক ইসরোর সে সব ব্যর্থতার ইতিহাস।
অগস্ট ১০, ১৯৭৯: ভারতের প্রথম পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল এসএলভি-৩, ৩৫ কেজি ওজনের স্যাটেলাইট নিয়ে রওনা দেয়। সর্বাধিক ৪০ কেজি ওজন বহন করতে সক্ষম এবং ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে পারত এই এসএলভি-৩। কিন্তু অভিযান ব্যর্থ হয়। পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয় এসএলভি-৩।
এপ্রিল ১০, ১৯৮২: ৭ বছর কার্যক্ষম থাকবে, এই লক্ষ্যে ইনস্যাট ১এ স্যাটেলাইট পাঠায় ইসরো। কিন্তু মাত্র ১৮ মাসের মধ্যেই স্যাটেলাইটে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। ব্যর্থ হয় মিশন।
মার্চ ২৪, ১৯৮৭: প্রচুর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে ১৫০ কেজির স্যাটেলাইট এসআরওএসএস-১ পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। এএসএলভি বা অগমেন্টেড স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল এই স্যাটেলাইট নিয়ে উৎক্ষেপিত হয়েছিল।
অক্টোবর ৪, ১৯৯৭: ফের ইনস্যাটের নতুন সংস্করণ ইনস্যাট-২ডি পাঠানো হয় পৃথিবীর কক্ষপথে। ১৯৯৭ সালে ৪ জুন উৎক্ষেপণ হয়েছিল এই স্যাটেলাইটের। আর তার মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ইনস্যাট-২ডি কাজ করাই বন্ধ করে দেয়।
জুলাই ১০, ২০০৬: এ বার জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি-এফ০২) ইনস্যাট-৪সি নিয়ে রওনা দেয় পৃথিবীর কক্ষপথে। ইসরোর তরফে এটাই প্রথম ভারী কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট ছিল। ওজন ছিল ২ হাজার ২০০ কেজি। কিন্তু এটাও মিশন সম্পূর্ণ করতে পারেনি।
ডিসেম্বর ২৫, ২০১০: ২ হাজার ৩১০ কেজি ওজনের জিস্যাট-৫পি স্যাটেলাইট নিয়ে রওনা দেয় জিএসএলভি-এফ০৬। জিস্যাট-৫পি স্যাটেলাইটের এই মিশনও ব্যর্থ হয়। পৃথিবার কক্ষপথে পৌঁছতেই পারেনি জিএসএলভি-এফ০৬।
অগস্ট ৩১, ২০১৭: সাব-জিওসিনক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিটের উদ্দেশে আইআরএনএসএস (ইন্ডিয়ান রিজিওনাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম) স্যাটেলাইট নিয়ে রওনা দেয় পিএসএলভি (পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল)। সবটাই পরিকল্পনামাফিকই চলছিল। পিএসএলভি থেকে স্যাটেলাইট আলাদা হওয়ার সময়ই সমস্যা দেখা দেয়। ব্যর্থ হয় মিশন।
সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯: চন্দ্রযান ২ চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েও ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমেছে কি না এখনও জানা যায়নি। রাতভর ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে কাটিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এখনও যোগাযোগ করা যায়নি ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে।
তবে বিজ্ঞানের ইতিহাসে ব্যর্থতা শুধু ইসরোর নয়। প্রতিটা দেশেরই সমস্ত সাফল্যের পিছনে দীর্ঘ বছর ধরে অনেকগুলো ব্যর্থতা জড়িয়ে থাকে। ইসরো তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বের সামনে ইসরো এতটাই সফল যে আমেরিকা, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মানি, জাপানও তাদের স্যাটেলাইট পাঠানোর জন্য ইসরোর উপর ভরসা করে।