উত্তাল প্রশান্ত মহাসাগর। -ফাইল ছবি।
মহাসাগরগুলির চরিত্র আমূল বদলে দিয়েছে উষ্ণায়ন। গত ৫০ বছরে। মহাসাগরগুলির জল যেখানে উষ্ণ হওয়ার কথা সেখানে শীতল হয়ে যাচ্ছে। আর যেখানে মহাসাগগুলির জল শীতল থাকার কথা সেই এলাকা উত্তরোত্তর হয়ে পড়ছে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর।
এই ভাবে বদলে যাওয়ায় বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ছে মহাসাগরগুলির গভীরে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন। তারা বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস পাচ্ছে না। মহাসাগরের বেশি গভীরে পৌঁছচ্ছে না ওই প্রয়োজনীয় গ্যাসগুলি। মহাসাগরের গভীরে প্রাণী ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছচ্ছে না তাপও।
একটি গবেষণাপত্র এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। উষ্ণায়ন কী ভাবে গত ৫০ বছরে মহাসাগরগুলির উপরিতল ও গভীরের তাপমাত্রা ও পরিবেশ দ্রুত হারে বদলে দিয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণাপত্রটিতে।
বায়ুমণ্ডলের বাড়তি তাপ আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে শুষে নেওয়ার স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে মহাসাগরের। সেই ভাবেই এত দিন মহাসাগরগুলি তাদের গভীরে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদদের বাঁচিয়ে এসেছে, বাঁচিয়ে রেখেছে।
গবেষকরা দেখিয়েছেন, গত ৫০ বছরে উষ্ণায়নের দৌলতে মহাসাগরগুলির সেই চরিত্র আমূল বদলে গিয়েছে। মহাসাগরের উপরিতলের জল উষ্ণায়নের জন্য তার নীচের স্তরের জলের চেয়ে দ্রুত হারে উষ্ণতর হয়ে পড়ছে উত্তরোত্তর। ফলে, উপরিতলের জলের ঘনত্ব ক্রমশই কমছে। দ্রুত হারে। আগের চেয়ে অন্তত ৬ গুণ বেশি। উষ্ণায়নের জন্য মেরুর বরফের চাঙর আর হিমবাহগুলি গলে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জল এসে মেশায় মহাসাগরগুলির লবণের মাত্রার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মহাসাগরগুলি আর আগের মতো লবণাক্ত নেই। তার ফলে উপরিতলের জলের ঘনত্ব আরও কমেছে।
মহাসাগরগুলির জলের দু’টি স্তরের ঘনত্বের পরিবর্তনের জন্য বায়ুমণ্ডলের বাড়তি তাপ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস আর আগের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে জলে মিশছে না। উদ্বেগের বাড়তি কারণ, বাণিজ্যিক ও গবেষণামূলক জাহাজের সংখ্যা বহু গুণ বেড়ে যাওয়ায় মহাসাগরগুলির জলের উপরিতলে ভাসমান তেলের পরিমাণ খুব বেড়ে গিয়েছে। এটাও বায়ুমণ্ডলের বাড়তি তাপ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের মহাসাগরের জলে মেশার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে মহাসাগরগুলির গভীরে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদরা। তারা কেউই বাঁচার জন্য তাপ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস পাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে।