COVID-19

Covid-19: মানুষে কোভিড সংক্রমণ রুখতে পারে উট, ভেড়ার অ্যান্টিবডি, টিকা বানানো কি সহজতর হতে পারে?

করোনাভাইরাসের রূপগুলিকে রোখার ব্যাপারে মানুষের অ্যান্টিব়ডিগুলির তুলনায় বেশি দক্ষ শিশু উট আর ভেড়ার অ্যান্টিবডিগুলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২২ ১৬:১৫
Share:

উট, ভেড়ার অ্যান্টিবডি আরও ভাল রুখতে পারে কোভিড সংক্রমণ। -ফাইল ছবি।

মানুষের দেহে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রায় সবক’টি রূপ বা প্রজাতির সংক্রমণই রুখে দিতে পারে শিশু উটের দেহে থাকা বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যান্টিবডি। পারে এক ধরনের ভেড়ার দেহে থাকা কয়েকটি অ্যান্টিবডিও।

শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাসের রূপগুলিকে রোখার ব্যাপারে মানুষের দেহের অ্যান্টিবডিগুলির তুলনায় বেশি দক্ষ শিশু উট আর ভেড়ার দেহের অ্যান্টিবডিগুলি। শত্রু চিনতে তাদের মানুষের অ্যান্টিবডিগুলির মতো অতটা ভুলচুক হয় না। শত্রুকে তারা একই সঙ্গে অনেক দিক থেকে ঘিরে আর বেঁধে ফেলতে পারে। মানুষের অ্যান্টিবডিগুলি ততটা পারে না।

সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের দু’টি গবেষণা এই অবাক করা খবর দিয়েছে। একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’-এ। অন্যটি, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। শনিবার।

যে কোনও সংক্রমণেরই ওষুধ বা টিকা তৈরির কাজটা দুরূহ হয় তা কী ভাবে মানুষের দেহের অ্যান্টিবডিগুলিকে জাগিয়ে তুলবে কত তাড়াতাড়ি নতুন নতুন শক্তিশালী অ্যান্টিবডি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি করতে পারবে তার উপায় খোঁজার জন্য। মানুষের দেহে সব ধরনের অ্যান্টিবডিকে দিয়ে নতুন শত্রুকে রোখার কাজটা তেমন ভাবে হয় না। কখনও কখনও অ্যান্টিবডিগুলির অতি সক্রিয়তা হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায় মানবদেহের পক্ষে। তাই কোনও ভাইরাসের নতুন নতুন রূপের মোকাবিলায় টিকাকেও বদলে ফেলতে হয়।

গবেষকরা প্রথমে এই ধরনের অ্যান্টিবডির প্রথম হদিশ পান পেরুতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এমন এক ধরনের ভেড়া— আলপাকা-র দেহে। তার পর শিশু উটের দেহেও এমন কয়েকটি অ্যান্টিবডির হদিশ মেলে।

গবেষকরা ওই অ্যান্টিবডিগুলির ভাঙা অংশের (‘ফ্র্যাগমেন্টস’) মধ্যেই দেখতে পান এই বিশেষ ‘গুণ’। জীববিজ্ঞানের ভাষায় যাদের ‘ন্যানোবডি’ বলা হয়।

গবেষকরা গবেষণাগারে উট আর ভেড়ার ওই ন্যানোবডি তৈরি করেছিলেন। তার পর তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন সেগুলি করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপকে কী ভাবে রুখে দিচ্ছে। তাঁরা করোনাভাইরাসের ডেল্টা রূপ পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, উট আর ভেড়ার সেই ন্যানোবডিগুলি রীতিমতো দক্ষতার সঙ্গে রুখে দিতে পারছে ডেল্টার সংক্রমণও। আর তারা সেই কাজটা মানুষের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলির তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি, অনেক নিখুঁত ভাবে করতে পারছে। শত্রু চিনতে তাদের ভুলভ্রান্তি টিকা বা ওষুধের মাধ্যমে মানুষের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলির তুলনায় অনেক কম হচ্ছে। তারা হানাদার করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন (মানবদেহে প্রবেশের পর করোনাভাইরাস যে অংশটি দিয়ে মানুষের কোষের বাইরের স্তরের উপর নোঙর ফেলে)-কে দু’টি বা তিনটি জায়গায় গিয়ে বেঁধে ফেলতে পারছে। যা মানুষের অ্যান্টিবডি পারে না। গবেষকরা এ বার দেখতে চাইছেন এই ন্যানোবডিগুলি ওমিক্রনের সংক্রমণও রুখতে পারছে কি না।

Advertisement

এই পর্যবেক্ষণের পর উট ও ভেড়ার দেহ থেকে আর কোন কোন ধরনের অ্যান্টিবডির ভাঙা অংশ পাওয়া যায় যা দিয়ে এই কাজ হয় তারও সন্ধান করেছেন গবেষকরা। তাতে তারা এই ধরনের বহু ন্যানোবডি খুঁজে পেয়েছেন।

গবেষকরা এও দেখেছেন, মানুষের দেহের অ্যান্টিবডিগুলি যে মাঝেমধ্যে অতি সক্রিয়তার দোষে দুষ্ট হয় সেই সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে উট আর ভেড়ার দেহের অ্যান্টিবডিগুলির মধ্যে।

ফলে, এই ধরনের ন্যানোবডি দিয়ে আগামী দিনে কোভিড-সহ যে কোনও সংক্রমণ রোখার টিকা বানানো যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement