নাসার মহাকাশযান থেকে তোলা উল্কাপিণ্ড বেনুর ছবি। সূত্র: নাসা
মহাকাশে এই প্রথম চিনির (সুগার) হদিশ মিলল। যে চিনি আমরা রোজ খাই, সেই চিনি অবশ্য নয়, তারই তুতো ভাই। গোত্রে যা ‘সুগার’।
সেই সুগার গোত্রের তিনটি যৌগ— ‘রাইবোজ’, ‘জাইলোজ’ ও ‘আরবিনোজ’-এর হদিশ মিলল দু’টি উল্কাপিণ্ড ‘এনডব্লিউএ-৮০১’ এবং ‘মুর্চিসন’-এ। উল্কা আসলে তৈরি হয় কোনও গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েডের অংশ থেকে। উল্কাপিণ্ড দু’টিতে এই ‘সুগার’ গোত্রের যৌগের হদিশ মেলায় এই বিশ্বাসই জোরাল হল সুদুর অতীতে কোনও গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ডের সঙ্গে সংঘর্ষেই পৃথিবীতে সুগার গোত্রের আমদানি হয়েছিল।
এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর ১৮ নভেম্বর সংখ্যায়। ওই গবেষণাপত্রে নাসার এক দল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এটি একটি অভিনব আবিষ্কার। কারণ এর আগে প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির উপাদান অ্যামাইনো অ্যাসিডের হদিশ মিলেছিল মহাকাশে। হদিশ মিলেছিল প্রাণ সৃষ্টির আরও দু’টি উপাদান ‘ডিএনএ’ এবং ‘আরএনএ’ তৈরির উপাদানও (নিউক্লিওবেসেস)।
আমাদের চালু ধারনা, প্রাণ সৃষ্টির জন্য আগে তৈরি হয়েছিল ডিএনএ। সেই ডিএনএ থেকেই তৈরি হয়েছিল বার্তাবাহক আরএনএ। যে আরএনএগুলি আদিম প্রাণের কোষগুলির মধ্যে থাকা রাইবোজমের দরজায় গিয়ে কড়া নেড়েছিল। আর ওই আরএনএগুলির আনা বার্তা ঠিকঠাক পড়তে পেরেই রাইবোজম সেই নির্দেশমতো তৈরি করেছিল বিভিন্ন রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা দিয়ে প্রোটিন তৈরি হয়েছিল। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডই হচ্ছে প্রাণ সৃষ্টির বীজ।
কিন্তু আরও একটি ধারনা যে, ডিএনএ সৃষ্টির আগেই তৈরি হয়েছিল আরএনএ। কিন্তু সেই ধারনার স্বপক্ষে এত দিন কোনও প্রমাণ মিলছিল না। এ বার দু’টি উল্কাপিণ্ডে যে সুগার গোত্রের হদিশ মিলেছে, সেগুলিতে কিন্তু কোনও ডিএনএ-র উপাদান পাওয়া যায়নি। বরং এগুলি দিয়ে যে আরএনএ তৈরি হতে পারে, তার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
আরও পড়ুন: এনআরসিতে কোনও ধর্ম টার্গেট নয়, রাজ্যসভায় বললেন অমিত, একই সঙ্গে শোনালেন নতুন নাগরিকত্ব বিলের কথাও
আরও পড়ুন: খেলায় দুরন্ত-পড়াশোনায় নয় কেন! বাড়ির গঞ্জনায় আত্মঘাতী বাঘাযতীনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে আমাদের এই বিশ্বাস আরও জোরালো হল যে ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্রও প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব। কারণ, এই সুগার গোত্রের যৌগ ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্রও রয়েছে। এই সৌরমণ্ডলে যেহেতু এই যৌগের হদিশ মেলায় গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষেই যে এই ধরনের যৌগ পৃথিবীতে এসেছিল, সেই ধারনা আরও পোক্ত হল। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাণের বীজ যে বাইরে থেকেই এসেছিল ৪৫০-৫০০ কোটি বছর আগে, সেই তত্ত্বও জোরদার হল। তাহলে কি এ বার আমরা আশায় বুক বাঁধব যে, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব মিলবে?