সেই ভয়ঙ্কর ক্যানসার কোষ।
চিচিং ফাঁক!
আলিবাবার সেই ‘জাদু’ মন্ত্রে এ বার অনেক ‘গোপন কুঠুরি’র দরজাই খুলে যেতে পারে! দ্রুত, আচমকা।
বা বলতে পারেন, ‘খুল যা সিম সিম’!
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, ইবোলা, জিকা, সিভিয়ার ইনফ্লুয়েঞ্জা, এডসের মতো রোগের ভাইরাসগুলিকে ‘সাত চড়ে কাবু’ করার ‘সাতকাহন’ হয়তো ‘রাষ্ট্র’ হয়ে যেতে আর তেমন সময় লাগবে না। ওই তিনটি ভাইরাসের হানাদারি রুখতে আরও শক্তিশালী ও আরও দ্রুত কার্যকরী ওষুধ বাজারে আসার পথ খুলে দিল ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ বা ‘ক্রায়ো-ইএম’। বলা যেতে পারে, আমাদের শরীরে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, ইবোলা, জিকা, সিভিয়ার ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের ভাইরাসগুলির দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’ এই বিশেষ ধরনের মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র। যা খুলে দিল ক্যানসারের মতো অন্যতম একটি জটিল রোগের অনেক বেশি শক্তিশালী ওষুধ আবিষ্কারের দরজাটাও।
জীববিজ্ঞানীদের হাতে এখন শক্তিশালী হাতিয়ার ‘ক্রায়ো-ইএম’ আর তার কাজের পদ্ধতি
‘ক্রায়ো-ইএমে’র চোখে দেখা প্রোটিন অণু
এই সেই ‘ক্রায়ো-ইএম’
ক্রায়ো-ইএমের চোখ দিয়ে দেখা টেট্রাসাইক্লিন রেজিস্ট্যান্স প্রোটিনের মতো জটিল অণু
সরল প্রোটিন অণুর ক্রায়ো-ইএম (সিঙ্গল পার্টিক্ল ক্রায়ো-ইএম)
মহাকাশে পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য ভিন গ্রহ খুঁজতে হাবল ও কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের নিরিখে অনেক বেশি শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) পাঠানো হচ্ছে, ২০১৮-য়। ঠিক তেমনই জটিল রোগের নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য যেটা সবচেয়ে জরুরি, সেই আমাদের শরীরের সরল ও জটিল প্রোটিন অণুর গঠন-কাঠামো বা তাদের গঠন-সজ্জা (স্ট্রাকচার) আর দেহে তাদের চলাচলকে (ডায়নামিক্স) আরও ঝকঝকে ও নিখুঁত ভাবে দেখার জন্য বাজারে চালু দু’টি পদ্ধতি- ‘এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফি’ (এক্সআরসি) আর ‘নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স’ (এনএমআর)-র চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী এই ‘ক্রায়ো-ইএম’। যা জটিল থেকে জটিলতর প্রোটিনগুলির (কমপ্লেক্স প্রোটিন) পরমাণু স্তরের খবরাখবরও এখন দিতে পারছে। তার ফলে, জটিল প্রোটিনগুলির গঠন-কাঠামো আর আমাদের শরীরে তাদের চলাচলকে ওই অসম্ভব শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ ‘ক্রায়ো-ইএম’-এর মাধ্যমে চাক্ষুষ করাটা সম্ভব হচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি সহজ হচ্ছে। স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর (হাই রেজোলিউশন) হচ্ছে। এত দিন এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফি আর নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স পদ্ধতিতে যা করা যেত না। খুব কষ্টেসৃষ্টে তা যদি করা যেতও, তার ফলাফল নির্ভুল হত না।
ক্যানসারের নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারে কী ভাবে সাহায্য করছে ‘ক্রায়ো-ইএম’?
ক্যানসার কোষ
খুব ছোট ছোট দু’টি প্রোটিন রয়েছে। একটার নাম- ‘আইসোসাইট্রেট ডিহাইড্রোজেনেজ (আইডিএইচ-ওয়ান)’। অন্যটির নাম- ‘ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেজ (এলডিএইচ)’। ক্যানসারের নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখন এই দু’টি প্রোটিন নিয়ে প্রায় বিশ্ব জুড়েই গবেষণা চলছে। ক্যানসার সারাতে বা কমাতে বাজারে চালু ওষুধগুলি বেশি দিন কার্যকরী হয় না এই দু’টি প্রোটিনের ‘দুষ্টুমি’র জন্য। বেশির ভাগ ক্যানসারের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এই দু’টি প্রোটিন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর জিনের মিউটেশনে বড় ভূমিকা নিচ্ছে। মানে, জিনের গঠন বা সজ্জায় কিছু রদবদল ঘটিয়ে দিচ্ছে। তার ফলে, তা ক্যানসার রোখার ওষুধগুলিকে শরীরে অকেজো করে দিচ্ছে। এই প্রোটিনগুলিকে এ বার ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে দেখা অনেক অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে। ফলে, সেই প্রোটিনগুলিকে কাবু করার ওষুধ আবিষ্কারের কাজটাও সহজ হয়ে গিয়েছে।
‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে ভাইরাস-হানার আগাম বার্তা পাওয়া সম্ভব হয় কেন?
এই পদ্ধতিতে যেহেতু ভাইরাসদের জীবন-চক্র (লাইফ সাইকেল) পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখা ও জানা যায়, তাই ভাইরাসরা কী ভাবে আমাদের শরীরে হানা দেয়, আর তার জন্য কী ভাবে, কী কী ফন্দি-ফিকির করে, দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার চোখে ঠুলি পরাতে কী কী ছদ্মবেশ ধারণ করে বা করতে পারে, ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতির মাধ্যমে এখন আমরা সেটা অনেক স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছি। দেখতে পারছি। এর ফলে, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, জিকা, ইবোলা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এডসের মতো ভাইরাসগুলিকে আরও সহজে নির্বংশ করার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে আমাদের কাছে।
‘ক্রায়ো-ইএম’-এর মাধ্যমে একটা জটিল প্রোটিনকে (পলিমেরিক প্রোটিন) কতটা সূক্ষ্ণ ভাবে দেখা সম্ভব, জানেন?
একটা জটিল বা পলিমেরিক প্রোটিনের কথা বলি। তার নাম- ‘গ্লুটামেট ডিহাইড্রোজেনেজ’। এটা একটা উৎসেচক বা এনজাইম। এই এনজাইমটি সম্পর্কে কিছু বলার আগে, কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এনজাইমের ভূমিকাটা কী হয়, সেটা বোধহয় একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হবে।
এখন যে ভাবে কাজ চলে, সেই এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফি
পাত্র আর পাত্রী খুঁজে তাঁদের বিয়ে দেওয়ার সময় দু’টি ঘটনা ঘটে বা তা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। একটা হল, ‘ঘটকালি’। মানে, যেটা পাত্র আর পাত্রীর বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে খুব সহযোগীর ভূমিকা নেয়। বিয়েটা হতে সাহায্য করে। অন্য যে সম্ভাবনাটি থাকে, তাকে বলে ‘ভাংচি দেওয়া’। মানে, পাত্র পক্ষের কানে পাত্রী পক্ষের সম্পর্কে রটনা, অপবাদগুলিকে পৌঁছে দেওয়া বা ঠিক তার উল্টোটা। যাতে, বিয়েটা ভেঙে দেওয়া যায়। বিয়েটা হয় পাত্র আর পাত্রীর মধ্যে। কিন্তু তাতে আড়ালে-আবডালে হলেও বড় একটা ভূমিকা থেকেই যায় ‘ঘটকালি’ আর ‘ভাংচি’র। তার ফলে হয় বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়। না হলে বিয়েটা ভেস্তে যায়। বা তার প্রক্রিয়াটা থমকে যায় সাময়িক ভাবে।
যে কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এনজাইম বা উৎসেচকের ভূমিকাটাও অনেকটা ওই ‘ঘটকালি’ করা বা ‘ভাংচি’ দেওয়ার মতো। যা দু’টি বা অনেকগুলি পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, ‘পজিটিভ ক্যাটালিস্ট’ (অনুঘটক) বা ‘ঘটকালি’র ভূমিকা নেয়। মানে, সেই রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিটাকে বাড়িয়ে দেয়। তাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে দেয়। উল্টো ঘটনা যে ঘটে না, তা নয়। মানে, ‘নেগেটিভ ক্যাটালিস্ট’-এর কাজ করে, এমন এনজাইমও রয়েছে। যাদের ভূমিকাটা অনেকটা বিয়েতে ‘ভাংচি দেওয়া’র মতো। রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিকে যা শ্লথ থেকে শ্লথতর করে বা থমকে দেয়।
ফলে, বুঝতেই পারছেন, শরীরে কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে কোনও এনজাইমের! তাই নতুন কোনও ওযুধ আবিষ্কারের জন্য ওই এনজাইমগুলির গঠন-কাঠামো আর দেহে তাদের চলাচলকে খুব স্পষ্ট ভাবে দেখাটার প্রয়োজন অনেক বেশি। সেটা দেখা সম্ভব না হলে, কোনও বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সেই এনজাইম কী ভাবে, কোন কোন ধাপে কাজ করছে বা তা ঠিক মতো কাজ করছে বা করতে পারছে কি না, তা বুঝতে পারা যায় না।
এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফিতে যে ভাবে দেখা হয় প্রোটিন কেলাস
নতুন ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে গ্লুটামেট ডিহাইড্রোজেনেজের মতো এনজাইমকে দেখা যায় অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে (রেজোলিউশন হয় ১.৮ অ্যাংস্ট্রম), অত্যন্ত সূক্ষ্ণ ভাবে। যাতে ওই এনজাইমটির কেন্দ্রস্থলের পারমাণবিক গঠন-কাঠামোটিকেও দেখতে পাওয়া যায়। আর তা বেশ স্পষ্ট ভাবেই দেখা যায়।
আমাদের দেহের ক্যানসার কোষগুলিকে রোখে বা রোখার জোর চেষ্টা চালায় যে প্রোটিনগুলি (ক্যানসার টারগেট প্রোটিন), খুব সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের অধীনে থাকা ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা খুব ছোট ছোট সেই প্রোটিনগুলির গঠন-কাঠামো আর তাদের চলাচলকেও দেখতে পেয়েছেন এই ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতেই। অধ্যাপক শ্রীরাম সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষকদলের ওই গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সেল’-এ (২৬ মে, ২০১৬)।
এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফিতে যে ভাবে দেখা হয় প্রোটিন কেলাস
এর মানেটা হল, ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে যেমন খুব ছোট প্রোটিন অণুর পারমাণবিক কাঠামোটা দেখা যাচ্ছে, তেমনই অত্যন্ত জটিল প্রোটিন অণুর গঠন-কাঠামোর পরিবর্তন আর তার চলাচলকেও বোঝা যাচ্ছে।
আর সেটা কী ভাবে করা যাচ্ছে?
সমুদ্রে চলতে চলতে উপকূলের ঠিক কোন জায়গাটায় জাহাজের নোঙর ফেলা যায়, তা যেমন জাহাজের ক্যাপ্টেন মানচিত্র ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নেন আগেভাগে, এই ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে ঠিক একই ভাবে সেই কাজটা করা যাচ্ছে। যা আগামী দিনে নতুন নতুন ওযুধের আবিষ্কারের কাজটাকে, মানতেই হবে, অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।
কী ভাবে তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দিচ্ছে ‘ক্রায়ো-ইএম’?
এক, ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে কাজটা করতে দ্রবণ বা সলিউশনের প্রয়োজন হয়। মানে, একটা তরল অবস্থা। যাতে একই সঙ্গে অনেকগুলি প্রোটিন থাকে। তবে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রার তরল অবস্থা নয়। ‘ফ্রোজেন লিক্যুইড’ অবস্থা। মানে, হিমাঙ্ক বা ‘ফ্রিজিং পয়েন্ট’ বা শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে থাকা অবস্থা। যা আদতে কঠিন। কিন্তু কেলাস বা ‘ক্রিস্টাল’ নয়। ফলে, একই সঙ্গে অনেকগুলি প্রোটিনের গঠন-কাঠামো আর তাদের চলাচলকে দেখা যায় ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে। এটা এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফিতে সম্ভব নয়। কারণ, ওই পদ্ধতিতে প্রোটিন শুধুই কোনও কেলাস (ক্রিস্টাল, মানে, কঠিন পদার্থ) অবস্থায় থাকলে, তবেই তাকে দেখা যায়। আর যেহেতু ওই পদ্ধতিতে কোনও দ্রবণ থাকে না, তাই একই সঙ্গে একাধিক প্রোটিন অণুর গঠন-কাঠামো দেখার সুযোগ থাকে না এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফিতে।
এখন আরও একটি পদ্ধতির ব্যবহার হয়। তার নাম- ‘নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স’ বা ‘এনএমআর’
দুই, যে প্রোটিন অণু বা বিভিন্ন প্রোটিনের অণুগুলির গঠন-কাঠামো দেখা হয় এই ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে, তা খুব সামান্য পরিমাণে থাকলেই কাজ হয়ে যায়। এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফিতে কিন্তু কোনও প্রোটিন কেলাসকে ভাল ভাবে দেখতে গেলে তা বেশি পরিমাণে না থাকলে হয় না।
তিন, দশায় দশায় কোনও প্রোটিন অণু বা অণুগুলির ‘রূপবদল’ হয়। এটাকে বলে ‘ফেজ ট্রান্সফর্মেশন’। তাদের অবস্থার পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকেত থাকে, বার্তা থাকে। যাদের বলা হয় ‘ফেজ ইনফর্মেশন’। এই ‘ফেজ ইনফর্মেশন’-এর অনেকটাই এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফিতে হারিয়ে যায়। যা ‘ক্রায়ো-ইএম’-এ কোনও দিনই হবে না।
চার, সে জন্যই ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতির ছবির রেজোলিউশন অত ভাল, অত নিখুঁত, অত সূক্ষ্ণ হয়।
পাঁচ, বহু প্রোটিনকে কেলাস অবস্থায় পাওয়া যায় না। তাই ওই সব প্রোটিনের এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্র্যাফি করাও যায় না।
নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স বা ‘এনএমআর’-এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ
ছয়, খুব ছোট ছোট প্রোটিন বা পেপটাইডগুলিকে দেখার জন্য ‘নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (এনএমআর) পদ্ধতি কার্যকরী হয়। কিন্তু খুব বড় চেহারার প্রোটিন বা প্রোটিনের অত্যন্ত জটিল অণুগুলিকে (প্রোটিন কমপ্লেক্স) এনএমআর পদ্ধতিতে দেখা যায় না। তাদের দেখার জন্য ‘ক্রায়ো-ইএম’-ই সেরা পদ্ধতি।
সাত, একই পদার্থের পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা (নিউক্লিয়াস) নিউট্রন সংখ্যার তারতম্যের ফলে ‘যমজ ভাই-বোনে’র মতো নানা ধরনের ‘আইসোটোপ’ তৈরি হয়। একই পদার্থের দু’টি আইসোটোপের পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা একই থাকলেও, তাদের নিউট্রন সংখ্যায় তারতম্য ঘটে। তার ফলে, কোনও আইসোটোপের ‘পেট’টা একটু মোটা হয়। আবার কোনওটার ‘পেট’টা হয় একটু সরু। একই পদার্থের পরমাণুর সব আইসোটোপকে এনএমআর পদ্ধতিতে দেখা যায় না। যে আইসোটোপের ‘পেট’টা সরু (নিউট্রন সংখ্যা কম), শুধু সেই আইসোটোপগুলিকেই এনএমআর পদ্ধতিতে দেখা যায়। এটাকেই বলে, ‘আইসোটোপিক লেবেলিং’।
আট, ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে ‘মোটা’ আর ‘সরু’ পেটের সব আইসোটোপকেই দেখা যায়। তাই ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিতে পদার্থের পরমাণুর ‘আইসোটোপিক লেবেলিং’-এর প্রয়োজন হয় না। তার ফলে, এনএমআর-এর চেয়ে ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। কার্যকরী হয়ে উঠছে।
তাই আগামী দিনে ভাইরাস ঘটিত দুরারোগ্য রোগগুলি নির্মূল করতে নতুন নতুন শক্তিশালী ওষুধ আবিষ্কারের পথটা খুলে দিয়েছে এই ‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিই।
‘ক্রায়ো-ইএম’ পদ্ধতিকে তাই বলতেই হচ্ছে, ‘ভিনি-ভিডি-ভিসি’!
অনুলিখন: সুজয় চক্রবর্তী
আরও পড়ুন- বিশ্বে এই প্রথম, জন্মাল মানুষ ও শুয়োরের সংকর প্রাণী