Coronavirus in India

ডেঙ্গি-এইচআইভির মতো থেকে যেতে পারে কোভিড-ও

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গত ৫০ বছরে দেড় হাজার নতুন প্যাথোজেন আবিষ্কৃত হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

ছবি: রয়টার্স।

মহামারি মানচিত্রে ইবোলা, ডেঙ্গি, প্লেগের মতো সার্স-কোভ-২ ভাইরাসও স্থায়ী হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গত ৫০ বছরে দেড় হাজার নতুন প্যাথোজেন আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৭৬ সালে ইবোলা ও ১৯৮৩ সালে এইআইভি যার মধ্যে অন্যতম। এবং এরা কেউই চলে যায়নি। শুধুমাত্র এইচআইভি-র কথাই যদি ধরা যায়, তা হলে দেখা যাবে মাত্র ৩৫ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে প্রায় সাত কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে, ওই একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের।

আবার প্লেগের সংক্রমণ অতীত, এমনই ভাবতে শুরু করেছিলেন অনেকে। কিন্তু বছর তিনেক আগে, ২০১৭ সালে মাদাগাস্কারে প্লেগের সংক্রমণ শুরু হয়। প্রায় আড়াই হাজার জন আক্রান্ত হন, মৃত্যু হয়েছিল ২০৯ জনের।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত, এক দিনে ৫৪২, মারা গেলেন ১০ জন

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ২০১১-২০১৭ সালের মধ্যে বিশ্বের ১৭২টি দেশকে ইবোলা, কলেরা, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, লাসা ফিভার, জিকা, নিপা, মেনিনজাইটিস-সহ মোট ১৩০৭ বার মহামারির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুধুমাত্র কলেরাই হয়েছে ৩০৮ বার। জিকা, মেনিনজাইটিস হয়েছে ১৩৭ বার করে। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া (৯৫ বার) ওয়েস্ট নাইল ফিভার (৯১ বার), টাইফয়েড (৭৫ বার), লাসা ফিভার(২৩ বার) ও ইবোলা (২২ বার) ও অন্যান্য সংক্রমণও রয়েছে। যে তালিকায় নতুন সংযোজন হল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ।

আরও পড়ুন: ভোগান্তি আরও কয়েক দশকের, মত হু-প্রধানের

২০০২ সালের নভেম্বর মাসে চিনের গুয়াংডং থেকে সার্স-কোভের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। ২০০৩ সালের ৫ জুলাই বিশ্ব জুড়ে সার্সের (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) সংক্রমণ থামার কথা ঘোষণা করে হু বলেছিল,—‘সার্স একটা সতর্কবার্তা। অতি উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকেও সার্সের সামনে অসহায় লেগেছে। পরের বার আমরা এতটা সৌভাগ্যবান না-ও হতে পারি!’

‘সৌভাগ্যবান’ যে হওয়া যায়নি তা ছ’মাসে প্রমাণ করে দিয়েছে সার্স-কোভ-২। কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ২১৩টি দেশ-অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই সংক্রমণের শেষ কবে!

হু-র ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া রিজ়িয়ন অফিস’-এর ‘কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা রাজেশ ভাটিয়ার কথায়, ‘‘এই মহামারি সম্পর্কে পূর্বাভাস করা কঠিন ব্যাপার। তবে সংক্রমণের যা ধারা তাতে আমাদের দেশে আরও বেশ কয়েক মাস এটি থেকে যেতে পারে।’’ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের এমেরিটাস বিজ্ঞানী নরেন্দ্র কে মেহরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত সংক্রমণ নিয়ে যা-যা কিছু বলা হচ্ছে, তা সবই অনুমান মাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইরাসটির আচরণ সম্পর্কেই এখনও পুরোটা বুঝে ওঠা যায়নি। এটাও হতে পারে ডেঙ্গি, এইআইচভি-র মতো থেকে যেতে পারে সার্স-কোভ-২-ও!’’

আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানী-গবেষকদের—ঠিক কোন কারণে কোনও এলাকায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, কারও-কারও উপরে রোগটির প্রভাব গুরুতর হচ্ছে, এমনকি, একই পরিবারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এক জন হয়তো আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, এমন অনেক বিষয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর ডিরেক্টর-প্রফেসর মধুমিতা দোবের কথায়, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, সার্স-কোভ-২-এর সংক্রমণের ব্যাপারে নতুন কিছু জানা যাচ্ছে।’’

গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানাও সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, কয়েক দিন আগে সংক্রমণ নিয়ে যা মনে করা হচ্ছিল, পরে সেই তত্ত্বই আর খাটছে না। আবার হু-র এক গবেষকের কথায়, ‘‘মহামারির ইতিহাস বলছে, কোনও মহামারিকেই প্রথম পর্বে প্রতিষেধক বা ওষুধ দিয়ে কব্জা করা যায়নি। তারা নিজস্ব নিয়মে এসেছে ও চলে গিয়েছে। সার্স-কোভ-২-এর ক্ষেত্রেও সেটাই হতে পারে।’’ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক এলএম শ্রীবাস্তব বলছেন, ‘‘সুস্থ মানুষের হার বৃদ্ধি ইতিবাচক দিক। জুলাইয়ের শেষ বা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে হয়তো ভারতে সংক্রমণের অভিমুখ সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ, এখন এপিডেমিক-কার্ভ ঊর্ধ্বমুখী।’'

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement