রেডারে পৃথিবী থেকে ১৬৫ মাইল দূরে স্টেশনটি।
রাতের আকাশে আগুনের খেলা। সোমবার হয়তো এ দৃশ্যই দেখতে পাওয়া যাবে।
না, উল্কাপাত নয়। পৃথিবীর দিকে ঘণ্টায় ২৬,০০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে চিনের মহাকাশ-গবেষণাগার (স্পেস ল্যাব) ‘তিয়াংগং ১’, যার নামের অর্থ ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ’। তবে ঠিক কোন পথে এসে সে আছড়ে পড়বে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও। ৪৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৪৩ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের যে কোনও জায়গায় ভেঙে পড়তে পারে ৮ টনের গবেষণাগারটি। অর্থাৎ নিউজিল্যান্ড থেকে মধ্য-পশ্চিম আমেরিকার কোথাও। সময়ও নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
তবে তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, মাটির ছোঁয়ার আগে তিয়াংগংয়ের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই ভয়ের কিছু নেই। আসলে ঘণ্টায় ২৬ হাজার কিলোমিটার বেগে বায়ুমণ্ডলে ঢোকার পরে হাওয়ার স্তরের সঙ্গে তীব্র ঘর্ষণে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে চিনের মহাকাশ গবেষণাগারটি। যা দেখে আদপে মনে হবে উল্কাপাত ঘটছে। চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘আতঙ্কের কিছুই নেই, কল্পবিজ্ঞানের সিনেমার মতো কিছু ঘটবে না। বরং রাতের তারাভরা আকাশে উল্কাপাতের মতো মহাজাগতিক দৃশ্য ফুটে উঠবে।’’
তবে সবটাই অতীতের পুনরাবৃত্তি। ১৯৭৩ সালে প্রথম ‘ম্যানড স্পেস স্টেশন’ স্কাইল্যাব মহাকাশে পাঠিয়েছিল আমেরিকা। ১৯৭৯ সালের ১১ জুলাই সেটি আছড়ে পড়ে পৃথিবীতে। কিন্তু সেই সময়ে এমন ঘটনা প্রথম শুনছে দুনিয়া। ফলে আতঙ্ক ছড়ায়, ‘আকাশ ভেঙে পড়ছে বুঝি’।
২০১১ সালে চিন মহাকাশে পাঠিয়েছিল ‘তিয়াংগং ১’-কে। বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাজ করবে সেটি। কিন্তু তার পরেও দীর্ঘদিন দক্ষতার সঙ্গে নিজের কাজ করে গিয়েছে সে। চিনের নভশ্চরদের বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় সাহায্য করা থেকে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে স্কুলপড়ুয়াদের মহাকাশ ঘুরিয়ে দেখানো।
তবে তিয়াংগংকে নিয়ে চিনের আসল স্বপ্ন আরও বেশি কিছু। ২০২২ সালের মধ্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’-এর আদলে চিনের নিজস্ব মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ‘তিয়াংগং ১’ ছিল তারই প্রথম ধাপ। এর পরে ২০১৬ সালে ‘তিয়াংগং ২’ও পাঠিয়েছে চিন।