ছবি- ইসরোর সৌজন্যে।
উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছেন ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা। কাঁপছেন ভারতের ১৩৩ কোটি মানুষ। কী হয়, কী হয় উদ্বেগে থরহরিকম্প গোটা বিশ্ব। ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে নাসা। তাকিয়ে রয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা)। তাকিয়ে রয়েছে জাপান স্পেস এজেন্সি (জাক্সা)। তাকিয়ে রয়েছে চিন। কারণ, ভারতই প্রথম দেশ, যারা পা ছোঁয়াবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।
উদ্বেগ রয়েছে, ঠিক ভাবে চাঁদের মাটিতে পালকের মতো পা ছোঁয়াতে পারবে তো ল্যান্ডার ‘বিক্রম’? পা ছোঁয়ানোর পর তার শরীর থেকে পরিকল্পনা মতো বেরিয়ে আসবে তো রোভার ‘প্রজ্ঞান’? কারণ, কিছু দিন আগেই ইজরায়েলের ‘বেরিশিফ্ট’ মহাকাশযানের ল্যান্ডার নামতে গিয়ে আছড়ে পড়েছিল চাঁদের মাটিতে। তাই উদ্বেগ, ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের কপালেও তেমন ভাঁজ পড়বে না তো? মন তো ‘কু’ ডাকেই!
আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। ভারতীয় সময় শুক্রবার গভীর রাত দেড়টা থেকে আড়াইটের মধ্যেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৭০.৯° অক্ষাংশে ‘মানজিনাস-সি’ ও ‘সিম্পেলিয়াস-এন’ ক্রেটার বা গহ্বরের মাঝামাঝি কোনও একটি সমতল এলাকায় নেমে পড়ার কথা বিক্রমের। জায়গাটা উঁচুনীচু মনে হলে তাকে এড়িয়ে ৬৭.৭° অক্ষাংশে নামতে হবে বিক্রমকে। তার পর শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বিক্রমের শরীর থেকে বেরিয়ে এসে চাঁদের মাটিতে ঘোরাফেরা শুরু করবে প্রজ্ঞান।
তবুও একটা কিন্তু রয়েছে বিজ্ঞানীদের। রয়েছে আশঙ্কা, কিছুটা সংশয়ও। যদি নামার সময় শেষ মুহূর্তে কোনও কারণে আছড়ে পড়ে বিক্রম? যদি পরিকল্পনা মতো তার শরীর থেকে না বেরিয়ে আসে প্রজ্ঞান?
আরও পড়ুন- ফিল্মস্টার, ক্রিকেটার নন, এ বার নতুন হিরো ইসরো
গতিবেগ প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনে ধীরে ধীরে চাঁদের মাটিতে নেমে আসাটাই তো বিক্রমের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের কাছেও।
এই হাড়হিম করা উত্তেজনার সাক্ষী থাকবেন শুক্রবার গভীর রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেঙ্গালুরুতে ইসরোর গ্যালারিতে জনাষাটেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বিক্রমের অবতরণ ও প্রজ্ঞানের বেরিয়ে আসা চাক্ষুষ করবেন।
যে ভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ বিক্রমের। দেখুন ইসরোর ভিডিয়ো
২২ জুলাই, ২০১৯ সকালে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ হয়েছিল চন্দ্রযান-২-এর।
চাঁদে পৌঁছে চন্দ্রযান-২ এর প্রথম কাজ কী হবে?
চাঁদের মাটিতে কতটা জল আছে? চাঁদ ভবিষ্যতে বিপুল খনিজের উৎস হতে পারবে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই চাঁদে গিয়েছে চন্দ্রযান-২। এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে কোনও যান। এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই চাঁদের এই অংশে পা রাখেনি। ভারত সেটাই করতে চলেছে। অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুতে ভারতই প্রথম কোনও চন্দ্রযান পাঠাচ্ছে। তা-ও সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে।
আরও পড়ুন- রামানুজনের পূণ্যভূমির মাটিই কি উতরে দেবে বিক্রমকে?
চন্দ্রযানের তিনটি ভাগ।অরবিটার অর্থাৎ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ, যা চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে আরও এক বছর। ল্যান্ডার বিক্রম নামবে চাঁদের মাটিতে। আর রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে জল ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের সন্ধান চালাবে।
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: ইসরো
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ