গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জিকা, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির মতো মারণ রোগের প্রকোপ নিয়ে আর আতঙ্কিত হতে হবে না আমাদের।
তেমন আশার কথাই শুনিয়েছে, মার্কিন মুলুকের এক বাঙালি বিজ্ঞানী নবারুণ ঘোষের নেতৃত্বাধীন এক গবেষকদল।
আমেরিকার ওয়েস্ট টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নবারুণের দাবি, ‘‘ডেঙ্গির বাহক ‘ইডিস ইজিপ্টাই’ প্রজাতির স্ত্রী মশার ‘বন্ধ্যাত্বকরণ’ সম্ভব। এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই ধীরে ধীরে মশার বংশবৃদ্ধি রোখা যাবে। ফলে পরোক্ষে, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপের হাত থেকে বাঁচবে মানুষ।’’
নবারুণের দাবি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তাঁর গবেষণাপত্রটি এখনও একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায়।
গত তিন বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়ায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন নবারুণ। তাঁর দাবি, “ইডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির পুরুষ মশার ওপর ‘ওয়ালবেচিয়া’ নামে এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, পুরুষ মশার সঙ্গে মিলনের ফলে স্ত্রী ইডিস ইজিপ্টাই মশা একেবারে বন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর মশার লার্ভার জন্মায়নি।”
দেখুন ভিডিয়ো
আরও পড়ুন: নোবেলজয়ী গবেষণা প্রকল্পে বাঙালি বিজ্ঞানী
গবেষকরা দেখেছেন, ওই ব্যাকটিরিয়া প্রয়োগের ফলে জিনের পরিবর্তন হয়েছে পুরুষ ইডিস ইজিপ্টাই মশার। তাই মিলনের পর নতুন মশা জন্মানোর কোনও পথই খোলা থাকছে না।
নবারুণের কথায়, “ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের প্রকোপ মহামারীর চেহারা নিয়েছিল। তখন জিকার বাহক মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে গবেষণা শুরু হয়। একই ভাবে সাফল্য আসে ব্রাজিলেও।’’
গবেষকদের বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মশা কীটনাশকের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ইডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির স্ত্রী মশার বন্ধ্যাত্বকরনের মাধ্যমে যদি সেই মশার বংশ নির্মূলও হয়, তাতে পরিবেশের ভারসাম্যের খুব একটা ক্ষতি হবে না। মশা থেকে কোনও প্রাণীই উপকৃত হয় না। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
নবারুণের এই দাবি মানতে রাজি নন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর গৌতম আদিত্য। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই প্রথম, তা নয়। কয়েক দশক ধরেই এমন পরীক্ষা চলছে। মশার বন্ধাত্বকরণের মাধ্যমে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগ আটকানো সম্ভব নয়। কারণ, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় হয়তো ইডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির স্ত্রী মশার বন্ধাত্বকরণ সম্ভব। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে যে ফের মশার লার্ভা চলে আসবে না, তা কে বলতে পারে!”
আরও পড়ুন: এ বার গাড়ির মতো ফোনেরও দুর্ঘটনা রুখবে এয়ারব্যাগ!
যদিও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সমীরণ চক্রবর্তীর বক্তব্য, গবেষণাগারে ব্যাকটিরিয়া প্রয়োগ করে মশার জিনের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তবে বাস্তবে এটা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ, সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’’
নবারুণের এই গবেষণার কথা পৌঁছেছে কলকাতা পুরসভাতেও।পুরসভার মুখ্য পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পতঙ্গবাহী রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ন্যাশনাল ভেক্টর-বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম) অনুমোদন দিলে আমরাও কলকাতায় তাকে কার্যকর করার কথা ভাবতে পারি।”