Science

বয়স সত্যিই কমে! এঁর বয়স কমল এই ভাবে?

বয়স কি সত্যি-সত্যিই কমে আমাদের? আমাদের আশপাশের মানুষজনের বয়স কমে যেতে দেখেছেন কখনও?

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৫:৪৩
Share:

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মহাকাশচারী স্কট কেলি।-ফাইল ছবি।

বয়স কি সত্যি-সত্যিই কমে আমাদের? আমাদের আশপাশের মানুষজনের বয়স কমে যেতে দেখেছেন কখনও?

Advertisement

সুকুমার রায়ের কাহিনীতে এমন ঘটনার কথা বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা এমন কোনও প্রমাণ পাইনি যাতে বলা যায়, বয়সও কমে!

নাসার হালের একটি গবেষণা অবশ্য বলেছে, বয়স সত্যি-সত্যিই কমে, দীর্ঘ দিন মহাকাশে কাটালে। নাসার গবেষণা জানাচ্ছে, টানা এক বছর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটানোর সময় মহাকাশচারী স্কট কেলি বয়স কমাতে পেরেছিলেন। মহাকাশচারী স্কট কেলি তাঁর শরীরে সময় বা ‘টাইম’কে পিছনের দিকে ছোটাতে পেরেছিলেন? বয়স বাড়া বা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কেলি হয়ে উঠেছিলেন তরুণ থেকে তরুণতর, মহাকাশে। মানে, বয়সের সামনের দিকে এগিয়ে চলার গতির ‘রথ’-এর লাগাম টেনে তাকে পিছনের দিকে ছোটাতে পেরেছিলেন স্কট কেলি।

Advertisement

নাসার তরফে অবশ্য এও দাবি করা হয়েছে, দীর্ঘ দিন মহাকাশে কাটানোর জন্য যে কঠিন, কঠোর ব্যায়াম বা শারীরিক অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, বা যে কম পরিমাণ খাওয়াদাওয়ার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়, তার জন্যেও ‘তরুণতর’ হয়ে উঠতে পারেন মহাকাশচারীরা। নাসার ওই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্বে। তাতে এই ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে নাসার দাবি। কোনও কোনও বিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘অবিশ্বাস্য তবে অভিনব ঘটনা। এ ব্যাপারে গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলে দিল।’’

মহাকাশ স্টেশনে এক বছর কাটানোর পর কেলির শরীরে কী কী পরিবর্তন হয়েছিল, তার ওপর নাসার একটি গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। ওই গবেষণার দাবি, মহাকাশ স্টেশনে টানা এক বছর কাটানোর সময় কেলির শরীরে ‘এজিং প্রসেস’ (বার্ধক্যের গতি) উল্টো দিকে ছুটেছিল। মানে, কেলি তখন তরুণ থেকে আরও তরুণ হয়ে উঠেছিলেন।

কী ভাবে সেটা বুঝতে পারলেন নাসার গবেষকরা?

স্কট কেলি ও তাঁর যমজ ভাই মার্ক কেলির শরীরের বায়ো-কেমিস্ট্রি পরীক্ষা করে গবেষকরা দাবি করেছেন, তাঁরা দেখেছেন, পৃথিবাতে থাকা অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশচারী ভাই মার্ক কেলির তুলনায় ওই সময় মহাকাশ স্টেশনে থাকা স্কট কেলি তরুণ থেকে তরুণতর হয়ে উঠেছিলেন। সাধারণ ভাবে আমরা দেখি, শরীরের ডিএনএ’র ক্ষয়ক্ষতি সারায় যে ‘টেলোমেরেস’, বয়স বাড়া বা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা দৈর্ঘ্যে ছোট হতে থাকে। মানে, তার ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই আগের মতো সেই ‘টেলোমেরেস’ আর ডিএনএ’র ক্ষয়ক্ষতি সারাতে পারে না। কিন্তু স্কট কেলির ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছিল। মহাকাশে কাটানোর সময় স্কট কেলির শরীরের ‘টেলোমেরেস’ লম্বায় বড় হয়ে গিয়েছিল। আর তা অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছিল ওই সময় পৃথিবীতে থাকা তাঁর যমজ ভাই মার্ক কেলির ‘টেলোমেরেস’-এর তুলনায়।

আরও পড়ুন- লুকোনো বরফের আগ্নেয়গিরিতে ভরা গ্রহাণু ‘সেরেস’?

যদিও নাসার এই গবেষণার ফলাফল বা তার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে রাজি হচ্ছেন না বহু বিজ্ঞানীই। বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী সুসান বেলি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘এটা একেবারেই ‘উল্টো বুঝলি রাম’ গোছের অবস্থা। আমরা প্রমাণ পেয়েছি, উল্টোটা ঘটছে বেশি। মানে, মহাকাশে কাটানোর ফলে মহাকাশচারীদের শরীরের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে অনেক বেশি। তাঁরা ‘বুড়োটে’ হয়ে পড়ছেন। তাঁদের শরীরের ‘এজিং প্রসেস’-এর গতি আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাঁদের ‘টেলোমেরেস’ আরও খাট‌ো হয়ে যাচ্ছে, আরও দ্রুত। আর সেটা হচ্ছে অনেক বেশি মহাজাগতিক বিকিরণ মহাকাশচারীদের শরীরে ঢুকছে বলে।’’

গবেষণাপত্রে নাসা অবশ্য এটাও জানিয়ে রেখেছে, মহাকাশে স্কট কেলির শরীরের ‘টেলোমেরেস’ যে লম্বায় বড় হয়ে গিয়েছিল, তার কারণ হতে পারে, মহাকাশে থাকার সময় তাঁর কঠোর ব্যায়াম আর কম খাওয়াদাওয়া (লো-ক্যালোরি ইনটেক)।

পৃথিবীতে ফিরে আসার পর নাসার গবেষকরা দেখেছেন, স্কট কেলির ‘টেলোমেরেস’-এর দৈর্ঘ্য আবার কমে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement