দুই মেরুর বরফ গলছে রেকর্ড হারে।-ফাইল ছবি।
সুমেরু আর কুমেরু, পৃথিবীর দুই মেরুরই সাগর, মহাসাগরের উপর পুরু বরফের চাঙড় গলে পাতলা হয়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। নির্দিষ্ট সময়ে তার যে পরিমাণ প্রত্যাশিত ছিল, আন্টার্কটিকা ও আর্কটিকের পুরু বরফের চাঙড় গলে পাতলা হয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত হারে।
বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তথ্যাদিতে এই উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গিয়েছে।
কয়েকটি উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তথ্যাদি জানিয়েছে, যবে থেকে ফিবছরের রেকর্ড রাখা শুরু হয়েছে, তার মধ্যে আন্টার্কটিকার সাগর, মহাসাগরের উপর বরফের চাঙড় এই বছরেই সবচেয়ে বেশি উধাও হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ মেরুর মহাসাগর, সাগরগুলির উপর সেই বরফের চাঙড় রয়েছে এখন বড়জোর ১৯ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যা গত প্রায় সাড়ে চার দশকে সর্বনিম্ন। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ।
একই অবস্থা আর্কটিকেরও। বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তথ্যাদি জানিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২১, এই তিন বছরে আর্কটিকের মহাসাগর, সাগরগুলির উপরের পুরু বরফের চাঙড় গলে পাতলা হয়ে গিয়েছে সবচেয়ে দ্রুত হারে। তিন বছরেই ১৬ শতাংশ। চাঙড় গলেছে কম করে ৫০ সেন্টিমিটার বা ১.৬ ফুট।
শুধু তা-ই নয়, আর্কটিকের সাগর, মহাসাগরের উপরের পুরু বরফের চাঙড় যতটা এলাকা জুড়ে থাকে, গত ১৮ বছরে তা কমতে কমতে এক-তৃতীয়াংশ হয়ে গিয়েছে। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ।
নেচার-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আন্টার্কটিকার মহাসাগর, সাগরের উপর পুরু বরফের চাঙড় সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে কমেছে। ওই দিন আন্টার্কটিকার সাগর, মহাসাগরের উপর বরফের চাঙড় ছিল মাত্র ১৯ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। যা গত প্রায় সাড়ে চার দশকে সর্বনিম্ন।
তবে গবেষকরা এও জানিয়েছেন, আর্কটিকের সঙ্গে আন্টার্কটিকার সাগরের উপরের বরফের চাঙর গলে যাওয়ার কিছু রকমফের রয়েছে। গত প্রায় সাড়ে চার দশক ধরেই গ্রীষ্মে ও শীতকালে আর্কটিকে ওই বরফ গলেছে লাগাতার। উত্তরোত্তর দ্রুত হারে। পক্ষান্তরে, আন্টার্কটিকার সাগর, মহাসাগরের উপর বরফের চাঙড় কখনও পাতলা বা পুরু হয়েছে গ্রীষ্ম ও শীতকালে বিভিন্ন বছরে। তা একনাগাড়ে কমেনি। বাড়া-কমা করেছে।
গবেষকরা এও জানিয়েছেন, আর্কটিকের সাগর, মহাসাগরগুলির উপর বরফের চাঙড় পাতলা বা উধাও হয়ে যাওয়ার জন্য যতটা দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ, উষ্ণায়ন, দূষণ, আন্টার্কটিকার ক্ষেত্রে তা এখনও পর্যন্ত ততটা নয়। বরং অনেকটাই প্রাকৃতিক— ঝোড়ো বাতাসই বরফের চাঙড়কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।