Mars

মঙ্গলের মাটি আনতে যাবে নাসার যান

পৃথিবীর পড়শি গ্রহ মঙ্গল কতটা বাসযোগ্য, সেটা জানতেই ‘তদন্ত’ করছে নাসার পার্সিভিয়ারেন্স রোভার। মঙ্গলপৃষ্ঠের বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ক্যানিস্টারে ভরছে সে।

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪৩
Share:

ডিরোজ়িও হলের সামনে বিজ্ঞানী স্বাতী মোহন। ছবি: আমেরিকান সেন্টারের সৌজন্যে।

আপনার জ্যাকেটটা দেখতে পারি? বলতেই হাসিমুখ ঘুরে বসলেন। —‘‘নিশ্চই, এই দেখুন।’’ জ্যাকেটে ছোট ছোট অ্যাপলিক করা, কোনওটায় লেখা এমআইটি, কোনওটায় নীলের উপর জ্বলজ্বল করছে নাসা-র লোগো, একটায় লেখা জেট প্রোপালসন ল্যাব, ক্যালিফোর্নিয়া, অন্যটায় ড্রেপার (রিসার্চ ল্যাব)। তাঁর বিভিন্ন অভিযান-ক্ষেত্র। তিনি বিজ্ঞানী স্বাতী মোহন। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা-র ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানীর হাত ধরেই মঙ্গল-রহস্য এখন মধ্যগগনে। অতিমারির মধ্যেই স্বাতীর তত্ত্বাবধানে মঙ্গলে পা রেখেছিল নাসার রোভার পার্সিভিয়ারেন্স। তিন বছর হয়ে গেল, সে কাজ করে চলেছে লালগ্রহে। এর মধ্যেই জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে অভিযানের পরবর্তী ধাপের। সে খবর জানালেন বিজ্ঞানী। পৃথিবী থেকে ফের রওনা দেবে আর এক মঙ্গলযান। পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের সংগ্রহ করা নমুনা সে ফিরিয়ে আনবে পৃথিবীতে। স্বাতীর কথায়, ‘‘অনেকগুলো ধাপে অনেক কাজ। যান তৈরি করা, উপযুক্ত প্রযুক্তি তৈরি করা, পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা— জটিল কর্মকাণ্ড। সময় লাগবে... হয়তো ২০৩০।’’ গলায় উত্তেজনা, তারার মতোই জ্বলজ্বল করে উঠল চোখ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার, পরপর দু’দিন কলকাতা শহরের দুই প্রতিষ্ঠান বিআইটিএম এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের সামনে নিজের জীবনের সফর, এ দেশে জন্ম, আমেরিকা পাড়ি, মহাকাশ গবেষণা, মঙ্গল অভিযান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা— সব নিয়ে কথা বললেন খোলা মনে। অনুষ্ঠানের যৌথ উদ্যোক্তা ছিল ইউএস কনসুলেট, কলকাতা।

শুক্রবার ডিরোজ়িও হলে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর হুয়ান ক্লার। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিলেন অধ্যাপিকা সুচতনা চট্টোপাধ্যায়, সূত্রধর হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক অরুণাভ চক্রবর্তী। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ‘ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স’-এর ডিরেক্টর দেবীপ্রসাদ দুয়ারি। স্বাতী সম্পর্কে তিনি জানান, ২০১৩ সালে নাসার ‘মার্স ২০২০’ দলে যোগ দিয়েছিলেন স্বাতী। পার্সিভিয়ারেন্স রোভারকে নিয়ে মহাকাশযান যাতে নিরাপদে পৃথিবী থেকে মঙ্গলে পৌঁছয় ও তার পর মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করে, সেটা দেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর। দেবীপ্রসাদ বলেন, ‘‘২০২০ সালের ৩০ জুলাই পৃথিবী থেকে রওনা দিয়েছিল নাসার মঙ্গলযান। ৭ মাস পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলে পৌঁছয় সে। গোটা পৃথিবী উত্তেজনায় ফুটছে, বিজ্ঞানীরা অধীর আগ্রহে উত্তরের অপেক্ষায়। সে দিন নাসার জেপিএল ল্যাবে স্বাতীই সুখবর দিয়েছিলেন, ‘টাচ ডাউন কনফার্মড’। সঙ্গে সঙ্গে উৎসব শুরু হয়ে যায়। করোনার মধ্যে করমর্দন করা নিষেধ ছিল, সকলে মুঠো হাত ছুঁয়ে একে অপরকে অভিনন্দন জানান।’’

Advertisement

পৃথিবীর পড়শি গ্রহ মঙ্গল কতটা বাসযোগ্য, সেটা জানতেই ‘তদন্ত’ করছে নাসার পার্সিভিয়ারেন্স রোভার। মঙ্গলপৃষ্ঠের বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ক্যানিস্টারে ভরছে সে। এর পরেও একটি মঙ্গলযান রওনা দেবে। পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের সংগৃহীত নমুনা সে ফিরিয়ে আনবে পৃথিবীতে। দেবীপ্রসাদ বলেন, ‘‘এই অভিযানেও কিন্তু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় স্বাতী।’’

কেন বারবার যাওয়া হচ্ছে মঙ্গলে? স্বাতী নিজেই ছুড়ে দেন সেই প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কি সত্যিই একাই আছি এই মহাবিশ্বে? আর কেউ নেই? উত্তরের খোঁজ চলছে। জলের সন্ধান চলছে। জল থাকলে তা কোথায়? কারণ জল থাকলে প্রাণ আছে।’’ স্বাতী জানান, পার্সিভিয়ারেন্স নাসার পাঠানো পঞ্চম রোভার। প্রথম ছিল ‘সোজার্নার’। ১৯৯৭ সালে পাঠানো হয়েছিল সেটি। এর পরে যায় যমজ রোভার ‘স্পিরিট’ ও ‘অপরচুনিটি’। ২০১২ সালে যায় ‘কিউরিয়োসিটি’ এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে ‘পার্সিভিয়ারেন্স’।

স্বাতী জানান, কিউরিয়োসিটি রোভার সন্ধান করেছে, মঙ্গল গ্রহে জীবনের উৎস (কার্বন, হাইড্রোজেন) রয়েছে কি না। পার্সিভিয়ারেন্স শুরু করেছে জীবাশ্মের সন্ধান। অতীতে কোথাও কোনও প্রাণের অস্বিত্ব ছিল কি না, তার খোঁজ। মঙ্গলপৃষ্ঠে প্রায় ২৫ কিলোমিটার যাত্রা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে সে। পরবর্তী অভিযানে সেগুলিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে পরীক্ষা
করা হবে।

এ দিন পার্সিভিয়ারেন্সের মঙ্গল-যাত্রার বিভিন্ন ঘটনা ফুটে ওঠে মঞ্চে। মহাকাশযানের কোথায় রাখা ছিল রোভার, কেমন দেখতে, কতটা বড়... পর্দায় ফুটে ওঠে সেই দৃশ্য। মঙ্গলপৃষ্ঠে কোথায় নামবে সে, কী ভাবে নামবে, সেই সব পরিকল্পনার কথা বলেন বিজ্ঞানী। স্বাতী এ-ও বললেন, উৎক্ষেপণের ঠিক দশ মিনিট আগে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল মাটি। সবাই ভয় পেয়েছিলেন খুব। তার পর মাথা ঠান্ডা করে ফের অভিযানে নামেন বিজ্ঞানীরা। সফল হন তাঁরা।

অনুষ্ঠান শেষে স্বাতীকে ঘিরে ধরেন পড়ুয়ারা। ভিড়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘‘কে বলতে পারে, এই এত মুখের মধ্যেই কেউ ফের নাসার হয়ে কাজ করবে। মহাকাশ অভিযানে যাবে।’’ তাঁর পরিপাটি চুলে ঝলমল করল উঠল একটি তারা (ক্লিপ)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement