চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ও রোভারের মডেল। কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্সের স্পেস মিউজ়িয়ামে। —নিজস্ব চিত্র।
মূল মহাকাশযান থেকে বিচ্ছেদের পর এক দফায় গতি কমিয়েছে চন্দ্রযান-৩। ইসরো সূত্রের খবর, আজ, রবিবার দ্বিতীয় দফায় গতি কমানো হবে তার। পাখির পালকের মতো আলতো করে যে অবতরণের (সফ্ট ল্যান্ডিং) পরিকল্পনা ভারতের বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ারেরা করেছেন তার জন্য ধাপে ধাপে গতি কমানো অতি জরুরি। প্রথম দফায় সফল ভাবেই গতি কমানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফাও সফল ভাবে হবে। এ দিকে, অবতরণের চূড়ান্ত কক্ষপথে নামার সময়ে এ দিনই কিছু সমস্যায় পড়েছে চাঁদে পাড়ি দেওয়া রাশিয়ার ‘লুনা-২৫’।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, ২৩ অগস্ট সন্ধ্যায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডারের (নাম তার বিক্রম)। রাশিয়ার পাঠানো যানও (লুনা-২৫) চাঁদের মাটিতে নামতে চলেছে। তাঁদের নামার কথা ২১ অগস্ট। রাশিয়াকে পিছনে ফেলে দক্ষিণ মেরুতে আগেই ভারত নামবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা আছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত ঘোষিত সূচি বদল করেনি ইসরো।
এ দিকে রাশিয়ার সেই যানে শনিবার কিছু বিপত্তি দেখা দেয় বলে রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের বিবৃতি থেকে মনে করা হচ্ছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রোবটিকে অবতরণের আগের কক্ষপথে স্থাপন জন্য থ্রাস্ট ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেই সময়ে ওই স্বয়ংক্রিয় স্টেশনে একটি আপৎকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফলে উপযুক্ত পরিস্থিতিতে ওই নড়াচড়ার কাজটি সেরে ফেলা সম্ভব হয়নি।’ এই সমস্যার ফলে লুনা-২৫ ২১ তারিখেই চাঁদে নামবে, না কি সেই তারিখ পিছোবে, এই বিষয়টি স্পষ্ট করেনি রসকসমস।
রাশিয়ার কাছে উন্নত মানের রকেট আছে। তাই ভারতের যাত্রা শুরুর প্রায় এক মাস পরে (ভারত রওনা দিয়েছিল ১৪ জুলাই, রাশিয়া রওনা দিয়েছে ১০ অগস্ট) রাশিয়া রওনা দিয়ে আগেভাগে চাঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। এ দিন মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে উন্নত মানের রকেটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে শিবন। এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যে মহাকাশ অভিযানে আরও উন্নত মানের এবং শক্তিশালী রকেট প্রয়োজন। স্বল্পখরচের, সাদামাঠা প্রযুক্তি দিয়ে টিকে থাকা যাবে না। মহাকাশ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে বেসরকারি সংস্থাকে অংশীদার করেছে তারও প্রশংসা করেছেন শিবন।
২০১৯ সালে দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের সময় শিবন ইসরোর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। অবতরণের সময় ল্যান্ডার কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে অভিযান ব্যর্থ হয়। এ বার তাই অবতরণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক ইসরো। ইসরো সূত্রের খবর, তাই ধাপে ধাপে গতি কমানো হচ্ছে এবং অবতরণের সময় যাতে একেবারে ল্যান্ডার উল্লম্ব ভাবে মাটি ছোঁয় সে ব্যাপারেও নিখুঁত পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইসরো জানিয়েছে, ল্যান্ডারে বসানো ক্যামেরায় চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি ধরা পড়েছে। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশও করেছে তারা।