—প্রতীকী চিত্র।
যেন জাদু! তবে বিজ্ঞানের।
টাইপ-১ ডায়াবিটিস আক্রান্ত ২৫ বছর বয়সি এক তরুণীর শরীরে আচমকাই ইনসুলিন তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে। মেয়েটির শরীরে ‘রিপ্রোগ্রামড’ স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এর তিন মাসের মধ্যেই ম্যাজিক! বিশ্বে প্রথম স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন থেরাপিতে টাইপ-১ ডায়াবিটিস-মুক্ত হলেন কোনও মানুষ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সাফল্যের কাহিনি ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। স্টেম কোষ প্রতিস্থাপনের পরে এক বছর কেটে গিয়েছে। চিনের তিয়ানজিংয়ের বাসিন্দা তরুণীকে জানতে চাওয়া হলে, তিনি মিষ্টি হেসে বলেন, ‘‘জানেন, আমি এখন মিষ্টি খেতে পারি।’’ নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তরুণী।
এই ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিশ্বে প্রথম। বেজিংয়ের পিকিং ইউনিভার্সিটির সেল বায়োলজিস্ট ডেং হনকুই ও তাঁর সহকর্মীরা টাইপ-১ ডায়াবিটিস আক্রান্ত তিন জনের শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলিকে গবেষণাগারে ‘প্লুরিপোটেন্ট’ অবস্থায় নিয়ে যান। এর পর একে যে কোনও ধরনের কোষে রূপান্তরিত করা যায়। একেই ‘রিপ্রোগ্রামিং’ করা বলা হয়। এই পদ্ধতি নতুন নয়। কিন্তু এই পদ্ধতিকে সামান্য অদলবদল করেছিলেন ডেং। আইলেট কোষগুচ্ছ তৈরি করেন তাঁরা।
২০২৩ সালের জুন মাসে তরুণীর শরীরে আইলেট কোষ প্রতিস্থাপন করেন শল্যচিকিৎসক জেমস শাপিরো। তিনি কানাডার এডমন্টনের ‘ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা’র গবেষকও। জেমস বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের ফল অসাধারণ। স্টেম কোষগুলি রোগীর ডায়াবিটিস সম্পূর্ণ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আগে কিন্তু ওই রোগিনীকে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন নিতে হত।’’
স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন থেরাপির মাধ্যমে এই টাইপ-১ ডায়াবিটিস চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণাটির রিপোর্ট ‘সেল’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পরে চিনের শাংহাইয়ের অন্য একটি বিজ্ঞানী-দল দাবি করেছে, তারা গত এপ্রিল মাসে ৫৯ বছর বয়সি টাইপ-২ ডায়াবিটিস আক্রান্ত এক বৃদ্ধের যকৃতে ইনসুলিন উৎপাদনকারী আইলেটস প্রতিস্থাপন করেছে। এই আইলেটস রোগীর শরীর থেকে সংগৃহীত কোষ থেকে তৈরি রিপ্রোগ্রাম করা স্টেম কোষ থেকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। শাংহাইয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রিপ্রোগ্রাম করা স্টেম কোষ প্রতিস্থাপনের পর থেকে ওই রোগীকে আর ইনসুলিন নিতে হয়নি।
বিশ্বে অন্তত ৫০ কোটি মানুষ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বেশির ভাগই টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হয় না। টাইপ-১ ডায়াবিটিসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম অগ্নাশয়ের আইলেট কোষগুলিকে আক্রমণ করে ও তাদের ক্ষতি করে। অন্য কারও শরীর থেকে আইলেট কোষ নিয়ে, তা রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করে ডায়াবিটিস নিরাময় করা যায়, কিন্তু আইলেট-দাতা কাউকে তেমন পাওয়া যায় না। আইলেট-গ্রহণকারীর জন্যেও পদ্ধতিটি সহজ নয়। কারণ তাঁর অতি-সক্রিয় ইমিউন সিস্টেম অন্যের শরীর থেকে পাওয়া কোষ বর্জন করতে পারে। কিন্তু রোগীর নিজের শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করে, তাকে ‘রিপ্রোগ্রাম’ করা হলে, বিপদের আশঙ্কা অনেকটাই কম থাকে।