গত বছর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা সাড়ে ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। -ফাইল ছবি।
গত বছর— ২০২১ সাল গোটা বিশ্বেই ছিল ষষ্ঠ উষ্ণতম বছর। গত ১৪১ বছরের ইতিহাসে। শুধু আমেরিকাতেই গত বছর ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, বন্যা, অতিবৃষ্টির মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০০-রও বেশি মানুষ।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ও আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)’ বৃহস্পতিবার এই খবর দিয়েছে।
ও দিকে, মৌসম ভবনও বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ১৯০১ সাল থেকে গত ১২০ বছরের ইতিহাসে ২০২১ সালটি ছিল ভারতে পঞ্চম উষ্ণতম বছর। গত বছরে ভয়াল বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস, বজ্রপাত, শৈত্য ও তাপপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ জনের।
নাসা, নোয়া আলাদা আলাদা ভাবে জানিয়েছে, উষ্ণায়নের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ-সহ গোটা বিশ্বেই গত এক দশক ধরে প্রতিটি বছরের উষ্ণতা বেড়েছে। বছরগুলির মধ্যে উষ্ণতম ছিল ২০১৬ এবং ২০২০। তবে উষ্ণতার নিরিখে গত বছরটি ওই দু’টি বছরের তুলনায় খুব পিছিয়ে ছিল না। ছিল ধারেকাছেই। নোয়া-র পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা সাড়ে ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
নাসা জানিয়েছে, গত ১৪১ বছরের ইতিহাসে (১৮৮০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে সব দেশের বাৎসরিক গড় তাপমাত্রার হিসাব রাখা শুরু হয়) ২০২১ এবং ২০১৮ সাল দু’টি ছিল ষষ্ঠ উষ্ণতম। পক্ষান্তরে, নোয়া-র দাবি, উষ্ণতার নিরিখে ষষ্ঠ স্থানটির দাবিদার একক ভাবে ২০২১ সালই।
নাসা ও নোয়া জানিয়েছে, উষ্ণায়নের জন্য গত এক বা দু’দশকে যে উদ্বেগজনক ভাবে শুধুই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েছে, বেড়ে চলেছে, তা-ই নয়; আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে মহাসাগরগুলির জলের উপরিতলের তাপমাত্রাও। যার পরিণতিতে আন্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের পুরু বরফের চাঙড়গুলি গলে যাওয়ার গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। সমুদ্রের জলস্তরও উপরে উঠে আসছে আশঙ্কাজনক ভাবে।
প্রশান্ত মহাসাগরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক ধরনের প্রক্রিয়া চলে, যার ফলে উষ্ণ জল শীতল হয়। এর নাম— ‘লা নিনা’। নাসা ও নোয়া জানিয়েছে, গত প্রায় দেড়শো বছরে ২০২১ সালেই প্রথম দেখা গিয়েছে, সেই লা নিনা প্রশান্ত মহাসাগরের জলের উপরিতলকে তেমন শীতল করতে পারেনি। বরং জলের উপরিতলের উষ্ণতা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।
নাসার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ গ্যাভিন স্মিড বলেছেন, ‘‘এই উষ্ণতা-বৃদ্ধি কোনও দু’এক বছরের ঘটনা নয়। এর গতি বেড়েছে গত এক বা দু’দশকে। আরও বাড়বে আগামী বছরগুলিতে। সামনের প্রতিটি বছরই আগের বছরের উষ্ণতার রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে। সভ্যতার নানা ধরনের কর্মযজ্ঞের জন্যই এটা হচ্ছে। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমনের মাত্রা অবিলম্বে কমিয়ে আনা সম্ভব না হলে যা আরও আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েই চলবে।’’
একই খবর দিয়েছে জাপানের কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান সংস্থাও। তাদেরও বক্তব্য, গত আট থেকে দশ বছরে বিশ্বের সর্বত্রই তাপমাত্রা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। বেড়ে চলছে উত্তরোত্তর।
নোয়া-র জলবায়ু বিশেষজ্ঞ রাসেল হোস বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘২০২২ সালটির দশম উষ্ণতম বছর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। আর গত দেড়শো বছরের ইতিহাসে এই বছরের সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ১০ শতাংশ।’’