মহানগরবাসীর ভূরিভোজের প্রিয় ঠিকানায় মিলবে এমন বাহারি স্বাদের খাবার। নিজস্ব চিত্র।
শহর জুড়ে পুজোর মরসুম। বাঙালির বারো মাসে হাজার পার্বণ। বছরভর নানান উৎসবের ভিড়েও বাঙালি প্রহর গোনে দুর্গাপুজোর। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। বর্ষার আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ। ঘরে ঘরে চলছে দুর্গা আবাহনের প্রস্তুতি। শহর সেজে উঠছে উৎসবের রোশনাইয়ে।
বাঙালির উৎসব-উদ্যাপনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে খাওয়াদাওয়া। পুজোর চারটি দিন রসনা-বিলাসী বাঙালির পাতে থাকে বাহারি খাবার। চিরাচরিত বাঙালি খাবারের পাশাপাশি জায়গা করে নেয় ভিন্ রাজ্য এমনকি অন্য দেশের খানাও। ভোজনপ্রিয় বাঙালির রসনার কথা মাথায় রেখেই শহরের হোটেল-রেস্তঁরাগুলি তাঁদের পুজোর বিশেষ মেনু সাজায়।
নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই বাঙালি-রসনার খোঁজ রাখছেন ‘স্পেশ্যালিটি রেস্তঁরা লিমিটেড’-এর প্রতিষ্ঠাতা- কর্তা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রতি বছরের মতো এ বার পুজোতেও কলকাতাবাসীর জন্য তাঁর উপহার প্রায় ৩০-৩৫ রকমের নতুন পদ।
আম-আদার ভেটকি, চিতল পেটি কষা, পমফ্রেট টম্যাটো, লবস্টার হট বাসিল, জ্যাম্বো প্রন হুনান, স্মোকড্ চিলি লোটাস স্টিম— ‘মেনল্যান্ড চায়না’ থেকে ‘ওহ ক্যালকাটা’, ‘বারিষ’ থেকে ‘এশিয়া কিচেন’— মহানগরবাসীর ভূরিভোজের প্রিয় ঠিকানায় মিলবে এমন বাহারি স্বাদের খাবার।
সারা বছর রসনা নিয়ে চর্চা করেন। নিজস্ব চিত্র।
বাঙালিকে খুশি করা সহজ নয়। কিন্তু সে কাজে সিদ্ধহস্ত অঞ্জন। শুধু বাঙালি কেন, মায়ের হাতের ভোজ খাইয়েও তিনি মন জিতেছেন বিদেশবাসীর। অঞ্জনের ব্যঞ্জনের প্রেমে পড়েছেন লন্ডনবাসী। সারা বছর রসনা নিয়ে চর্চা করেন। তবু পুজোর আগে একেবারে নতুন ধরনের পদের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় কি বুক ঢিপঢিপ করে না? অঞ্জনের জবাব, ‘‘আমি দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমাই। বাকি সময়টা খাবারদাবারের মধ্যেই থাকি। অনেক কমবয়স থেকে এই কাজটাই করে আসছি। আর তো কিছু পারি না। এখন আর তেমন চ্যালেঞ্জিং লাগে না। রান্নার উপকরণ, মশলা, আনাজপাতি দেখলেই আমার মাথায় চলে আসে নানা ধরনের পদ তৈরির পরিকল্পনা। আলাদা করে ভাবতে হয় না।’’
উত্তর থেকে দক্ষিণ— পুজোর সময় শহরের নানা প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে অস্থায়ী চাউমিন-এগরোলের দোকান। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে অনেকেই ভিড় জমান সেই দোকানগুলিতে। সস্তার সস্ মাখানো সুস্বাদু রঙিন চাউমিন ছেড়ে বিলাস-বহুল রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কি কমছে? অঞ্জন বলছেন, ‘‘সবাই আমার গ্রাহক নন। সমাজের একটি নির্দিষ্ট অংশের মানুষ আমাদের রেস্তরাঁয় খেতে আসেন। খাবারের গুণমান, পরিচ্ছন্নতাও একটা বড় বিষয়। আমার মনে হয়, সেই দিকগুলিতে আমাদের খামতি নেই। নয়তো এত বছর ধরে একই ভাবে মানুষের ভালবাসা পাওয়া সম্ভব ছিল না।’’