সৃজনশিল্পী: রমেশচন্দ্র পাল। ডান দিকে, তাঁর হাতে করা দুর্গাপ্রতিমা
দমকলের ঠাকুর দেখার ভিড়টা কখন ফিকে হবে, সেই অপেক্ষায় তক্কে তক্কে ছিল গাড়িটা। ভোর চারটে নাগাদ গাড়ি থেকে এক সুবেশা নারী ও ধুতি, পাঞ্জাবিধারী ভদ্রলোক শশব্যস্ত ভঙ্গিতে নেমে একেবারে দুগ্গা ঠাকুরের কাছে হেঁটে গেলেন। নিচু হয়ে ঝুঁকে চক দিয়ে কী সব এঁকে লোকটি ইশারা করলেন। মহিলা সটান প্রতিমার পাশটিতে অ্যাঙ্গল বুঝে দাঁড়িয়েছেন। ভদ্রলোকের ঝোলা থেকে বেরিয়েছে ক্যামেরা আর সঙ্গে-সঙ্গে খচাত করে উঠেছে শাটার। মুহূর্তে ফ্রেমবন্দি রমেশ পালের ক্লাসিক পানপাতা মুখ দুগ্গা ঠাকরুন আর বঙ্গজীবনের রাতের ঘুমকাড়া হৃৎস্পন্দন সুচিত্রা সেন!
দমকলের দু’-চার জন কর্মী দৃশ্যটা দেখে এগিয়ে এসেছিলেন। নায়িকা ও আলোকচিত্রী চটজলদি পগারপার। কলকাতার মিডিয়ার কাকপক্ষীটিকেও জানতে না দিয়ে সেই এক্সক্লুসিভ ছবি নাকি পুজোর মধ্যেই বম্বের কোন কাগজে বেরিয়েছিল। পাশাপাশি বসানো সুচিত্রা সেনের মতো মুখের দুগ্গাপ্রতিমা আর জলজ্যান্ত সুচিত্রা। ছবিটি বেরোতে কলকাতার মিডিয়াকুল কপাল চাপড়েছিল। ম্যাডাম সেনের অনুগত চিত্রগ্রাহক ধীরেন দেব মারফত ছবি তোলার বৃত্তান্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি আনন্দবাজারের অবসরপ্রাপ্ত চিত্রসাংবাদিক তপন দাসের থেকে শুনেছি। তপনদা তাঁর অগ্রজদের কাছে শুনেছিলেন।
বাংলার কিংবদন্তি নায়িকা বম্বেকে জানাতে চেয়েছিলেন তাঁর মহিমার দৌড়। রমেশ পালের দুগ্গাঠাকুরে সুচিত্রার মুখের ছায়া! প্রয়াত কিংবদন্তি ভাস্কর শতবর্ষ পূর্ণ করেছেন সেপ্টেম্বরে। সুচিত্রা সেনদের সেই পুজোর রাতের ফোটোসেশন অভিযানের মতোই নিঃশব্দে পার হয়েছে দিনটা। কেউ জানতে পারেনি, হয়তো জানতে চায়ওনি। রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটের পশ্চিমে রমেশ পালের ধূলিধূসরিত বাহারি গ্রিল ঘেরা জরাজীর্ণ স্টুডিয়ো। বন্ধই থাকে সচরাচর। শিল্পীপুত্র প্রশান্ত প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর বাবা সম্পর্কিত সুচিত্রা সেন-কাহিনিতে হাঁ-হাঁ করে উঠলেন, “মিল আছে কি নেই পরের কথা! কিন্তু বাবা দেবীভাবের স্রষ্টা। চণ্ডীর লাইন ধরে ঠাকুর করতেন। দুঃস্বপ্নেও ফিল্মস্টার কেন, কোনও মানুষকে ভেবে দুগ্গাকে গড়েননি।” শিল্পরসিকেরা রমেশের দুর্গার টানা চোখে, মুখের ছাঁদে ইটালীয় কিংবা গান্ধার শিল্পের ছোঁয়াচ খুঁজে পান। দেখে রিয়ালিস্টিক মনে হলেও তাতে বিভিন্ন শিল্পশৈলীর মিশেলটাই আসল। ভাস্কর বিমল কুণ্ডুর সবিস্ময় মন্তব্য, “কলকাতার পুজোমণ্ডপে প্রতিমার এমন কম্পোজ়িশন, ব্যালেন্স, হারমোনি আর দেখা যায়নি।” অ-সামান্য পরিমিতি বা প্রপোরশনের বোধ, কাছে বা দূরে ঠাকুরকে বেঁটে বা ঢ্যাঙা লাগবে না। অসুর, দুর্গা, সিংহের অবস্থানে সুছাঁদ অর্থবহ বিন্যাস। ইঁদুর থেকে পেঁচার মানানসই বিভঙ্গ। তেমনই কুশলী ডিটেলিং। দুর্গার প্রকাণ্ড মুকুটের বোঝা, চোখ ধাঁধানো জাঁকজমক দু’চক্ষে দেখতে পারতেন না রমেশ। তাঁর মধ্যযৌবনা দুর্গায় থাকত সুষম সংহতির ছাপ, যা কলকাতা আগে দেখেনি।
স্বাধীনতার আগে এক বার জি পালের শিষ্য, ভাইপো মণি পালের ঠাকুর গড়ায় কিছু ব্যাঘাত ঘটেছিল। নেবুতলার মণ্ডপে আর্ট স্কুল (পরবর্তী কালের গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ) শিক্ষিত রমেশ সেই প্রতিমায় হাত দেন। ষাটের দশকের প্রতিমাশিল্পীদের উত্তমকুমার যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে তিনি তর্কাতীত ভাবেই রমেশ। কুমোরটুলির ব্যস্ততম ঘর তখন রাখাল পাল, গোরাচাঁদ পালদের। আদতে ফরিদপুরের ছেলে, শিক্ষিত ভাস্কর রমেশ পাল বড়জোর তিন-চারটে ঠাকুর গড়েন। এক্কেবারে নিখুঁত ভাস্কর্য। শিল্পশিক্ষার ক্লাসে আহরণের খোলা জানলা তাতে উঠে আসে। সঙ্গে মৌলিক সৃজনশীল স্বাক্ষর। ঠাকুর বায়নার সময়েই রমেশ বুঝিয়ে দেন, মণ্ডপের আদল, আলোর বিন্যাস কেমন হবে। তাঁর কড়া নির্দেশ, প্যান্ডেলে হিন্দি গান বাজবে না। রবীন্দ্রসঙ্গীত চলুক, কিংবা হেমন্ত মুখুজ্জে। শিল্পীর পরিকল্পনামাফিক দমকলের কর্মীরা পুজোর ক’দিন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের পুজোপ্রাঙ্গণে শুভ্রবেশে অবস্থান করেন। এক-এক বার রমেশের এক-একটি আইডিয়া পুজোর বাজারে কামাল করবে। অসুর, দুর্গা, বাহনদের এক-এক রকম বিন্যাস। রমেশের অসুরও আগেকার সবুজ অসুর বা কৃষ্ণকায় অনার্য নয়। আবার একদা কুমোরটুলিতে জনপ্রিয় পেশিবহুল বডিবিল্ডারও নয়! এক বার দমকলের পুজোয় অসুরকে যুদ্ধ না করিয়ে মায়ের সামনে সারেন্ডার করালেন রমেশ। তা দেখতে কলকাতা ভেঙে পড়েছে। ভিড়ের চাপে তখন কোথাও আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি বেরোতে পারবে না!
সত্তরের দশকে তাঁর পুজো একডালিয়া এভারগ্রিনে এই রমেশ পালকে কব্জা করে ধরে আনতে তরুণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এক দারুণ মতলব ভেঁজেছিলেন। ব্যাপারটা সে যুগে লালহলুদ-সবুজমেরুনের দলবদলে প্লেয়ারক্যাচারদের কৌশলের থেকে কম চালাকির নয়। সুব্রতই তখন দমকলমন্ত্রী। “আমি সিএমকে (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়) বললাম, সেকুলার দেশে সরকার চাঁদা তুলে পুজো করছে, কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? তা ছাড়া, দমকল পুজো করলে বিপদআপদ কে সামলাবে? উনি আমার কথা শুনলেন। দমকলের পুজোটাই উঠে গেল। রমেশ পাল ফ্রি হলেন, আমি ওঁকে রাজি করিয়ে একডালিয়ায় নিয়ে গেলুম,” সহাস্যে বলছিলেন সুব্রত। পরের আড়াই, তিন দশক রমেশকে তাঁরা হাতছাড়া করেননি। কলেজ স্কোয়ার, পার্ক সার্কাস, একডালিয়া, কখনও সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা খিদিরপুর! বছর বছর হাতে গোনা ক’টা পুজোতেই রমেশ পালের উপস্থিতি। তবু এতেই কলকাতার পুজোর মূর্তিমান ব্র্যান্ড তিনি। অর্ধ শতক ধরে কলেজ স্কোয়ারের পুজোকর্তা বাদল ভট্টাচার্য রমেশের স্টুডিয়োঘরে কম মুড়ি, তেলেভাজা খাননি। তাঁর মনে আছে, রমেশ পালের ঠাকুরের ফোটোও হু-হু করে বিকোত। মণ্ডপ থেকে বাঙালির ঠাকুরঘর অনায়াস বিচরণ সেই মাতৃমূর্তির।
জীবনের উপান্তে কলকাতার মেয়র সুব্রতর সঙ্গে মতবিরোধেও জড়িয়েছেন রমেশ। তার সাক্ষী বিড়লা তারামণ্ডলের কাছের ইন্দিরা গাঁধীর ব্রোঞ্জ মূর্তি। মূর্তি তৈরির সময়ে সনিয়া গাঁধীর প্রতিনিধি ভিনসেন্ট জর্জের সঙ্গে কথা চলত। কিন্তু তা কোথায় বসবে ঠিক করা যাচ্ছিল না। ফিনিশিং টাচের পরেও তাই ছ’-ছ’টা বছর ইন্দিরা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটের স্টুডিয়োতেই পড়ে। মেয়র হয়ে সুব্রত সেই মূর্তির মুক্তিতে তৎপর হয়েছিলেন। কিন্তু মূর্তি বসানোর কোন জায়গা বাছাই হবে, তা না জেনে রমেশ ভরসা করে মেয়রের হাতেও তা ছাড়তে পারছেন না। শেষে তৎকালীন বাম সরকারের মধ্যস্থতায় ক্রেনে টেনে মূর্তি বেরোল স্টুডিয়ো থেকে। বেদি তৈরি করিয়ে সুব্রত তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সহায়তায় মূর্তিটি তারামণ্ডলের কাছেই বসালেন। সুব্রত অকপট: “আমার রাগ হয়েছিল! উনি (রমেশ) আমায় মূর্তি দিতে চাননি। তা আমিও তো একটু বদ আছি! ওই ইন্দিরা মূর্তির ফলকে রমেশবাবুর নাম আমি বসাইনি।”
বিমল কুণ্ডুরা বলেন, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর গাঁধী, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই মনীষীদের মূর্তিতে কলকাতাকে ভরিয়ে তোলার পুরোভাগেও রমেশ পালই রয়েছেন। শ্যামবাজারের ঘোড়ায় চড়া নেতাজি মূর্তির থেকে ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কে ধুতি-চাদরে সজ্জিত সুভাষমূর্তিই তাঁর অনেক বেশি প্রিয় বলেছেন সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা অনিতা পাফ। অনেকেই জানেন না ওই সৌম্য সুভাষমূর্তি গড়েন রমেশ পাল। “আপনার বিধান রায়ের মূর্তি তো বেশ চেকনাই হয়েছে,” স্বভাবসিদ্ধ বাচনে রমেশকে বলেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। “কত মামলায় তো রাতদিন টিভিতে হাইকোর্ট দেখায়! বাবার তৈরি সূর্য সেনের মূর্তিটা বার বার দেখি! আজ ক’জন জানে বলুন তো, কাজটা রমেশ পালের,” বলে ওঠেন রমেশপুত্র প্রশান্ত।
মনীষীদের মূর্তি তো শুধু বহিরঙ্গ নয়, তাঁদের ব্যক্তিত্বও! এটাই বিশ্বাস করতেন রমেশ। তাই গণেশ ঘোষের কাছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাস্টারদাকে নিয়ে গল্প শুনতেন। বিধানসভায় হেমন্ত বসুর মূর্তিটি গড়তে তাঁকে সাহায্য করেন ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা অশোক ঘোষ। ময়দান এলাকার মাতঙ্গিনী হাজরা বা দেশবন্ধুর মূর্তিটি নির্মাণের নেপথ্যেও শিল্পীর একাগ্র গবেষণা। দেশবন্ধুর কথা শুনতে শুধু তাঁর নাতি, পরম সুহৃদ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের উপরে নির্ভর করেননি রমেশ। চিত্তরঞ্জন দাশের সহধর্মিণী বাসন্তীদেবী তখনও রয়েছেন। ওঁর সঙ্গেও একান্তে অনেক কথা বলেন রমেশ। এতশত রূপসংঘর্ষেই ঘটছিল তাঁর অনুভবে দেশবন্ধুর নির্মাণ। রমেশবাবুর ভাঙাচোরা স্টুডিয়োয় বসার ঘরে টেবিলের কাচের নীচে রাখা বিধানচন্দ্র রায়, অচিন্ত্য সেনগুপ্ত, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়দের টাইপ করা চিঠি। ফোটোর ফ্রেমে কাজে মগ্ন তরুণ রমেশ পালের পাশে তাকালে চমকে উঠতে হয়! মূর্তি নয়, ওই তো রমেশের পাশে শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে বসে! রামকৃষ্ণদেবের এমন দিব্য বিভামণ্ডিত মুখাভাস তিনি কখনও দেখেননি, লিখেছেন অচিন্ত্যকুমার। বরাহনগর সেবায়তন মঠে এখনও আছে সেই মূর্তি, সিউড়িতে আছে রমেশ পালের বিবেকানন্দ। আনন্দময়ী মা নিজে সিটিং দিয়েছিলেন রমেশ পালের মূর্তির জন্য। মল্লিকবাজারের সমাধিসৌধে মাইকেল মধুসূদন দত্তের আবক্ষ মূর্তিটির জন্য রমেশকে সাধুবাদ দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্য হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ। সুনীতিকুমার ইংরেজিতে চিঠি লিখছেন, রমেশ সফল ভাবে চিরন্তনের নিত্য নতুন অভিব্যক্তি মেলে ধরেছেন। রমেশ পালের এই ভুবন জুড়ে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, অমলা শঙ্কর বা অভিনেতা অসিতবরণের মতো সুহৃদপ্রতিম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। প্রশান্ত বলেন, বীরেন ভদ্র প্রায়ই বাবার কাছে আসতেন। কোনও কোনও দিন কাজ থেকে তুলে বন্ধু রমেশকে পাকড়াও করে হয়তো নিয়ে গেলেন আকাশবাণী ভবনে। বাঙালির চিন্ময়ী দেবীমূর্তির দুই চিরকালীন ভাষ্যকার, হয়তো এ ভাবেই কারও স্মৃতিতে মর্মরিত হয়ে আছেন।
২০১২ সালে রমেশের মৃত্যুও নিচু তারে বাঁধা। তার বছর পাঁচেক আগে মধ্য-আশি পেরিয়েও শিল্পী পার্ক সার্কাসে কাজ করেছেন। শতবর্ষে রমেশ পালের স্টুডিয়োয় একটাও ঠাকুরের বায়না নেই। প্রশান্ত ছাড়া পরিবারের কেউ সে ভাবে মূর্তি গড়েন না। বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল, এমন একটা খড়বাঁধা মাথা-কাটা কাঠামো পড়ে আজ দু’বছর! দৃশ্যটা প্রতীকী। ভাঙাচোরা টিনের চালের নীচে গোটা তল্লাট ছেয়ে মাটি, প্লাস্টার অব প্যারিসের অজস্র মুখ বা শরীরের ছাপ। পুরু ধুলো ঢাকা মার্ক্স থেকে রবীন্দ্রনাথ, কিছু অসমাপ্ত ভাস্কর্য, বিস্মৃত শিল্পসমালোচক বা হাইকোর্টের কবেকার বিচারপতির আবক্ষ মূর্তি। ইঁদুর, বেড়ালদেরও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ফরিদপুরের যুবক কলকাতা শাসন করেও নির্মম ভাবে বিস্মৃতি ও নিস্পৃহতার মোড়কে ঢাকা।
মণ্ডপে তাঁর প্রতিমার নীচে এক সময়ে স্পষ্ট হরফে লেখা থাকত, ভাস্কর রমেশচন্দ্র পাল। মানে পাল হয়েও তিনি পোটোপাড়ার পালমশাই নন। এত দিন বাদে সেই উচ্চারণ যেন আত্মপরিচয়ের একটা করুণ লড়াই। বাঙালি তাঁকে মনে রাখুক না রাখুক, রমেশ পাল হারেননি। চার পাশের মধ্যবিত্ততা বা ক্ষমতার দম্ভের মাঝে তাঁকে শাপভ্রষ্ট রাজপুত্তুরের মতোই একলা, অনন্য মনে হয়।