একশো বছর আগে আবিষ্কৃত হরপ্পা আর মহেঞ্জোদারো। মিলেছিল নর্তকী কিংবা রাজর্ষি মূর্তি। কিন্তু পাঠ করা যায়নি সিন্ধুলিপি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় কি সম্ভব হবে এই লিপির পাঠোদ্ধার?
Bengali Story

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুঁজবে সিন্ধুলিপির রহস্য

তুলনামূলক ইতিহাসবিদ স্টিভ ফার্মারের মাধ্যমে দশ হাজার ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেন এক অজ্ঞাত দাতা, যিনি সিন্ধুলিপি পড়তে পারবেন, তাঁর জন্য।

Advertisement

অতনু বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২২ ০৫:৪১
Share:

প্রত্নবস্তু: হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নর্তকী ও রাজর্ষির মূর্তি। ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমন্স

বাঙালির ফ্যান্টাসি জগতের সুপার-বিজ্ঞানী হলেন প্রোফেসর শঙ্কু । কত রকমের তাঁর আবিষ্কার। ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও কোচাবাম্বার গুহা’ গল্পে শঙ্কু পরিষ্কার বলেছেন, সিন্ধু সভ্যতার লেখার মানে প্রথম বের করেন তিনিই। সেই জ্ঞান সর্বজনের নাগালে পৌঁছলে ভারতবর্ষের ইতিহাসের অনেক অজানা জিগ্‌স পাজ়ল জোড়া লেগে যেত অনায়াসে। থেমে যেতে পারত অতীত ভারতবর্ষ নিয়ে সম্ভব-অসম্ভব অনেক বাগ্‌বিতণ্ডা।

Advertisement

ফ্যান্টাসি ছাড়িয়ে ঢুকে পড়া যাক বিস্মৃত ইতিহাসের পাতায়, ফ্যান্টাসির চেয়ে যা অবশ্য কম কিছু নয়। মোটামুটি একশো বছর আগের এই সময়ে সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো এক মৃত সভ্যতার কঙ্কালকে মাটি খুঁড়ে মুক্তি দেওয়ার কাজ চলছে জোর কদমে। সে অনেক যুগের মরা ধন, পৃথিবীর কবর উন্মোচন করে ১৯২১-এ হরপ্পা আর ১৯২২-এ মহেঞ্জোদারো-কে নতুন করে আবিষ্কার করার কৃতিত্ব অনেকটাই দয়ারাম সাহানি আর রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গত এক শতক ধরে সেই মৃতের সমাধির স্থবির হৃৎপিণ্ড নিংড়ে দূর-অতীতের থেমে-যাওয়া স্পন্দন সন্ধানের সাধনা চলেছে। ভারতের অতীত সভ্যতা, তার সংস্কৃতির হদিশ যে রয়েছেএর মধ্যে।

সিন্ধু সভ্যতা যেন সভ্যতার ইতিহাসেও এক অবাক বিস্ময়। এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে হাজারের উপর জনপদ, দশ লক্ষ মানুষের বসতি নিয়ে গঠিত ব্রোঞ্জ যুগের এই উত্তুঙ্গ সভ্যতা কী ভাবে ধ্বংস হয়ে গেল, তাও তো এক রহস্য। সিন্ধু উপত্যকার কত গল্পও থেকে গিয়েছে অধরা। আমরা মিশরীয় কিশোর রাজা তুতানখামেনের মমি এবং সমাধির রহস্য আর তার গল্পকথার কল্পনায় মোহিত হই। সিন্ধু-জনপদ গুজরাতের লোথালের যৌথ কবর, যেখানে একজোড়া নারী-পুরুষ পরস্পরেরদিকে মুখ করে শোয়ানো, তার চেয়ে কম কিসে! একশো বছর ব্যাপী তেমনই কিছু রহস্য নিয়ে আজকের এই আলোচনা।

Advertisement

সিন্ধু রহস্যের পরতে পরতে অনেক জটিল জট। যেমন, নর্তকীর মূর্তি। ১৯২৬ সালে মহেঞ্জোদারোতে ধ্বংসাবশেষ খুঁড়ে সাড়ে দশ সেন্টিমিটার লম্বা ব্রোঞ্জের ছোট্ট এক মূর্তি খুঁজে পান দয়ারাম সাহানি। বলিউড যতই নাচনি মেয়ের রহস্যে ব্যবসার মশলা খুঁজে পাক, ব্যাক-ব্রাশ করা চুল আর দাড়িওয়ালা ‘কিং প্রিস্ট’ বা রাজর্ষির সঙ্গে এই পঞ্চদশীও নিঃসন্দেহে সিন্ধুতীরের এক অজানা রহস্য। দৃপ্ত উন্নত মস্তক এই মেয়ের। বালুচি শৈলীর ছাঁচে ঢালা অপরূপ মুখশ্রী। স্ফুরিত ওষ্ঠযুগল, পিছনে সামান্য হেলানো মাথা, প্রশস্ত নাক, বাঁকানো চিবুক, কোঁকড়ানো গোছা গোছা চুল, চওড়া কপাল, অহঙ্কারী দৃষ্টি তার বড় বড় দু’চোখে। তার নিরাবরণ দেহশৈলীর অনুপম বর্ণনা আছে মহেঞ্জোদারোর প্রত্নতাত্ত্বিক জন মার্শালের লেখায়। বাঁ হাতে পঁচিশটির মতো চুড়ি, কব্জি থেকে কাঁধ পর্যন্ত সাজানো। থর মরু-অঞ্চলের রমণীদের মতো। সে হাত বাঁকানো, ছোট্ট একটি বাটি ধরা। অর্ধ-লজ্জাহীন ভঙ্গিতে নিতম্বের উপরে সে হাত। ডান হাতে চারটি চুড়ি। তিনটি বড় পেনডেন্ট দেওয়া একটা নেকলেস তার গলায়। নিরাবরণ দেহে শুধু এটুকুই আভরণ। সামান্য এগনো বাঁ পা হাঁটু থেকে অল্প ভাঁজ করা। তার শরীরের বিভঙ্গে প্রাচীন নৃত্য ও নাট্যশৈলীর প্রকাশ খুঁজে পেয়েছেন সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতত্ত্ববিদরা। আর তাই তাকে নৃত্যশিল্পী হিসেবেই মেনে নিয়েছিল দুনিয়া।

সাম্প্রতিক গবেষকরা অবশ্য অন্যান্য ধারণা নিয়েও লোফালুফি করছেন। সিন্ধু সভ্যতার ৪২০ নম্বর সিলকে শিবপুজোর প্রমাণ হিসেবে ধরে নিয়ে কেউ একে বলেছেন দেবী পার্বতী। মেয়েটির বাঁ হাত ভর্তি চুড়ি আর প্রায়-শূন্য ডান হাত দেখে কেউ তাকে ভেবেছেন শ্রমজীবী মেয়ে। ইন্ডিয়ান আর্টের ইতিহাসবিদ নমন আহুজা আবার মনে করেছেন, মেয়েটি ছিল যোদ্ধা। হয়তো বা রানি লক্ষ্মীবাই বা রানি রুদ্রামার মতোই। এই নগ্নিকাকে নিয়ে রহস্য তাই ঘনীভূত হতেই থাকে।

সিন্ধু সভ্যতার আর এক জটিল রহস্য তার ইউনিকর্ন বা একশৃঙ্গ অশ্ব। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রধানত চৌকো সিলগুলোতে খোদাই করা রয়েছে অনেক জন্তু-জানোয়ারের মূর্তি। আশ্চর্যের এই যে, অন্য সকল জন্তুই বাস্তবের হলেও সেখানে রয়েছে এক কাল্পনিক জীব, ইউনিকর্ন। রূপকথার একশৃঙ্গ ঘোড়ার মতো জন্তু। ‘একশৃঙ্গ অভিযান’ গল্পে শঙ্কুর বকলমে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সত্যজিৎ রায়ও। যাই হোক, ইউনিকর্ন যে সিন্ধু রহস্যকে প্রবলতর করে তুলেছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোতে মোট পাওয়া সিলের প্রায় তিন-চতুর্থাংশতেই এই ইউনিকর্ন। হরপ্পা থেকে পাওয়া বিশেষ দু’টি মাটির সিল পরীক্ষা করে জন মার্শাল অবশ্য মনে করেছেন তা আসলে কোনও গবাদি পশুর মূর্তি, এমন ভাবে খোদাই করা হয়েছে যে পশুটির একটা শিং ঢাকা পড়েছে অন্য শিংয়ের আড়ালে। তবু, ইউনিকর্নের রহস্য শেষ হয় না। ২০১৫ সালে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে সত্যজিতের জীবনীকার অ্যান্ড্রু রবিনসন আবার আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন সিন্ধু সভ্যতার এই ইউনিকর্ন-বিস্ময়ের কথা।

অবশ্য প্রধানতম সিন্ধু রহস্য তার অজানা লিপি। এই লিপির নমুনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৩৭০০টি সিল আর ৪০০র বেশি অন্যান্য বস্তুতে। দশকের পর দশক ধরে তা পড়ার চেষ্টা চালিয়েছেন পণ্ডিতরা, বিশেষজ্ঞরা। ২০০৪ সালে তুলনামূলক ইতিহাসবিদ স্টিভ ফার্মারের মাধ্যমে দশ হাজার ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেন এক অজ্ঞাত দাতা, যিনি সিন্ধুলিপি পড়তে পারবেন, তাঁর জন্য। না, এখনও পর্যন্ত বাস্তবের কোনও প্রোফেসর শঙ্কু এই পুরস্কার দাবি করেছেন বলে জানা নেই!

সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার স্পষ্টতই সহজ হত, যদি কোনও দ্বিভাষিক কিংবা বহুভাষিক প্রত্ন-নিদর্শন পাওয়া যেত সিন্ধু সভ্যতার।

যেমন করে ১৭৯৯ সালে নীল নদের উপত্যকার রাশিদ বা রোসেটা শহরে আবিষ্কৃত রোসেটা স্টোন জাদুকাঠির মতো খুলে দিয়েছে ছবিনির্ভর মিশরীয় হায়রোগ্লিফ্‌স-এর বন্ধ দুয়ার। রোসেটা স্টোনে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় এবং দ্বিতীয় শতকের রাজা পঞ্চম টলেমি-র ডিক্রি খোদাই করা আছে তিনটি ভাষায়— মিশরীয় হায়রোগ্লিফ্‌স, প্রাচীন গ্রিক, আর মিশরীয় ডেমোটিক। এর মধ্যে প্রাচীন গ্রিক আজও পড়তে পারেন স্কলাররা। তাই পড়া সম্ভব হয়েছে হায়রোগ্লিফ্‌স। সকল প্রাচীন ভাষার বন্ধ দরজা খোলার জন্য অবশ্য এমন বহুভাষিক প্রত্নতাত্ত্বিক রসদ মেলে না। যদিও অনেকে মনে করেন, সিন্ধুলিপির কোনও ‘রোসেটা স্টোন’ মিলতেও পারে ভবিষ্যতে, হয়তো বা মেসোপটেমিয়াতে। মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে যে সুদৃঢ় বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল সিন্ধু উপত্যকার।

যাই হোক, পণ্ডিতরা বহুধা-বিভক্ত— সিন্ধুলিপি কী সংস্কৃত কিংবা দ্রাবিড়ীয় কোনও লিপির পূর্বসূরি? নাকি মুন্ডার মতো কোনও ভাষার? নাকি এ এমন কোনও লিপি যার উত্তরাধিকার ওই মৃতের সমাধিতে চাপা পড়ে হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে? ২০১৫তে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা-পত্রে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন অ্যান্ড্রু রবিনসন। অনেক পণ্ডিত এমনও মত প্রকাশ করেছেন যে, সিন্ধুলিপি হয়তো আদপে কোনও লিখিত লিপিই নয়। গত শতকের সত্তরের দশকে সিন্ধুলিপি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন ইরাভাথাম মহাদেবন। আবার প্রায় ৪০০০ সিল, স্ট্যাম্প ইত্যাদিতে পাওয়া সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ সালে মূল্যবান বই লিখেছেন হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আস্কো পারপোলা। অধ্যাপক পারপোলা কিন্তু মনে করেছেন, সিন্ধুলিপি মোটামুটি ভাষাগতই।

প্রোফেসর শঙ্কু ঠিক কী পদ্ধতিতে পড়েছিলেন সিন্ধু সভ্যতার ভাষা, তার অক্ষর, সে তো একান্তই অজানা। তবে বাস্তবের দুনিয়াতে সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারের এই প্রচেষ্টা এক গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কয়েক দশক ধরে। সর্বজনগ্রাহ্য কোনও সমাধানের কথা শোনা যায়নি। এক নতুন ভঙ্গিতে, নতুন দিশায় সেই প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। জীবনের অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অজানা লিপির পাঠোদ্ধারেও ঘটাতে চলেছে বিপ্লব। সমস্ত চিহ্ন, অক্ষর ইত্যাদির অসংখ্য বিন্যাস-সমবায় আর সংশ্লেষণের সোনার কাঠির জাদুতে এবং কোনও এক অনির্ণেয় চিচিং ফাঁক মন্ত্রের ম্যাজিকে অজানা লিপির অন্তর্বস্তু তন্নতন্ন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ধার করে আনছে তার অন্দরে যুগান্তব্যাপী বন্দি বিস্মৃত ভাষাকে। অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিস্মৃত অজানা ভাষার অবগুণ্ঠন উন্মোচন প্রথম হয়েছে প্রায় সাত দশক আগে, ১৯৫৩তে, যখন ‘লিনিয়ার বি’ নামক প্রাচীন গ্রিক ভাষার রহস্য ভেদ হয়। মাইসিনিয়ানরা কথা বলতেন এই ভাষায়। তার পর থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিবর্তন ঘটেছে বিস্তর। নানা ক্ষেত্রে। বিস্মৃত ভাষার মনের কথা বুঝতে এর ব্যবহারের হারও বেড়েছে। তবে সব ভাষার জটিলতা তো এক রকম নয়। সিন্ধুলিপি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি জটিল। তবু চলতে থাকে তাকে বুঝবার সাধনা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দাবায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে সহজে হারানো, কিংবা সৌদি-নাগরিক সোফিয়ার মতো কোনও রোবটকে দিয়ে চোখা চোখা প্রশ্নের শাণিত বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেওয়ানো যত সহজ, অজানা ভাষার পাঠোদ্ধার করা ততটা অনায়াসসাধ্য নয়। সাধারণ ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের একটা সমস্যা হচ্ছে তার অ্যালগরিদমের ‘ট্রেনিং’ বা প্রশিক্ষণ দরকার, জানা কিছু মানদণ্ডের সঙ্গে তার তুলনার মাধ্যমে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা তখন সংশ্লেষণের মাধ্যমে ফুলে-ফেঁপে ওঠে। কিন্তু হারানো ভাষার ক্ষেত্রে কোনও পুরনো জানা মানদণ্ড তো একেবারেই অনুপস্থিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খানিকটা হোঁচট খাচ্ছে সেখানে। তবু, এ বিষয়ে গত তিন-চার বছরের গবেষণা আশার আলো দেখাচ্ছে।

২০১৯-এ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির দুই বিজ্ঞানী জিয়ামিং লুও ও রেজিনা বারজ়িলে, গুগলের এক বিজ্ঞানী ইউয়ান কাও একযোগে হারানো ভাষার স্বয়ংক্রিয় পাঠোদ্ধারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর এক পদ্ধতি বের করেন। তাঁদের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় ‘লিনিয়ার বি’ আর ‘উগারিটিক’—এই দুই ভাষার উপরে। দু’টি ভাষাই অবশ্য পড়া গিয়েছে আগে। ‘উগারিটিক’ তিন হাজার বছরের পুরনো ভাষা— হিব্রু, আরবি এবং অ্যারামিক গোত্রের। এই নতুন আবিষ্কৃত পদ্ধতির প্রয়োগে ‘উগারিটিক’-এর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ সুফল পাওয়া গেল, আর ‘লিনিয়ার বি’র ক্ষেত্রে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই অনুবাদ করা গেল গ্রিক ভাষায়।

২০২০-তে এই গবেষকরা এবং তাঁদের আরও কিছু সহ-গবেষক মিলে বের করলেন আর এক নতুন অ্যালগরিদম, যা কাজ করবে এমন ভাষার জন্য যার লিপি এমনকি অক্ষরেও বিভক্ত নয়। সেই সঙ্গে ভাষার নিকটতম জীবিত আত্মীয় অজানা থাকলেও তা হবে কার্যকরী। ‘গথিক’ এবং ‘উগারিটিক’-এর মতো দু’টি ইতিমধ্যেই পড়তে-পারা প্রাচীন ভাষার ক্ষেত্রে এই অ্যালগরিদম কাজ করল ঠিকঠাক। তার পর এই পদ্ধতির প্রয়োগ হয় ‘আইবেরিয়ান’ নামের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের অজানা ভাষার ক্ষেত্রে। ‘আইবেরিয়ান’-এর নিকটতম ভাষা নিয়ে নেই কোনও সহমত। গ্রিক হতে পারে, ল্যাটিন হতে পারে, হতে পারে বাস্ক ভাষাও। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্বলিত এই নতুন অ্যালগরিদম কিন্তু রহস্যোদ্ধার করেছে অজানা আইবেরিয়ানের।

তাই আশা করাই যেতে পারে যে, অদূর ভবিষ্যতে এই দিশায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরও বিবর্তনের পরিণামে প্রকাশিত হবে সাড়ে চার হাজার বছর আগেকার সিন্ধুতীরের নাগরিক জীবনকথার অজানা রহস্যের অনেকখানি। হয়তো উন্মোচিত হবে তথাকথিত নাচনি মেয়ের পরিচয়। আরও অনেক অজানা অবরুদ্ধ কান্না-হাসির ইতিহাস। যা ওই ইউনিকর্নের রহস্যের মতোই অস্পষ্ট, ধূসর, স্বপ্নমদির রূপকথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement