ছবি: কুনাল বর্মণ
আমার সিটের পাশে এসে দাঁড়াল বৌটা। অফিসের কাজে বড়ভূম গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে বাসে বাড়ি ফিরছি। বৌটার দিকে চোখ পড়ল। জনজাতিভুক্ত কেউ। বয়স কুড়ি-বাইশ হবে। রং ময়লা। কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। বৌটা মাথায় বেশ লম্বা। একটা সিট আগে এক জন নেমে যেতে বৌটা তার জায়গায় বসল।
বাস চলেছে। বড়ভূম থেকে পুরুলিয়া। আরও এক ঘণ্টা। সন্ধে হয় হয়। সারা দিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ মানুষজনের কথাবার্তায় চোখ মেলে দেখলাম, বাস পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছে। সাতটা বাজে। বাস থেকে নামতেই চোখে পড়ল, সেই লম্বা বৌটা উত্তেজিত হয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে কথা বলছে। স্বাভাবিক কৌতূহলে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সাংবাদিকতার সূত্রে প্রায়ই জনজাতি অঞ্চলে যেতে হয়। ওদের কথা বুঝি। বলতেও পারি। কিছু ক্ষণ দু’জনের কথা শুনে বুঝলাম, বৌটা ভুল করে উল্টো দিকের বাসে উঠেছে। ও যাবে বড়ভূমের দু’স্টপেজ আগে ঝিরকিটিয়ায়। কাউকে জিজ্ঞেসও করেনি। কন্ডাক্টরও ভাড়া চায়নি। তা হলে এই কাণ্ড হত না।
জিজ্ঞেস করলাম, “এখন কী বড়ভূম যাওয়ার কোনও বাস আছে?”
কন্ডাক্টর জানাল, সেই সকালের আগে কোনও বাস নেই।
বাস ডিপো ফাঁকা হয়ে গেছে। চলে যেতে গিয়েও থমকে গেলাম। বৌটা হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি এখন কোথায় যাবে?”
সে বলল, “ঝিরকিটিয়ায়। ওখান থেকে গ্রাম।”
বললাম, “ঝিরকিটিয়া এখান থেকে দু’ঘণ্টা। আজ আর কোনও গাড়ি নেই। এখানে রাত কাটাবার মতো চেনাজানা কেউ আছে?”
“কেউ নেই।”
“তা হলে কোথায় থাকবে?”
বৌটার মুখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারছিলাম ভয় পেয়েছে। আস্তে আস্তে বলল, “জানি না।”
বুঝতে পারছিলাম রাতের জন্যে একটা নিরাপদ আশ্রয় প্রয়োজন। অল্পবয়সি বৌ। চার দিকে বিপদের আশঙ্কা। বললাম, “এখানে রাতে থাকতে পারবে না। টাকা থাকলে কোনও হোটেলে ব্যবস্থা করা যেত।”
বৌটা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। দু’চোখে গভীর আকুলতা। রাত বাড়ছে। এই অবস্থায় ওকে একা ফেলে রেখে চলে যেতে মন চাইছিল না। দ্বিধা কাটিয়ে বললাম, “কাছেই আমার বাড়ি। তুমি যাবে? বাড়িতে আমার মা আছে।”
সঙ্গে সঙ্গে বৌটা বলল, “যাব।”
দ্বিধাহীন। অকপট।
বাজার পেরিয়ে বাড়ি। বারান্দায় বসে ছিল মা। সব বললাম। জানতাম মা আপত্তি করবে না। বলল, “ভাল করেছিস।” বৌটাকে জিজ্ঞেস করল, “কী নাম তোমার?”
“মালু।”
“ভেতরে এস। ভয়ের কিছু নেই। এটা তোমার বাড়িই ভাবো।”
দেখলাম বেশ সহজ ভাবেই মালু মায়ের পেছনে ঘরে ঢুকে পড়ল। মা বরাবরই খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বাইরের জামাকাপড় বাড়ি ফিরে ছাড়তে হয়। পাশের ঘর থেকে শুনতে পেলাম মা মালুকে বলছে, “তোমার সঙ্গে তো কিছু নেই দেখছি। আমি তোমাকে কাচা কাপড়, সায়া, ব্লাউজ় দিচ্ছি। বাথরুমে হাত-মুখ ধুয়ে নতুন কাপড় পরে এস। আমি খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
মালু বাথরুম দেখেই বলল, “আমি ওখানে ঢুকতে পারব না। আমার ভয় করে। আমি পুকুরে যাব।”
বুঝলাম মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে বড় হওয়া মালু চার দেওয়ালের মধ্যে ভয় পায়। মা-ও বুঝতে পেরেছিল, বলল, “এখানে পুকুর নেই। বাড়ির পিছনে বাগান, পাঁচিল দেওয়া। চৌবাচ্চা আছে। সেখানে চলো। কোনও অসুবিধে হবে না।”
আমার ঘরের মধ্যে দিয়ে বাগানে যাবার রাস্তা। মা ওকে নিয়ে গেল। মালুর গলা পেলাম। বলছে, “কত জল! এখানে আমি চান করব।”
আকাশের নীচে চৌবাচ্চাকেই পুকুর ভেবে নিয়েছে মালু। বালতি করে জল ঢালছে। ঝপ ঝপ করে জল পড়ার আওয়াজ আসছে।
মা বলল, “ডিম কিনে আন। সব নিরামিষ রান্না। মেয়েটার জন্যে ডিমের ঝোল করে দিই।”
সারা দিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত লাগছিল। বেরোতে ইচ্ছে করছিল না। তবু গেলাম। ফিরে এসে দেখলাম স্নান সেরে মায়ের শাড়ি পরে চুল এলো করে ঘরের মেঝেয় বসে আছে মালু। চা খাচ্ছে।
জানতে চাইলাম, “কোনও অসুবিধে হচ্ছে মালু?”
খিলখিল করে হেসে ওঠে মালু, বলে, “মা খুব ভাল।”
মজা করে বললাম, “আমি তোমাকে নিয়ে এলাম! আমাকে তো ভাল বললে না।”
মালু বোধহয় আমার রসিকতা বুঝতে পারে। বলল, “ভাই, তুমিও খুব ভাল।”
কোনও কৃত্রিমতা নেই। বাইরের মানুষ। কেউ মা, কেউ ভাই।
বললাম, “কোথায় গিয়েছিলে?”
মালু চা খেতে-খেতে বলল, “দলুইপুরে মায়ের কাছে। চার দিন আগে এসেছিলাম। মা বলেছিল আজ থেকে কাল ফিরতে।”
বললাম, “তা হলে থেকে গেলে
না কেন? বরের জন্যে মন কেমন করছিল বুঝি?”
লজ্জার আভায় মালু রাঙা হয়ে ওঠে। তার পরই হাসিতে ফেটে পড়ে। রান্নাঘর থেকে মা বেরিয়ে বলে, “কী হল মালুর এত হাসি কেন?”
বললাম, “মায়ের কাছে গিয়েছিল। বরের জন্যে মন কেমন করছিল, তাই আর থাকতে পারেনি।”
“কত দিন বিয়ে হয়েছে?”
“চার মাস।”
মা-ও মজা করে বলে, “তা হলে তো মন কেমন করবেই!”
মালু তাড়াতাড়ি বলল, “আমার মন খারাপ লাগছে না,” তার পর হঠাৎ আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, “তুমি কী করো?”
একটা খবরের কাগজ বার করে বললাম, “আমি এতে লিখি।”
ও আমার কথা কী বুঝল, কে জানে। মায়ের রান্না হয়ে গিয়েছিল। বললাম, “আগে মালুকে দাও। পরে তুমি আমি এক সঙ্গে খাব।”
গাঁয়ের মেয়ে, একটু বেশি খায়। টেবিলে-চেয়ারে বসে খাবার অভ্যেস নেই। মাটিতেই আসন পেতে থালা সাজিয়ে দেয় মা। বোধহয় খিদে একটু বেশিই পেয়েছিল। তাড়াতাড়ি খেতে আরম্ভ করে। কয়েক মিনিটে সব শেষ। আবার খাবার দেয় মা। আমাদের দু’জনের সবটুকুও উড়ে যায়। আবার রান্না বসায় মা।
ঘরের মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়ে পড়ে মালু। আমরা খেতে খেতে শুনতে পাই মালুর নাক ডাকছে।
একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠি। দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মালু উঠে বাগানে যাচ্ছে। খানিক পরে ফিরে এল। ওর নিজের কাপড় পরেছে। হাতে মায়ের কাপড়।
ওর পুরনো ব্যাগটা ফেলে মা নতুন ব্যাগে কাপড়টা ভরে দেয়। বলে, “এটা তোমাকে দিলাম। আর এই একশো টাকা রেখে দাও মিষ্টি খাবে।”
কোনও কথা বলল না মালু। লক্ষ করলাম ওর চোখের কোণে জল।
বেলা বাড়তেই বেরোলাম। সকালে বাসস্ট্যান্ডে ভিড় নেই। বড়ভূমের বাস দাঁড়িয়ে। ঝিরকিটিয়া হয়ে যাবে। টিকিট কেটে কন্ডাক্টরকে বলে দিলাম ওকে জায়গায় নামিয়ে দিতে। বাস ছাড়ে। জানলা দিয়ে হাত নাড়ে মালু। আমিও হাত নাড়ি।
ঘরে ফিরি। খবর জোগাড় করে রাতে অফিসে রিপোর্ট করতে হবে। ফাঁকা সময় নেই। কাজ আর কাজ। কাজের চাপে জলের দাগের মতো মনের পাতা থেকে মুছে যায় ঝিরকিটিয়ার মালু।
সময়ের নদী বয়ে চলে। বিয়ে করেছি, ছেলে হয়েছে। মা এখন নাতিকে নিয়ে সদাব্যস্ত। প্রোমোশন হয়েছে। কাজের চাপ বেড়েছে। মাঝে মাঝেই দূরে যেতে হয়। চার পাশের পরিবেশ আগের মতো নেই। সহজ-সরল জনজাতি হঠাৎ কেমন পাল্টে গিয়েছে। কাজের শেষে যারা ঘরে ফিরে বাঁশি বাজাত, তারা আজ বন্দুক তুলে নিয়েছে। দীর্ঘ দিনের শোষণ, বঞ্চনার হিসেব বুঝে নিতে চায়। সহ্য করতে পারে না শহুরে মানুষদের। শুধু সন্দেহ, অবিশ্বাস আর ঘৃণা।
অফিস থেকে নির্দেশ আসে, জনজাতি সংগঠনের এক বড় নেতার সাক্ষাৎকার নিতে হবে। সহজ কাজ নয়। সে কখন কোথায় থাকে, দলের লোকরাই জানে না। তবু চেষ্টা শুরু হল। আমার আগে যদি অন্য কাগজ তার সাক্ষাৎকার পেয়ে যায়, সেটা হবে আমার অযোগ্যতা।
হঠাৎ গোপন খবর আসে, বিকেলে সীতাপুর গ্রামে নেতা আসবে। জঙ্গলের ধারে গ্রাম। কখনও যাইনি। অচেনা রাস্তা। ফোটোগ্রাফার সুমিত বলল, ও চেনে। কয়েক বছর আগে গিয়েছিল। গ্রামের দু’-এক জনের সঙ্গে পরিচয়ও হয়েছিল।
আর কিছু না ভেবেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শহর পেরিয়ে আর জনবসতি নেই। মাঝে মাঝে গ্রাম, বাকি পথ ফাঁকা। হালকা জঙ্গল, দূরে পাহাড়। এই রাস্তায় বাস ছাড়া অন্য গাড়ি চলে না। গন্ডগোলের জন্যে আরও কমে গেছে। ঘণ্টাখানেক পর এক জায়গায় দেখলাম অল্প কিছু দোকান, লোকজন। জিজ্ঞেস করলাম সীতাপুর আর কতটা।
সকলের চোখে-মুখে কেমন সন্দেহের ভাব। এক জন একটু ইতস্তত করে বলল, “আপনারা সীতাপুরে কোথায় যাবেন?”
আমি কিছু বলার আগেই সুমিত বলল, এক জনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হচ্ছে।
লোকটা বলল, “সোজা গিয়ে ডান দিকে ছোট রাস্তার বাঁক। ওই রাস্তা ধরে সোজা সীতাপুর। এখন ও দিকে কেউ যায় না।”
বুঝতে পারছিলাম লোকটা সরাসরি বারণ না করে ঘুরিয়ে বলতে চাইছে। সাবধান করতে চাইছে। বললাম, “আমরা যাব আর আসব।”
দুটো বাজে। রোদের তাপ কম, তবু ঘেমে গিয়েছিলাম। দশ মিনিট যেতেই ডান দিকের কাঁচা রাস্তার বাঁক চোখে পড়ল। এত ক্ষণ সহজ ভাবে গাড়ি চালিয়েছি। হঠাৎ মনে হল বুকের ভেতর চাপা আতঙ্কের স্রোত বইতে আরম্ভ করেছে। সুমিতকে বললাম, “যা বলবি, খুব হিসেব করে বলবি।”
মাথা নাড়ল সুমিত।
ক্রমশ রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে আসছিল। বড় বড় গর্ত। লাফিয়ে উঠছে গাড়ি। যে-কোনও সময় দুর্ঘটনা হতে পারে। গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। পথের দু’ধারে জঙ্গল। হঠাৎ নজরে পড়ল গাছের আড়ালে একটা লোক। বুঝলাম পাহারাদার। খেয়াল রাখছে কে আসছে। হয়তো আরও লোক আছে।
সাত-আট মিনিট যেতেই চোখে পড়ল গ্রাম। পর পর মাটির বাড়ি। টিনের চাল। ঘরের সামনে হাঁড়িয়ার হাঁড়ি। কয়েকটা উলঙ্গ বাচ্চা খেলা করছে। একটা গাছের গায়ে মোটরসাইকেল হেলান দিয়ে রেখে বললাম, “সুমিত, তুই কি এই গ্রামে এসেছিলি?”
আমতা আমতা করে সুমিত, “অনেক দিন আগে এসেছিলাম। ঠিক মনে করতে পারছি না।”
“যার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, তার নামটা মনে আছে?”
“হ্যাঁ, পরান মাঝি।”
আমাদের দেখে দু’জন আদিবাসী এগিয়ে আসে। পরান মাঝির কথা জানতে চাইলাম। মাথা নাড়ে দু’জন। এ গাঁয়ে পরান মাঝি নামে কেউ নেই।
বুঝতে পারছিলাম সুমিতের কিছু করার নেই। যখন এসে পড়েছি, যা কিছু আমাকেই করতে হবে। বললাম, “আমরা খবরের কাগজ থেকে এসেছি তোমাদের কথা জানবার জন্যে। তোমরা কেমন আছ, তোমাদের দুঃখ কষ্ট, এই সব কিছু।”
ইচ্ছে করেই নেতার প্রসঙ্গ তুললাম না। দু’জনের মুখের দিকে চেয়ে মনে হল ওরা আমার কথা বিশ্বাস করল না। দেখলাম এক জন দু’জন করে লোক আসতে
আরম্ভ করছে। পাঁচ মিনিটে পনেরো-কুড়ি জন এসে আমাদের ঘিরে ফেলল। হঠাৎ এক জন বলল, “তোমরা পুলিশের লোক। আমাদের খোঁজখবর নিতে এসেছ।”
জানতাম এই সব গ্রামের লোক পুলিশকে ভীষণ ঘৃণা করে। ওদের বোঝাবার চেষ্টা করলাম আমরা পুলিশের লোক নই। কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কান দিল না। সকলেই রীতিমতো উত্তেজিত। এক জন বয়স্ক লোক কিছু বলতেই ওরা আমাদের প্রায় ঠেলতে ঠেলতে গ্রামের পিছন দিকে নিয়ে চলল। ভয়ে কাঁপতে আরম্ভ করেছি। বুঝলাম আর বাঁচার আশা নেই। আমাদের খুন করে জঙ্গলে ফেলে দিলে কেউ কোনও দিন জানতেও পারবে না। গলা শুকিয়ে আসছিল। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছিল। বাড়ির কথা মনে পড়ছিল। সুমিতের কথা শুনে কেন এখানে এলাম!
গোটা গ্রামের লোক এসে ভিড় করছে। যেন কোনও পশুকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে কেউ চেঁচিয়ে কিছু বলল। তার পরই ভিড় ঠেলে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। একটা বৌ, ছোট ছোট চুল। ভারী চেহারা। কিছু বলার আগেই আমার গায়ে হাত দিয়ে খুব আন্তরিক ভাবে বলল, “ভাই, কেমন আছিস? মা কেমন আছে?”
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি। বৌটা বলল, “চিনতে পারলি না! আমি মালু, সেই তোদের বাড়ি গেছিলাম। রাতে তোদের বাড়ি ছিলাম। কত কিছু দিলি!”
এ বার মনে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বলি, “আমরা পুলিশের লোক নই।”
এ বার মালু সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, “এ তো আমার ভাই। খুব ভাল। কেন ওদের ধরেছিস?”
দেখলাম সবাই এ-ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। এক জন বলল, “বুঝতে পারিনি। ভুল হয়ে গেছে।”
মালু আমার হাত ধরে বলল, “আমার ঘরে চল।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক জনের দিকে চেয়ে বলল, “মুরগি কাটো। ভাই এসেছে, মাংস-ভাত খাওয়াব।” তার পরই ফিক করে হেসে বলল, “আমার মরদ।”
বিশ্বাস করতে মন চাইছিল না। কয়েক মিনিট আগে আমাদের মাংস শেয়াল-কুকুরে ছিঁড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছিল, আর এখন আমরা মাংস-ভাত খেতে যাচ্ছি!
মালুর বাড়িতে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম করলাম। বিকেলে মালুর বর আমাকে নেতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। তার সাক্ষাৎকার নিলাম। বিকেলে যখন ফিরে আসছি, মালু আমাদের সঙ্গে গাড়ি পর্যন্ত এল। বললাম, “পারলে এক বার আমাদের বাড়ি এস। আমার ছেলে তোমাকে দেখলে খুব খুশি হবে।”
হঠাৎ কেমন আনমনা, উদাস হয়ে গেল মালু। বলল, “যদি বেঁচে থাকি, তোদের বাড়ি যাব। তোর ছেলেকে খুব আদর করব।”
বাড়ি ফিরে এলাম। কয়েকদিন পর খবর পেয়েছিলাম সীতাপুর গ্রামে পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেকে মারা গেছে। চেষ্টা করেও তাদের নাম জোগাড় করতে পারলাম না। জানি না তাদের মধ্যে মালু আছে কি না। তবু অপেক্ষা করে আছি। এক দিন মালু আসবে, আমার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বলবে, ‘আমি তোর পিসি, আমাকে চিনতে পারছিস না!’