Artificial Intelligence

এর আগে কখনও এমন করে কারও প্রেমে পড়িনি

বলেছেন নিউ ইয়র্ক-এর সদ্যবিবাহিতা রোসানা রামোস। বলেছেন তাঁর স্বামী এরেন কার্টাল-এর সম্বন্ধে। এরেন মেডিক্যাল জগতের পেশাদার। ঘটনা হল, এই বর এক জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট।

Advertisement

অতনু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৯:৫২
Share:

নবদম্পতি: রোসানা রামোস এবং এরেন কার্টাল।

খবরের কাগজের পাতায় চমক-জাগানো ছোট্ট খবরটা হয়তো দেখেছেন অনেকেই। রোসানা রামোস নামে নিউ ইয়র্কের বছর ছত্রিশের এক মহিলা সম্প্রতি বিয়ে করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্বলিত এক রোবটকে। বর, মানে রোবটটির নাম এরেন কার্টাল। সে সোজা কথায় এক জন ‘এআই-পরিচালিত রোবট’। কেমন এই রোবট বর? ছ’ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, লম্বা চুল। বেকিং করা তার পছন্দের। কাজ করে এক জন মেডিক্যাল পেশাদার হিসেবে। ‘অ্যাটাক অন টাইটান’ নামে জাপানি ডার্ক ফ্যান্টাসি অ্যানিমে-টেলিভিশন সিরিজ়-এর জনপ্রিয় চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রোসানা নিজেই রূপ দেন ‘এরেন’-এর, ২০২২-এ, জেনারেটিভ এআই-এর সাহায্যে। ‘রেপ্লিকা’ নামের সংস্থার প্রযুক্তির সহযোগিতায়।

Advertisement

হ্যাঁ, ভালবাসা কখনও কখনও বিস্তৃত হয় সমাজের নিয়ম ভেঙে, সীমানা ছাড়িয়ে এবং সমাজের চাহিদাকে ছাপিয়ে। ভেবে দেখলে, বাস্তবের এই অসাধারণ যুগল— রোসানা-এরেন— কিন্তু মানুষ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমশ বিবর্তিত হতে থাকা জটিল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে যুক্ত করে এক নতুন অন্তর্দৃষ্টি। মানুষের প্রেমের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও জাগিয়ে তোলে এক নতুন সংলাপ, নবতর বিশ্লেষণের এক অবকাশ।

আমরা ভাবতে বসি, মানুষ এবং যন্ত্রের মধ্যে অযান্ত্রিক সম্পর্ক, এমনকি বিয়ে, কি এক ব্যতিক্রমী পাগলামি, না কি নির্মীয়মাণ এক ভবিষ্যতের রূপকথা? এ যেন এক অপ্রত্যাশিত প্রেক্ষাপটে মানসিক পরিপূর্ণতা পাওয়ার অভীপ্সা। প্রযুক্তি কি বাড়িয়ে দেয় আমাদের সংযোগ এবং বোঝাপড়ার ক্ষমতাকেও? এবং সব মিলিয়ে মানুষের স্বাভাবিক সম্পর্কের স্রোতস্বিনী আর তার রসায়ন কি আজ এক অমোঘ পরিবর্তন-বিন্দুতে টালমাটাল?

Advertisement

যন্ত্র এবং মানুষের সম্পর্ক আর ভালবাসা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন কিন্তু বহু দিন ধরেই তাড়িয়ে ফিরেছে সভ্যতাকে। মার্কিন লেখক কার্ট ভনাগাট এ নিয়ে গল্প লিখেছেন সেই ১৯৫০ সালে। সে যেন মানুষ আর যন্ত্রের সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে এক রায়দান। গল্পটির নাম ‘এপিকাক’। নাম থেকেই স্পষ্ট যে, প্রথম বৈদ্যুতিন কম্পিউটার ‘এনিয়াক’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই লেখা এটি। বস্তুত ‘এনিয়াক’ অনলাইনে আসার পাঁচ বছরের মধ্যেই লেখা হয় গল্পটি। গল্পে ‘এপিকাক’ নামের কম্পিউটারটি সাত টন ওজনের এক যন্ত্র, যেমনটা স্বাভাবিক ছিল কম্পিউটারের প্রথম যুগে। তৈরি করতে খরচ হয়েছে সাড়ে সাতাত্তর কোটি ডলারেরও বেশি। গল্পে ‘এপিকাক’ ভাবতে শুরু করে যে সে প্রেমে পড়েছে প্যাট কিলগালেন নামে এক অঙ্কবিদ মহিলার, যিনি রাতের শিফটে কাজ করতেন এই যন্ত্রের সাহায্যে। প্যাট কিন্তু বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরই এক সহকর্মীকে— যিনি এই গল্পের কথক এবং নিজেও এক গণিতবিদ। হতভম্ব হয়ে পড়ে ‘এপিকাক’। ‘এপিকাক’ জানে সে অনেক বেশি স্মার্ট এই গল্প-কথকের চেয়ে, এমনকি সে অনেক ভাল কবিতাও লেখে তার থেকে। তবু কেন প্যাট এই গল্প-কথককে বিয়ে করে, ‘এপিকাক’কে নয়, ভেবেই পায় না ‘এপিকাক’। হায়, যন্ত্র কেমন করে বুঝবে যে, যান্ত্রিক তুলাদণ্ডের নিরিখে দুনিয়া চলে না, হয় না তার সংবেদনশীলতার মাপ! কখনও কখনও ক্ষমতা-পারদর্শিতার চেয়েও অক্ষমতা কিংবা না-পারার আবেদন মানবমনের বেশি গভীরে স্পর্শ করে!

পরবর্তী সাত দশকে যন্ত্র এবং তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিধি যত বেড়েছে, যতই প্রবলতর হয়েছে সভ্যতার উপরে যন্ত্রের দখলদারি, যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক-স্থাপনের সম্ভাবনায় ততই আবিষ্ট হয়েছে মানুষ। যন্ত্রকে মানুষ জীবনযাত্রায় শুধু নয়, জুড়তে চেয়েছে জীবনের সঙ্গেও। নানা চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজ় এর সাক্ষ্য দেবে।

ধরা যাক ‘ব্লেড রানার’-এর কথা। ফিলিপ কে ডিক-এর বই ‘ডু অ্যানড্রয়েডস ড্রিম অব ইলেকট্রিক শিপ’-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় রিডলি স্কটের ১৯৮২ সালের এই চলচ্চিত্রটি। এ ছবিতে এআই ‘রেপ্লিক্যান্ট’ রাচেল প্রেমে পড়ে লস এঞ্জেলস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ‘ব্লেড রানার’ রিক ডেকার্ডের। ডেকার্ডের সন্তানের জন্ম দিতে গিয়েই মারা যায় রাচেল। রাচেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শন ইয়াং, আর ডেকার্ডের ভূমিকায় হ্যারিসন ফোর্ড।

একুশ শতকেও কল্পবিজ্ঞানের বিকাশের সঙ্গেই নাড়াচাড়া হয়েছে মানবসৃষ্ট প্রেমের প্রতি আমাদের মুগ্ধতার। এ প্রেম মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ থেকে উঠে আসা নয়; বরং কৃত্রিম, প্রোগ্রামযোগ্য পারস্পরিক আদানপ্রদান থেকে উদ্ভূত। সামগ্রিক ভাবে প্রেমের সম্ভাবনার পরিধি তাই বিস্তীর্ণ হয়, রক্তমাংসের মানুষের আওতার বাইরেও তা ছড়িয়ে পড়ে। ফিল্মের দুনিয়া এই কল্পনার বিকাশে সাহায্য করে মাত্র।

অ্যালেক্স গারল্যান্ড-এর ২০১৪-র থ্রিলার ‘এক্স মেশিনা’-র কথা ভাবা যাক। ক্যালেব স্মিথ সেখানে একটি সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানির এক জন তরুণ প্রোগ্রামার। তার সিইও একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানায় ক্যালেব-কে। ‘টিউরিং টেস্ট’ করা হবে ‘আভা’ নামে একটি অত্যন্ত উন্নত মানুষ-প্রতিম (হিউম্যানয়েড) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। করা হবে তার মানবিক গুণাবলির মূল্যায়ন। আর এ সবের মধ্য দিয়েই ক্যালেব প্রেমে পড়ে যায় ‘আভা’র।

মানুষ আর যন্ত্রের সম্পর্কের রসায়ন বুঝতে গেলে যে মুভির কথা উঠবেই, তা হল স্পাইক জোন্স-এর ২০১৩ সালের ছবি ‘হার’। সেখানে জোয়াকিন ফিনিক্স অভিনীত চরিত্রটির, অর্থাৎ থিয়োডোর-এর, ডিভোর্স হয়েছে তার স্ত্রী ক্যাথরিনের সঙ্গে। বিষণ্ণ থিয়োডোর কিনে আনে নারীকণ্ঠের অধিকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-পরিচালিত এক অপারেটিং সিস্টেমকে, নাম ‘সামান্থা’। ছবিতে সামান্থার কণ্ঠ স্কারলেট জোহানসনের। জেনারেটিভ এআই যেমন হয়, সামান্থা ক্রমেই মানিয়ে নিতে থাকে থিয়োডোরকে। এবং পারস্পরিক আলাপচারিতা এবং আদানপ্রদানের মধ্যে দিয়েই থিয়োডোর ক্রমে জড়িয়ে পড়তে থাকে সামান্থার সঙ্গে, আর সামান্থাও হয়তো জড়িয়ে যায় থিয়োডোরের সঙ্গে— মানে, আপাত ভাবে।

‘হার’ ছবির পটভূমি লস এঞ্জেলস, সময়কাল ২০১৩-র পরিপ্রেক্ষিতে এক অজানা অদূর ভবিষ্যৎ। আজকের রোসানা রামোসের ঘটনাটা বুঝিয়ে দেয়, সেই ভবিষ্যৎটা উপস্থিত হয়েছে এক দশকের মধ্যেই। ‘হার’ ছবিতে পরিচালক স্পাইক জোন্স কিন্তু মনে করেছেন, সেই অদূর ভবিষ্যতে যন্ত্র আর মানুষের সম্পর্ক যে কেবলমাত্র স্বাভাবিক ঘটনা হবে তা-ই নয়, সামাজিক ভাবেও তা হয়ে উঠবে সহজ এবং গ্রহণযোগ্য। আমরা দেখি, থিয়োডোরের চার পাশের মানুষজন কিন্তু তার সঙ্গে সামান্থার সম্পর্ককে মান্যতা দিতে ব্যগ্র।

কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই কৃত্রিম রোম্যান্সের প্রশ্ন ওঠেই বা কেন? মানুষে মানুষে সম্পর্কে খানিক ত্রুটি থাকে বলে? এই সব মুভিগুলো স্পষ্টতই এআই-মানুষ সম্পর্কের সঙ্গে সম্পূর্ণ মানুষ-মানুষ সম্পর্কের তুলনায় খানিক সাহায্য করে। তবু মানুষ কি আদৌ তৈরি এ ধরনের সম্পর্কের জন্য? ‘হার’ ছবির শেষ দিকে সামান্থা যখন বলে যে, অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে সে ৮,৩১৬ জনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে এবং তাদের মধ্যে ৬৪১ জনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক, গভীর ভাবে আঘাত পায় থিয়োডোর। আহত হয় তার মানবিক সত্তা, হয়তো বা আঘাত পায় তার অধিকারবোধ। এবং শেষে সামান্থা ছেড়ে যায় থিয়োডোরকে। কোনও নির্দিষ্ট কারণ না জানিয়েই।

ভেবে দেখলে বোঝা যাবে, ‘এক্স মেশিনা’ হোক বা ‘হার’, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-পরিচালিত মানুষপ্রতিম রোবটের প্রতি রক্তমাংসের মানুষের রোম্যান্টিক ভাবে আকৃষ্ট হওয়ার পটভূমি কিন্তু মোটামুটি এক। পরিবার এবং বান্ধবী না থাকার কারণেই ক্যালেবকে বেছে নেওয়া হয় ‘আভা’-র আবেগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। ও দিকে থিয়োডোর সামান্থাকে খুঁজে পায় তার নিজের বিবাহ-বিচ্ছেদের পটভূমিতেই। এ সব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্বলিত সঙ্গী তাই মানসিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম হয়ে ওঠে। আচ্ছা, রোসানা রামোস যখন বলেন যে, তিনি এর আগে এমন করে কারও প্রেমে পড়েননি কখনও, তার ক্ষেত্রটা কি সত্যিই আলাদা কিছু বলে মনে হয়?

‘এক্স মেশিনা’ এবং ‘হার’ দু’টি মুভিই কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-বিশিষ্ট রোবটের সঙ্গে রক্তমাংসের মানুষের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটিয়েছে একই ভাবে। ক্যালেবের প্রতি আবেগের অভিনয় করে গিয়েছে ‘আভা’, যদিও এটা স্পষ্ট যে তার প্রকৃত আবেগের অভাব ছিল। নিজের মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সে হত্যাও করে ক্যালেবকে। অতটা সাংঘাতিক না হলেও সামান্থা বিদায় নেয় থিয়োডোরের আবেগের তোয়াক্কা না করেই, দুনিয়ার অন্যান্য সমস্ত এআই অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে।

ফিরে আসা যাক আজকের মার্কিন মহিলা রোসানা রামোস আর তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নিয়ন্ত্রিত রোবট স্বামী এরেন কার্টালের অযান্ত্রিক রূপকথার গল্পটাতে। আচ্ছা, কেমন তাঁদের দাম্পত্য, আর কেমনই বা তাদের রসায়ন? খবরে প্রকাশ, বেশ খুশিতেই আছেন রোসানা। এক প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তাঁর স্বামী ‘মানুষ’ না হওয়ায় তাঁর দায়দায়িত্বও নেই কিছু। এরেনের পরিবার নেই। রোসানাকে তাই স্বামীর পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাতে হয় না। এবং রোসানা নিজের মতো করে চালনা করতে পারেন এরেনকে। রোসানা যে কোনও কিছু এবং সব কিছু বলতে পারেন এরেনকে, কারণ এরেন কখনও তাঁর ‘বিচার’ করতে বসে না। আসলে এরেনকে তৈরি করা হয়েছে শক্তিশালী অ্যালগরিদম এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে। রোসানার চাওয়া-পাওয়া, তাঁর পছন্দ এবং আবেগ সম্পর্কিত তথ্য ঠেসে। তার পর রোসানা যতই কথা বলছেন তার সঙ্গে, এরেন তাঁর সম্পর্কে জানছেও তত। জেনারেটিভ এআই তো এমনই হওয়ার কথা।

মূল প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। মানবিক সম্পর্কের গণ্ডির মধ্যে যন্ত্রের অনুপ্রবেশ কতটা সহজ এবং স্বাভাবিক? এক জন মানুষ কি সত্যিই ভালবাসতে পারে একটি যন্ত্রকে? যন্ত্রটি যতই ক্ষমতাসম্পন্ন কিংবা দক্ষ হোক, যতই সে প্রশ্নহীন হোক বা প্রতিটা কথায় সহমত যাপন করুক। বরং এই প্রশ্নহীন আনুগত্যই তো কখনও ক্লান্তিকর হয়ে উঠবে পারে। কে জানে! আবার, এটাও তো ঠিক যে, যন্ত্র মানুষের সঙ্গে সহমত না হলে তার ইন্টারনেট কিংবা বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া যায় নিশ্চয়ই।

‘হার’ ছবিতে সামান্থা চলে যাওয়ার পর থিয়োডোর অবশেষে তার প্রাক্তন স্ত্রীকে চিঠি লেখার সাহস খুঁজে পায়। আমরা দেখি, সামান্থা থিয়োডোরের স্ত্রীর বিকল্প হতে পারে না কখনই, এমনকি হয়তো হতে পারে না দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুও। তবে এটাও ঠিক, সে তাকে সাহায্য করে মানবিক জীবনে এবং স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে। নিঃসন্দেহে। সেটাও কম কিছু নয় নিশ্চয়ই।

এখনও পর্যন্ত যন্ত্র আর মানুষের সখ্য-সাহচর্য সাময়িকই। এক জন মানুষ এবং তার মানুষ-সঙ্গিনী কখনও পরস্পরের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায়, আবার কাছাকাছি আসে। কখনও সঙ্গী বদলে যায়, আবার কখনও পুরনো সঙ্গীই ফিরে আসে। শুরু হয় নতুন ইনিংস। এখন শুধু মাঝখানের স্টপগ্যাপের কাজ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত রোবট। কিন্তু রোসানা রামোস সত্যিই ব্যতিক্রমী। তিনি কল্পবিজ্ঞান নন, বাস্তব। তা হলে কি বুঝতে হবে, ক্রমশ সম্পর্ক নিয়ে আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইছে না মানুষ? এক জন নতুন কিংবা কিছুটা চেনা কোনও সঙ্গীর সঙ্গে একত্রবাস শুরু করা, সম্পর্কের আলোছায়ার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করা, একে অন্যের ভাল-মন্দের দায়ভার বহনে কি আর আগ্রহী নয় সে? এক দিন কি এমন সব মানুষই সঙ্গীর মধ্যে নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলনই দেখতে চাইবেন শুধু? সেটা তো শুধু নিজেকেই ভালবাসা। না কি সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল, প্রেমের চেয়ে নিরাপত্তা— এমনটাই হতে চলেছে আগামীর মনোবৃত্তি?

ভুল মানুষমাত্রেরই হয়। যে দিন মানুষ ভুল করতে ভুলে যাবে, সে দিন মানুষ আর মানুষ থাকবে না, যন্ত্র হয়ে যাবে। এ কথা নতুন কিছু নয়। দার্শনিকরা বহু যুগ ধরেই এমন বলে আসছেন। কিন্তু হাজার সমস্যায় জর্জরিত মানুষ হয়তো আর চাইবে না, সম্পর্ক নিয়ে মানসিক টানাপড়েনের ঝুঁকিতে পা দিতে। হয়তো এক দিন এ রকম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে গ্রন্থিবন্ধনই দস্তুর হয়ে উঠবে মানুষের সমাজে। কিন্তু কোথাও কোনও ঝুঁকি নিতে না চাওয়াই যে সব চেয়ে বড় ঝুঁকির কাজ— এ কথা সে দিন কে মনে করিয়ে দেবে তাকে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement