ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ
পূর্বানুবৃত্তি: বিপুলকে খাইয়ে, ওষুধ লাগিয়ে অনিকেত যায় বাঘের জন্য নির্মীয়মাণ খাঁচার কাছে। সেখানে কাজ আশানুরূপ না হওয়ায় মিস্ত্রিদের তুমুল বকাবকি করে অনিকেত। বাঁশের মই বেয়ে নিজেই উঠে গিয়ে নতুন করে কাজ বোঝায় মিস্ত্রিদের। কিন্তু নামতে গিয়েই ঘটে দুর্ঘটনা। ফুট দশেক উপর থেকে মাটিতে পড়ে যায় সে। বুকে জোরে ধাক্কা লাগে তার। রক্তাক্ত অর্ধচেতন অবস্থায় সে দেখতে পায় অপালাকে। অপালাও ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে চেয়ে থাকে, তার পর ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে...
ওদিকে একটা অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়িয়েছে। সাইরেন বাজছে না, তবে মাথার নীল আলোটা ক্রমাগত ঘুরে চলেছে। চাঁদু একটা ভিজে রুমাল দিয়ে শায়িত দেহটার নাক-মুখ দিয়ে বেরিয়ে-আসা তাজা রক্ত আর বাঁ-হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিজের দু’চোখ মুছছে। জ়ু-এর অফিসার আর কর্মচারীরা যে যার মোবাইলে খুব সিরিয়াস মুখ করে কথাবার্তায় ব্যস্ত, অনিকেত অনুমান করে, কাছাকাছি যে তিন-চারটে
এলিট নার্সিংহোম আর হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলোয় নিজেদের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে গুরুতর আহত ডিরেক্টরকে অ্যাডমিট করানোর তোড়জোড় চলছে। ওর ভারী মজা লাগে। আচ্ছা তো! সামনে দাঁড়িয়ে-থাকা ডিরেক্টরকে পাত্তা দিচ্ছে না, পড়ে-থাকা শরীরটাকে নিয়ে বাবুদের যত আদিখ্যেতা আর মনোযোগ!
পায়ে পায়ে পিছিয়ে এসে অনিকেত ঝিলের ধারে একটা নিঃসঙ্গ বেঞ্চে বসে পড়ে। শরীরে কোনও ব্যথাবোধ নেই, বরং বেশ একটা আরামের অনুভূতি, যেন অনেক দিন বাদে খুব হালকা লাগছে নিজেকে। বহু বছর ধরে বুকে ভার হয়ে থাকা বেদনা আর অভিমানগুলো যেন তরল আকারে শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওকে দারুণ স্বস্তি দিচ্ছে আজ। আজকে ভিজ়িটরও বেশ কম মনে হচ্ছে অন্য দিনগুলোর তুলনায়। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন শান্তি কি আছে কোথাও? চোখের কোণ দিয়ে অনিকেত দেখতে পায়, একটা বাচ্চা ছেলে ওরই বেঞ্চটায় হাতখানেক দূরত্ব বজায় রেখে বসল। খটকা লাগতে মুখ ঘুরিয়ে সরাসরি দেখে চমকে উঠল, ‘‘অ্যাই, তুমি এখানে! দিনের বেলা কী করছ?’’
প্রকাশ্য দিবালোকে বিবেক বোস ওর সামনে আসবে, এটা ওর কল্পনাতেও ছিল না। সে তো আসে লুকিয়ে-চুরিয়ে, রাতের অন্ধকারে, যখন অনিকেত আর নিজের মধ্যে থাকে না। তার উপরে আবার পোশাকের কী বাহার! অনিকেত বহু বছর আগে ছেলে পিকুকে এক বার তার নার্সারি স্কুলের ‘গো অ্যাজ় ইউ লাইক’ অনুষ্ঠানে বাউল সাজে সাজিয়ে দিয়েছিল, তাতে সে ফার্স্ট প্রাইজ়ও পেয়েছিল, ঠিক সেই পোশাক। হাতে নকল একতারা, এমনকি স্কেচ পেন দিয়ে নাকের পাশে একটা বড় আঁচিলও করে দিয়েছিল— সেটা পর্যন্ত হুবহু নকল!
একতারাটায় আঙুল চালিয়ে মুখে পিড়িং করে শব্দ করে অনিকেতের মিনিয়েচার বিবেক বলে উঠল, ‘‘আমি এখানে মানে? তুমি যেখানে আমিও তো সেখানে, আগে দেখতে পেতে না কারণ দিব্যদৃষ্টি ছিল না। ধরণী তলে পপাত চ হয়ে সেটা এখন খুলে গিয়েছে। অ্যাস্ট্রাল প্রোজেকশন বলে একটা কনসেপ্ট সত্তর-পঁচাত্তর বছর ধরে চালু আছে, তুমি এখন সেটাই এনজয় করছ, বুঝলে! অবশ্য কাকে কী বলছি, লেখাপড়া তো আর ঠিক করে করলে না! এ দিকে পিএইচডি-টাও তো হল না, পায়ে পা বেধে এমন জব্বর হোঁচট খেলে, হেঁ-হেঁ।’’
রাগে অনিকেতের সর্বশরীর জ্বলে যায় একটা পাঁচ বছরের চেহারাকে ষাট বছরের জ্যাঠামি করতে দেখে, কিন্তু শরীর-মন এমন ফুরফুরে লাগছে যে, এইটুকু বেঁটে বক্কেশ্বরের সঙ্গে কবির লড়াইয়ের ইচ্ছে করছে না। তার উপরে, অমৃতং অমৃতং বালভাষিতম্। কথাটা স্মরণ করে ও স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল, ‘‘ডক্টরেট করতে পারিনি, তার জন্যে খোঁটা দিয়ে লাভ নেই। আমার কর্মজীবন আমাকে অনেকগুলো পিএইচডি-র অভিজ্ঞতা দিয়েছে। তুমি মুজতবা আলী সাহেবের লেখায় পড়োনি, ঘোড়ার পিএইচডি হয় না? এমনকি ঘোড়ার শিং-ও হয় না, হলে সে তো সিংহকেও চ্যালেঞ্জ করে বসত৷ অ্যাস্ট্রাল প্রোজেকশন আমাকে তোমার কাছে শিখতে হবে না, যে বার দুরারোগ্য অসুখে কোমায় চলে গিয়েছিলাম তখনই প্রথম আমার অভিজ্ঞতাটা হয়। কিন্তু একটা কথা বলো তো, আমাকে কষ্ট পেতে দেখলে তোমার এত আনন্দ হয় কেন?’’
ফুঁসে উঠল বাঁটকুল, ‘‘আনন্দ হবে না? কাউকে তুমি বারণ করছ কোনও একটা কাজ করতে, তোমার কথা না শুনে সে যখন জেদ ধরে সেটাই করতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে হয়, তখন তোমার আনন্দ হবে না? তখন তাকে বলতে ইচ্ছে করবে না, ‘টেক, নাউ আন্ডারস্ট্যান্ড দ্য পুশ’? তোমার প্রত্যেকটা কাজে আমি ভালমন্দ মতামত দিয়েছি কি দিইনি? তোমাকে না ছোটবেলা থেকে পইপই করে বলেছিলাম মেয়েদের থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে, শুনেছিলে গরিবের টাটকা কথা?’’
অনিকেতও এ বার মেজাজ হারায়, ‘‘তুমি কি অন্ধ? আমি কারও সামনেই কোনও দিন যাইনি, নিজের মতো একটা কোণ খুঁজে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, তুমি সেটা জানো না বলতে চাও? আরে বুদ্ধু, রাজপথে গাড়ি নামালে তুমি একা ভাল ড্রাইভার হলেই হবে না, আশপাশের গাড়িও যদি ট্রাফিক রুল মানে, তবেই তুমি অ্যাক্সিডেন্ট এড়াতে পারবে, কোনও জোরালো ইঞ্জিনের শক্তপোক্ত বড় গাড়ি যদি তোমাকে ড্যাশ করে, সে ক্ষেত্রে তোমার গাড়ি তো রাস্তা থেকে ছিটকে যাবেই।’’
বিবেক জোর গলায় ওকে বাধা দেয়, ‘‘ওইখানেই তো আমার আপত্তি! ঠিক আছে ভাই, অ্যাক্সিডেন্টে গাড়ি ছিটকে নয়ানজুলিতে পড়ে গিয়েছে, বুঝলাম। ভাল ড্রাইভার বা মালিক হলে কী করত? গাড়িটাকে তুলে, সারিয়ে-টারিয়ে নিয়ে আবার রাস্তায় বার করত। তুমি কী করলে? ওল্টানো গুবরেপোকা বা কচ্ছপের মতো চিত হয়েই পড়ে রইলে! অথচ যে গাড়ি ধাক্কা মেরে গেল, সে তো বহাল তবিয়তে রাস্তায় বিরাজ করতে লাগল।’’
অনিকেত ক্ষীণ গলায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, ‘‘তুমি কী করে জানলে যে, সেই গাড়ির শ্যাসি বা ইঞ্জিনে কোনও ক্ষতি হয়নি? ছোট গাড়িই হোক আর বড় গাড়ি, ধাক্কার একটা এফেক্ট তো থাকবেই।
হতে পারে বডিতে কোনও চোট দেখা যায়নি, তার মানে যে ইঞ্জিনেরও কোনও ক্ষতি হয়নি, তা তো নয়! আমার তো মন বলে যে, রোড অ্যাক্সিডেন্টে আমার মতো ছোট্ট টু-হুইলার হোক বা অন্নু-প্রীতের বড় দামি গাড়ি, কিছু ডেন্টিং তো থাকবেই কোথাও
না কোথাও!’’
নকল একতারায় আবার মুখে একটা বোল তুলে বিবেক বলে, ‘‘ওই আশাতেই থাকো, মানিকচাঁদ! তোমার মা যে কেন তোমায় চৈতন বলে না ডেকে মানিক বলে ডাকত, আমি ভেবে পাই না! শোনো তা হলে, অন্নু সিংয়ের জীবনে কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, ও নিজের জীবনের হাসি-আনন্দ-গান-মজা নিয়ে বহাল তবিয়তে কাটিয়েছে এবং কাটাচ্ছে। ওর বছরে এক-দু’বার করে হংকং-সিঙ্গাপুর শুধু নয়, মাঝে মধ্যে দুবাই-লন্ডন-প্যারিস-সুইৎজ়ারল্যান্ড যাওয়া আছে, ওর বিজয়ার রাতে এয়োদের সঙ্গে সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠা আছে, ওর এনজিও বা অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম-টোগ্রামও আছে, ওর বিয়েবাড়িতে নাচ-গান আছে, ওর সপরিবারে সোমনাথ-দ্বারকা-বৃন্দাবন-মথুরা-বারাণসী-গয়া ইত্যাদি তীর্থস্থান ভ্রমণও আছে। মোট কথা, একটা সুখী জীবনে যা-যা থাকার, স-অ-ব আছে! ভাল কথা, বেনারসে ওর বাড়ি তো তুমি দেখেই এসেছ, ওই যে যেখানে তুমি আমন্ত্রিতের মতো পৌঁছলে, অনাহূতের মতো থাকলে আর অবাঞ্ছিতের মতো চলেও এলে, মনে পড়ে না? তোমার কি মনে হয়েছিল যে, অন্নু সিং কোথাও, একটুও অসুখী?’’
বিবেকের দেওয়া খোঁচাটা অনিকেতের ব্যথার জায়গাতেই আঘাত করে। চোখ বুজে সামলে নিয়ে ও বলে, ‘‘ঠিক আছে, মানলাম সকলেই সুখে-শান্তিতে আছে, তাতে তোমার কী ক্ষতি হচ্ছে? এক জন ভদ্র ব্যক্তি হিসেবে তুমি কি চাও না ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ, সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ। সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ ভবেৎ— আমি তো চাই না, যে দুঃখ-কষ্টের ভাগ আমি বইছি, সকলেই তার শরিক হোক! আমার জীবনে অন্ধকার লেখা থাকলে অন্যের আলোকিত জীবনে আমি ঈর্ষা করব কেন?’’
খোকা-বিবেক ভেংচি কেটে ওঠে, ‘‘ওরে বুদ্ধু, সেটাই তো উল্টো করে বোঝাতে চেয়েছি! অন্যের জীবন যদি আলোকিতই থাকে তবে আমি আমার জীবনটা অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখব কেন? তুমি আমার একটা কথার সঠিক উত্তর দাও তো, গত ত্রিশ বছরে তুমি সত্যিকার খুশি মনে কোন বস্তুটা উপভোগ করেছ? টোস্টের উপরে মাখনের মতো সব কিছুর উপর দুঃখের একটা পরত লাগিয়ে নিয়েছ তুমি, তাতে না পেরেছ নিজের জীবনটাকে উপভোগ করতে, আর না পেরেছ তোমার সঙ্গের লোকেদের সুখী করতে। অথচ এই দুঃখবিলাস না থাকলে তোমার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ অনেক ভাল করে হতে পারত। আমি সুখী হতেই পারি না, এই স্ব-আরোপিত রেট্রোগ্রেসিভ ভাবনাচিন্তা তোমার আশপাশের সব কিছুতে ছায়া ফেলেছে।’’
এ বার অনিকেত ডিফেন্সিভ পজ়িশনে চলে আসে, ‘‘ঠিক আছে, আমার এই অধঃপতনশীল চিন্তাভাবনা বাদ দিলে আর অনুযোগ করার মতো কী কী দেখেছ, বলো তো? আমাকে স্বার্থসিদ্ধির জন্যে মিথ্যে কথা বলতে দেখেছ? দুর্নীতি করতে, কাজে ফাঁকি দিতে দেখেছ? অন্যের ক্ষতি করে নিজে লাভ করতে দেখেছ? অন্যের সৌভাগ্য দেখে, সেটা অর্থ, নাম-যশ, ক্ষমতা যা-ই হোক না কেন, আমাকে ঈর্ষা করতে, অসূয়াবিদ্ধ হতে দেখেছ কখনও? তুমি নিজেই তো বলেছ যে অন্য অনেক বিবেকের চেয়ে তুমি ভাগ্যবান! বলোনি?’’
একটা সেয়ানার মতো হাসি দেয় ওর প্রতিরূপ, ‘‘আমি তোমার বিবেক হে, বিবেককে কখনও চোখ-ঠারা যায়? তুমি যা-যা বললে তার বেশির ভাগটাই সত্য, তবে শেষ সত্য নয়! কেন? তুমি জীবনানন্দ আবৃত্তি করতে না? ‘সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি, / বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;/ ফিরে এসো সুরঞ্জনা;/ নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে।’ তাই তুমি কোনও দিন অসূয়াবিদ্ধ হওনি, এই কথাটা অন্তত আমার সামনে বোলো না। আর ট্র্যাজেডিটা কোথায় জানো? তুমি নিজে ছাড়া আর কেউ তোমার ক্ষোভ অথবা ঈর্ষার পাত্র হওয়ার কথাই নয়! কেন নয়, সেটাও বলে দিচ্ছি। যে কারণে কর্ণের সঙ্গে অর্জুনের কিংবা হেক্টরের সঙ্গে অ্যাকিলিসের তুলনা চলে না, সেই কারণেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক পক্ষ যদি ভাগ্যের এবং দেবতাদের সম্মিলিত সাহায্য পেয়ে থাকে তো অপর পক্ষ শুধু অভিশাপ, রোষ আর স্বোপার্জিত দুর্ভাগ্য মাথায় নিয়ে হেরেছে!’’
স্বগতোক্তির মতো করে অনিকেত বলে, ‘‘জানো, এক সময় চরম বীতশ্রদ্ধ হয়ে বাবা-মাকে একটু রিলিফ দেব বলে স্কুলের চাকরি খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। ইন্টারভিউ বোর্ডে আশ্চর্য হয়ে শুনেছিলাম যে, আমার ভাল রেজ়াল্টই আমার চাকরি পাওয়ার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে! মুখের উপর বলেই দেওয়া হয়েছিল, ‘আপনি আগাগোড়া ভাল স্কোর করেছেন, কোনও কারণে রিসার্চ ছেড়েছেন, কাল আবার ধরবেন না, তার কী গ্যারান্টি আছে? আমরা বার বার ইন্টারভিউ নিতে পারব না ভেকেন্ট পোস্টের এগেনস্টে, বুঝেছেন!’ ভালই বুঝেছিলাম, কেন না প্রায় একই ধরনের কথা অনামিকাও তো বলেছিল— আমাকে নাকি দেবতার আসনে বসিয়েছে, তাই আর মর্ত্যের বাসনা নিয়ে...’’ কথা আটকে যায় ওর।
বিবেক ওকে চেপে ধরে, ‘‘সেই সময়েও তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, এটা একটা দুর্বল অজুহাত। প্রকৃত ভালবাসায় ওটা কোনও কারণ হয়ে দাঁড়ায় না, যদি না এর মধ্যে কোনও বৈষয়িক ও ঐহিক বিষয়-আশয় ঢুকে পড়ে। আসলে তোমার তথাকথিত দেবত্ব কারও পেট ভরাবে না, তার দৈনন্দিন চাহিদা পূরণও করবে না, তাই সে দিনও তোমার ভালমানুষির, তোমার যোগ্যতার কোনও দাম ছিল না, আজও নেই। অতীতচারিতার নাম করে এই দুঃখবিলাসের একটা কোকুন তৈরি করে তুমি তার মধ্যে ঢুকে বসে আছ। তার ভিতর থেকেই আমি তোমাকে টেনে বার করে আনতে চেয়েছি এ যাবৎ কাল।’’
করুণ মুখে অনিকেত আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চায়, ‘‘ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ এই অতীতচারী দুঃখবিলাসের গুরুত্ব বুঝতে পারবে না। বেঁচে থাকার রসদ খুঁজতে এও এক অনন্য উপকরণ, বুঝেছ? মুখ দেখে বুঝতে পারছি, কথাটা তোমার মাথায় ঢুকছে না। ঠিক আছে, দু’-একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের পরিবারে দু’টো ঘটনা গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল যা আমি জ্ঞান হওয়ার পর দেখেছি। উনিশশো আটাত্তর সালে এক বার নোটবন্দি হয়েছিল। হাজার, পাঁচ হাজার আর দশ হাজার টাকার নোটের উপর। শেষ দু’টো নোটের না হলেও, হাজার টাকার বেশ কয়েকটা নোট আমার ঠাকুরমার জমানো ছিল। স্ত্রীধনের ক্ষেত্রে যা হয়, যখন ব্যাপারটা জানাজানি হল, তখন সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ওই নোটগুলোর দাম তখন কাগজের টুকরোর থেকেও কম। কারণ ওগুলো দিয়ে মুদির দোকানের পুরিয়া তৈরির কাজও ঠিক মতো হবে না। ঠাকুরমা কিন্তু প্রাণ ধরে টাকাগুলো ফেলে দিতে পারেননি। মাঝে মাঝে বার করে দেখতেন, পরম মমতায় হাত বোলাতেন, রোদে দিতেন, আবার যত্ন করে তুলে রাখতেন।’’
(ক্রমশ)
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)