ছবি: কুনাল বর্মণ।
দু’বার রিং হতেই ফোন ধরল গরিমা, “কোথায় থাকিস আপদ?” তার পর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলল, “শোন না, অনেক কথা হল ওঁর সঙ্গে। আমি শুধু শুধু চিন্তা করছিলাম। ডিভোর্সটা কোনও ব্যাপারই নয়, বুঝলি! শুধু নরম হওয়া চলবে না৷ তুই বিশ্বাস করবি না, ওঁর সঙ্গে কথা বলার পরই মনটা ভাল হয়ে গেল! উকিল না সাইকায়াট্রিস্ট কে জানে, কী ভাল কথা বলেন! শোন না, তমাল বলছে তুই এলে আজই ট্রিট দেবে। আসবি, বল? তোর সুবিধে মতো জায়গা ঠিক করব।”
“আচ্ছা, তুই কি উকিলের চেম্বার থেকে
বেরিয়ে এসেছিস?”
“না, বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তমাল গেল আরও কী সব জিজ্ঞেস করতে। কেন, রে?”
“আধা ডিভোর্স হয় কি না একটু জিজ্ঞেস
করতে পারবি?”
“ওটা তমালই তোকে বলে দিতে পারবে। উকিল উকিল করে ও নিজেই এই ক’দিনে আধা উকিল হয়ে গেছে। শোন না, আসবি?”
“না রে, অন্য কয়েকটা কাজ আছে। তমালকে বল, আমি যেচেই ট্রিট চেয়ে নেব। ফাঁকি যাবে না।”
চাপা গলায় ফোনে কথাগুলো সেরে চার দিকে ভাল করে তাকাল তমা। দিনের আলো প্রায় চলে গেছে। সেই নীল নীল আভা আর নেই। এখন সাদা কৃত্রিম আলোর জোরালো জ্যোৎস্না নেমে আসছে আলোকস্তম্ভ থেকে। মেঘলা আকাশ, ঠান্ডা হাওয়া, সাদা আলো, সবুজ ছায়া আর খসে যাওয়া হাত-গলে যাওয়া অঙ্গের দেবদেবী মূর্তি মিলিয়ে ভীষণ ভাল লাগছে তার পরিবেশটা। তার মতো একাও অনেকে বসে আছে। গঙ্গার স্রোতের শব্দ ভেসে আসছে না বটে, তবে মাঝে মধ্যে ভটভট শব্দে লঞ্চ যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে নতুন কেউ আসেনি বা কেউ চলেও যায়নি। এক জন ফেরিওয়ালা ঘুরে ঘুরে চানাচুর বিক্রি করছে। তাকে লোকে ডাকছে ‘ঘটিগরম’ নামে। বড় বিচিত্র মানুষের এই সম্বোধন প্রক্রিয়া। কোন জটিল রীতিতে বল্লাল হয় লালু আর তমা হয় প্রিয়তমা! প্রবহমান নদীর ঘোলাটে জলের দিকে তাকিয়ে সে যখন এ সব কথা ভাবছে তখনই “চলি হে বল্লাল” শুনে সে চমকে উঠল। ভাল করে তাকিয়ে দেখল, এখানে এসেই যে পক্বকেশ বৃদ্ধ আর এক তরুণকে সে কথা বলতে দেখেছিল, সেই বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে পা বাড়িয়েছেন। অবশিষ্ট তরুণের দিকে তাকিয়ে সে আঁতকে উঠল। এ কিছুতেই বল্লাল হতে পারে না! এক গাল দাড়ি, উস্কোখুস্কো চুল। বড় একটা ব্যাগ পাশে রাখা। কিন্তু পরের দেড় মিনিট নিপুণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার ভুল ভাঙল। হ্যাঁ, এই সেই ইতিহাসবাবু।
এ বার তমা পড়ল মুশকিলে। সে জানে, সে বিশেষ সপ্রতিভ নয়। গুছিয়ে কথা বলতেও তেমন পারে না। কী করা যায়? বসে বসে ভাবে তমা। ভাবতে ভাবতে বসেই থাকে। সময় চলে যায়। আশপাশে কাউকে খেয়ালও না করে সামনে, দূরে নদীর দিকে তাকিয়ে বসে থাকে বল্লাল। তার মনে হয়, বল্লাল যে কোনও সময়ে উঠে চলে যেতে পারে। কিন্তু কিসের একটা লজ্জা, সঙ্কোচ তার পা-দুটো ভারী করে তোলে। এক বার মনে হয়, ‘দূর, বাড়ি চলে যাই!’ যে আগ্রহ, উত্তেজনা নিয়ে সে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছিল, তা খুঁজে পায় না তমা। অতঃপর অনেক কষ্টে সে উঠে দাঁড়ায়। তার পর দু’পা হেঁটে বল্লাল যেখানে বসে আছে, সেই বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ে। কিন্তু তাও তাকে খেয়ালও করে না বল্লাল। সে তখনও অন্যমনস্ক হয়ে দূরে নদীর দিকেই তাকিয়ে আছে। তমার এ বার রাগ হয়। পাশে কে এসে বসল, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবে পর্যন্ত না? এক বার ভাবে, দিবাকরদার দেওয়া বইয়ের মোড়কটা পাশে রেখে চলে যাবে। তার পর মনে হয়, তার পর দেখা যাবে বইয়ের মোড়কটা হয়তো ঘুরেও দেখল না সে! কথা বলতে না পেরে চুপ করে বসে থাকে তমা। আকাশের একটা দিকে মেঘ একটু হালকা হয়ে একটা দুটো তারার দর্শন দিয়ে আবার পর্দানশিন হয়। লোকটার ব্যাগে ফোন বাজার শব্দ হয়। বল্লাল খেয়ালও করে না। অত্যন্ত ক্রুদ্ধ, বিরক্ত হয়ে তমা বলে ওঠে, “ফোনটা বাজছে তো!”
বল্লাল যেন বহু দূর থেকে তার হারানো মনটাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসে তার দিকে তাকাল, তমা ফের বলল, “ফোনটা বাজছে।”
বল্লাল শিকড়-পড়া সাপের মতো বলল, “ও।”
তার পর তার ব্যাগের দিকে তাকাল। তার পর বিদ্যুৎচমকের মতো ক্ষিপ্রতায় ফের তার দিকে তাকাল, আর প্রায় চিৎকার করে উঠল, “আপনি?”
এই আবেগভরা সম্বোধনে কেন এবং কোথা থেকে কে জানে, একরাশ অভিমান এসে ঘিরে ফেলল তমাকে। সে নদীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বলল, “বিরক্ত হতে এলাম।”
ফোন ধরা ভুলে, বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বল্লাল বলল, “কিন্তু, আপনি তো এমনিতেই আমার
ওপর বিরক্ত।”
তমা বলল, “বিরক্তই তো! মহাবিরক্ত! আপনার ওপর খুশি হওয়ার কোনও কারণ আছে?”
তার কথা শুনে বল্লাল জিভ বের করে বলল, “এত সত্যি কথা এ ভাবে বলে? লজ্জা পাব তো! তা, আপনি এই জায়গা আবিষ্কার করলেন কী করে?”
“জানেন না? পটল তুললাম, শ্মশানে যাওয়ার সময় ভাবলাম একটু আশপাশ দেখে যাই, দেখি এখানে পাই কি না আপনাকে!”
তমার কথার ঝাঁঝ দেখে বল্লাল বলল, “এসেছেন যখন একটু দাঁড়ান। চা খাওয়াই আপনাকে...” বলে এক ছুটে গেল আর একটা ট্রে-তে চা, বেকারির বিস্কুট নিয়ে চলে এল। এই পরিবেশে আদার ঘ্রাণে ঘন দুধ-চায়ের স্বাদ বেশ উপাদেয় লাগল তমার। তার পর যেন সে কথা হারিয়ে ফেলল। নদীর স্রোত, ঘনীভূত মেঘ, ঝোড়ো হাওয়া এবং এক জনের উপস্থিতি তার জিভকে সড়গড় হতে দিল না। জড়তা ও লজ্জা গ্রাস করল তার ভাষাকে। সে চুপ করে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল নদীর দিকে।
নীরবতা ভঙ্গ করল বল্লালই, বলল, “আমি এখনও ভাবতে পারছি না এ ভাবে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে!”
তমা গম্ভীর হয়ে বলল, “দেখা হয়ে যায়নি, দেখা করতে হল,” বলে বইয়ের মোড়কটা ঢক করে তার পাশে রেখে দিল।
সেটা দেখে বল্লাল এক গাল হেসে বলল, “ও দিবাকরদা পাঠিয়েছে?”
তমা এ বার আরও রাগত স্বরে বলল, “হ্যাঁ, দিয়ে বলল, ‘দয়া করে আপনিই যান ম্যাডাম, উনি তো আসবেন না!’”
বল্লাল সেই রকমই হাসতে হাসতে বলল, “কী করে আমি যাব বলুন, আপনি তো আর কথাই বললেন না, কোন ভরসায় আসব?” তার পর একটু থেমে আবার বলল, “এখন তো কলকাতায় প্রায়ই আসি! খুব ইচ্ছে করে, যাই, চলে যাই আপনার কলেজে! কিন্তু আপনার ওই গম্ভীর মুখ দেখতে খুব খারাপ লাগে। তার পর ভাবলাম, আমি বাউন্ডুলে মানুষ, এই ভাল!”
বল্লাল থামে। তমাও কথা বলে না। নীরবে বইতে থাকে গঙ্গা। কত হাজার বছর ধরে কত মানব মানবীর প্রেম ভাঙন বিরহ মিলনের সাক্ষী সে। এ বারও শেষ পর্যন্ত নীরবতা ভাঙল বল্লালই। তমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তার পর?”
তমা বলল, “কিসের তার পর?”
“তার পর কী হল?”
“কার পর?”
“মুন্সিয়ারির পর?”
“কী আছে মুন্সিয়ারিতে?”
“পাঁচটা পাহাড় আছে। আর আছে একটা নদী। সেই নদীর নাম রামগঙ্গা।”
“নদী বইতে শুরু করল।”
“মাঠ, খেত, পাহাড় ভেঙে নদী বইতে শুরু করল, তার পর?”
“তার পর সে সমতলে এসে আবার বইতে
শুরু করল।”
“তার পর?”
“সমতলের লোক তার তীরে বাড়ি করল, তার পিঠে সেতু বাঁধল, তার বুকে গড়ল বাঁধ।”
“তার পর?”
“তার পর নদী শীর্ণ হয়ে গেল, তার জল কমে গেল, মেদ বাড়ল। সে শহরে এসে পথ হারাল। শহরের নাম কলকাতা। আর জানি না আমি...” বলে বল্লালের কাঁধে মাথা রাখল তমা।
বল্লাল তাকে ভরসা দিয়ে বলল, “একটুও পথ হারায়নি নদী। এ বার তাদের শক্তি বাড়ল। ওই যে, বাড়ল তাদের স্রোত। ওই যে ভেসে যাচ্ছে সব বাধা। নদী হাসতে হাসতে এগিয়ে যাচ্ছে।”
তার স্তোকবাক্য শুনে তার হাতটাও টেনে নিল তমা নিজের মুঠোয়। প্রায় শোনা যায় না এমন গলায় বলল, “বল্লাল! কোথায় ছিলে তুমি?”
এ কথার কোন উত্তর না দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল বল্লাল। ফের সেই নিচু, মৃদু গলায় তমা বলল, “আমায় ছেড়ে যাবে না তো?”
বল্লাল বলল, “আমার যে চালচুলো নেই। আমি তো মহা বাউন্ডুলে।”
তমা বলল, “আমি তো আছি! তুমি থাকবে তোমারই মতো। আমি তোমায় বাঁধ দেব না।”
তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বল্লাল বলল, “জানো, আমিও থিতু হতে চাই। কিন্তু আমার তো শিকড় নেই, তাই ভেসে ভেসে চলে যাই। তুমি বাঁধ দাও, আমি বাঁধা পড়তেই চাই। ছোট থেকে অনেক ভেসেছি। এ বার একটু জিরোতে চাই।”
তার পর তারা অনেক ক্ষণ বসে থাকে নদীর দিকে তাকিয়ে। কখনও তমা তার মাথা রাখে বল্লালের কাঁধে, কখনও তার হাতটা মুঠোয় নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। অনেক ক্ষণ পর যখন তারা যখন উঠল, তখন তমার চোখ ভিজে, বল্লালের গলা ধরা। বেশ খানিকটা রাস্তা তারা এক সঙ্গে হাত ধরে হাঁটল। তমা বলল, “এখন কোথায় যাবে তুমি?”
বল্লাল বলল, “অনুপমের মেসে, আজ রাতে ওখানেই থাকব বলে রেখেছি।” তমা বলল, “না বলা যায় না?”
বল্লাল বলে, “তা হলে কোথায় থাকব?”
তমা তার হাতটা কাছে টেনে বলে, “আমি যেখানে থাকি।”
বল্লাল বলে, “লোকে কী বলবে?”
“যা ইচ্ছে হয় বলবে। আমি লোকের কথা থোড়াই পাত্তা দিই।”
“না রে বাবা, বলা আছে অনুপমকে। মেসে খাবার তৈরি হয়ে গেছে, সেটা খারাপ হবে।”
“আমার সঙ্গে কখন দেখা করছ?”
“কয়েক দিন পর! আমি কাল ঝাড়গ্রাম যাব।”
“পরে গেলে খুব অসুবিধে?”
“আচ্ছা, রাতে যাব। কাল সকালেই তোমার সঙ্গে দেখা করব। দু’জনে গিয়ে কফি হাউসের দরজায় সকাল থেকে বসে থাকব। দরজা খুললেই গিয়ে বসে পড়ব আড্ডা দিতে।”
“বল্লাল, আমার কাছে কিন্তু তোমার ফোন
নম্বর নেই।”
“আমার কাছে আছে। তুমি বাড়ি গিয়ে দরজা খোলার আগেই আমার ফোন নম্বর চলে যাবে তোমার ফোনে।”
“বল্লাল, আজ থেকে আমার মনে হবে
আমি একা।”
“আমার তো সেই মুন্সিয়ারি থেকেই সেটা মনে হচ্ছে তমা।”
“বল্লাল, আমরা হেঁটে বাড়ি যেতে পারি?”
“হ্যাঁ, চলো, হেঁটেই যাব।”
“আমার একটা ছোট্ট বাসা আছে বল্লাল। দুটো ঘর, একটা বেসিন। তুমি সেখানে আমার সঙ্গে ঘর বাঁধবে বল্লাল?”
“আমাদের ঘর হবে মাটির ওপর, আস্ত একটা দালান থাকবে, আর থাকবে ফুলগাছ।”
“তুমি এখনও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছ বল্লাল?”
“আমি, আর তুমি হেঁটে চলেছি একটা
হাইওয়ে ধরে।”
“আমাদের চেনাজানা লোকেরা মেনে নেবে?”
“তুমি পড়েছ একটা জামরঙা বেনারসি। অপূর্ব লাগছে তোমায়। রজনীগন্ধার মালা তোমার গলায়, গন্ধরাজের বাজুবন্ধ পরেছ তুমি, জুঁইফুলের মালা তোমার মাথায়, বেলকুঁড়ির মুকুট রয়েছে কপালে।”
“বরযাত্রী আসেনি এখনও?”
“সব বাউন্ডুলের দল, বইওয়ালা দিবাকরদা, অনুপমের মেসের ছেলেরা সবাই এই হাজির হল বলে। তোমার দেশের বাড়িতে হচ্ছে অনুষ্ঠান। কত ধুমধাম করছেন তোমার বাবা।”
“তুমি যেতে ভুলে যাবে না তো বল্লাল? তখন অন্য কোথাও পড়ে থাকবে না তো?”
“আমায় দুয়ো দিচ্ছে বন্ধুরা! বলছে, ‘তুই ছদ্ম-বাউন্ডুলে। সমস্ত বাউন্ডুলেকে পথে বসালি।’”
“যারা বলে তারা সব বাদ বরযাত্রী থেকে।”
“না, না, তারাও হয়তো এক দিন বিদায় জানাবে এই বিশৃঙ্খল জীবনযাত্রাকে।”
“আচ্ছা, তা হলে সবাই আসুক৷ ওরা অত দূরে যাবে তো?”
“যাবে মানে, পৌঁছে গেছে! সবাই হইহট্টগোল করতে করতে পৌঁছেই গেছে।” “ওই তো দেখা যাচ্ছে তোমাদের বাড়ি। সানাই বাজছে, শুনতে পাচ্ছ?”
“আমায় শিমুল ফুল কি তুমি পাঠিয়েছিলে বল্লাল?”
“বরযাত্রীরা সবাই ধুতি পরেছে। তোমার বোন, মাসি, কাকিমারা বুঝতে পারছেন না কে বর! কেউ তো চেনে না! ফোটোগ্রাফাররা মাথা চুলকোচ্ছে!”
“কলেজে আমি মাঝে-মাঝে প্রেমপত্র পেতাম৷ ঠিক প্রেমপত্র নয়, জন্মদিনে একটা করে কার্ড। সে সব কি তোমারই পাঠানো বল্লাল?”
“বরকে চিনতে তোমার বান্ধবীরা আমাদের সামনে থেকে তোমায় ভিডিয়ো কল করছে। বরের বসার আসন এক জায়গায়, কনে তার থেকে অনেক দূরে। তুমিও চিনতে পারছ না আমায়।”
“আমার কেন মনে হচ্ছে তোমায় আগে অনেক বার দেখেছি? তুমি কি আমার যাতায়াতের পথেই কোথাও অপেক্ষা করতে বল্লাল?”
“তুমি তখন আমাকেই ফোন করছ, ‘এই, তোমায় চেনা যাচ্ছে না কেন? এ তোমার কোন ছদ্মবেশ?’ আমি বলছি, আরে দাড়ি, গোঁফ সব কেটে ফেলেছি তো!”
“এ তোমার কোন ছদ্মবেশ বল্লাল?”
“এই তো এ বার খুলে ফেলব বাউন্ডুলে জামা। এ বার শুরু করব শৃঙ্খলার জীবন। দেরাদুনে ক্লাসের পর ছুটি জমিয়ে চলে আসব এখানে। হুটহাট কোথাও যেতে ইচ্ছে হলে তোমাকেও সঙ্গে যেতে বলব, যদি তুমি ছুটি পাও।”
“বল্লাল, তুমি এত দেরি করলে কেন?”
“কোনওটাই দেরি নয় তমা, সব সময়ই
ঠিক সময়। দেখবে, সব কাজই তার উপযুক্ত
সময়েই হয়।”
“ডান দিকের ওই বাড়িটায় আমি থাকি।”
“তুমি কী খাবে?”
“সকালে রান্না করা আছে, গরম করে নেব। আমরা এখন কোথায় বল্লাল?”
“আমরা এখন হাঁটছি তমা। অনেক এলোমেলো চলার শেষে এই প্রথম আমরা সেই পথে পড়লাম, যা আমাদের পৌঁছে দেবে একটা ঠিকানায়।”