সুনিপুণা: আত্মরক্ষার জন্য যুযুৎসু কিংবা খেলাধুলো, সব দিকেই পারদর্শী সেকালের শান্তিনিকেতনের মেয়েরা। ছবি সৌজন্য : রবীন্দ্রভবন, বিশ্বভারতী
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সামনেই বর্ষামঙ্গল। রিহার্সাল চলছে উত্তরায়ণের ভিতর। মেয়েরা নৃত্যরত, আর রবীন্দ্রনাথ নিজে বসে থেকে ধরিয়ে দিচ্ছেন তাদের ভুলগুলি। ‘রবীন্দ্রনাথ হঠাৎ হাত তুলে নাচ থামিয়ে দিলেন। তারপর একটি মেয়েকে লক্ষ করে বললেন, “তোর পা তো ঠিক তালে তালে পড়ছে না।” তাকে একা নাচতে বললেন।’ স্মৃতিচারণ করেছিলেন বনফুল। তিনি বাইরের বারান্দা থেকে দেখছিলেন এই দৃশ্য। এ দৃশ্যের ভিতরে এক ‘টিপিক্যাল’ শান্তিনিকেতনকে যেন দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। শান্তিনিকেতনের মেয়েরা নাচছে, সাজছে। তাঁর মনে হয়েছিল, এ ভাবে মেয়েদের দাপটে ছেলেরা বুঝি সব হারাবে! মনে হয়েছিল, মেয়েরা যদি নাচ শেখে, তা হলে ফল সুখের হবে না। বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর নাচের সুযোগ কোথায় পাবে তারা! অথচ রবীন্দ্রনাথের মতে এই নাচে মেয়েদের এক সহজাত নিপুণতা আছে। সেটা প্রকাশের জায়গা দিতে হবে। শান্তিনিকেতন সেই জায়গা। যেখানে মেয়েদের সহজাত গুণগুলিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়।
তবু শান্তিনিকেতন, বনফুলকে মুগ্ধ করেনি। একটু ইতস্তত মনে রবীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়াই ভাল। ছেলেদের লেখাপড়া নাকি এখানে হওয়া শক্ত। “ছেলেরা যদি মেয়েদের সঙ্গে ছাত্রজীবনে খুব বেশী মেলামেশা করে তাহলে সাধারণতঃ তাদের লেখাপড়ায় মন বসে না। এতদিন তো আপনার স্কুল হয়েছে, খুব বেশী কৃতী ছেলে কি বেরিয়েছে এখান থেকে?” বনফুলের ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধে হয় না, সহশিক্ষাকে খোলা মনে মেনে নিতে পারেননি তিনি।
কিন্তু শান্তিনিকেতনের মেয়েরা কি শুধুই নাচে? শুধুই সাজে? কাজ করে না! খুবই করে।
রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও এই আশ্রমের কাজে হাতে হাত মেলাক। নাচে, গানে, খেলায় পারদর্শী হয়ে উঠুক।
রবীন্দ্রনাথ, শান্তিনিকেতনের মেয়েদের একই সঙ্গে শ্রীময়ী ও সহজ-সবল করে তুলতে চেয়েছিলেন। আশ্রমকন্যা অমিতা সেনের লেখা ‘আনন্দ সর্বকাজে’ স্মৃতিকথায় আশ্রমের মেয়েদের খেলাধুলোর ছবি স্পষ্ট। জানা যায়, সেই সময় প্রতিদিন ছেলেরা বিকেলবেলা মাঠে ফুটবল খেলত। সিউড়ি, সাঁইথিয়ার মতো আশপাশের নানা জায়গায় খেলতে গিয়ে বিজয়ী হয়ে কাপ হাতে ফিরে আসত আশ্রমে। ফিরতি পথে তাদের গলায় ‘আমাদের শান্তিনিকেতন’ গানে কেঁপে উঠত আকাশ বাতাস। এই নিয়ে মেয়েদের মনে গর্বের শেষ ছিল না। এক বার মেয়েরা ঠিক করল গুরুপল্লির মাঠে ছেলেদের সঙ্গে ধাপ্সা খেলবে। এটাই চ্যালেঞ্জ। সে বার খেলায় ছেলেদেরকে হারিয়ে দেয় মেয়েরা। শান্তিনিকেতনের ছেলেরা কিন্তু মেয়েদের কাছে এই হেরে যাওয়াকে সহজে মেনে নিতে পারেনি। তাতে কী? গুরুদেব মেয়েদের পক্ষে।
অমিতা সেন লিখেছেন বার্ষিক স্পোর্টসের কথা। বেশ জমজমাট আয়োজন করা হত। ছেলেমেয়েরা সকলেই অংশগ্রহণ করত খেলায়। ‘সন্তোষদা’ অর্থাৎ সন্তোষচন্দ্র মজুমদার ‘আকাশের দিকে একটি পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা আওয়াজ করবার সঙ্গে সঙ্গে এক একটি খেলা শুরু হয়ে যেত।’ বাঁ হাতের ছাতা আকাশের দিকে উঠিয়ে নেপালচন্দ্র রায় ছুটোছুটি করতেন আর চেঁচিয়ে উৎসাহ দিতেন ছেলেমেয়েদের। আর অন্য দিকে চানাচুরওয়ালা ঘণ্টা বাজিয়ে ঠোঙায় চানাচুর বিক্রি করে বেড়াত। পরে যত সময় এগিয়েছে, শান্তিনিকেতনে নানা রকম খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা শুধু ছেলেদের খেলার নয়, মেয়েদের খেলারও।
যুযুৎসু নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বেশ উৎসাহী ছিলেন। মেয়েরা যাতে আত্মরক্ষা করতে পারে, সে কথা ভেবেছিলেন তিনি। সালটা ১৯২৯, রবীন্দ্রনাথ তখন জাপানে। জাপান থেকে রথীন্দ্রনাথকে লিখলেন, “এই বিদ্যাটা আমাদের মেয়েদের শেখা উচিত, যদি ভাল শিক্ষক পাওয়া যায় তো চেষ্টা করা উচিত। আমাদের দেশে আজকালকার দিনে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যে এর খুব দরকার।” আমাদের মনে পড়ে যাবে এই ১৯২৯-এই লেখা হয়েছে ‘যোগাযোগ’। রবীন্দ্রনাথ সেখানে কুমুদিনীর মতো একটি চরিত্রকে গড়ে তুলেছেন, যে চরিত্র মেয়েদের চিরাচরিত আইডিয়াকে ভাঙতে শুরু করেছিল। তার দাদা বিপ্রদাসের কাছে সে ভাইয়ের মতো করে বড় হয়ে ওঠে। দাবাখেলা শেখে, শেখে দাদার কাছে বন্দুক চালানো। দাদার রুচিকে নিজের করে নিয়ে দাদার চেয়েও পারদর্শী হয়ে উঠেছিল এস্রাজ বাজানো, ফোটোগ্রাফ তোলার মতো আরও নানা কাজে।
আসলে রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন এটাই চেয়েছিলেন। মেয়েরা যেন চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে নিজেদের পরিচয় নিজেরা গড়ে তোলে। পুরুষদের চেয়ে তারা কোনও অংশে কম নয়, এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন রবীন্দ্রনাথ।
ব্যাডমিন্টন খেলছেন শান্তিনিকেতনের মেয়েরা।
তাই ১৯২৯ সালে জাপান থেকে যুযুৎসু শিক্ষক তাকাগাকি-কে শান্তিনিকেতনে আনা হল। যদিও এঁর জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছিল। তাকাগাকি আসার পর তাঁর কাছে শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও যুযুৎসু শিখতে শুরু করল। রবীন্দ্রনাথ বেশ উৎসাহ নিয়েই এই আয়োজন করেছিলেন। এটা শেখার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল শক্তি সঞ্চয় করে মনের ভয় দূর করা। অমিতা সেন জানান, ‘...শক্তি সঞ্চয় করে চরিত্রে থাকবে সংযম, থাকবে বিনয়—এই শুভ কামনা করে তিনি গান রচনা করলেন— “সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান।” যুযুৎসু ড্রিল করবার সময়ে আমরা এই
গানটি গাইতাম।’
‘যোগাযোগ’-এর কুমুদিনীর যে হাত এস্রাজ বাজায়, সেই হাত বন্দুক চালাতেও পারদর্শী। শান্তিনিকেতনের মেয়েরাও ঠিক তেমন। আলপনা আঁকছে, সেলাই করছে, নাচছে, গাইছে আবার ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছে নানা রকম খেলা। বাইরের জগতের সঙ্গে মেয়েদের যাতে সংযোগ তৈরি হয়, তার জন্য রবীন্দ্রনাথ চেষ্টা করেছিলেন। যে ভাবে অসম, মণিপুরে মেয়েরা ঘর-সংসারের কাজের পাশাপাশি তাঁত বোনার মতো কাজ করে নিজেরা অর্থ উপার্জন করে, তাতে ওদের শিল্পীমনের যেমন পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনই নিজেরা উপার্জন করে বাইরের জগতে নিজেদের পরিচয় গড়ে তোলে। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন, শান্তিনিকেতনের মেয়েরাও এ ভাবেই নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলুক। মনে পড়ে যাবে ‘শেষের কবিতা’-র লাবণ্যর কথা। ‘যোগাযোগ’ আর ‘শেষের কবিতা’ পাশাপাশি লিখছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রসৃষ্ট নারী চরিত্রদের মধ্যে লাবণ্য স্বাবলম্বী।
শুধু উপন্যাসে নয়, বাস্তবেও শান্তিনিকেতনের মেয়েরা যাতে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে তার জন্য তিনি শ্রীরামপুর থেকে এক জন মহিলাকে এনেছিলেন মেয়েদের তাঁত শেখানোর জন্য। কিছু দিন পর আবারও তাঁত এল মণিপুর থেকে, আর অসম থেকে এলেন শিক্ষক। ইউরোপের সুইডেন থেকেও এসেছিলেন দু’জন তাঁতশিল্পী। সুইডেনের স্লয়ড-পদ্ধতি বিশেষজ্ঞ আশ্রমকর্মী লক্ষ্মীশ্বর সিংহের সহযোগিতায় ওঁদের দেশীয় প্রথায় তাঁত বসল এবং শুরু হল তাঁত বোনার শিক্ষা। অমিতা সেন লিখছেন, “সেদিনে বহু ছেলেমেয়ে, শিক্ষক আর আশ্রমবধূ তাঁত বোনা বেশ ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিলেন। ঘরে ঘরে বসল তাঁত, আশ্রমকন্যারা এবং আশ্রমবধূরা সংসারের কাজের অবসরে বুনে চললেন নানাবিধ সুন্দর সুন্দর বস্ত্র, সৌখিন হাত-ব্যাগ, আসন, বেডকভার, আরো কত কি। দেশী প্রথায় তাঁত বোনার সঙ্গে বিদেশী তাঁত বোনার প্রথা মিলে তাঁতশিল্পের একটি বৃহৎ ক্ষেত্র তৈরি হল শ্রীনিকেতনে।”
মেয়েদের তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যাবে। শ্রীভবনের শিশুদের ভারপ্রাপ্তা সুধাদি অর্থাৎ সুধা সেন, পূর্ববঙ্গের দুঃস্থ বিধবা সরোজিনীকে নিয়ে এলেন শান্তিনিকেতনে। উত্তরায়ণের বাগানে তার জন্য তৈরি করা হল কুটির, তাতে প্রতিমা দেবী বসিয়ে দিলেন তাঁত। খেস বুনতে শেখার ব্যবস্থাও করা হল তাঁর জন্য। তিনি তাঁত বোনেন আর লড়াই করেন দারিদ্রের সঙ্গে। ক্রমশই সেই সরোজিনী, তাঁতশিল্পের পারদর্শিতার কল্যাণে সুরুল গ্রামে একটি বাড়ি তৈরি করে সেখানে তাঁত বসান। বার্ধক্যে তাঁর শরীর নুইয়ে পড়লেও তাঁত বোনা থামেনি। জীবনের শেষ পর্যন্ত সুন্দর খেস বুনে বুনে শ্রীভবনের মেয়েদের ও আশ্রমবধূদের নিত্য আবদার মিটিয়েছেন তিনি।
ক্ষিতিমোহন সেনকে রবীন্দ্রনাথ বলেন, “যদিও শুধু ছেলেদের জন্যই এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে এর সঙ্গে মেয়েদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা না করলে এ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে; … এইজন্য আমার আজকাল খুবই মনে হচ্ছে গুটিকতক মেয়ে পেলে একটি মেয়েবিভাগও আরম্ভ করি।” এই ভাবনা বাস্তবায়িত হয় ১৯২১ সালে। তৈরি হয় শান্তিনিকেতন-ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ছাত্রী বিভাগ। হেমবালা সেন যখন সেখানে তত্ত্বাবধায়িকা হয়ে এলেন, তখন সেখানে ছাত্রী সংখ্যা মোট তেরো। রবীন্দ্রনাথ সে সময় তাঁকে বলেছিলেন, “মেয়েদের সব ভার তোমার ; কী করলে তাদের উপকার হয়— কিসে তাদের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়া যায়, তাদের মানসিক বিকাশের সাহায্য হয় তুমি নিজেই তা ঠিক করবে।” সে বার যখন মেয়েরা আবদার করল ছেলেদের মতো তারাও পায়ে হেঁটে প্রমোদ-ভ্রমণে যেতে চায়, হেমবালা সেন দায়িত্বের সঙ্গে তাদের নিয়ে গেলেন শান্তিনিকেতন থেকে চল্লিশ মাইল দূরের বক্রেশ্বর। পায়ে হেঁটে তাদের যেতে সময় লেগেছিল তিন দিন। তবে এর থেকে মেয়েরা প্রমাণ করে দিয়েছিল তারা দুর্বল নয়। তারা চাইলে কী না পারে!
আসলে যে কোনও কাজই আনন্দের। সেটা সাজই হোক বা খেলা। এর মধ্যে তো অসুন্দর কিছু নেই। যে মেয়েরা মাঠে খেলতে নামল, সেই মেয়েরাই ঘরের দুয়ারে আলপনা আঁকছে। এ দৃশ্যকে সহজ স্বাভাবিক করে তুলতে চাইছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আমাদের মনে পড়ে যাবে পূর্ব বাংলার বারো বছরের বিধবা সুকুমারী দেবীর কথা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর আলপনা দেওয়ার গুণটির কথা শুনে তাঁকে কলাভবনে স্থান দেন। নন্দলালের সাহচর্যে সেই সুকুমারীদেবীর আলিম্পন-শক্তি আরও বিকশিত হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, যে আলপনার জন্য শান্তিনিকেতন এত খ্যাতি অর্জন করেছে, তার মূলে ছিল ওই বারো বছরের পল্লিবালা। শুধু আলপনাই নয়, মেয়েদের রন্ধনশিক্ষাও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, সে কথা মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ। তাই রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা অনুযায়ী সপ্তাহে দু’দিন ‘দ্বারিক’-এ নারীভবনের রান্নাঘরে নানা জলখাবার তৈরি করা শিখত মেয়েরা। অমিতা সেন তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “প্রতি পূর্ণিমা অমাবস্যায় তখনকার বিশ্বভারতী আপিসের পশ্চিমে বড় রান্নাঘরে কুটনো কোটা চাল ডাল বাছা-ধোওয়া এবং রান্না সব কিছু করতে হত আমাদের।…সেদিনের রান্না পুরোটাই মেয়েরা করত। রান্না সারা হতেই খাবার ঘণ্টা পড়ে যেত। লাইন করে ছেলেরা অধ্যাপকরা এসে কলগুঞ্জনে খাবারঘর মুখরিত করে জায়গা করা সারিতে বসে যেতেন। কোন সারিতে কোন মেয়েরা পরিবেশন করবে তা বড়রা স্থির করে দিতেন।” সুশৃঙ্খল ভাবে পরিবেশনের শিক্ষাও মেয়েরা পেয়েছিল। যার ফলে তারা পালাপার্বণে দক্ষ হাতে পরিবেশন করতে পারত। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাব্যবস্থায় অতিথিসেবার গুরুত্ব অনেকখানি। বাইরে থেকে শান্তিনিকেতনে যাঁরা আসতেন, তাঁদের যেন কোনও অসুবিধে না হয়, সেই দিকটি খেয়াল রাখার শিক্ষা দেওয়া হত আশ্রমিকদের।
এই যে শান্তিনিকেতনের মেয়েদের এক অঙ্গে এত রকমের গুণের সমাহার ঘটাতে চাইলেন রবীন্দ্রনাথ, তার পিছনে কি কোনও ভাবে কাজ করে গেছে উনিশ শতকের সাহেবি অপমান! সাহেবরা বাঙালি পুরুষদের মেয়েলি বলে ঠাট্টা করত বলে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সৃষ্ট পুরুষদের মধ্যেই শুধু বাহুবলের প্রকাশ দেখাননি, দেবী চৌধুরাণীর মতো সবলা দশভুজাপ্রতিম নারী চরিত্রের নির্মাণ ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু সে তো উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের মেয়েদের মধ্যে শ্রী আর সামর্থ্যের সহজ বিকাশ ঘটালেন। আর সেই মেয়েদের স্পর্শে শান্তিনিকেতনের ছেলেরা মোটেই উচ্ছন্নে গেল না। যে পৌরুষ মেয়েদের অসহজ দৃষ্টিতে শুধুই লালসার বস্তু হিসেবে দেখে, পৌরুষের সেই নারীলোলুপ, নারীবিদ্বেষী চেহারাও তিনি পারলেন বদলে দিতে। বনফুলের শঙ্কা মিথ্যে প্রমাণিত হল।