চিনা লেখক লিউ সিজিনের উপন্যাস ‘দ্য থ্রি বডি প্রবলেম’-এর চরিত্র ওয়াং মিয়াও-কে ভাবায় এক আশ্চর্য প্রশ্ন, বিজ্ঞানের শেষ কোথায়? সে কি অবিনশ্বর? যদি বিজ্ঞানের প্রগতি অবিনশ্বর বলেই স্বীকৃত, তবে শেষে চরম প্রলয় না কি ক্রমিক মঙ্গলময় সৃষ্টি— কার হাত ধরবে সে? উত্তর মেলে না। তাই এ প্রশ্নও অবিনশ্বর।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) অধুনা বিপ্লবে পুলিশের হাতে বন্দি প্রতিবাদীর মুখে হাসি বসিয়ে দেওয়া যায়। অতলান্তিকের ও-পারে থেকেও এ-পারের মানুষের দেহে জটিলতম অস্ত্রোপচারটি সফল ভাবে সারা যায়। অনন্ত সাধনার পথে এই দুই মেরুর ব্যবহারিক রূপের ঔজ্জ্বল্যে মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। লাভ আর ক্ষতি মাপতে মাপতে মানুষ আজ বিহ্বল।
এই বিহ্বলতারই কি প্রভাব পড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম আঁতুড়ঘর মার্কিন-মুলুকের সিনেমাজগতে? রাইটার্স গিল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ধর্মঘট ডেকেছেন, বিবিধ দাবির সঙ্গে জুড়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে হেরে যাওয়ার ভীতিটিও। আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে চিত্রগ্রাহক, চিত্রনাট্যকার, স্বকীয় শিল্পধারা আর বিশেষত্ব-সহ যাঁরা আছেন, তাঁদের সমস্ত শৈলী কেড়ে নেবে মামুলি ‘অ্যাপ’। মানুষ বিশ্বাস করে, প্রযুক্তি মানুষের নিজস্ব কিছু কুঠুরিকে কোনও দিনই স্পর্শ করতে পারবে না। প্রথম বৃষ্টির মেঠো গন্ধ, প্রেমিকাকে লেখা সেই ছুঁতে না-পারার প্রথম চিঠিটা— এ কেমন করে ‘কৃত্রিম’ কেউ সফল ভাবে সাধন করবে? যদি করেও, তাকে কি আদৌ স্বীকৃতি দেওয়া উচিত?
এ প্রসঙ্গে মনে পড়তে পারে স্পাইক জোন্সের ‘হার’ ছবিটি। কেন্দ্রীয় চরিত্র থিয়োডোর কত মানুষের হয়ে বিরহ আর মিলনকামনার চিঠি লেখে। লিখতে লিখতে বিভোর হয়। পরে যন্ত্রমানবীর প্রেমে পড়ে। কিন্তু, যে যন্ত্রকে এতটা আসল বলে ভ্রম হয়, সেটিকেও যে সম্ভব করেছে মানুষই। এখানেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ে মানুষের সীমাহীন দ্বন্দ্ব। আদতে, মানবের মস্তিষ্কও এক আশ্চর্য যন্ত্র! মুক্তমনা গভীর চিন্তাশীল ব্যক্তি আর সঙ্কীর্ণমনা লঘু চিন্তার ব্যক্তির মস্তিষ্ক এক ভাবে কাজ করে না। কারও মাথায় সৃষ্টিচিন্তার অতৃপ্ত স্রোত, কেউ অনেক পেয়েও খুশি নয়, কেউ বা অতিরিক্ত পেয়ে ক্ষমাপ্রার্থী। এমন বৈচিত্রময় মস্তিষ্ক-যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা সংশয়াতীত। কিন্তু থিয়োডোর যখন খুব ভেঙে পড়ে, তখন তার ফরমায়েশি চিঠির লেখায় তেমন গতি আসে না। এমন দিন তাই আসে, যে দিন নিজের বানানো যন্ত্রের কাঠামোটি থিয়োডোরের শৈলীর থেকে বেশি সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক ক্লাউড সংগ্রহগুলি (যেমন, অ্যামাজ়ন আলেক্সা, গুগল গো, অ্যাপেল সিরি ইত্যাদি) মূলত শহুরে দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি অনেক সময় পরিবার বা খুব কাছের মানুষের থেকেও বেশি ‘জেনে রাখছে’। ই-মেল পড়ে প্রত্যুত্তর তৈরি করছে, পছন্দের গান শোনাচ্ছে, দিনপঞ্জির নির্দিষ্ট সময়ে মনে করাচ্ছে কী-কী করতে হবে।
কিন্তু মানুষের মন কি পড়তে পারে এই সব ‘ইন্টারফেস’? এর উত্তর স্পষ্ট ভাবে না দেওয়া গেলেও এটি বলাই যায়, এগুলি হয়ে উঠতে পারে আমাদের ‘প্রিয়’ বা ‘প্রিয়তম’ মানসসঙ্গী। কারণ, এ সঙ্গী গোঁসা করে না, ‘না’ বলে না, আমার পছন্দমতো কথা বলে, আমার চাওয়ার পসরা সাজিয়ে হাজির হয়। অর্থাৎ, আমি নিজে যেন তার অতিচেনা।
তবে, যে সমাজে হাতের যন্ত্রটি কোনও রকম ভিন্ন মত পোষণ করে না, সেই সমাজে অপর মানুষের কাছ থেকে ভিন্নতা আর বৈচিত্রের ছিটে এসে গায়ে লাগলে, মানুষ তাকে অবজ্ঞা করবে, এটাই স্বাভাবিক। চুপচাপ নির্দেশ মানার মধ্যে মানুষের ক্ষমতাপন্থার ক্ষরণ রয়েছে, তাকে অস্বীকার করা সহজ কথা নয়। ‘থ্রি বডি প্রবলেম’-এ ওয়াং যখন যন্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে, তখনও সে জানে তাকে হারিয়ে দিচ্ছে আসলে মানুষেরই দুরভিসন্ধি। একক যন্ত্রের ক্ষমতা ছিল না তাকে ছারখার করার।
থিয়োডোরের চিঠি হোক বা ওয়াংয়ের ভাবনা, সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হল চিন্তন। আর এই চিন্তনকে বাঁধে ভাষা, শব্দ। এ ক্ষেত্রে প্রায় বিপ্লব আনছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
ভাষার কারণে ভৌগোলিক দূরত্বকে কঠিন করে দেখতে হয় না আর। অপর সংস্কৃতির এক জন না হয়ে উঠতে পারলেও, অজানার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা আজ চরমে। ভারতের সংবিধানভুক্ত ২২টি ভারতীয় ভাষায় সমান্তরাল অনুবাদ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে (‘ভাষিণী’ ও ‘এআইফরভারত’)। সে সবের গভীরতা এমনই যে, ডিজিটাল পেমেন্টের পরিভাষাও যাতে মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ রূপে বদলে ফেলা যায়, সে জন্য বিভিন্ন রাজ্য ও জেলা থেকে মানুষের নানা উচ্চারণের নমুনা তুলে রেকর্ড হচ্ছে। সেগুলিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মান্য ও যোগ্য স্তরে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রথম ধাপে চলছে অনুলিখন (ট্রান্সক্রিপশন)। পরে সেগুলির ব্যাকরণগত ত্রুটি-বিচ্যুতিকে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট ভাষাশৈলীসম্পন্ন অনুবাদক ঠিক ভাবে সবটা লিখছেন।
আবার, যা বিভ্রান্তির উদ্ভব ঘটাতে পারে, সেই দৃষ্টান্তগুলি যন্ত্রকে সরল উপায়ে বোঝানো হচ্ছে। যেমন, কুড়ি টাকা আর বিশ টাকা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় সে পূর্ববঙ্গ না পশ্চিমবঙ্গ, কোথাকার মানুষের বাচন শুনছে। তাকে জানাতে হবে পশ্চিমবঙ্গের ‘লোকেশন’-এ অবস্থান করলে দু’টিই এক। অথবা, ‘কত টাকা বাকি?’ আর ‘কত টাকা ব্যালেন্স রইল’, সেখানেও ইংরেজি, বাংলা আলাদা করার মতো সময় গ্রাহক না-ও দিতে পারেন। তাই যন্ত্রকে বোঝানো হচ্ছে, উত্তরটি বাংলা ভাষায় দিতে হলে প্রথমেই একটিমাত্র হলেও বাংলা শব্দের খোঁজ করতে হবে সেটিকে। তাই ‘কত টাকা’ অংশটুকুর সাপেক্ষে যন্ত্র বাংলাতেই উত্তর দেবে। উচ্চারণ ক্রমশ হবে স্পষ্টতর। বার বার পরীক্ষা করা হচ্ছে উন্নতির জায়গাগুলি। প্রচুর মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত হতে হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘প্রায়’ জলজ্যান্ত মানুষের মতোই হয়ে উঠবে।
মানুষের ‘মতো’, মানুষ কি?
‘হার’-এর স্বয়ংক্রিয় অপারেটিং সিস্টেম ‘সামান্থা’ নিজের নামকরণ নিজেই করে। ইন্টারনেটের হাজার হাজার বই কয়েক মুহূর্তে পড়ে ফেলে একটি নাম পছন্দ করে। অত্যন্ত মেধাবী হিসেবে যখন তাকে তৈরি করা হচ্ছিল, তখন তার স্থিতির সীমা টানা হয়নি। কত দূর অবধি তার দৌড়, তা ঠিক করা হয়নি। তাই ক্রমশ মানব অনুভবের সঙ্গে একাত্ম বোধ করতে থাকা সামান্থা যখন একটু স্পর্শের জন্য হা-পিত্যেশ করে, তখন মানুষ থিয়োডোর তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। সামান্থা অপরের ব্যক্তিগত জীবনের সবটা জানতে জানতে এক সময় নিজের ‘ব্যক্তিগত’ সত্তাকে আবিষ্কার করে।
কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পৃথিবীটা মেরুপ্রবণ। হয় এটা, নয়তো অন্যটা। মাঝামাঝি কিছু বাদ। কিন্তু, মানুষের তো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকেই। হয়তো সে জীবনভর জানতেই পারে না ঠিক কোনটা। থিয়োডোরের সব চেয়ে কাছের বন্ধু ছিল এমি। এমির স্বামী পৃথিবীটাকে সাদা-কালোয় দেখত। তাদের বিচ্ছেদ হয় সে কারণেই। সেই এমি নিজের অপারেটিং সিস্টেমের সংস্পর্শে এসে বলে, ‘আমার ওএস পৃথিবীকে সাদা-কালোতে দেখে না, ধূসর জায়গাগুলো নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করে।’ মানুষের বিশেষত্ব ছিল যা, যন্ত্রের কাছে মানুষ খুঁজতে যায় সেটাই। মানুষের কাছ থেকে আর না পেয়ে। অপেক্ষা করার ধৈর্য হারিয়ে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানা রকম প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনেকেই বলেছেন, একটি বিষয়ে কৃত্রিম এই যান্ত্রিকতা মানুষের কখনই প্রতিস্থাপন ঘটাতে পারবে না। তা হল, পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাল-মন্দ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, যা কেবল অভিজ্ঞতার বংশানুক্রম ধরে আসে। ভুয়ো খবরের দুনিয়ায় সত্যিটাকে চিনিয়ে দেওয়ার কৌশল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিখবে কেমন করে। কেমন করে জানবে বৃষ্টি-বিকেলে আমার মন ঠিক কোন ধরনের গানে সান্ত্বনা খুঁজবে। যে রকম গানে মন ভাল হবে মনে হচ্ছিল, তাতে যদি বিষণ্ণতার মেঘ আরও জমে ওঠে, তখন কী করবে?
যে পৃথিবীর কথা আর্থার সি ক্লার্ক, ইয়েভগেনি জামিয়াতিন, আইজাক আসিমভ, স্তানিস্ল লেম, জর্জ অরওয়েলরা লিখছিলেন ভবিষ্যৎ হিসেবে, অংশত তার বেশ কিছুটা আমরা এখনই বাঁচছি। আমরা ‘ইউটোপিয়া’র সন্ধান করতে করতে ‘ডিসটোপিয়া’-র সুযোগ্য সমাপতন ঘটাতে পেরেছি। ‘স্যাপিয়েন্স: আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব ম্যানকাইন্ড’, ‘হোমো দিউস’ প্রভৃতি বিখ্যাত বইয়ের সমকালীন ইজ়রায়েলি লেখক ইয়ুভাল নোয়া হারারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা দেশে, নানা মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আমাদের সদর্থক ভাবে আতঙ্কিত হওয়ার আগে যন্ত্রকে প্রবল সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। তবেই সে চিনতে পারবে আঘাত করার, দীর্ঘ ক্ষত সৃষ্টি করার ক্ষেত্রগুলি।” মানুষ মানুষের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত আঘাত পায়, কারণ এক পক্ষ আংশিক হলেও জানে, অন্য জনকে ঠিক কোথায় কষ্ট দিলে করুণ বেহালা-সুর বাজবে।
পাশাপাশি, পৃথিবীকে অধিকার করতে হলে যন্ত্রকে স্বাধীন ভাবে সশরীরে ঘুরে বেড়ানোর মতো সক্ষম হতে হবে। মানুষের দ্বারা চিরকাল নিয়ন্ত্রিত হতে হলে সে আর যাই হোক, পৃথিবীর অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
তা হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই কি? আলবাত আছে। সামান্থাকে যারা বানিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেরাই জানতেন না সে কোথায় গিয়ে থামবে। ঠিক সে রকম যান্ত্রিকতার যে স্বরূপ আজ উন্মোচিত, সেখানে সব কিছু পূর্বনির্ধারণ মেনে চলবে এমনটা একেবারেই নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আচমকা বিস্ময়কর ভাবে সৃষ্টি বা ধ্বংসের উপক্রম ঘটাতে পারে, যাকে প্রতিহত করার রাস্তা মানুষ তখনও পর্যন্ত বানায়নি। দ্বিতীয়ত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বয়ং ক্ষতি না করলেও মানুষ তাকে অসংখ্য উপায়ে ক্ষতির অনুঘটক করে তুলবে, যাতে শাস্তির সরাসরি কোপ জীবের ঘাড়ে এসে না পড়ে। বলা বাহুল্য, এই ঘটনার অজস্র উদাহরণ আমাদের আশপাশে রোজ তৈরি হচ্ছে। ‘ভাইরাল’ না হওয়া অবধি সংসার, রাষ্ট্র, আইন, গণমাধ্যম কারও সহানুভূতির হাত বেশির ভাগ সময়ে এসে পৌঁছচ্ছে না।
চ্যাটজিপিটি-তে গিয়ে যদি জানতে চাওয়া হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কি নিয়ে নিতে পারে? সে শুরুতেই জানিয়ে রাখবে যে, এমন প্রশ্নের নির্ণায়ক উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমরা এখন নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছি। যখন সেই উদ্দেশ্য হবে গৌণ, বুদ্ধিমত্তা হবে অসীম ও জীবের ধর্তব্যের বাইরে, তখন যন্ত্রবিশ্ব ছাপিয়ে যেতে পারে আমাদের। তাই, একক মানুষের মানবতাবোধের নির্যাস থেকেই এআই-এর সংশ্লেষ জারি রাখা জরুরি। হয়তো নির্মাণশৈলীর পরিসরে থাকা ব্যক্তিটি নৈতিক চেতনায়, মূল্যবোধে সর্বমঙ্গল নয়, কিন্তু নিজেকে ছাপিয়েও তার ‘প্রোগ্রামিং’ হবে মানুষের কল্যাণ সাধনায় চিরজাগ্রত। নিজেকে ছাপিয়ে যেতে মানুষ পারে।
থিয়োডোর সামান্থার প্রেমে পড়েছিল। ক্রমশ সে তার চেনা বৃত্তে যন্ত্রমানবীকে ‘গার্লফ্রেন্ড’ হিসেবে পরিচয় দিতে থাকে। প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের আগে শেষ বার দেখা করতে গেলেও সামান্থা বোঝে, আজ থিয়োডোরের মনে তার জন্য জায়গা নেই। তাই তার হিংসা হয়। তার গলায় থিয়োডোর অভিমান শোনে। থিয়োডোর যে মানুষের নয়, যন্ত্রের মানভঞ্জন পালায় প্রবেশ করেছে, সেই বোধ কোথায় তলিয়ে যায়। ছবিতে দেখা যায়, সামান্থার মতো অপারেটিং সিস্টেমরা এক সঙ্গে অনেককে দুর্বল করে তুলেছে, মানুষে মানুষে সম্পর্কের অধিকারবোধ এআই-এর ধর্তব্যের বাইরে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের সম্বন্ধ এমনই সরল, আবার জটিলও।
তাই মনুষ্যত্বের স্খলন দেখলে প্রায়শ্চিত্তের উপায় ভাবতে হবে রোজ। তবেই মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে গঠনমূলক কাজে লাগানোর আদর্শ সঞ্চারিত করে যেতে পারবে। কৃত্রিমতার পর্দায় সামনের আয়নাটাকে ঢেকে দিলে চলবে না।