তাঁর নাম দিদিয়ের দ্রোগবা। তাঁর দেশের নাম আইভরি কোস্ট। তাঁর দেশ ছিল বহু জাতির গৃহযুদ্ধে দীর্ণ।
Didier Drogba

Didier Drogba: ফুটবলের রূপকথায় যুদ্ধ থামিয়েছিলেন যিনি তাঁর নাম দিদিয়ের দ্রোগবা

দেশকে প্রথম বার ফুটবল বিশ্বকাপে তোলার আবেগঘন মুহূর্তে সারা দেশকে বিভেদ ভুলে এক হতে আহ্বান করেছিলেন তিনি। যুদ্ধরত দুই পক্ষ সাড়া দেয়।

Advertisement

সুজিত দাস

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৯
Share:

জাদুকর: স্ট্রাইকার দিদিয়ের দ্রোগবা তাঁর অসাধারণ দক্ষতায় ফালাফালা করে দিতেন বিপক্ষের রক্ষণ। ছবি: গেটি ইমজেস

আবিদজান। আইভরি কোস্টের একটি উপকূল শহর।কফি এবং কোকোর জন্য বিখ্যাত আইভরি কোস্টের ‘মুম্বই’ হল এই আবিদজান। কিন্তু আশির দশকের প্রথম দিক থেকে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার শুরু। ভাগ্যের সন্ধানে আইভরি কোস্ট থেকে মানুষের তুমুল ‘এক্সোডাস’ শুরু হয় ঠিক তখনই। আবিদজান শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ‘ফেলিক্স হুফওয়ে বইনি’ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ১৯৮৩ সালের এমনই এক বসন্তদিনে অ্যালবার্ট এবং ক্লতিলদে দ্রোগবা তাঁদের পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলে ‘টিটো’-কে তার কাকার কাছে একা পাঠিয়ে দিচ্ছেন ফ্রান্সে। দু’জনেই ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। কিন্তু চাকরির অবস্থাও খারাপ। বাড়িতে খাবার নেই। দেশের রাজনৈতিক অবস্থাও টালমাটাল। একমাত্র ভরসা ছোট্ট টিটোর কাকা মিশেল গোবা। তিনি তত দিনে ফ্রান্সের লোয়ার ডিভিশন ফুটবল ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড়। মোটামুটি উপার্জন।

Advertisement

শিশু দিদিয়ের দ্রোগবার আদরের নাম ‘টিটো’। ‘টিটো’ শব্দের অর্থ ‘দৈত্য’। কিন্তু বালকটির বয়স মাত্র পাঁচ, জীবনে কোনও দিন বিমানে ওঠেনি। মা-বাবাকে ছাড়া নিজের শহরেও একা হাঁটেনি এ যাবৎ। দ্রোগবা দম্পতি তাঁদের ছেলের গলায় হাতে লেখা একটি বড় পোস্টার ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, ‘দিদিয়ের দ্রোগবা টু মিট মিশেল গোবা ইন প্যারিস’। সেই পোস্টার দেখেই প্যারিসের ‘শার্ল দ্য গল’ বিমানবন্দরে মিশেল গোবা ঠিকঠাক খুঁজে নিয়েছিলেন ছোট্ট ‘টিটো’-কে।

তার পর ২০০৪ সাল। লন্ডনের কিংস ক্রস স্টেশনের পাশে একটি কফি বার-এ মুখোমুখি দুই বিখ্যাত ‘পাগল’। এক জন চেলসি ফুটবল ক্লাবের কোচ হোসে মোরিনহো। সার্কিটে তাঁর ডাকনাম ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’। অন্য জন রোমান আব্রামোভিচ, চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক। রাশিয়ান বিলিওনেয়ার, ‘ফোর্বস’ পত্রিকার বিচারে ২০১৯ সালে ইজরায়েলে দ্বিতীয়, রাশিয়ায় একাদশতম এবং পর্তুগাল ও লিথুয়ানিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। এহেন মালিক এবং কোচ চেলসি ফুটবল ক্লাবের জন্য এক জন ভাল স্ট্রাইকারের খোঁজ করছেন। ইউরোপের তাবৎ ফুটবল-নক্ষত্রদের দিয়ে আলোচনা চলছে দু’জনের মধ্যে। রোমান আব্রামোভিচ অনেক নাম করে যাচ্ছেন কিন্তু ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’-এর মাথায় একটাই নাম, দিদিয়ের দ্রোগবা। তাঁর এক কথা— ‘অনলি হি ক্যান টার্ন ওয়াটার ইনটু ওয়াইন। দিদিয়ের দ্রোগবা।’

Advertisement

‘দ্রোগবা! হু? হু ইজ় দ্রোগবা?’ উত্তেজিত আব্রামোভিচ।

কফি শপের বাইরে লন্ডনের ঝিরঝিরে বৃষ্টি, ঠান্ডা হাওয়া। হোসে মোরিনহোর কণ্ঠস্বর আরও শীতল, ‘মিস্টার আব্রামোভিচ, পে। প্লিজ় পে অ্যান্ড ডোন্ট স্পিক।’

আর কথা বাড়াননি রোমান আব্রামোভিচ। মেনে নিয়েছিলেন কোচের জেদ। ‘মার্সেই’ ফুটবল ক্লাব থেকে ওই বছরেরই ১৯ জুলাই দিদিয়ের দ্রোগবাকে ২৪ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনে নিলেন এই রাশিয়ান ধনকুবের। এখনকার ভারতীয় মুদ্রার হিসেবে ২৪২ কোটি টাকারও বেশি।

তার এক বছর পরের ঘটনা। আল-মেরিখ স্টেডিয়াম, সুদান। ৮ অক্টোবর, ২০০৫। অঙ্কটা এই রকম, ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম বারের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হলে আইভরি কোস্টকে জিততেই হবে সুদানের বিরুদ্ধে। ও দিকে একই সময়ে, ১৬০০ কিলোমিটার দূরে ইয়াউন্দে স্টেডিয়ামে ক্যামেরুনকেও জিততে হবে মিশরকে হারিয়ে। যদি ক্যামেরুন এবং আইভরি কোস্ট দুটো দলই জিতে যায় তা হলে দ্রোগবার দেশ আইভরি কোস্টের বিশ্বকাপ অভিযান ওখানেই শেষ। কারণ লিগ টেবিলে ক্যামেরুন এক পয়েন্ট এগিয়ে আইভরি কোস্টের থেকে।

দুটো ম্যাচ শুরু হওয়ার বাঁশি একই সময়ে বাজল। আইভরি কোস্ট নির্ধারিত সময়ে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল সুদানকে। ও দিকে ক্যামেরুনের ইয়াউন্দে স্টেডিয়ামে একটার পর একটা নাটক। কুড়ি মিনিটে এগিয়ে যায় ক্যামেরুন কিন্তু ঊনআশি মিনিটে মহম্মদ শাওকির গোলে সমতা ফেরায় মিশর। নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১, এর পর এক্সট্রা টাইম। অতিরিক্ত সময়ের খেলাও শেষ। ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে পেনাল্টি পেল ক্যামেরুন। পেরি ওমের শট বাঁ দিকের পোস্টে লাগার সঙ্গে সঙ্গে গোটা আইভরি কোস্ট জুড়ে আতসবাজির রোশনাই। আইভরি কোস্টের ড্রেসিংরুমে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষাও শেষ। প্রথম বার বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠল পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্ট।

এই অবধি শুধুই ফুটবল। বাকিটা, বিয়ন্ড দ্য গেম। সে দিন আইভরি কোস্টের ড্রেসিংরুমে এর পরে যা ঘটেছিল সেটা রূপকথা। ফুটবল ইতিহাসের ধ্রুপদী গাথা। আইভরি কোস্ট দেশটা তখন গৃহযুদ্ধ এবং জাতিদ্বন্দ্বে দীর্ণ একটা বিভক্ত ভূখণ্ড। বিদ্রোহীদের দখলে দেশের উত্তর দিক, আর সরকার শাসিত দক্ষিণ। শুধু ইউ এন শান্তিবাহিনীরই ২৫ জন সৈনিক মারা গেছে, জাতিদ্বন্দ্বে মৃত্যুর সংখ্যা অগণিত।

কী হয়েছিল সে দিন আইভরি কোস্টের ড্রেসিংরুমে?

পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে হাডল চলছে যখন, মাইক্রোফোন হাতে চেলসির স্ট্রাইকার মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে। টেলিভিশনে সারা দেশ শুনছে দিদিয়ের ইয়েভস দ্রোগবা টেবিলির আহ্বান, “মেন অ্যান্ড উইমেন অব ‘কোট-ডি-ভয়েরা’, আজ আমরা প্রমাণ করেছি গোটা আইভরি কোস্ট এক সঙ্গে থাকতে পারে, উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দেশের মধ্যভাগ এক সঙ্গে খেলতে পারে বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য সামনে রেখে। আমরা কথা রেখেছি। এই জয়ের উল্লাস গোটা দেশকে একত্রিত করুক। আজ, এই মুহূর্তে আমরা
হাঁটু মুড়ে আপনাদের কাছে এই
ভিক্ষা চাইছি।”

এর পর গোটা আইভরি কোস্ট টিম দ্রোগবার নেতৃত্বে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পড়ে। দ্রোগবা বলতে থাকেন, “যুদ্ধ ও শত্রুতা ভুলে অস্ত্র তুলে রাখুন, ভোট হোক। আমরা আনন্দে বাঁচতে চাই তাই স্টপ ফায়ারিং গানস।” এক মিনিটের দু’সেকেন্ড কম সময়ের এই ভিডিয়ো ক্লিপ বার বার দেখানো হতে থাকে দেশের টেলিভিশনে। যুযুধান দুই পক্ষই আলোচনার টেবিলে আসে এবং ‘সিজ়ফায়ার’ স্বাক্ষরিত হয়।

মনে আছে বছর পাঁচেক বয়সি সেই ছোট্ট ছেলেটাকে? একাই যে আকাশপথে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিল প্যারিসের উদ্দেশে, সেই টিটো কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারেনি ফ্রান্সে। একাই কাঁদত বাড়ি থেকে এত দূরে থাকার কারণে। কোনও ক্রমে মাত্র তিন বছর থাকার পর ফ্রান্স থেকে আবার আবিদজান ফিরে আসে এগারো বছর বয়সে। কিন্তু ললাটলিখন অন্য রকম। অ্যালবার্ট এবং ক্লতিলদে দ্রোগবা চাইতেন আদরের টিটো পড়াশুনো করে ‘মানুষ’ হয়ে উঠুক। বাবা-মায়ের কাছে থাকলে দিদিয়ের হয়তো এক জন সফল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই দ্রোগবা দম্পতির চাকরি চলে যাওয়ায় ওই বছরই দিদিয়েরকে আবার ফিরে যেতে হল ফ্রান্সে। আবার সেই মিশেল গোবার দ্বারস্থ হলেন তাঁরা।

অ্যালবার্ট এবং ক্লতিলদের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়েছিলেন মিশেল। টিটোকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। নিজেই শেখাতে শুরু করলেন ফুটবলের অআকখ। তা ছাড়া স্কুল দলে দিদিয়ের রাইট ব্যাক পজ়িশনে খেলা শুরু করে দিয়েছে তত দিনে। ১৯৯৩ সালে মিশেল গোবা দ্রোগবাকে যুব ফুটবল দল ‘লেভালুয়া এস পি’ ক্লাবে ভর্তি করে দিলেন। দ্রোগবা তখন ১৪ বছরের কিশোর। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই সময়ে দ্রোগবার কাছে ফুটবল ছিল পার্ট টাইমের কাজ। এর পরে ‘লে মঁ’ ফুটবল ক্লাবে খেলার পাশাপাশি ‘মাইনে’ ইউনিভার্সিটি থেকে হিসাবশাস্ত্রে ডিগ্রি পান। ২১ বছর বয়সে এক জন রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টান্ট হওয়ার পর দ্রোগবা ঠিক করলেন, এখন থেকে পূর্ণ সময়ের ফুটবলার হতে হবে। মা-বাবার ইচ্ছেপূরণ হয়েছে। ফুটবলের পাশাপাশি লেখাপড়া করে ডিগ্রি অর্জন করে দেখিয়েছেন। এ বারে শুধুই ফুটবল।

ফুটবলে একটা মিথ কাজ করে। আর কিছু কিছু মিথকে মিথ্যে প্রমাণ করার জন্যই দ্রোগবার মতো ফুটবলারদের জন্ম হয়। মিথ হল, ইউরোপিয়ান ফুটবলাররা টেকনিক্যালি দক্ষ আর আফ্রিকান ফুটবলাররা ‘পি’ অ্যান্ড ‘পি’ প্লেয়ার। ‘পি’ অ্যান্ড ‘পি’ অর্থাৎ পেস এবং পাওয়ার। দ্রোগবা প্রমাণ করে ছাড়লেন, আফ্রিকা থেকেও টেকনিক্যালি দক্ষ খেলোয়াড় উঠে আসে। রজার মিল্লা যে বিন্দুটি এঁকেছিলেন, দ্রোগবা তাকে বৃত্তের রূপ দিলেন। স্ট্রাইকিং জ়োনে দ্রোগবা ঘরানার ফুটবল একটা ম্যাজিক। সেই লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সেন্টার ফরওয়ার্ড যে সেন্টার সার্কলে গেমমেকিং শুরু করে আর অ্যাটাকিং থার্ডে এক জন নিখুঁত পাসার কিংবা ফিনিশার। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড এবং দ্রোগবা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে সফল যুগলবন্দি। দু’জনের মিলিত প্রয়াসে ৩৬টা গোল! যে কোনও দল তাদের আক্রমণে এক জনের একটা ‘ফোকাল পয়েন্ট’ তৈরি করে, যাকে কেন্দ্র করে আক্রমণ শুরু হয়। দিদিয়ের সেই অর্থে এক সফল ‘টার্গেট ম্যান’— একাই, ‘উইথ দ্য বল’, নিজের শারীরিক সক্ষমতা ও তীব্র ফুটবলবোধ দিয়ে ফালাফালা করে দিতেন বিপক্ষের রক্ষণ। দ্রোগবা যে ভাবে রেশমের মতো মসৃণ প্রয়াসে বল রিসিভ করতেন এবং যে বুলডোজিং কায়দায় রক্ষা করতেন সেই বল, তাতে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড এবং অন্য সতীর্থরা কয়েক সেকেন্ড অতিরিক্ত সময় পেয়ে যেতেন। আর কে না জানে, যে কোনও খেলায় কয়েক সেকেন্ড সময়ের কী অপার মহিমা। বিশেষত ফুটবল, যেখানে ন্যানো সেকেন্ডে খেলার ভাগ্য বদলে যেতে পারে। এই আইভরি কোস্ট স্ট্রাইকারের দর্শনই ছিল— “ফুটবল খুব সহজ। বল কন্ট্রোল করো, একটা ভাল সিদ্ধান্ত নাও এবং তারপর সেই সিদ্ধান্তকে সুচারু ভাবে রূপ দাও।” দ্রোগবা আসলে ফুটবলারদের ফুটবলার। যে ভাবে কমলকুমার মজুমদার ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়দের অ্যারিস্টটল।

২০০৪ সালে সে দিন লন্ডনে কিংস ক্রস স্টেশনের পাশের কফি শপে হোসে মোরিনহো ইংরেজদের ফুটবল স্টাইলটাই বদলে দিতে চেয়েছিলেন। ধুরন্ধর এই কোচের মাথায় ছিল অন্য পরিকল্পনা। ব্রিটিশ ফুটবলের চিরাচরিত ৪-৪-২ ছকের বদলে ৪-৫-১ ছকে চলে যেতে চাইছিলেন উনি। গোদা বাংলায় এক জন স্ট্রাইকারকে ডিফেন্সের সামনে নিয়ে আসা। এখন যাকে বলা হয় ‘ম্যাকালেলে লাইন’, ঠিক সেইখানে। হ্যাঁ, স্ট্রাইকিং জ়োনে মাত্র এক জন স্ট্রাইকার। আপফ্রন্টের সেই নিঃসঙ্গ স্ট্রাইকারকে হতে হবে ‘জ্যাক অব অল ট্রেডস’। যার পাসিং, ড্রিবলিং, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং শুটিং এবিলিটি হওয়া চাই মারাত্মক। এই একাকী স্ট্রাইকারের রোলে দ্রোগবা অসাধারণ মানিয়ে গেলেন। ফলশ্রুতিতে দুটো টার্মে চার বার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, চারটে এফ এ কাপ, তিনটে লিগ কাপ, এক বার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগ (এবং তিনিই ম্যান অব দ্য ম্যাচ)। দ্রোগবার মুকুট পালকের ভারে নত। বিবিসি নির্বাচিত বর্ষসেরা আফ্রিকান ফুটবলার ২০১৫, প্রিমিয়ার লিগে সোনার বুট ২০০৫-০৬ এবং ২০০৯-১০ এবং ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজ়িনের বিচারে বিল ক্লিন্টন, বারাক ওবামা, লেডি গাগা, সিমোন কাওয়েল-এর সঙ্গে বিশ্বের একশো প্রভাবশালী মানুষের এক জন। ২০০৭-এ ইউনাইটেড নেশনস-এর গুডউইল অ্যাম্বাসাডর। এ ছাড়া নিজের দেশ আইভরি কোস্টের হয়ে রেকর্ড ৬৫টি গোল।

কোনও খেলাই এখন আর মানুষ খেলে বলে মনে হয় না। সবাই যেন রোবটের মতো নিষ্প্রাণ পেশাদার। সবুজ ঘাস থেকে চরিত্ররা হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। দিয়েগো মারাদোনা, জর্জ বেস্ট, লিয়োনেল মেসি, আন্দ্রিয়া পিরলো, রজার মিল্লা, রেনে হিগুয়েতা, ব্রায়ান ক্লফ... এই সব চরিত্র অবলুপ্তির দিকে। সে সময়ে দ্রোগবার মতো খেলোয়াড়ই, কোচ হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলতে পারেন, “আমি একজন ক্যাপ্টেন, আমার দৃষ্টি অনেক বেশি প্রসারিত, এক জন কোচ শুধু ক্লাবের ভালমন্দ ভাবতে পারে কিন্তু আমি চাই আমার দৃষ্টিভঙ্গির অভিঘাত গোটা দেশের ওপর পড়ুক।”

আগামী ১১ মার্চ চুয়াল্লিশ পূর্ণ করবেন দ্রোগবা। এখন নিজের দেশে হাসপাতাল তৈরি করছেন। নেমার, রোনাল্ডো, জ়াভির মতো সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি এক অগ্রণী সৈনিক। বক্সারের শরীর ও ব্যালেরিনার পেলবতা নিয়ে যে খেলোয়াড় শাসন করেছেন ফুটবল দুনিয়া, তিনি জানেন ঠিক কখন ছাড়তে হয়। তিনিই জানেন, মাঠের বাইরেও একটা জীবন আছে। ‘দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস’ শব্দবন্ধটি আপাতত বরাদ্দ থাকুক এই ১১ নম্বর জার্সির জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement