ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ২৭
Bengali Serial Novel

খরস্রোত

রমানাথ হাসলেন এবং সত্যি সত্যি একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লেন। মনে মনে ভাবলেন, সত্যি তাঁর আজ না আসাই উচিত ছিল।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৭
Share:

ছবি কুনাল বর্মণ।

পূর্বানুবৃত্তি : কানপুরে পরিভ্রমণ কালে বসন্ত রোগে আক্রান্ত এক সাধুকে সেবা করে সুস্থ করে তুললেন অমরেন্দ্রনাথ। সেখান থেকে বেরিয়ে নানা স্থানে ঘুরে আশ্রয় পেলেন আর এক সাধুর আশ্রমে। সেখানে কিছু দিন কাটানোর পর হঠাৎ পুলিশের খোঁজখবর শুরু হয়। অমরেন্দ্রনাথ ফের পথে নামেন। অন্য দিকে শ্রীমায়ের কৃপায় আন্দুল মৌড়ীর জমিদারের কাছ থেকে বাগবাজারে সাত কাঠা জমি পেয়েছে চন্দ্রমোহন। তাতে তৈরি হয়েছে তার বাড়ি। মায়ের নির্দেশে যাতে ঠিকমতো নিয়মকানুন মেনে চন্দ্রমোহনের বাড়ির গৃহপ্রবেশের পুজো সম্পন্ন হয়, তার দেখাশোনা করছেন শরৎ মহারাজ। পুজো উপলক্ষে যথেষ্ট লোকসমাগম হয়েছে চন্দ্রমোহনের বাড়িতে।

Advertisement

চন্দ্রমোহনের আর্থিক সঙ্গতি কম বলেই তাঁর আপত্তি ছিল এত লোক নিমন্ত্রণে। কিন্তু শ্রীমায়ের যুক্তি, ভোগের খিচুড়ি দশ জনকে দিতে পারলে, একশো জনকেও দিতে পারবি।

বাড়িতে ঢোকার মুখে রমানাথের সঙ্গে দেখা। রমানাথকে দেখে ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হল চন্দ্রমোহনের। বললেন, “তোমার কি শরীর খারাপ, রমানাথ?”

Advertisement

“একটু জ্বর হয়েছে...” রমানাথ উত্তর দিলেন।

“কই দেখি, কত জ্বর...” বলে রমানাথের গায়ে হাত দিয়ে চমকে গেলেন চন্দ্রমোহন। বললেন, “তুমি এত জ্বর নিয়ে না এলেই পারতে রমানাথ। যাক, এসেছ যখন, এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকবে। একদম হাঁটাচলা করবে না।”

রমানাথ হাসলেন এবং সত্যি সত্যি একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লেন। মনে মনে ভাবলেন, সত্যি তাঁর আজ না আসাই উচিত ছিল। জ্বর তো আছেই, তার উপর আবার বুকের বাঁ দিকে একটা চিনচিনে অস্বস্তি অনুভব করছেন, অথচ এই অস্বস্তির কথা কাউকে বলতে পারছেন না।

রমানাথ উপস্থিত সকলের দিকে তাকালেন। সকলেই যে যার কাজ করে চলেছেন, নয়তো একমনে পুজো দেখছেন। বাগবাজার অঞ্চলের অনেকেই আজ চন্দ্রমোহনের নিমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছেন। রমানাথের ঠিক পাশেই বসে আছেন বঙ্গ সেন। তার সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয় রমানাথের। ব্যবসাসূত্রে অনেক দিনই তাঁকে বঙ্গ সেনের বাগবাজার স্ট্রিটের বাড়িতে আসতে হয়েছে। উপস্থিত আছেন আরও অনেকে। সকলের সঙ্গে পরিচয় নেই রমানাথের। তাঁদের মধ্যেই এক জন রমানাথকে জিজ্ঞেস করে বসলেন, “আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন?”

রমানাথ না বলতে গিয়েও পারলেন না। সত্যিই তাঁর বুকের ব্যথাটা তখন অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর চোখেমুখেও সেই কষ্ট ফুটে উঠছে। উপস্থিত সকলের দৃষ্টি পড়ল তাঁর দিকে। ছুটে এলেন স্বয়ং গৃহকর্তা চন্দ্রমোহন। জনাকয়েক ছুটল ডাক্তার ডাকতে। পাশের ঘরটি ফাঁকা করে সেখানে শোয়ানো হল রমানাথকে। চন্দ্রমোহন নিজে রমানাথের মাথায় হাওয়া করতে করতে অনুযোগ করলেন, “তুমি যা-ই বলো ভাই, তোমার আজ আসা ঠিক হয়নি।”

এ কথার কোনও উত্তর না দিয়ে, ধীরে ধীরে রমানাথ বললেন, “কাউকে বলো, একটা মোটর ডেকে আনতে, আমি বাড়ি চলে যাই।”

“সে যাবে’খন। আগে ডাক্তার এসে দেখে যাক...” চন্দ্রমোহন এ কথা বলতে বলতেই এক জন শুভ্রকেশ বয়স্ক ভদ্রলোক প্রবেশ করলেন। বলেন, “নতুন বাড়িতে আবার কার কী হল?”

ভদ্রলোক ডাক্তার। নাম দক্ষিণারঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। পসার ভালই। বাগবাজার স্ট্রিটের চেম্বারে রোগীর ভিড় উপচে পড়ে। আজ ভাগ্যক্রমে রোগীর ভিড় ছিল না। তাই আসতে পেরেছেন।

রমানাথকে ভাল করে দেখলেন ডাক্তার। তার পর চন্দ্রমোহনকে ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, “উনি আপনার কে হন?”

চন্দ্রমোহন বললেন, ‘‘বন্ধু। বেলঘরে বাড়ি।’’

“ওঁর অবস্থা খুবই গুরুতর। দেখুন যদি কারমাইকেলে নিয়ে যেতে পারেন...” বলে ডাক্তার ফিজ় নিয়ে বিদায় নিলেন।

রমানাথ জেদ ধরে বললেন, “আমি কারমাইকেলে যাব না। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও।”

চন্দ্রমোহন, গণেন মহারাজ, এমনকি শরৎ মহারাজও অনেক বোঝালেন। কিন্তু কোনও কাজ হল না। রমানাথের সেই এক কথা— বাড়ি যাব।

রমানাথকে নিয়ে যখন মোটরগাড়ি বেলঘর পৌঁছল, তখন সব শেষ। ডাক্তার ডাকা হল ঠিকই, কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিল না। নাড়ি ধরে বললেন, “প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজনকে খবর দাও। শেষ দেখা দেখে যাক।”

শশীর আজ কলেজ ছিল না। বাবাকে মোটর থেকে নামিয়ে একতলার বড় ঘরে নিয়ে আসায় সে-ও হাত লাগিয়েছিল। ডাক্তারবাবুর ঘোষণার সময় সে মাথার কাছে দাঁড়িয়েছিল। ডাক্তারবাবুকে বলতে চেয়েছিল, ‘কিছুই কি করার নেই আর?’

বলতে পারল না, কারণ সে জানে যে, সত্যিই আর কিছু করার নেই। তার দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নামল। শরৎ মহারাজ, বঙ্গ সেন ও আরও এক জন অল্পবয়সি ছেলে এসেছিল। মোটর দাঁড়িয়ে ছিল, তাঁরা ফিরে যাবেন। শরৎ মহারাজ শশীর মাথায় হাত রাখলেন। বললেন, “ভেঙে পোড়ো না। সংযত হও। ঠাকুরকে স্মরণ করো।”

রমানাথের শেষযাত্রায় সারা বেলঘর শামিল হল। প্রত্যেকের এক কথা— বড় পুণ্যাত্মা ছিলেন রমানাথ। না হলে এমন মৃত্যু হয়! কেউ কেউ বলল, “আজও সকালে কথা হয়েছে... বড় অমায়িক ছিলেন মানুষটা... কত বড় মন ছিল।”

উমানাথের চোখেও জল। যেটুকু তার ব্যবসায়ে উন্নতি তা মেজদার জন্য। সে দিন কান ধরে বড়বাজারে না নিয়ে গেলে, পয়সার মুখ আর দেখা হত না। কিন্তু এত আকস্মিক ভাবে চলে গেল মেজদা! কান্নায় ভেঙে পড়ল উমানাথ।

সন্ধের আগে দাহকার্য সম্পন্ন করে ঘরে ফিরে এল শশী। দেখল, দিদি আগুন নিয়ে দাঁড়িয়ে। দিদির চোখ দুটো লাল। দিদির এক হাত তফাতে লাবণ্যময়ী। শশী লাবণ্যময়ীর দিকে এক পলক তাকিয়ে আগুনের তাপ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল।

২৯

সারা উত্তর ভারত জুড়ে সন্ন্যাসীর খুব নাম। ভক্তের সংখ্যাও অগুনতি। রোজই বেড়ে চলেছে ভক্তসংখ্যা। সন্ন্যাসী কাউকে ফেরান না। সকলের কথা শোনেন। সকলের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেন। তিনি দেখতেও সুদর্শন। শালপ্রাংশু দেহ, উজ্জ্বল গৌরবর্ণ— সঙ্গে আজানুলম্বিত জটাজূট, যেন জ্যোতির্ময় সিদ্ধ এক মহাযোগী।

সন্ন্যাসীকে দেখে প্রণাম করলেন নীলমণি। তিনিও সন্ন্যাসী। পদব্রজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ঘুরতে ঘুরতে আজ এই সন্ন্যাসীর কাছে আসা। কিন্তু এই সন্ন্যাসীকে তাঁর এত চেনা লাগছে কেন? আগে কোথাও কি দেখেছেন একে? সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞেস করবেন, তার উপায় নেই। সব সময় ভক্তপরিবৃত হয়ে আছেন।

হঠাৎ এক সময় সন্ন্যাসী সকল ভক্তকে বিদায় নিতে বললেন। ভক্তরা অবাক হলেও, সন্ন্যাসীর নির্দেশ পালন করল। নীলমণি দেখলেন, সন্ন্যাসীর চার পাশে এখন কেউ নেই। এই বারই তাঁর উচিত হবে সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া, তিনি তার পূর্বপরিচিত কি না। নীলমণি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মৃদু স্বরে পরিষ্কার বাংলায় বলে উঠলেন সন্ন্যাসী, “নীলমণি, কেমন আছ? অমরদাকে চিনতে পারছ না তো?”

নীলমণি বাক্‌রুদ্ধ। খানিক পরে বললেন, “আপনি অমরদা, মানে, অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়?”

সন্ন্যাসীর মুখে হাসি। বললেন, “তুমি কেন, পুলিশ এসেও চিনতে পারে না। কত বার যে তারা এসেছে! যাক, খবর বলো।”

নীলমণি তাঁর ঝুলি থেকে একটা খবরের কাগজ বার করে সন্ন্যাসীকে দেন। খবরের কাগজটির নাম ‘স্ট্যান্ডার্ড বেয়ারার’। কাগজের তৃতীয় পৃষ্ঠার চতুর্থ কলামের একটি খবরের দিকে সন্ন্যাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নীলমণি। সন্ন্যাসীর মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হয়। মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইনসম্মত হওয়ার ফলে, দ্বীপান্তরে নির্বাসিত সকল বিপ্লবীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা অন্তরালে আছেন, তাঁদের সকলকেই দেশে ফেরার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কাগজের পাতাটি মুড়ে সেটি নীলমণিকে ফেরত দিয়ে সন্ন্যাসী বললেন, “এ কি সত্যি?”

“সত্যি নয়তো কী? বারীন, অবিনাশ, হৃষীকেশ কাঞ্জিলাল, আরও অনেকে কলকাতায় ফিরে এসেছে বেশ কিছু দিন হল। আমিও ফিরে যাব। আপনিও চলুন আমার সঙ্গে...” নীলমণি বললেন।

সন্ন্যাসী নিরুত্তর রইলেন বেশ খানিক ক্ষণ। তার পর বললেন, “তা আর হয় না নীলমণি। এত বড় আশ্রমের ভার আমি কাকে দিয়ে যাব? দু’বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা এই আশ্রম যে এখন আমার প্রাণ।”

“কিন্তু আপনিই তো এক সময় আমাদের বলতেন, দেশই আপনার সব। এখন এই ইট, কাঠ, পাথর দিয়ে তৈরি একটা আশ্রমের জন্য আপনি মায়াবোধ করছেন?”

“একটা আশ্রম বা প্রতিষ্ঠান শুধু ইট, কাঠ বা পাথর দিয়ে তৈরি হয় না। অনেক আবেগ, অনুভূতি থাকে এর মধ্যে। যাক, তুমি এখন বিশ্রাম করো। এই আশ্রমে তুমি যত দিন খুশি থাকতে পারো।”

নীলমণি কোনও উত্তর দেওয়ার আগেই সন্ন্যাসী উঠে দাঁড়ালেন এবং ধীর পায়ে এগিয়ে চললেন পাশের ঘরের দিকে, যেখানে ভক্তরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে।

নীলমণি বুঝতে পারলেন না, তাঁর কী করা উচিত। এক বার ভাবলেন, সন্ন্যাসী অমরেন্দ্রনাথের আতিথ্য গ্রহণ না করে বিদায় নেবেন। পরক্ষণেই মনে হল, তিনি তো এই আশ্রমে থাকবেন বলে এসেছেন, তা হলে যাবেন কেন। আর কোথায়ই বা যাবেন? এই সব যখন ভেবে চলেছেন, তখনই শুনতে পেলেন, “আইয়ে মহারাজ।”

চমকে সামনে তাকিয়ে দেখলেন, এক অতি শীর্ণকায় ব্যক্তি তাকে ডাকতে এসেছেন। কোনও কিছু না ভেবে, নীলমণি তাঁকে অনুসরণ করলেন।

রাত্রি গভীর। ঘুম আসছে না নীলমণির। তিনি স্থির করে নিয়েছেন এই আশ্রমে দিন সাতেক থাকবেন। তার পর আরও উত্তরে গিয়ে কিছু দিন থেকে দেশে ফিরবেন।

দরজায় একটা ক্যাঁচ করে শব্দ হতে, নীলমণি উঠে বসলেন। আধা আলো আধা অন্ধকারে তিনি দেখলেন, সন্ন্যাসী অমরেন্দ্রনাথ ঘরে ঢুকছেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন তার দিকে। ঠিক তার বিছানার কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন, “তৈরি থেকো, কাল প্রভাতে, উষালগ্নে বেরিয়ে যাব। এ বার দক্ষিণে যাব। আমাদের গন্তব্য স্থান হবে পন্ডিচেরি। পুরনো জীবনে ফিরে যাওয়ার আগে তাঁর মতামতটা খুব প্রয়োজন। আর চেষ্টা করে দেখব, যদি তাঁকেও ফেরাতে পারি।”

নীলমণি অবাক হয়েছেন অমরেন্দ্রনাথের আগমনে। তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন যে, সন্ন্যাসজীবনে অভ্যস্ত অমরেন্দ্রনাথের দেশে ফেরার আর কোনও ইচ্ছে নেই। এখন দেখছেন, তিনি ভুল ভেবেছিলেন। তিনি শুধু একা ফিরতে চাইছেন না, চাইছেন অরবিন্দও তাঁর সঙ্গে দেশে ফিরুক। অরবিন্দ কি ফিরবেন তাঁর আগের জীবনে? কে জানে!

অমরেন্দ্রনাথকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে তিনি দরজার দিকে ফিরেছেন। তিনি চান না নীলমণি তাঁকে আর কোনও প্রশ্ন করুক।

পন্ডিচেরি পৌঁছতে দু’দিন লেগে গেল। পথে দুই সন্ন্যাসীর মধ্যে বিশেষ কথা হয়নি। শুধু অমরেন্দ্রনাথ কয়েক বার জানতে চেয়েছেন কলকাতার অবস্থা। কারা কারা এখন কলকাতায় আছে, ব্রিটিশ সরকারের বর্তমান মনোভাব কেমন, এই সব।

অমরেন্দ্রনাথের কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি নীলমণি। কারণ, তিনি নিজেও অনেক দিন কলকাতা-ছাড়া।

পন্ডিচেরির আশ্রমে এসে দুই সন্ন্যাসীর অবাক হওয়ার অবস্থা। আশ্রমটি বেশ বড় তো বটেই, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুনিয়ন্ত্রিত। এখানেও অনেক ভক্তের ভিড়। কিন্তু এরা অনেক বেশি শৃঙ্খলাপরায়ণ। এক জন আশ্রমবাসী এসে অমরেন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করল, “বলুন, আপনাদের জন্য আমি কী করতে পারি?”

অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “আমরা এসেছি অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে। আপনি তাঁকে একটু খবর দিলেই হবে।”

একটু হেসে আশ্রমবাসী ছেলেটি বলল, “তিনি সকলের সঙ্গে সব সময় দেখা করেন না।”

অমরেন্দ্রনাথ তাকে আর কিছু বলার আগেই ছেলেটি অন্য দিকে চলে যায়।

নীলমণি বললেন, “দেখলে অমরদা, ছেলেটির কেমন ব্যবহার?”

অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “ওর কিছু করার নেই। এখানে সব কিছুই নিয়ম মেনে চলে। অরবিন্দ নিশ্চয়ই দেখা করবেন, তবে তার সময় আছে। আমাদের সেটা জানতে হবে।”

হঠাৎ দোতলা থেকে নেমে আসা এক যুবকের দিকে দৃষ্টি আটকে গেল দু’জনের। দুই সন্ন্যাসী পরস্পরের দিকে তাকিয়ে এক সঙ্গে বলে উঠলেন, “বারীন না?”

অমরেন্দ্রনাথ অনুচ্চ কণ্ঠে বারীন্দ্রনাথের নাম ধরে ডাকলে, বারীন্দ্রনাথ দুই সন্ন্যাসীর কাছে এসে দু’জনের দিকে অপলক নয়নে চেয়ে রইলেন। তার পর অনেক ক্ষণ পর দু’জনকেই চিনতে পেরে বলে উঠলেন, “আপনারা... এখানে কত ক্ষণ?”

অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “খানিক ক্ষণ আগে এসেছি। সেজদা কোথায়? আমাদের নিয়ে চলো তাঁর কাছে। অনেক কথা আছে তাঁর সঙ্গে।”

বারীন্দ্রনাথ কী যেন ভাবলেন। তার পর বললেন, “কী আশ্চর্য! সেজদা আজ সকালেই আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। বলছিলেন— গোবিনটা যে কোথায় গেল! কত দিন হয়ে গেল, তাকে দেখিনি। আমাকে আপনার খোঁজ নিতেও বললেন। এত সহজে যে আপনার খোঁজ মিলবে ভাবিনি। যাই দেখি গিয়ে সেজদা কী করছেন। আজ দেখা না করলেও, সেজদা ঠিকই কাল আপনার সঙ্গে দেখা করবেন। তবু, দেখি এক বার।”

বারীন্দ্রনাথ চলে গেলে, নীলমণি একটু অবাক হয়েই বললেন, “গোবিন?”

“আমার ডাকনাম। বারীন ওই নামেই আমাকে ডেকে এসেছে বরাবর। অরবিন্দবাবুও আমাকে ওই নামে ডাকেন। আমিও বারীনের দেখাদেখি অরবিন্দকে সেজদা বলে সম্বোধন করি।”

বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। বারীন্দ্রনাথের সঙ্গে স্বয়ং অরবিন্দ নেমে আসছেন সিঁড়ির ধাপ ভেঙে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দু’জন চেয়ে রইলেন দিব্যকান্তি এই ঋষির দিকে। ইনি কি সত্যিই অরবিন্দ ঘোষ? ইনিই কয়েক বছর আগে বরোদার মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন? ইনিই যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতেন, ব্রিটিশ সরকারকে কাঁপিয়ে দিতেন তাঁর অগ্নিবর্ষী লেখনী দিয়ে?

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement