Durga Puja 2022

সব সময় দশভুজা নন দেবী দুর্গা

কখনও স্বপ্নাদেশে, কখনও কুলাচার মতে দেবী লুকিয়ে ফেলেন তাঁর আটটি হাত, কখনও আরও আট হাত বাড়িয়ে হয়ে ওঠেন অষ্টাদশভুজা। তিনি কখনও অষ্টভুজা, কখনও শিল্পের সাম্য ভেঙে ত্রিভুজাও।

Advertisement

দেবযানী বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫৪
Share:

পাটুলি মঠবাড়ির দ্বিভুজা দুর্গা।

দ্বিভুজা দুর্গা, পাটুলি মঠবাড়ি, হুগলি

Advertisement

এখানে দেবী দুর্গা দ্বিভুজা। এক হাতে সাপ, ডান হাতে ত্রিশূল, পদতলে মহিষাসুর। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বৌদ্ধ তান্ত্রিক রীতিনীতি। এখনও সপ্তমী ও অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে অর্ধরাত্রি বিহিত পূজা, নরবলির প্রতীকী অনুষ্ঠান হয়। গ্রামের আদি বাসিন্দা মদনমোহন তর্কালঙ্কার স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পাটুলিতে একটি বৌদ্ধ মঠ ছিল। এই মঠেই দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই কারণে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে যায় বৌদ্ধ তন্ত্রমন্ত্র। মা দ্বিভুজা হলেও পিছনে ছোট ছোট আটটি অস্ত্রবিহীন হাত লুকোনো থাকে। সিংহের মুখটি অশ্বের মতো, রং সাদা। পুজোর শুরু থেকেই তালপাতায় হাতে লেখা পুঁথি অনুযায়ী মায়ের পুজো হয়ে আসছে। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয়। এই পুজোয় চণ্ডীপাঠ ও সন্ধিপুজো হয় না। সপ্তমীর মধ্যরাতে রুদ্ধদ্বার মন্দিরে বিশেষ তান্ত্রিক মতে পুজো হয়। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ছাড়া কেউ থাকতে পারেন না। চালের গুঁড়ো বা পিটুলি দিয়ে নরমূর্তি বানিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে বলি দেওয়া হয়। বহু আগে প্রতি বারো বছর অন্তর নরবলির প্রথা প্রচলিত ছিল। অনেক কিংবদন্তি আছে এই নরবলি ঘিরে। নরবলি দেওয়ার পর রাতে উৎসর্গীকৃত ধড় ও মুন্ডু প্রতিমার সামনে রেখে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হত, পরদিন সকালে রক্ত ছাড়া কিছু দেখা যেত না। নরবলি বন্ধ হওয়ার পর পশুবলির প্রথা চালু হয়। এখন তাও বন্ধ।

দ্বিভুজা দুর্গা, রায়রামচন্দ্রপুর

Advertisement

বর্ধমানের রায়রামচন্দ্রপুর গ্রামের পূর্ব নাম ছিল রামচন্দ্রপুর। প্রায় ৪০০ বছর আগে রায়পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল বীরভূম। অজয় নদের বন্যায় রায়দের ভিটেমাটি ধ্বংস হয়ে যায়। কপর্দকহীন বিশ্বনাথ রায় দুই পুত্রকে নিয়ে রামচন্দ্রপুরে আসেন। বর্ধমান রাজ কীর্তিচাঁদ মহাতাবের কানে এল তাঁদের কথা। রামচন্দ্রপুর মৌজার দায়িত্ব দিলেন তাঁদের। তাঁদের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের নাম বদলে গেল রায়রামচন্দ্রপুরে। শুরু হল দুর্গোৎসব।

বৈষ্ণব ভাবধারায় প্রভাবিত রায়দের দুর্গাপুজো। দেবী ব্যাঘ্রবাহনা। বাহনটি শ্বেতবর্ণের, মুখটি ঘোড়াসদৃশ। দেবীর আটটি হাত খুবই ছোট, সাজের আড়ালে ঢাকা থাকে। দু’টি হাতে ত্রিশূল। বাড়ির সদস্যরাই পুরোহিত ও তন্ত্রধারকের ভূমিকা পালন করেন। দুই ভাইয়ের বংশধরদের এক জন করে সদস্য ৫০৪টি করে মোট ১০০৮টি বেলপাতা আহুতি দিয়ে বৈদিক যজ্ঞ সম্পন্ন করেন। মাটির হাড়িতে শাঁখা, পলা, নোয়া, সিঁদুর, আলতা, তেল, চিরুনি, শাড়ি, গামছা, পান-সুপারি, লুচি, মিষ্টি, দিয়ে দেবীর যাত্রামঙ্গল অনুষ্ঠান এ বাড়ির নিজস্ব প্রথা।

দেববর্মণ পরিবারের দ্বিভুজা, ত্রিপুরা

ত্রিপুরার রাজা দেববর্মণ পরিবারের দুর্গা আরাধনার প্রথম প্রামাণ্য নিদর্শন পাওয়া যায় রত্নমাণিক্যের আমলের মুদ্রায় (১৪৬৪-৬৭ সাল)। দেবী এখানে দ্বিভুজা। বাকি আটটি হাত আঁচলের আড়ালে লুকোনো। এক সময় দশভুজা দুর্গারই পুজো হত এখানে। এক বার মহারাজ কৃষ্ণকিশোরমাণিক্যের মহারানি রাজপুরোহিতের বারণ সত্ত্বেও ভোগ নিবেদনের সময় মন্দিরে ঢুকে পড়েন। দেখতে পান মা দুর্গা দশ হাতে অন্ন গ্রহণ করছেন। এমন দৃশ্যে তিনি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান। ওই রাতেই কৃষ্ণকিশোর স্বপ্ন দেখেন, আগামী বছর থেকে যেন দু’হাতের দুর্গামূর্তি পুজো করা হয়। সেই থেকে তিনি দ্বিভুজা।

ত্রিভুজা দুর্গা, সোমড়া

কৃষ্ণনগরের বৈদ্যবংশীয় রামচন্দ্র সেন ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান। সোমড়ায় পাঁচ খিলানের দুর্গাদালান তাঁরই তৈরি। দালান তৈরির পর কী রূপে মহামায়ার আরাধনা করবেন ভাবতে ভাবতে ধ্যানে বসলেন রামচন্দ্র। মা তাঁকে এই বিচিত্র রূপ দেখান। সাতটি হাত পিছনে লুকিয়ে রেখে ত্রিভুজা রূপে আবির্ভূতা হন। ডান দিকে দু’টি হাত, উপরের হাতে খাঁড়া, নীচেরটিতে ত্রিশূল। বাঁ হাতে সাপের লেজ ধরে আছেন। ত্রিভুজা দুর্গার পুজো রামচন্দ্র শুরু করেন ১৭০০ সনে। সেন পরিবারের পারিবারিক ইতিহাস ‘চাঁদরানী’ গ্রন্থে রামচন্দ্রের ত্রিভুজা দুর্গার কথা পাওয়া যায়।

এ বাড়িতে বৈষ্ণবমতে পুজো হয়। বিসর্জনে প্রতিমা বাঁশের মাচায় করে মাঝগঙ্গায় নামিয়ে দেওয়া হয়।

সোমড়ার ত্রিভুজা দুর্গা।

চতুর্ভুজা দুর্গা, কাটোয়া

বর্ধমানের বৈষ্ণবধাম কাটোয়ার জেলেপাড়ার দাসচৌধুরী পরিবারের চতুর্ভুজা দুর্গামূর্তি, অতীতের শক্তি আরাধনার সঙ্গে বৈষ্ণব ধারার সুন্দর সমন্বয়। কাটোয়ার জেলেপাড়ার তাঁতি সম্প্রদায় দাসচৌধুরীদের আরাধ্য দুর্গামূর্তিতে বিষ্ণুর চার হাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দশ হাতের স্থানে এসেছে চার হাত। উপরের দু’টি হাতে খাঁড়া এবং চক্র, আর নীচের দু’হাতে ত্রিশূল ও সাপ। মহিষাসুর থাকলেও মহিষ নেই। সম্ভবত বৈষ্ণবধর্মে গরু-মহিষের প্রাধান্য থাকায় দেবীর বধ্যরূপে মহিষ থাকে না। মায়ের চার হাতে পরানো হয় অসংখ্য শাঁখা। বৃন্দাবনের চতুর্ভুজা কাত্যায়নী দুর্গাপ্রতিমার আদলে এই মৃন্ময়ীরূপ নির্মিত। প্রায় চারশো বছর আগে পাঁচুগোপাল দাসচৌধুরী জমিদারি পেয়েছিলেন এখানে। তাঁর পিতা ভৈরব দাস এই চতুর্ভূজা দুর্গামূর্তির আরাধনা শুরু করেন। বৈষ্ণব ধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় ঢাক, ঢোল, কাঁসির সঙ্গে চলে হরিনাম সঙ্কীর্তন। বিসর্জনের পর নতুন কাপড় পরিয়ে কাঠামো নিয়ে আসা হয় দালানে। শুরু হয় নিত্যপূজা।

চতুর্ভুজা দুর্গা, পাশলা, মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার পাশলা গ্রামের জমিদার রায়চৌধুরীদের বাড়িতে তিনটি বেদিতে তিন চতুর্ভুজা দুর্গার আরাধনা হয়। রায়চৌধুরী পরিবারের হাতে এই পুজোর সূচনা হয়নি। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে এক সন্ন্যাসিনী গ্রামে আসেন। তিনি গ্রামের প্রান্তে উঁচু ঢিবিতে পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে সাধনায় রত হন। সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি দশভুজার ঘট স্থাপন করে পুজো করতেন। সন্ন্যাসিনীকে ভক্তরা বুড়িমা বলে ডাকত। তার আরাধ্যা দেবীও বুড়িমা নামে পরিচিতি পায়। সন্ন্যাসিনীর মৃত্যুর পর তাঁরই নির্দেশে পাশলার জমিদার মথুরানাথ রায়চৌধুরী পুজো চালিয়ে যেতে থাকেন। সে সময় শুধু ঘট পুজো হত। পরবর্তী কালে জমিদার বংশের এক সদস্যকে মূর্তিপুজোর নির্দেশ দেন বুড়িমা। সন্ন্যাসিনীর নির্দেশমতো মূর্তি হয় চতুর্ভুজা। কয়েক বছর পর দুই শরিকের মধ্যে বিবাদ বাধায় গিরিশ রায়চৌধুরী ও শ্রীশচন্দ্র রায়চৌধুরী মূল বেদির ডান দিকে আরও দু’টি বেদি নির্মাণ করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই থেকে তিনটি মূর্তিই এক সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে। প্রাচীন বুড়িমা মূর্তিকে সোনালি জরির সাজ, অন্য দু’টি মূর্তিকে শোলার সাজে সাজানো হয়। পরিবারের তিন দুর্গারই চার হাতে খড়্গ, ঢাল, ত্রিশূল ও অসুরের চুলের মুঠি। সিংহটি ব্যাঘ্ররূপী, রথের দিন কাঠামো পুজো করে মাটির প্রলেপ পড়ে। তান্ত্রিক মতে প্রতি দিন হয় ছাগলবলি।

কাটোয়ার জেলেপাড়ার চতুর্ভুজা দুর্গা।

অষ্টভুজা সিংহবাহিনী, বালিয়া

হাওড়া জেলার বালিয়া পরগনার জগৎবল্লভপুর গ্রামের সিংহবাহিনী দশভুজা নন, অষ্টভুজা রূপে পূজিতা হন। ইনিই গ্রামের একমাত্র আরাধ্যা দেবী। তাই বালিয়া পরগনায় দশভুজা দুর্গার আরাধনা নিষিদ্ধ। ৬০০ বছর এই রীতি চলে আসছে। কথিত আছে, পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের এক রাজা দেবীর স্বপ্নাদেশ মেনে জগৎবল্লভপুরের নিজবালিয়া গ্রামে সুবিশাল মন্দির নির্মাণ করে সিংহবাহিনী দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। দেবীর সেবার জন্য ৩৬৫ বিঘা জমি দান করেন। দেবী নিমকাঠের, তাই গ্রামে নিমকাঠ পোড়ানো হয় না। কোনও পরিবারের শুভকাজে দেবীর অনুমতি নেওয়ার রীতি প্রচলিত। জনশ্রুতি রয়েছে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা এক সাধারণ কুমোরের রূপ ধরে বন্ধ মন্দিরকক্ষে দেবীমূর্তি তৈরি করেন। দেবীর নির্দেশ পেলে তবেই মূর্তির অঙ্গরাগ হয়। শ্বেত সিংহের পিঠে দাঁড়ানো সিংহবাহিনী কাঞ্চনবর্ণা। ছ’টি হাতে বিবিধ অস্ত্র, বাকি দু’টি হাতে বরাভয়। দেবীর মূল উৎসব বৈশাখ মাসের সীতানবমীতে, পরের দিন অন্নকূট। দু’দিনের এই উৎসবে ১২টি গ্রাম এক জায়গায় মিলিত হয়।

কলাছড়াহাত দুর্গা, বসিরহাট

দশপ্রহরণধারিণী দুর্গাপ্রতিমা, কিন্তু প্রতিমার আদল অন্য রকম। দু’টি হাত স্বাভাবিক হলেও বাকি আটটি হাত ছোট ছোট। এমন প্রতিমা দেখা যায় বসিরহাটের দণ্ডীরহাট বসুবাড়ির পুজোর দালানে। ডাক্তারবাড়ির পুজো নামেই সমাধিক পরিচিত এ পুজো। ডাক্তার জগবন্ধু বসু ছিলেন পরিবারের কৃতী সন্তান। বিভিন্ন ধর্মের মেলবন্ধন এ পুজোর আর একটি বৈশিষ্ট্য। মঠবাড়ি এলাকা থেকে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আজও মায়ের দর্পণ বয়ে আনেন। তবেই শুরু হয় বোধন। রথের দিন পাকড়া গাছের কাঠের কাঠামো প্রস্তুত হয়। আজও প্রাচীন তালপাতার পুঁথি দেখে হয় মন্ত্রোচ্চারণ। পুজোর গঙ্গাজল আসে বাগবাজার থেকে। ৪০০ বছর ধরে এ সব রীতি চলে আসলেও এ পুজোর প্রতিমার গড়ন বদলে গিয়েছিল এক দুর্ঘটনার অভিঘাতে। এক বার ষষ্ঠীর দিন ভেঙে যায় প্রতিমার হাতের আঙুল। এমন সময় জগবন্ধু বসুর মা স্বপ্নাদেশ পান, ভাঙা হাত না জুড়ে এই ভাবেই পুজো করতে। আর পরের বছর থেকে আটটি হাত ছোট, দু’টি হাত বড়, এমন ভাবে প্রতিমা গড়তে। এই বৈশিষ্ট্য আজও অটুট। ছোট হাতগুলি ১০-১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের। কলার ছড়ার মতো দেখতে বলে নাম কলাছড়াহাত প্রতিমা।

এই পুজোর সঙ্গে মুসলিম পরিবারের যোগাযোগ বহু বছরের। আজও ১২ জন বেহারার কাঁধে বাঁশ পাটের দোলায় চেপে বিদায়যাত্রা করেন মা। ইচ্ছামতী নদী পর্যন্ত ৮ কিমি দীর্ঘ এই যাত্রায় চার জায়গায় নামানো হয় প্রতিমা— মোকসেদ মোল্লার বাড়ি, নন্দীপাড়া, কাহারপাড়া, মন্দির হাটখোলা। সকলের দর্শনের শেষে হয় নিরঞ্জন। সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন এ পুজোকে আলাদা করেছে অন্য পুজো থেকে।

মেদিনীপুরের সোনাপোতা গ্রামের অষ্টাদশভুজা দুর্গা।

অষ্টাদশভুজা দুর্গা, মেদিনীপুর

দেবী উগ্রচণ্ডার অষ্টাদশভুজা রূপের মহিষমর্দিনী মূর্তি বিভিন্ন মন্দিরগাত্রে দেখা গিয়েছে। কিন্তু গৃহস্থবাড়ির অঙ্গনে এই দুর্গার পূজা বিরল। পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরের গড় সোনাপোতা গ্রামের অষ্টাদশভুজা দুর্গার পুজো অন্যান্য পুজো থেকে আলাদা। এক সময় মেদিনীপুরের এই অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। আরণ্যক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় মানুষজন দেবী দুর্গার আরাধনা করতেন। অরণ্যের রক্ষয়িত্রী দেবী অরণ্যানী দুর্গা নামে পরিচিত। এমনই ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজো দেব পরিবারের আঠারো হাতের দুর্গাপুজো। ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের লেখাতেও এই পুজোর কথা পাওয়া যায়। এক সময় মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এই পরিবারে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন। তিনি দুর্গাপূজা করতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় এই ব্যতিক্রমী পুজোর প্রচলন হয় এই পরিবারে। শ্রীশ্রীচণ্ডী মতে তৈরি হয় মূর্তি। আদলে প্রাচীন লোকায়ত শিল্পের ছাপ স্পষ্ট। আঠারো হাতে থাকে লাঠি, ঘণ্টা, আয়না, তির, ধনুক, পাকানো দড়ি, ডমরু, ত্রিশূল, বজ্র, খড়্গ, ঢাল, শঙ্খ, চক্র, গদা, পাশ, অঙ্কুশ, শূল ও অসুরের চুলের মুঠি। চালচিত্রে দেবীর পুত্র-কন্যারা অনুপস্থিত। দেবীর শাড়ি, গয়না সবই মাটির। দেব পরিবারে পুজোয় বাজে নহবত। এখনও সন্ধিপুজোয় বাড়ির কোনও সদস্য হাতের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে পুজো করেন। পুজোর চার দিন অঞ্চলবাসী মানুষজন আসেন তাঁদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে। সকলে সাধ্যমতো দেবীকে নাচে গানে খুশি করার চেষ্টা করেন।

বিশ্বজননীর কোনও নির্দিষ্ট রূপ নেই। তাঁকে কোনও এক রূপের আধারে ধরা যায় না বলেই তাঁর অনেক রূপ। ভক্ত, শিল্পী, কুল এবং প্রথার দাবিতেই তিনি হয়ে ওঠেন বিচিত্ররূপা, বিচিত্রভুজা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement