Bengali Feature

অন্নের পর্বতে শাক ভাজা লুচি সন্দেশের অলঙ্করণ

তাতে ফুটে ওঠে গিরিরাজের মুখমণ্ডল। যে গিরিরাজ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণেরই দ্বিতীয় রূপ। কৃষ্ণের কথায় ইন্দ্রের বদলে যখন গোপবাসীরা গিরিগোবর্ধনের পুজো করলেন, পর্বতের মতো আকৃতি ধারণ করে সমস্ত নৈবেদ্য গ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণ নিজেই। সূচনা হয়েছিল বৈষ্ণবদের অন্নকূট মহোৎসবের।

Advertisement

অরুণাভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫০
Share:

নৈবেদ্য: বরাহনগর পাঠবাড়ি আশ্রমে অন্নকূট উৎসবের অন্নব্যঞ্জন।

বাঙ্গালীর ইতিহাস’ লিখতে গিয়ে নীহাররঞ্জন রায় জানিয়েছেন বাঙালির বৃহত্তম দুঃখের কথা। বলেছেন, “‘হাঁড়িত ভাত নাহি, নিতি আবেশী’, ইহাই বাঙালি জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ!” তার পরেই এসেছে বাঙালির বৃহত্তম সুখের প্রসঙ্গ। ‘নৈষধচরিত’ থেকে দময়ন্তীর বিবাহের ভূরিভোজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, “পরিবেশিত অন্ন হইতে ধূম উঠিতেছে, তাহার প্রত্যেকটি কণা অভগ্ন, একটি হইতে আর একটি বিচ্ছিন্ন (ঝরঝরে ভাত), সে অন্ন সুসিদ্ধ, সুস্বাদু ও শুভ্রবর্ণ, সরু এবং সৌরভময়।” এ হল ধনীগৃহের বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাত পরিবেশনের বর্ণনা। আবার ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ গ্রন্থে আছে, গৃহিণী কলাপাতায় গাওয়া ঘি ছড়ানো সফেন গরম ভাত, গরম দুধ, ময়না মাছ, নালিতা শাক পরিবেশন করছে আর পুণ্যবান খাচ্ছে।

Advertisement

অর্থাৎ উচ্চ-নিম্ন সকল বর্ণের বাঙালি দুধে-ভাতে থাকাকেই প্রকৃত সুখ কিংবা পরম পুণ্য হিসেবে শিরোধার্য করেছেন। দেবী অন্নপূর্ণার কাছেও ঈশ্বরী পাটনীর ঐকান্তিক প্রার্থনা, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ আসলে কান টানলে মাথা আসার মতো বাঙালির খাওয়া-দাওয়ার ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করলেই অনিবার্য ভাবে এসে পড়বে ভাতের প্রসঙ্গ। নীহাররঞ্জন জানিয়েছেন, “ভাত-ভক্ষণের এই অভ্যাস ও সংস্কার অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি-অস্ট্রেলীয় জনগোষ্ঠীর সভ্যতা ও সংস্কৃতির দান। উচ্চকোটির লোক হইতে আরম্ভ করিয়া নিম্নতম কোটির লোক পর্যন্ত সকলেরই প্রধান ভোজ্যবস্তু ভাত।”

এ দেশে অন্ন ঈশ্বরতুল্য পবিত্র। নীলাচলে অন্ন ভক্ষণকে কেন্দ্র করে মুছে গিয়েছে সমস্ত ভেদাভেদ। দারুব্রহ্ম জগন্নাথের রসনা তৃপ্ত করে অন্ন ‘ব্রহ্ম’ তকমা পেয়েছে। পঞ্জিকায় সেই অন্নব্রহ্মকে নিয়ে উৎসবে গা ভাসানোর একটা উপলক্ষও আছে, তার নাম অন্নকূট। বৈষ্ণবদের কাছে অন্নকূট হল মহোৎসব। শাস্ত্রানুযায়ী স্বয়ং ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ এই মহোৎসবের প্রবর্তক। কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে পালিত হয় অন্নকূট। তিথিটি ‘বীরপ্রতিপদ’ নামেও খ্যাত।

Advertisement

শ্রীমদ্ভাগবতে অন্নকূট উৎসব প্রচলনের কথা লেখা আছে। দ্বাপরে নন্দরাজা ও বৃন্দাবনের সমস্ত গোপ ইন্দ্রযজ্ঞের আয়োজন করেন। কৃষ্ণ তখন বালক। তিনি ইন্দ্রযজ্ঞের আয়োজন দেখে নন্দরাজাকে বলেন যে, গোপেরা তাঁদের জীবন-জীবিকার জন্য বন, বনজ সম্পদ ও গিরিগোবর্ধনের কাছে অত্যন্ত ঋণী। তাই পুজো যদি করতেই হয়, তা হলে ইন্দ্রের পরিবর্তে ব্রজবাসীদের রক্ষাকর্তা গিরিগোবর্ধনেরই পুজো করা উচিত। তখন ব্রজবাসীরা তাঁদের প্রিয় কৃষ্ণের যুক্তি মেনে নিয়ে ইন্দ্রযজ্ঞের পরিবর্তে গিরিগোবর্ধনের আরাধনা করেন। তা দেখে ইন্দ্র রাগে ফুঁসে ওঠেন। তিনি তাঁর প্রলয়কারী মেঘেদের আদেশ দেন ব্রজভূমি ধ্বংস করার জন্য। তখন ব্রজের আকাশে ঘনিয়ে এল দুর্যোগের কালো মেঘ। মুহুর্মুহু বজ্রপাত, প্রবল ঝড়, মুষলধারে বর্ষণ ও ভীষণ শিলাবৃষ্টির ফলে ব্রজভূমি লন্ডভন্ড হয়ে গেল। প্রলয়ের কবলে পড়ে ব্রজবাসী ও গবাদি পশুরা মৃতকল্প। তাঁরা কৃষ্ণের শরণাগত হলেন। কৃষ্ণ বুঝলেন, এ সবই ইন্দ্রের কারসাজি। ইন্দ্রের অহঙ্কার চূর্ণ করার জন্য বালক কৃষ্ণ এক হাতে গিরিগোবর্ধনকে তুলে নিলেন এবং টানা সাত দিন ধরে নিজের বাঁ হাতের কড়ে আঙুলে সেই সুবিশাল পাহাড় ধারণ করে রইলেন। গিরিগোবর্ধনের ছত্রছায়ায় ব্রজবাসীদের কোনও অনিষ্ট হল না। এ দিকে শ্রীকৃষ্ণের আশ্চর্য যোগশক্তির পরিচয় পেয়ে ইন্দ্র তখন অনুতপ্ত। তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আকাশগঙ্গার জলে শ্রীকৃষ্ণের অভিষেক করলেন এবং তাঁর নাম রাখলেন ‘গোবিন্দ’।

গোবিন্দের সেই লীলাকে স্মরণ করেই দীপান্বিতা অমাবস্যার পরদিন অন্নকূট মহোৎসব, গিরিগোবর্ধন এবং গো-পুজো করা হয়। বৃন্দাবনে গোবর্ধনকে বলা হয় ‘গিরিরাজ’। ভক্তদের বিশ্বাস, এই গিরিরাজ হলেন শ্রীকৃষ্ণের দ্বিতীয় কলেবর। বলা হয়, দ্বাপরে ব্রজবাসীরা যখন গোবর্ধনের পুজো করছিলেন, তখন বালক কৃষ্ণ গোবর্ধনের মতো বিশাল আকৃতি ধারণ করে গোবর্ধনের উদ্দেশে নিবেদিত পর্বতপ্রমাণ অন্ন-ব্যঞ্জন প্রভৃতি ভক্ষণ করেন। আবার ব্রজবাসীদের রক্ষা করতে তিনি ক্ষুধা-তৃষ্ণা ভুলে অবিরাম সাত দিন গোবর্ধনকে ধারণ করে ছিলেন। তাই দুর্যোগের মেঘ কেটে গেলে ব্রজবাসীরা রাশি রাশি অন্ন, ছাপ্পান্ন রকমের ব্যঞ্জন, মিষ্টি ইত্যাদি তৈরি করে তাঁদের স্নেহের কানাইকে খেতে দেন। সে দিন শ্রীকৃষ্ণ প্রায় সাত দিনের অন্ন-ব্যঞ্জন এক দিনে ভক্ষণ করেছিলেন। সেটিই প্রথম অন্নকূট।

অন্নকূটের আভিধানিক অর্থ— অন্নের পাহাড় বা অন্নের স্তূপ। মথুরা, বৃন্দাবনের বিভিন্ন মন্দিরে অন্নকূট উপলক্ষে দেবতাকে স্তূপীকৃত অন্ন সহযোগে ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। অন্নকূট সারা দেশে পালিত হলেও বৃন্দাবনে এই মহোৎসবের কয়েকটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। দীপাবলির দিন সন্ধ্যাবেলায় ব্রজবাসীরা গোবর্ধনের নিকটস্থ মানসী গঙ্গার তীরে উপস্থিত হয়ে গিরিগোবর্ধনের উদ্দেশে দীপদান করেন। পরদিন ব্রজের ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট। গিরিরাজের প্রতিভূ হিসেবে গোবর দিয়ে একটি ছোট পাহাড় বানানো হয়। দেবতার সামনে রাখা হয় স্তূপীকৃত অন্ন বা অন্নের পাহাড়। রকমারি শাক, ভাজা, মিষ্টি দিয়ে অন্নের পাহাড়ে গিরিরাজের চোখ, মুখ আঁকা হয়। চার পাশে সাজানো থাকে ছাপ্পান্ন রকমের নিরামিষ ব্যঞ্জন, নোনতা, মিষ্টি ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য।

অন্নকূট মানেই আহারের বাহার। চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় যত সুস্বাদু নিরামিষ পদ, সকলেই ভিড় করে এই মহোৎসবে। কৃষ্ণদাস কবিরাজ ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে অন্নকূটের এক মনোরম বিবরণ দিয়েছেন। শ্রীচৈতন্যের গুরুর গুরু মাধবেন্দ্র পুরী গোবর্ধনের কাছাকাছি গোবিন্দ কুণ্ড থেকে সুপ্রাচীন গোপাল বিগ্রহ উদ্ধার করে গোপালকে গিরিগোবর্ধনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার দিন গ্রামবাসীদের সহায়তায় গোপালের অন্নকূট মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জানা যায়, সে দিন ভোগ রান্নার জন্য গোবর্ধনের আশপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর পরিমাণ চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, দধি, দুগ্ধ, ঘি ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়। রান্না ও পরিবেশনের জন্য আনানো হয় প্রচুর মাটির পাত্র। সেই মহোৎসবে দশ জন ব্রাহ্মণ মিলে শুধু অন্ন রন্ধন করেন। জনা পাঁচেক ব্রাহ্মণ নানা রকমের ব্যঞ্জন রন্ধনে ব্যস্ত ছিলেন। আর জনা সাতেক ব্রাহ্মণ শুধু রাশি রাশি রুটি বেলেন। নতুন বস্ত্রের উপর পলাশ পাতা রেখে তার মধ্যে গোপালকে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগের তালিকায় ছিল অন্নের স্তূপ, রুটির পাহাড়, নানা রকমের বন্য শাক ভাজা, বড়া, বড়ি, কড়ি (দই ও বেসন দিয়ে বানানো ব্রজবাসীদের এক রকমের খাদ্য), সূপ, ঘিয়ের তৈরি রকমারি নিরামিষ ব্যঞ্জন, পায়েস, মাখন, সর, দধি, দুগ্ধ, মাঠা, শিখরিণী (দই, দুধ, চিনি, গোলমরিচ, ঘি, মধু, বিটনুন ও কর্পূর সহযোগে প্রস্তুত এক রকমের শরবত) প্রভৃতি। গোপালের অন্নকূট মহোৎসব দেখে ব্রজবাসীরা আপ্লুত হন। তাঁদের মনে হয়েছিল, ‘পূর্ব অন্নকূট যেন হৈল সাক্ষাৎকার।’ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের সময়ে ব্রজবাসীরা যে ভাবে অন্নকূট পালন করেছিলেন, এ যেন ঠিক সেই রকম!

আধুনিক কালে মহাসমারোহে অন্নকূট মহোৎসব পালিত হয় বাগবাজারের নববৃন্দাবন মন্দির ও রাধামদনমোহন মন্দিরে। মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা গোকুলচন্দ্র মিত্র। শোনা যায়, বিষ্ণুপুরের রাজা চৈতন্য সিংহ ঋণগ্রস্ত হয়ে মদনমোহন বিগ্রহকে গোকুলচন্দ্র মিত্রের কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। মদনমোহনের অন্নকূট উপলক্ষে প্রচুর পরিমাণ অন্ন-সহ প্রায় একশোরও বেশি পদ তৈরি করা হয়। পুজো শেষে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় সেই অন্নভোগ।

শ্রীপাট খড়দহের বিখ্যাত রাধাশ্যামসুন্দর জিউয়ের অন্নকূট উৎসব বহু প্রাচীনকাল থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়ে আসছে। নিত্যানন্দ প্রভুর পুত্র বীরচন্দ্র প্রভু শ্যামসুন্দর বিগ্রহের প্রতিষ্ঠাতা। অন্নকূটের দিন সকালে মন্দিরে একটি গরু এনে পুজো করা হয়। তার পর শুরু হয় গিরিগোবর্ধন পুজো। মন্দিরে চতুর্দোলায় গোবর দিয়ে একটি ছোট পাহাড় তৈরি করে গিরিগোবর্ধনের পুজো, আরতি করা হয়। এ দিন মন্দিরের জগমোহনে অন্নের পাহাড় তৈরি করে তা মালপো, মিষ্টি দিয়ে সাজানো হয়। অন্নস্তূপের মাথায় থাকে সন্দেশের গাছ। থাকে লুচি ও রকমারি ব্যঞ্জনও। গর্ভমন্দিরের চৌকাঠে একটি দোলনায় রাধাশ্যামসুন্দর ও অনন্তদেবকে বসিয়ে এই অন্নব্যঞ্জন নিবেদন করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত অন্নকূটের প্রসাদ গ্রহণ করেন।

প্রাচীন কলকাতার আরও একটি অন্নকূটের বর্ণনা পাওয়া যায় ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ গ্রন্থে। বড়বাজারে ১২ মল্লিক স্ট্রিটের তারাচাঁদ ঘনশ্যাম দাসের বাড়ির গৃহদেবতা ময়ূরমুকুটধারীর অন্নকূট মহোৎসব। কথামৃতে আছে যে, ১৮৮৪ সালের ২০ অক্টোবর শ্রীরামকৃষ্ণ মারোয়াড়ি ভক্ত তারাচাঁদের বাড়িতে সেই মহোৎসব দেখতে গিয়েছিলেন। সেই সম্পর্কে কথামৃতকারের প্রাঞ্জল বর্ণনা— “মারোয়াড়ী ভক্তেরা বাহিরে ছাদের উপর ভজনগান আরম্ভ করিয়াছেন। শ্রীশ্রীময়ূরমুকুটধারীর আজ মহোৎসব। ভোগের সমস্ত আয়োজন হইয়াছে।… ময়ূরমুকুটধারীকে দর্শন করিয়া ঠাকুর প্রণাম করিলেন ও নির্মাল্যধারণ করিলেন। বিগ্রহ দর্শন করিয়া ঠাকুর ভাবে মুগ্ধ।”

এ ছাড়াও শ্রীচৈতন্যের পদধূলিধন্য বরাহনগর পাঠবাড়ি, বঙ্গীয় নিম্বার্ক আশ্রম, নবদ্বীপে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সেবিত ধামেশ্বর মহাপ্রভু, গোপীবল্লভপুরে রাধাগোবিন্দ জিউ প্রভৃতি মন্দিরের অন্নকূট মহোৎসব আড়ম্বর ও প্রাচীনত্বে সুবিশাল। ত্রিপুরার আগরতলার জগন্নাথবাড়ি মন্দিরে অন্নকূট উপলক্ষে প্রচুর অন্ন-সহ এক হাজার রকমের পদ তৈরি করে জগন্নাথদেবকে নিবেদন করা হয়।

রানি রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বা ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যারাকপুরে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে নির্মিত অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা অষ্টধাতুর অন্নপূর্ণা ও মহাদেব। শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পুজোর দিন হয় অন্নকূট মহোৎসব। ওই দিন সকালে প্রধান পুজো, কুমারী পুজো ও হোমের পরেই হয় অন্নকূট। প্রচুর পরিমাণ অন্ন-সহ প্রায় ৫১ রকম পদ দেবীকে নিবেদন করা হয়।

উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবী অন্নপূর্ণার অন্নকূট উপলক্ষে দেবীকে ৬০ কিলো চালের অন্ন, ২০ কিলো চালের পোলাও, সঙ্গে ১২০টি নিরামিষ পদ, রকমারি মিষ্টি নিবেদন করা হয়। বকফুলের বড়া, চালভাজার নাড়ু, ওলকপির ডালনা, পানিফলের ধোঁকা প্রভৃতি ব্যঞ্জন যেমন ভোগের তালিকায় থাকে, তেমনই থাকে ফুচকা, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক, চিপস, চকলেটের মতো খাবারও। আবার ভোজন শেষে হজমি গুলিও লাগে দেবীর সেবায়! ভট্টাচার্য বাড়িতে জাতিভেদ মানা হয় না, চাইলে যে কোনও বর্ণের মানুষ এসে দেবীর ভোগ রান্না করতে পারেন। অন্নকূটকে কেন্দ্র করে মুছে গিয়েছে সমস্ত ভেদাভেদ। শুধু জাতি, বর্ণ নয়, শ্রীকৃষ্ণের হাত ধরে শুরু হওয়া এই মহোৎসবকে কেন্দ্র করে শাক্ত, বৈষ্ণবও মিলেমিশে একাকার।

তথ্যসূত্র: শ্রীমদ্ভাগবত (দশম স্কন্ধ), শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত: শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুর, শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত: কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত: শ্রীম-কথিত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement