ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।
পূর্বানুবৃত্তি: অন্নু জানতে চেয়েছিল, তার সঙ্গে মানিকের মাঝে মাঝে দেখা হতে পারে কি না। জোর দিয়ে এ সম্ভাবনা না রাখার কথা বলে মানিক। তবু প্রতিশ্রুতি দেয়, ভবিষ্যতে খুব প্রয়োজনে মাত্র এক বারই সে অন্নুর সঙ্গে দেখা করবে, তাতে তার যত কষ্টই হোক। সেই কথা রেখেছিল মানিক, অন্নুর ডাকে তার বেনারসের বাড়ি গিয়ে দেখা করেছিল। অন্নুর মনে ভেসে আসে মানিকের নানা স্মৃতি। হঠাৎই কালীপুর জ়ু থেকে অপালার ফোন আসে। সে জানায়, মানিকের বড় রকমের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, সম্ভবত বাঁচবে না...
রাগ আর অভিমান হয়েছে বিপুলের, অনিকেত পর পর তিন দিন ওর কাছে আসেনি। ওর গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে ওর প্রিয় গাছের পাতাসুদ্ধ ডাল ওর মুখের কাছে ধরেনি। শেষ যে দিন এসেছিল, সে দিনও বেশি ক্ষণ থাকেনি ‘ভগোড়া’ সলিলসখার কাছে যেতে হবে বলে। বিপুলের সঙ্গে কোথায় যেন নিজের মিল খুঁজে পায় অনিকেত। হয়তো দু’জনেই একই রকম ভাগ্যের হাতে মার-খাওয়া আর কোণঠাসা বলে তুলনাটা ওর মনে আসে।
বিপুলের জীবনটা বড় দুঃখের। অভাগা জন্মেছিল অসমের কাজিরাঙার ঘাসজমিতে। ভাগ্যবিধাতা বিপুলকে একটু বেশিই বিষনজরে দেখেছিলেন বলতে হবে। গত শতাব্দীর শেষ দিকে এক ভয়ঙ্কর বন্যায় বিপুল তার পরিবার হারায়, ওর ঠিকানা হয় বন দফতরের উদ্বাস্তু শিবিরে। মনের মতো এক সমবয়সি বন্ধু জুটেছিল, নাম বিধু। বেশ চলে যাচ্ছিল দুই বন্ধুর জীবন সুখে-দুঃখে, কিন্তু ওই যে বিধাতা! তিনি ওদের দু’জনের কচি দু’টো খড়্গের ঠিক উপরে, মানে ললাটে অনেক ডামাডোল লিখে দিয়েছিলেন। অসম আর পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের মধ্যে হওয়া একটা চুক্তির ফলে, ওদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত হল গরুমারা অভয়ারণ্যে— তখনও গরুমারা জাতীয় উদ্যান হয়নি— ওখানের গন্ডারদের জিন পুলে বৈচিত্র আনার জন্য।
তরুণ দুই শৃঙ্গী ভাল করে চার পাশের দুনিয়াটাকে বুঝে ওঠার আগেই ঘুমপাড়ানি ড্রাগে কাবু হয়ে ট্রাকে চড়ে বসল। তার পর অসমের চেনাশোনা পরিবেশ থেকে নামল এসে উত্তরবঙ্গের গরুমারায়। চার পাশের মানুষজন অচেনা, তার উপর ঠেলে দেওয়া হল প্রতিকূল পরিবেশে উগ্রস্বভাব স্বজাতিদের কাছে। দুই বন্ধু টিকে থাকার লড়াই চালিয়েছিল কিছুটা, কিন্তু মানুষের সাহচর্যে নিশ্চিন্ত ঘেরাটোপে বেড়ে উঠে আক্রমণ সামলানো কিংবা প্রতি-আক্রমণের সহজাত প্রবৃত্তি দু’জনেরই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় পুরুষ গন্ডারদের জঙ্গি হামলায় ওদের প্রতিরোধ খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল। রক্তাক্ত, আহত দুই বন্ধুকে গরুমারার বনকর্মীরা নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল সে বার। বিধুকে নিয়ে যাওয়া হল জলদাপাড়ায়, বিপুল মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লাগল গরুমারাতেই।
বিপুলের সঙ্গে বিধুর আর দেখা হয়নি। ও জানতেও পারেনি, মাসদুয়েক যমে-গন্ডারে টানাটানির পর হেরে গিয়ে বিধু জলদাপাড়াতেই মারা গিয়েছে। বিপুল কোনও ক্রমে টিকে গেল বটে, কিন্তু স্থানীয় গন্ডারদের হামলা বন্ধ হল না। মাঝে মাঝেই তারা দল বেঁধে অ্যাটাক করতে আসত আর ফরেস্টের লোকেদের কাজ ছিল রাত জেগে তাদের তাড়ানো। এক সময় তিতিবিরক্ত হয়ে বন দফতর স্থির করল, বিপুলকে কালীপুর জ়ু-তে পাঠানো হবে। আগেও কেউ কখনও ওর মতামত নেয়নি, এ বারও ব্যতিক্রম হল না। ফের বিপুলকে ইঞ্জেকশন দিয়ে অবশ করে ট্রাকে তুলে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হল নিরাপত্তার জন্য। সেই থেকে বিপুল এখানে। বিপুলের অতীত সম্পর্কে অনিকেত এটুকুই জানতে পেরেছে ওর রেকর্ড ঘেঁটে।
বিপুলকে নিয়ে ভাবনার ফাঁকেই কখন যেন এক সময় বিপুল ফেন্সিংয়ের ও পাশে ওর গা ঘেঁষে এসে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তারবাবু অনিকেতের হাতে ওষুধের টিউবটা দিয়ে বলেন, ‘‘নিন, এ বার নিজের হাতে ওর ক্ষতগুলোয় ওষুধ লাগিয়ে দিন। বাকিরা ওষুধ লাগাতে গেলে ও তো দৌড়ে পালায়, কেবল আপনার বেলায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। কী যে বশ করেছেন ওকে! গন্ডার যে মানুষের বন্ধু হতে পারে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।’’ অনিকেত হাসে, ‘‘আসলে হয়তো ওর সঙ্গে আমার মেন্টাল রেজ়োন্যান্সটা ম্যাচ করে যায়। অনেক সময় মানুষে-মানুষেও এমন হয়।’’
হঠাৎই ওর মনে পড়ে যায়, এই ধরনের একটা কথা ও এক সময় বিশেষ কাউকে বলেছিল। যখন বলেছিল, তখন ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এক টগবগে তরুণ। আর আজ তার অবস্থান সে দিনের এতটাই বিপরীতে, যে গন্ডারের মতো তথাকথিত সংবেদনহীন, কম অনুভূতির এক জীবের সঙ্গেও ওর মানসিক সাযুজ্য খুঁজে পাচ্ছে ও! নিয়তির কী অদ্ভুত পরিহাস! হঠাৎই মাথাটা একটু ঘুরে ওঠে, প্রেশারটা আচমকা বেড়ে গেল না কি? ডাক্তারবাবুকে বললে উনি হয়তো হাতির প্রেশার মাপার যন্ত্র দিয়েই ওরটাও মাপতে শুরু করবেন, দরকার নেই বাবা।
তবে ও বিপুলকে মোটেই সংবেদনহীন, কম অনুভূতির প্রাণী বলে মনে করে না। বিপুল মানুষের ডাক শুনতে পায়, বুঝতেও পারে, ও সেই ডাকের মধ্যে আন্তরিকতার তফাতটাও ধরতে পারে। অনিকেত লক্ষ করেছে, বিপুল ওর মান-অভিমান, আনন্দ আর দুঃখও ব্যক্তি অনুযায়ী প্রকাশ করে। পর পর কয়েক দিন ওর কাছে এলে ও যে ভাবে এগিয়ে আসে, আদর খাওয়ার জন্যে গলা বাড়িয়ে দেয়, কোনও কারণে কয়েক দিন বাদ পড়লে সেই ভঙ্গিটা বদলে যায়। সেটা বিপুলের স্মরণশক্তি কম বলে নয়, বরং ও নিজের আচরণে বুঝিয়ে দেয় যে ওকে দেখতে না আসায় ও যথেষ্ট মাইন্ড করেছে।
ডাক্তারবাবু বলে ওঠেন, ‘‘এখন দেখুন আপনার পুষ্যি ছেলে ঢুঁ মেরে আপনাকে কানের গোড়া আর কপাল-ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দিতে অর্ডার করছে! আপনি কি এখানে থাকবেন না এগোবেন? আমাকে আসলে কালুর কাছে যেতে হবে একটু, ওর বেশ সর্দি হয়েছে, কেন জানি না। এ দিকে আবার ওকে ওষুধ খাওয়ানোই মুশকিল, মানুষের পূর্বপুরুষ তো! সব কিছু দেখে, শুঁকে, পরখ করে তবে খায়, ওষুধ-টষুধের মতো বাজে জিনিস থাকলে খুঁটে ফেলে দেয়।’’
বিপুলের কান-ঘাড়-গলা চুলকে দিতে দিতে অনিকেত বলে, ‘‘দেখছেন তো, এখনই একে ছেড়ে যাওয়া মুশকিল। আমার অবস্থা শকুন্তলা-পুত্র ভরতের মতো, মানুষের মায়া ত্যাগ করে শেষে হরিণশিশুর মায়ায় বাঁধা পড়ে আর স্বর্গলাভ হল না। আমাকে আবার বাঘের ঘরে ফিনিশিং ওয়ার্ক দেখতে যেতে হবে। তবে আপনি তুচ্ছ শিম্পাঞ্জি বলে কালুকে অবজ্ঞা করবেন না। আপনি যে ওকে
কোল্ড ড্রিংকের টোপ দিয়ে তাতে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গুলে খাওয়ান, সে আমি জানি। স্বার্থপূরণের জন্য এমন লোভের টোপ মানুষই দিতে পারে, শিম্পাঞ্জিরা নয়!’’
ডাক্তারবাবু হাসতে হাসতে চলে যান, অনিকেত বিপুলকে টাচ থেরাপি দিতে দিতে ভাবে, মানুষ কি শুধু মনুষ্যেতর জীবকেই বোকা বানায়, না কি মানুষ মানুষকেও বোকা বানিয়ে চলেছে নিরন্তর? কালু না-হয় কোল্ড ড্রিংকেই কাবু হয়, কিন্তু কত রকমের ফাঁদই তো পাতা আছে এ ভুবনে! আবার মাথাটা ঘুরে ওঠে, বিপুল-সহ সামনের পৃথিবী দুলতে থাকে নাগরদোলার মতো। বয়স হয়েছে, শরীরের যত্নও নেয় না, তবু এত ঘন ঘন এমন তো হওয়ার কথা নয়! বিপুল আর ওর মাঝখানে বুক-সমান পাঁচিল, না হলে মাথা ঘুরে ও হয়তো বিপুলের সামনেই পড়ে যেত! আর যত ভালবাসাবাসিই থাক, পৌনে-দু’টন ওজন নিয়ে বিপুল একটু বেশি গা-ঘেঁষে দাঁড়ালেই ওকে ইহলীলা সংবরণ করতে হত।
অনিকেত ঘড়ি দেখে, আর পনেরো মিনিটের মধ্যে ভিজ়িটর ঢোকা শুরু হবে, চলবে পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা অবধি। বিপুলকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ও বাঘের ঘরের দিকে এগোয়। রাস্তায় দেখা বড়বাবুর সঙ্গে, লেজুড়ের মতো সঙ্গে লেগে রয়েছে দ্য গ্রেট চাঁদুবাবু। বড়বাবু এগিয়ে এসে কান-এঁটো করা হাসি দেন একটা, ‘‘ভালই হল স্যর আপনাকে পেয়ে, কাল আমার ছেলের চশমার দোকান উদ্বোধন। আপনিও একটু পায়ের ধুলো দেবেন, ছেলে বলেছে আপনাকে একটা চশমা ও ডোনেট করবে, এক্কেবারে ফ্রি অব কস্ট, কী বলেন স্যর?’’
অনিকেত একটু গম্ভীর হয়ে বলে, ‘‘এখানে ডোনেট শব্দটা ভাল লাগছে না, এ ক্ষেত্রে প্রেজ়েন্ট বা গিফ্ট বললে কানে কম লাগে। আমার চেয়ে আর একটু গরিব কোনও মানুষকে যদি আপনার ছেলে একটা চশমা ডোনেট করে ফ্রিতে চোখ দেখিয়ে, তা হলেই আমি ধন্য হব।’’ বড়বাবু বেশ ঘাবড়ে গিয়ে হড়বড় করে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন, ‘‘ও ভাবে বলতে চাইনি স্যর...’’
বাঘের নির্মীয়মাণ খাঁচার কাছে গিয়ে অনিকেতের মেজাজ ফের গরম হয়ে ওঠে, সব ক’জন মিস্ত্রি-মজদুর এ কজায়গায় বসে গুলতানি করছে। এ দিকে উপরমহলের চাপ আছে এই এনক্লোজ়ারের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য। নন-ব্রেকেবল কাচের দেওয়ালের এক পাশ থেকে দর্শকরা ভিতরে অনেকখানি খোলা জায়গায় এক বা একাধিক বাঘকে ঘুরে বেড়াতে দেখবে, বাঘও দর্শকদের দেখতে পাবে, অথচ কোনও টিজ়িংয়ের ব্যাপার থাকবে না, যেহেতু গরাদ আর জালের বদলে কাচ থাকবে মাঝখানে।
কনসেপ্ট হিসাবে স্ট্রাকচারটা নতুন ধরনের। তাই মিডিয়ার তরফ থেকে নানা প্রশ্ন আসতে শুরু করেছে— কাচটা কতটা পুরু আর শক্ত, বাঘ লাফিয়ে পড়লে যদি কাচ ভেঙে যায় তবে দর্শকদের নিরাপত্তার কী হবে, গরাদ আর জালের প্রচলিত নিরাপত্তা ছেড়ে এই ধরনের ভঙ্গুর ব্যবস্থা কেন নেওয়া হল ইত্যাদি। সত্যি বলতে, কাচ কতটা শক্ত তা টেস্ট করা হয়েছে, তবে বাস্তবে বাঘ লাফিয়ে পড়ে থাবা মারলে কী হবে সেটা তো আর হাতেকলমে পরীক্ষা হয়নি! ফলে যত টেনশন সবটাই জ়ু-এর এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টরের জন্য জমা হয়ে আছে।
হাতে সময় একে কম, ও দিকে কাজকর্ম চলছে গদাইলশকরি চালে। চড়া গলায় ও হেডমিস্ত্রির কাছে জানতে চায়, ‘‘সব মিলিয়ে চোদ্দোটা ড্রপ-গেট আছে চারটে এনক্লোজ়ারে, সব ক’টা গেটের কন্ট্রোলিং পুলিগুলোকে আলাদা করে ডাবল অ্যাঙ্করিং আর গ্রাউটিং করার জন্যে লোহার পাত ওয়েল্ডিং করতে বলেছিলাম— সেগুলো কমপ্লিট হয়েছে?’’
একটু আমতা আমতা করে হেডমিস্ত্রি বলে, ‘‘ওগুলা আর লাগবে না স্যর, আমরা বেশ শক্ত করে সিমেন্ট-মর্টার দিয়ে জমিয়ে দিচ্ছি, ওতেই কাজ হয়ে যাবে।’’
মুহূর্তে আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়ে, মেজাজ তুঙ্গে ওঠে অনিকেতের, ‘‘এখানকার ডিরেক্টর কে? আমি না তুমি? জানো, ব্রিটিশ আমলের এক-একটা লোহার দরজার ওজন একশো পঁচিশ থেকে দেড়শো কেজির মতো? পুলির উপর দিয়ে যখন গেট ওঠানামা করবে তখন কতটা লোড আর প্রেশার পড়বে আইডিয়া আছে তোমার? যদি গেটটা বাঘের ঘাড়ে পড়ে তবে তো তার দফারফা হয়েই গেল, আর যদি নড়বড়ে দরজার জন্য বাঘ বেরিয়ে আসে খাঁচার বাইরে? তার পর কী হবে তা আন্দাজ করতে পারছ? আমি এক্ষুনি উপরে উঠে দেখব কী গড়বড় করে রেখেছ তোমরা! একটা কাজও ঠিক মতো ঠিক সময়ে করতে পারো না।’’
কারও বাধা না শুনে তরতরিয়ে যেমন-তেমন ভাবে খাড়া-করা বাঁশের মই বেয়ে বাঘের ঘরের ছাদে উঠে গেল অনিকেত। বাধ্য হয়ে অন্যরাও উপরে উঠল ওর পিছনে পিছনে। যতটুকু কাজ হয়েছিল সবটাই ভাঙতে বাধ্য করল ও মিস্ত্রিদের, তার পর আবার নতুন করে কাজ শুরু হল ওর তত্ত্বাবধানে। সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই নড়বড়ে বাঁশের মই বেয়ে নীচে নামতে গিয়েই ঘটল দুর্ঘটনাটা। মইটার একটা ঘাট কি আলগা ছিল, যে কারণে অনিকেতের বাহাত্তর কেজি ওজন নিতে পারল না? না কি আবার এক বার মাথাটা ঘুরে যাওয়াতে মইয়ের ঘাটে পা না দিয়ে হাওয়াতেই পা রাখল ও?
ঠিক করে বলতে পারবে না অনিকেত, তবে এক লহমায় ন’-দশ ফুট উপর থেকে নীচে আছড়ে পড়ল ও। কাত করে রাখা ব্রিটিশ আমলের একটা কাস্ট-আয়রনের পিলারে বুকে ধাক্কা খেয়ে ইটের টুকরো-ছড়ানো মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ল অনিকেত। পাশ থেকে, উপর থেকে হায় হায় করতে করতে কর্মচারী আর মজুররা ছুটে এসে
ওকে চিত করে শোয়াল। ওর কানে এল হেডমিস্ত্রি জামালের গলা, ‘‘ইসস! সায়েবের নাক-মুখ দিয়ে যে গলগলিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে রে! কোথায় চোট লাগল বল তো? আমরা এ দিকটা দেখচি... দীনু-উমেশ-বসির, তোরা বাকি সায়েবদের, ডাক্তারবাবু আর বড়বাবুদের খপর দে এক্ষুনি!’’ তার পরই অনিকেতের আর কিছু মনে নেই।
নতুন করে যখন আবার অনিকেত চার দিকটা বোঝার মতো অবস্থা ফিরে পেল, তখন ওর চার পাশে একটা ছোটখাটো ভিড় জমে গিয়েছে। সবাই নিজের নিজের মতো করে কথা বলছে, কিন্তু ও কী বলতে চাইছে কেউ সেটা শুনছে না। অবাক কাণ্ড, ভিড়ের ফাঁক দিয়ে অপালাকে এক বার দেখতে পেল ও। অপালা কেমন অদ্ভুত ভাবে ওর রক্তমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল, তার পর হাতের মোবাইলে বাটন টিপে কাকে যেন ফোন করল, ফোনে বলল, ‘‘এই শোন, কালীপুর জ়ু থেকে বলছি। কয়েক জনকে নিয়ে সকাল ন’টায় বেড়াতে এসেছিলাম...’’ অন্যদের হইচইয়ের ফাঁকে আর কিছু শোনা গেল না।
ক্রমশ