আবারও বিরোধ অন্ধ্রপ্রদেশের রেড্ডি পরিবারে। রাজনৈতিক দল নিয়ে বিরোধের পর এ বার সম্পত্তি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামলেন অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন্মোহন রেড্ডি এবং তাঁর বোন ওয়াইএস শর্মিলা।
সরস্বতী পাওয়ার ও অন্যান্য সংস্থায় শেয়ার এবং বেঙ্গালুরু শহরতলির ইয়েলাহাঙ্কায় ২০ একর জমি-সহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে হবেন, এই নিয়ে নতুন করে বিবাদ শুরু হয়েছে দাদা-বোনের মধ্যে।
সম্পত্তি নিয়ে দাদা-বোনের খেয়োখেয়ির এই খবর বর্তমানে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। এই নিয়ে আইনি লড়াই শুরুর আগে নিজেদের মধ্যে চিঠি আদানপ্রদানও করেন জগন্মোহন এবং শর্মিলা।
সেই চিঠিগুলিতে দু’জনেই প্রয়াত বাবা তথা সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডিকে নিয়ে গুণগান গাইলেও একে অপরকে ‘প্রতারক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এখন ‘দুশমন’ হলেও এক সময় দাদা এবং বোনের মধ্যে ‘দোস্তি’ ছিল দেখার মতো। ২০০৯ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন অখণ্ড অন্ধ্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা রাজশেখর রেড্ডি। তাঁর মৃত্যুতে খালি হওয়া কাড়াপা জেলার পুলিভেন্ডুলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জেতেন বিজয়াম্মা।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ২০১১ সালে নয়া দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস গড়েন রাজশেখর-পুত্র জগন। সে সময় পাশে পেয়েছিলেন মা বিজয়াম্মা এবং বোন শর্মিলাকে।
২০১২ সালের জুনে সে রাজ্যের বিধানসভা উপনির্বাচনে দাদার হয়ে জোর প্রচার চালিয়েছিলেন শর্মিলা। সেই উপনির্বাচনে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে জিতেছিল জগনের দল।
২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে জগনের দল ওয়াইএসআরসিপি। সেই নির্বাচনেও দাদার হয়ে প্রচারের হাল ধরতে দেখা গিয়েছিল শর্মিলাকেই। কার্যত তিনি ছিলেন দলের সেনাপতি।
যদিও সম্পর্কের ফাটল এর পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০২১ সালে ওয়াইএসআর কংগ্রেস ছেড়ে প্রয়াত বাবার নামে নতুন দল গড়েছিলেন শর্মিলা। জগন-শর্মিলার মা বিজয়াম্মাও পরে সেই দলে শামিল হন।
শর্মিলা শিবিরের দাবি ছিল, হায়দরাবাদ নিবাসী প্রয়াত রাজশেখর রেড্ডির কন্যা অন্ধ্রপ্রদেশের তুলনায় তেলঙ্গানার স্বার্থরক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চান। তাই নতুন দল গড়েছেন তিনি।
তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসে যোগ দেন শর্মিলা। তাঁকে অন্ধ্রপ্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রী পদে নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে দাদা এবং বোনের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয়।
দাদা বনাম বোনের দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে আসে ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইলবুনালের কাছে জগন একটি চিঠি পাঠানোর পর। সরস্বতী পাওয়ারের শেয়ার হস্তান্তরকে ‘অবৈধ’ জানিয়ে ওই চিঠি পাঠিয়েছিলেন জগন।
জগনের দাবি সরস্বতী পাওয়ার সংস্থার শেয়ারগুলি ‘উপহার’ হিসাবে তিনি পেয়েছিলেন এবং তিনি সেগুলি আবার ‘উপহার’ স্বরূপ তাঁর মা ওয়াইএস বিজয়াম্মাকে দিয়েছিলেন। আদালতের ছাড়পত্র এবং উপযুক্ত নথি হাতে আসার পর সেগুলি আবার তাঁর নামে করার কথা ছিল।
কিন্তু জগনের অভিযোগ, সরস্বতী পাওয়ার সংস্থার শেয়ারগুলি অবৈধ ভাবে নিজের নামে হস্তান্তর করিয়ে নিয়েছেন শর্মিলা। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, ‘প্রতারণা’ করে শর্মিলা আইনি জটিলতা তৈরি করেছেন। তাই ওই শেয়ারগুলি ফিরে পাওয়ার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন জগন।
ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইলবুনালের কাছে জমা দেওয়া আবেদনে জগন এবং তাঁর স্ত্রী ভারতী রেড্ডির অভিযোগ, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই চলতি বছরের জুলাইয়ে শর্মিলা এবং বিজয়াম্মার কাছে শেয়ারগুলি হস্তান্তর করা হয়েছিল। তাঁদের দাবি, শেয়ারের এই হস্তান্তর ‘অবৈধ, ফাঁপা এবং বেআইনি’।
আবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘ভালবাসা এবং স্নেহবশত’ কিছু সম্পত্তি এবং শেয়ার বোনের নামে হস্তান্তর করার জন্য ২০১৯ সালের অগস্টে শর্মিলার সঙ্গে একটি সমঝোতাপত্র বা মউ সাক্ষর করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা পরে কার্যকর করা হয়নি। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি ওই মউ নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন বলেও আদালতে জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, শেয়ার হস্তান্তর বেআইনি ভাবে হয়নি দাবি করে শর্মিলার অভিযোগ, বাবা রাজশেখর রেড্ডি চেয়েছিলেন যে, তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি চার নাতি-নাতনির মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হোক। কিন্তু জগন তা করেননি। পাল্টা জগন দাবি করেছেন, তিনি সমস্ত পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ দিয়েছেন শর্মিলাকে।
ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইলবুনালের দুই পক্ষের কাছেই ইতিমধ্যে নোটিস পাঠিয়েছে এবং ৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য নির্ধারিত করেছে।