দেশ-বিদেশের ধনকুবেরদের কথা বললে মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মুকেশ অম্বানী, গৌতম আদানীদের মতো ব্যবসায়ীদের কথা। এঁদের মধ্যে বর্তমানে পৃথিবীর সব থেকে ‘ধনী ব্যক্তি’ ইলন।
এই ব্যবসায়ীরা যে কত কোটি কোটি টাকার মালিক, তা বোঝা যায় তাঁদের বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে।
তবে ইতিহাসে এমনও মানুষের অস্তিত্ব ছিল, যাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ দেখে ইলন, বেজোসের মতো তাবড় ব্যবসায়ীরাও লজ্জা পেয়ে যাবেন।
সে রকমই এক জন চিনের সম্রাজ্ঞী উ জেতিয়ান। ইতিহাসবিদদের একটা বড় অংশের দাবি, তিনিই ছিলেন পৃথিবীর ‘সবচেয়ে ধনী’ মহিলা।
মনে করা হয়, জেতিয়ানের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৬০ লক্ষ কোটি ডলার। অন্য দিকে, বর্তমানে পৃথিবীর ‘সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি’ ইলনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৪ হাজার ১৩০ কোটি ডলার।
অর্থাৎ, ইলন, বেজোস, অম্বানীদের মতো একাধিক ধনী ব্যবসায়ীর মোট সম্পত্তির থেকেও না কি জেতিয়ানের একার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি।
জেতিয়ান ছিলেন চিনের তাং রাজবংশের সম্রাজ্ঞী এবং পৃথিবীর ‘সবচেয়ে ধনী’ মহিলা। তিনিই ছিলেন চিনা ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র সম্রাজ্ঞী।
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, জেতিয়ান এক জন ধূর্ত এবং নির্মম শাসক ছিলেন।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকার জন্য জেতিয়ান নাকি নিজের সন্তানদেরও হত্যা করেছিলেন।
অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, জেতিয়ান ছিলেন উচ্চশিক্ষিতা। তাই তাঁকে যোগ্য শাসক হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন তাং রাজবংশের তাবড় তাবড় ক্ষমতাশালীরা।
জেতিয়ানের জীবনের উপর অবলম্বন করে চিনে ইতিমধ্যেই একাধিক ছবি এবং টিভি শো বানানো হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ‘দ্য এমপ্রেস অফ চায়না’। এই ছবিতে জেতিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেত্রী ফ্যান বিংবিং।
জেতিয়ান প্রায় ১৫ বছর ধরে তাং রাজবংশের ক্ষমতায় ছিলেন। মধ্য এশিয়ায় চিনা সাম্রাজ্য বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
জেতিয়ানের শাসনামলে চা এবং রেশম ব্যবসায় রমরমার কারণে চিনের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য ভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছিল।
চা এবং রেশম শিল্প ছাড়াও জেতিয়ানের রাজত্বে বহু শিল্প লাভের মুখ দেখেছিল। শিক্ষা-সংস্কৃতিতেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল চিন।
জেতিয়ানের জীবদ্দশায়, এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁকে বিভিন্ন সরকারি উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম ‘হোলি গোল্ডেন গডেস (সোনা দিয়ে তৈরি পবিত্র দেবী)’।
চিনের প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, জেতিয়ানের জন্ম হয়েছিল ৬২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যু হয়েছিল ৭০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর। অর্থাৎ, তিনি প্রায় ৮৩ বছর বেঁচেছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেতিয়ান সিংহাসনে বসেছিলেন ৬৯০ সালের ১৬ অক্টোবর। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তিনি শাসন করে গিয়েছেন। জেতিয়ানের স্বামীর সংখ্যা ছিল দুই। জনা দশেক সন্তান ছিল তাঁর।