ভুল নম্বরে ফোন করে অজানা ব্যক্তির গলা শুনেই ফোন রেখে দিয়েছিলেন গ্ল্যাডিস হ্যাঙ্কারসন। ২০ বছর পর দেখা গেল সেই অচেনা মানুষটিই ফুল হাতে হাজির গ্ল্যাডিসের বাড়ির দোরগোড়ায়। নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি বলছেন আমি মাইক মোটিফ। তোমার পুরনো বন্ধু।
উচ্ছ্বসিত গ্ল্যাডিস দু’হাত বাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন মাইককে। গোটা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। জমিয়ে গল্পও করেছেন। ২০ বছর পর প্রথম দেখা। তাতে আরও গাঢ় হয়েছে দু’জনের বন্ধুত্ব।
ঘটনাটি সপ্তাহ খানেক আগের। গ্ল্যাডিসের বয়স এখন ৬০ পেরিয়েছে। মাইক মেরেকেটে ৪০। তবে এটা তো ‘বিশ সাল বাদ’। ২০ বছর আগে যখন দু’জনের প্রথম কথা হয়েছিল তখন এক জন ছিলেন চল্লিশের কোঠায়। অন্য জন সবে ২০।
বয়সের তফাত অনেকটাই। তবে বন্ধুত্ব কবেইবা বয়স দেখে এগিয়েছে! অসমবয়সি হলেও গ্ল্যাডিস আর মাইকের মনের মিলে কমতি ছিল না। অভাব ছিল না বন্ধু হওয়ার রসদের।
ভুল নম্বরে যোগাযোগ হলেও টানা ২০ বছর একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন দু’জনে। মুখোমুখি কেউ কাউকে দেখেননি ঠিকই। তবে তার প্রয়োজনও পড়েনি।
গ্ল্যাডিস আর মাইকের আলাপ পর্বটি ছিল গল্পের মতো। নিজের বোনকে ফোন করতে গিয়ে মাইককে ভুল করে ফোন করে ফেলেছিলেন গ্ল্যাডিস। এরিয়া কোডের ছোট্ট হেরফেরেই হয়ে যায় দু’জনের ‘কিসমত কানেকশন’।
গ্ল্যাডিসের বাড়ি ফ্লোরিডায়। তাঁর বোনের এরিয়া কোড ছিল ৪১০। কিন্তু তিনি বার বার ৪০১ ডায়াল করছিলেন। এই কোড ছিল রোড আইল্যান্ডের মাইকের। পুরুষ কণ্ঠ শুনেই ভুল বুঝতে পেরে ফোন রেখে দিয়েছিলেন গ্ল্যাডিস।
কিন্তু ভুল হওয়া বন্ধ হয়নি। মাঝেমধ্যেই ভুল নম্বরটি ডায়াল করে ফেলতেন গ্ল্যাডিস। আর সারা দিতেন মাইক। এক দিন মাইক বলেই ফেলেন, ‘‘তুমি যখন এই ভুল করতেই থাকবে তখন এস বরং আমরা একটু গল্প করি।’’ সেই শুরু।
মাইক জানিয়েছেন, গ্ল্যাডিস তখন জীবনের কঠিনতম সময় কাটাচ্ছিলেন। সবে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। একমাত্র পুত্র সন্তানকেও হারিয়েছেন। মাইক তাঁকে সেই দুঃখ ভুলতে সাহায্য করেছিলেন।
মাইক সে সময় ছিলেন একটি কলসেন্টারের কর্মী। সাধারণ ফোনকলগুলির বাইরে গ্ল্যাডিসের সঙ্গে কথা বলতে বেশি ভাল লাগত তাঁর। তিনি জানিয়েছেন, সে সময় তিনিও নিজের দাদু ঠাকুমাকে হারিয়েছিলেন। গ্ল্যাডিসের সঙ্গে ফোনে ঘণ্টা খানেকের গল্প তাঁর কাছে ছিল মুক্ত বাতাসের মতো।
মোট কথা দু’জনেই নিজেদের মধ্যে নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছিলেন। গ্ল্যাডিস জানিয়েছেন ওই নির্ভরতাই তাঁদের বন্ধুত্বের মূল ভিতটি পুঁতে দিয়েছিল। যা ২০ বছর পরেও অমলিন রয়েছে।
তবে দূরাভাসের বন্ধু যে হঠাৎ একদিন দূরত্ব ঘুচিয়ে বাড়ির চৌকাঠে হাজির হবেন তা ভাবতে পারেননি গ্ল্যাডিস।
মাইক জানিয়েছেন, তিনি ফ্লোরিডায় ঘুরতে এসেছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। ক্রিসমাসের আগের এই সময়টায় বেশ উৎসব মুখর থাকে বিদেশের বিভিন্ন শহর। চলে থ্যাঙ্কসগিভিং পর্ব। সেই সূত্রেই ফ্লোরিডায় এসে একটি ব্রিজের সামনে আটকে পড়েন মাইক।
এলাকাটি কোথায় জানার পর হঠাৎই তাঁর মনে পড়ে গ্ল্যাডিসের কথা। তাঁর বাড়ি সেখান থেকে মাইল খানেক দূরে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন মাইক। ঠিক করে ফেলেন ফ্লোরিডায় যখন এসেছেন তাঁর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেই যাবেন।
এরপরই একগোছা ফুল কিনে পৌঁছে যান গ্ল্যাডিসের বাড়ি। গ্ল্যাডিস তাকে দেখে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরিচয় জেনেই দু’হাত বাড়িয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ২০ বছরের বন্ধুত্বে নতুন মাত্রা পায়। মাইক জানিয়েছেন, দেখা হওয়ার পর তাঁদের নতুন কিছু মনে হয়নি। ফোনের মতোই দেখা হতেই খাশ গল্পে মেতে ওঠেন দু’জনেই।