১৯৭৭ সালের ১৫ অগস্ট। রাত তখন ১১টা ১৬ মিনিট। অর্থাৎ, আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে ওই রাতে পৃথিবীর রেডিয়ো টেলিস্কোপে ধরা পড়ে এক অদ্ভুত সঙ্কেত। মনে করা হয়, পৃথিবীর বুকে সেই সঙ্কেত এসেছিল বহির্বিশ্ব থেকে।
পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা সেই সঙ্কেত প্রায় মাত্র ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। রেডিয়ো সঙ্কতটি ধরা পড়েছিল আমেরিকার ওয়াইয়োর ‘বিগ ইয়ার’ রেডিয়ো টেলিস্কোপে।
৪৫ বছর পরেও পৃথিবীর বাইরে প্রাণ থাকার সম্ভাব্য অন্যতম প্রমাণ হিসাবে রয়ে গিয়েছে।
অনন্য সেই সঙ্কেত দেখে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে সেই সঙ্কেতের অর্থ উদ্ধার করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরি এহম্যান সেই অদ্ভুত সঙ্কেতের পাঠোদ্ধার করেন। জেরি সঙ্কেতের পাঠোদ্ধার করে জানান, বাইরে থেকে আসা সঙ্কেত আসলে একটি শব্দ। সেই শব্দ ‘ওয়াও’।
বিজ্ঞানীরা এত বছরের গবেষণার পর জানাচ্ছেন, পৃথিবী থেকে প্রায় ১৮০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সূর্যের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা একটি নক্ষত্র থেকে এই সঙ্কেত এসেছিল।
ভিন্গ্রহীদের নিয়ে গবেষণা করা ‘দ্য সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এসইটিআই)’, এখনও এই সঙ্কেত নিয়ে অধ্যয়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ অ্যাস্ট্রোবায়োলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এলিয়েন সঙ্কেতের উৎস খুঁজে বের করার জন্য মোট ৬৬টি জি এবং কে-টাইপ নক্ষত্রের নমুনা নেওয়া হয়েছিল।
তাদের মধ্যে শুধু মাত্র একটি সম্ভাব্য সূর্যের অনুরূপ নক্ষত্রকে এই সঙ্কেতের উৎসস্থল হিসাবে মনে করা হয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলবার্তো ক্যাবলেরোর মতে, ওই নক্ষত্র হল ২মাস১৯২৮১৯৮২-২৬৪০১২৩। ওই নক্ষত্রকেই ১৯৭৭ সালে পৃথিবীতে আসা সঙ্কেতের আদর্শ উৎসস্থল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
সূর্য একটি জি-টাইপ নক্ষত্র এবং এর তাপমাত্রা ৫,৭৭৮ কেলভিন। তাই সাড়ে চার হাজার থেকে ছ’হাজার কেলভিন তাপমাত্রা আছে, এ রকম ৫৫০টি জি-টাইপ নক্ষত্রকেও প্রাণের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
আলবার্তো দাবি করেন, ‘‘যদি আমরা কয়েকটি রেডিয়ো সঙ্কেতের ইতিহাস বিশ্লেষণ করি তা হলে দেখা যাবে যে, যেগুলি বহির্জগতের সঙ্কেত বলে মনে করা হয় সেগুলির কোনওটিই দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয়নি। তাই পৃথিবীর বাইরে প্রাণ থাকলেও থাকতে পারে।’’
বহির্জগতে একটি সম্পূর্ণ সভ্যতার অস্তিত্ব থাকতে পারে বলেও দাবি করেছেন আলবার্তো। তিনি জানান, বহির্জগতের সঙ্কেত একটি নিয়ম ধরে আচরণ না করলে এই ধারণা তৈরি হত না।
১৯৭৭ সালে আসা সেই সঙ্কেত ৭২ সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী ছিল। কিন্তু তার পর থেকে ৪৫ বছর কেটে গেলেও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি। অনুরূপ সঙ্কেতও কখনও শনাক্ত করা যায়নি।
পৃথিবী থেকেও পুয়ের্তো রিকোর শক্তিশালী ‘আরেসিবো রেডিয়ো টেলিস্কোপ’ ব্যবহার করে একটি সাঙ্কেতিক বার্তা মহাকাশে পাঠিয়েছিল।
এই সঙ্কেতে জীবনের উৎপত্তি, মানব দেহের ডিএনএ-র গঠন, আমাদের সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থান এবং এক জন মানুষকে কেমন দেখতে, সে সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত সেই সঙ্কেতের পাল্টা কোনও উত্তর এসে পৌঁছয়নি।
বর্তমানে গভীর মহাকাশে নতুন তথ্য সমন্বিত আরও একটি সঙ্কেত পাঠানোর কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সঙ্কেতে ভিন্গ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগের সহজ পন্থা, মৌলিক গাণিতিক ধারণা, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের ধারণা রয়েছে।