Pakistan Air Force

পাক মাটিতেই তৈরি হবে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট! ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে অলীক স্বপ্নে মজে ইসলামাবাদ

বায়ুসেনাকে শক্তিশালী করতে দেশীয় প্রযুক্তিতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান। অতি গোপনে চলা সেই প্রকল্পে পর্দার আড়ালে থেকে ইসলামাবাদকে সাহায্য করবে তুরস্ক ও চিন?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ১০:৪৯
Share:
০১ ২০
Pakistan Air Force

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান নিয়ে বিপাকে পাকিস্তান। অতি শক্তিশালী এই লড়াকু জেটকে কোনও অবস্থাতেই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে না ইসলামাবাদ। শুধুমাত্র জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে এই যুদ্ধবিমান দিয়ে আফগানিস্তানে হামলা চালানোর অনুমতি রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের। এই অবস্থায় পাক বিমান বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে বড় সিদ্ধান্ত নিল শাহবাজ় শরিফ সরকার।

০২ ২০
Pakistan Air Force

পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বায়ুসেনার আধুনিকীকরণে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। সেই লক্ষ্যে ঘরের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৪৭ সালের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেটের একটি বহরকে পাক বায়ুসেনায় শামিল করতে সক্ষম হবে ইসলামাবাদ।

Advertisement
০৩ ২০
Pakistan Air Force

ঘরের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট তৈরি করতে ইতিমধ্যেই ‘আজ়ম প্রকল্প’ (পড়ুন প্রজেক্ট আজ়ম) শুরু করেছে শাহবাজ় শরিফ সরকার। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজ়ি পার্ক (এনএএসটিপি)-এর কাঁধে। ২০১৭ সাল থেকে এই প্রকল্পটি চালিয়ে আসছে পাক সরকার।

০৪ ২০

পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল উন্নত অ্যাভিয়োনিক্স এবং সেন্সর ইন্টিগ্রেশন। তা ছাড়া লড়াকু জেটের ইঞ্জিন তৈরিও সহজ কাজ নয়। এই ধরনের বিমানগুলি স্টেলথ প্রযুক্তির হয়ে থাকে। অর্থাৎ, খুব সহজে রাডারে এগুলিকে চিহ্নিত করা যায় না। তা ছাড়া বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বহনে লড়াকু জেটটি কতটা সক্ষম হবে, সে দিকে নজর দিতে হবে পাক প্রতিরক্ষা গবেষকদের।

০৫ ২০

ইসলামাবাদ ‘আজ়ম প্রকল্প’কে যথাসম্ভব গোপন রেখেছে। ফলে পাকিস্তানের হাতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির প্রযুক্তি আদৌ রয়েছে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটি যে চিন এবং তুরস্কের থেকে সাহায্য পাবে, তা এক রকম নিশ্চিত। ফলে ‘আজ়ম প্রকল্প’ যথেষ্ট ধীর গতিতে চললেও এর সাফল্যের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা।

০৬ ২০

দেশীয় প্রযুক্তিতে লড়াকু জেট তৈরির পাশাপাশি বেজিঙের তৈরি ‘শেনিয়াং এফসি-৩১’ যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্তও এক রকম নিয়ে ফেলেছে ইসলামাবাদ। ড্রাগনের এই লড়াকু জেটগুলির পরিচিতি ‘জে-৩১’ নামে। ২০১২ সালে এটিকে প্রথম বার আকাশে ওড়ায় চিনা বায়ুসেনা। পরবর্তী সময়ে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানটিকে আরও শক্তিশালী করতে এতে একাধিক পরিবর্তন করেন বেজিঙের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

০৭ ২০

‘জে-৩১’কে পঞ্চম প্রজন্মের মার্কিন লড়াকু জেট ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র সমান দক্ষ বলে বহু বার দাবি করেছে বেজিং। যদিও তা মানতে নারাজ দুনিয়ার তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, স্টেলথ শক্তির নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত লকহিড মার্টিনের তৈরি যুদ্ধবিমানটির ধারেকাছে কেউ নেই। গত দেড় বছর ধরে চলা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে আমেরিকার ‘এফ-৩৫’র বহুল ব্যবহার করেছে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। সেখানে ইতিমধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘উড়ন্ত বাজপাখি’।

০৮ ২০

বিশ্লেষকেরা যা-ই বলুন না কেন, পাক বায়ুসেনা কিন্তু মজে রয়েছে ড্রাগনের লড়াকু জেট ‘জে ৩১’-এ। এর অন্যতম কারণ হল, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব। কয়েক বছর আগে বেজিঙের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঘরের মাটিতে ‘জেএফ-১৭ থান্ডার’ যুদ্ধবিমান তৈরি করে ইসলামাবাদ। আর তাই বর্তমানে ‘জে-৩১’কে বাহিনীতে শামিল করে শক্তিবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর।

০৯ ২০

এর পাশাপাশি তুরস্কের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনাতেও জোর দিয়েছে ইসলামাবাদ। বর্তমানে ‘টিএফ-এক্স কান’ নামের একটি লড়াকু জেট তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে আঙ্কারা। কারণ, পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্বের। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিজোট নেটোতে থেকেও মার্কিন লড়াকু জেটকে বহরে শামিল করতে ব্যর্থ হয়েছে তুর্কি সেনা।

১০ ২০

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘কান’ যুদ্ধবিমানের একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করে তুরস্ক। লড়াকু জেটটিকে তুর্কি বায়ুসেনার উপযোগী করে তোলার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন আঙ্কারার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। সূত্রের খবর, ‘কান’কে আরও বিধ্বংসী করতে এর নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিমানটির উন্নত সংস্করণ তৈরির ব্যাপারে তুরস্কের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামাবাদ।

১১ ২০

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিরক্ষা এবং শিল্প ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে তুরস্কের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পাকিস্তান। সূত্রের খবর, সেখানেই আঙ্কারা থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ‘কান’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান আমদানির ব্যাপারে একপ্রস্ত আলোচনা সেরেছে শাহবাজ শরিফ সরকার। বৈঠকে পাক বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা হাজির ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

১২ ২০

পাক সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, লড়াকু জেটের পাশাপাশি তুরস্কের সহযোগিতায় ঘরের মাটিতে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের। কপ্টারের নকশা নিয়ে বৈঠকও করেছেন তাঁরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের অন্তত ৩২টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

১৩ ২০

আঙ্কারা থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ‘কান’ স্টেলথ লড়াকু জেট ইসলামাবাদ আমদানি করতে চলেছে বলে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘দ্য ডন’ বা ‘এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’-এর মতো জনপ্রিয় পাক সংবাদমাধ্যমগুলি এ সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু বাস্তবে দেড় বছরের বেশি সময় গড়িয়ে গেলেও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত রূপ পায়নি।

১৪ ২০

পঞ্চম প্রজন্মের ‘কান’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘টার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’ বা টিএআই। ২০২৩ সালে এর প্রথম মডেল তৈরি করে তারা। আঙ্কারার অস্ত্রাগারে আমেরিকার তৈরি ‘এফ-১৬ ফ্যালকন’ লড়াকু জেট রয়েছে। এগুলি পুরনো হয়ে যাওয়ায় সেখানে পঞ্চম প্রজন্মের ‘কান’কে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগানের। ২০৩০ সাল থেকে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ওই যুদ্ধবিমান পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার করা শুরু করবে তুর্কি বায়ুসেনা।

১৫ ২০

ঘরের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সামনে মোট তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, আর্থিক দিক থেকে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ইসলামাবাদ। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই রয়েছে। ইসলামাবাদের চারটির মধ্যে তিনটি প্রদেশেই রয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দাপাদাপি।

১৬ ২০

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এগুলির পাশাপাশি আরও একটি কারণ রয়েছে। পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির ক্ষেত্রে পাক সেনাকর্তাদের চিনের সঙ্গে মাখামাখি মোটেই ভাল চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইসলামাবাদ এই ধরনের উন্নত হাতিয়ার তৈরি করলে সেটা ইজ়রায়েলের ক্ষেত্রে বড় বিপদের কারণ হতে পারে। ফলে প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের পাশাপাশি ইহুদিদের থেকেও বাধার মুখে পড়বে শাহবাজ় শরিফ সরকার।

১৭ ২০

‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্‌স’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই ‘কান’ যুদ্ধবিমান আমদানির ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে না তুরস্ক। তবে লড়াকু জেট নির্মাণ প্রকল্পে ইসলামাবাদকে শামিল করতে পারে আঙ্কারা। তবে পাক অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণ এই বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে ১০ বার ভাবতে হবে এর্ডোগানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে।

১৮ ২০

এই বিষয়ে পাক বায়ুসেনার একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইম্‌স’ লিখেছে, ‘‘ইসলামাবাদ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান আমদানি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে বায়ুসেনার ঘাঁটিগুলিতে আগামী দিনে ‘কান’ শামিল হবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি যথাসম্ভব গোপন রাখার চেষ্টা করছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।’’

১৯ ২০

অন্য দিকে তুরস্কের বিমান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন অবসরপ্রাপ্ত পাক বায়ুসেনা অফিসার গ্রুপ ক্যাপ্টেন জনসন চাকো। তাঁর দাবি, ‘‘তুরস্কের কান লড়াকু জেট নির্মাণ প্রকল্পে শামিল হয়েছে ইসলামাবাদ। কিছু দিনের মধ্যেই পাকভূমিতে যুদ্ধবিমানের কিছু অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে। ফলে বাড়বে কাজের সুযোগ।’’

২০ ২০

সূত্রের খবর, ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশীয় উৎপাদন এবং আমদানি করা লড়াকু জেট মিলিয়ে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের বহরকে তিনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের। চিনের থেকে ৪০টি লড়াকু জেট কেনার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে শাহবাজ় মন্ত্রিসভা। আগামী দু’বছরের মধ্যে বেজিং সেগুলিকে পাক বায়ুসেনার হাতে তুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement