Wildlife

সবচেয়ে ‘দুঃখী হাতি’র গল্প! কেন তাকে নিয়ে এখন এত আলোচনা?

জঙ্গলে বড়দের পায়ে পায়ে ঘোরা, নদীর জলে ঝুপ্পুস স্নান করা শিশু হাতিটির জায়গা হয় চিড়িয়াখানার ছোটখাটো ঘেরাটোপের ভিতর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:১৬
Share:
০১ ১৮

ভারতের চৌকাঠ পেরোলেই তার দেশের ‘বাড়ি’। শ্রীলঙ্কার জঙ্গলে জন্ম। কিন্তু দেশ তাকে দূরে ঠেলেছিল খুব ছোট্টবেলাতেই।

০২ ১৮

চেনা জঙ্গল, জড়িয়ে থাকা পরিবারের সুতো ছিঁড়ে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল সুদূর ফিলিপিন্সে। তখন সে মোটে ১১ মাস।

Advertisement
০৩ ১৮

সালটা ছিল ১৯৮১। সে বার শ্রীলঙ্কায় সফরে এসেছিলেন ফিলিপিন্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। তাঁর স্ত্রী ফার্স্ট লেডি ইমেলডা মাকরোসকে বিদায়ী উপহার হিসাবে একটি ১১ মাসের হস্তীশাবক উপহার দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা সরকার।

০৪ ১৮

ইমালডার সঙ্গেই ঘর ছেড়ে, নিজের দেশ ছেড়ে ফিলিপিন্সে চলে আসে এক বছরও না পেরোনো শিশু হাতিটি। যদিও ইমালডা শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিজের কাছে রাখেননি।

০৫ ১৮

১১ মাসের শিশু হাতিটিকে ম্যানিলার চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেন তিনি। তখন থেকেই সে ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলার বাসিন্দা।

০৬ ১৮

জঙ্গলে বড়দের পায়ে পায়ে ঘোরা, নদীর জলে ঝুপ্পুস স্নান করা শিশু হাতিটির জায়গা হয় চিড়িয়াখানার ছোটখাটো ঘেরাটোপের ভিতর। যা কোনও দিনই তার ঘরবাড়ি হয়ে উঠতে পারেনি। অন্তত পশুপ্রেমীরা তাই মনে করেন।

০৭ ১৮

শ্রীলঙ্কার অভয়ারণ্যের দেখভালকারীরা তার নাম রেখেছিল ‘বিশ্বমালী’। ম্যানিলার চিড়িয়াখানায় আসা উৎসাহী জনতা অবশ্য অত বড় নাম উচ্চারণ করতে পারত না। ফলে ছোট নাম রাখা হয়। ম্যানিলায় ‘মালী’ নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার হাতি।

০৮ ১৮

সেই সময় ম্যানিলার ওই চিড়িয়াখানাতেই থাকত আরও একটি হাতি। নাম শিবা। মালীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল কি না জানা নেই। তবে মালী আসার বছর কয়েকের মধ্যেই ১৯৯০ সালে সে মারা যায়।

০৯ ১৮

তার পর থেকে চিড়িয়াখানার ওই ঘেরাটোপে একাই থেকেছে মালী। বহু বার তাকে সেখান থেকে উদ্ধারের দাবি তুলেছেন পশুপ্রেমীরা। ম্যানিলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, মালীকে যেন তাইল্যান্ডের অভয়ারণ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে সে নিজের প্রজাতির সঙ্গে দল বেঁধে থাকতে পারবে। ভাল থাকবে।

১০ ১৮

কিন্তু সেই দাবি কানেই তোলেননি ম্যানিলার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকে, সমাজমাধ্যমগুলিতে বহু বার মালীর নাম করে সরব হয়েছেন পশুপ্রেমীরা। তাতে স্বর মিলিয়েছেন বিটলসের গায়ক তথা জনপ্রিয় পশু অধিকার কর্মী স্যর পলম্যাককার্টনিও। তবে তাতে লাভ হয়নি কিছু।

১১ ১৮

মালীকে চিড়িয়াখানা থেকে যেতে দিতে চাননি ম্যানিলার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বরং পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে তাঁরা বলেছেন, ছোট থেকে এই চিড়িয়াখানার ঘেরাটোপেই থেকেছে সে। জঙ্গলে গেলে বেঁচে থাকতে পারবে না।

১২ ১৮

আসলে ম্যানিলার চিড়িয়াখানার মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল এই মালী। তার সামনেই দর্শকদের ভিড় জমত সবচেয়ে বেশি। এমনকি, তার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে সরকার লকডাউনের সময় ফিলিপিন্সের শিশুদের টিকাকরণের ব্যবস্থাও করেছিল এই চিড়িয়াখানাতেই। টিকাকরণের লাইনে দাঁড়ানোর ফাঁকে শিশুদের মন ভোলাত মালী।

১৩ ১৮

যদিও পশুপ্রেমীরা বলেছিলেন, মালীর একাকিত্ব আর চোখে দেখা যাচ্ছে না। দিনভর চিড়িয়াখানার দর্শকদের মনোরঞ্জন করে চলে সে। কিন্তু তার মনোরঞ্জনের জন্য কিচ্ছুটি নেই। ওই চার দেওয়াল আর রেলিংয়ের ভিতরে বছরের পর বছর বন্দিজীবন কাটছে তার। একলা বিষণ্ণ মালীর জন্য কিছু না করতে পারার আফসোস বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে পশুপ্রেমীদের কথায়।

১৪ ১৮

গত বুধবার সেই মালীর মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছেন ম্যানিলা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘আমাদের প্রিয় মালী আর নেই। গত কয়েক দিন ধরেই সে অসুস্থ ছিল। দেওয়ালের গায়ে বার বার গা ঘষতে দেখা যাচ্ছিল তাকে। তার পর টানা দু’দিন অসুস্থ হয়ে মাটিতে শয্যা নিয়েছিল সে। ভারী হয়ে এসেছিল নিশ্বাস।’’

১৫ ১৮

চিড়িয়াখানার দেখভালকারীরা জানিয়েছেন, মালীকে দেখতে চি়ড়িয়াখানার পশু চিকিৎসক এসেছিলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন মালীর ক্যানসার হয়েছে। শ্বাসযন্ত্রে ছড়িয়ে পড়েছিল সংক্রমণ। সম্ভবত তার জন্যই যন্ত্রণা হচ্ছিল মালীর।

১৬ ১৮

এই খবর পাওয়ার পরই নিন্দায় সরব হন পশুপ্রেমীরা। তাঁরা বলেন, বহু বার ম্যানিলার চিড়িয়াখানায় চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। মালীর জন্য যে বিশেষ যত্ন দরকার, তা-ও সেখানে নেই বলে জানিয়েছিলেন বার বার। তার পরও সতর্ক হননি কর্তৃপক্ষ।

১৭ ১৮

মালীর ক্যানসার কী ভাবে এত দিন ধরা পড়েনি, কেনই বা তার চিকিৎসা আগে থেকে শুরু হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

১৮ ১৮

পশু অধিকার রক্ষার সংস্থা পেটা এই খবর জানার পর সমাজমাধ্যমে লিখেছে, ‘‘বিশ্বের সবচেয়ে দুঃখী হাতিটির মৃত্যু হল।’’

সব ছবি: আনস্প্ল্যাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement