এলন মাস্ক এখন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষে, তবে তাঁকেও এক সময় মাসের শুরুতে বাড়িভাড়ার টাকা জোগাড়ের জন্য চিন্তাভাবনা করতে হত!
ধনী পরিবারেই বড় হয়েছেন মাস্ক। তবে গাড়ি এবং পরিবেশ-বান্ধব শক্তি উৎপাদক সংস্থা টেসলা-র প্রধান তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন স্টার্টআপ ব্যবসা দিয়ে। ভাই কিম্বলের সঙ্গে একটি ওয়েব সফটওয়্যার সংস্থা তৈরি করেছিলেন তিনি। পাওলো অল্টোয় ছোট্ট একটি ভাড়া করা ঘরে শুরু হয়েছিল তাঁর দফতর। তখন একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না এলনের।
অফিসের একচিলতে ঘরেই সোফায় ঘুমোতেন তিনি। স্নান করতে যেতেন কাছেই ইয়ং ম্যান’স ক্রিশ্চান্স অ্যাসোসিয়েশন-এ। এমনকি নিজের এবং ভাইয়ের জন্য আলাদা কম্পিউটার কেনারও ক্ষমতা ছিল না তখন। এলন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমরা একটাই কম্পিউটার আলাদা আলাদা সময়ে ব্যবহার করতাম।’’
সেই সংস্থাটি অবশ্য শেষে বিক্রি হয়ে যায়। নিজের তৈরি সংস্থাতেই ৭ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে ২ কোটি ২০ লক্ষ ডলার হাতে পান এলন। যেখানে সংস্থাটির দাম ওঠে প্রায় ৩১ কোটি ডলারে।
ধনী পরিবারের সন্তান এলনের পড়াশোনা পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতেন না। নিজের জন্য একটি বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করেছিলেন এলন। যার ভাড়ার অর্থ জোগাতেই অ্যাপার্টমেন্টকে নাইটক্লাব বানিয়ে নেন এলন।
এলনের নাইটক্লাবের প্রবেশাধিকার মিলত ৫ ডলারে। এক বার একসঙ্গে ৫০০ অতিথি এসে হাজির হয়েছিলেন। এক রাতে আড়াই হাজার ডলার উপার্জন করেছিলেন বর্তমানে বিশ্বসেরা ধনকুবের। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
তবে এলনের এমনই সব গত ভাঙা ভাবনার পরিচয় বরাবর পেয়েছে দুনিয়া। মাত্র ১২ বছর বয়সে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিলেন এলন। নাম ‘ব্লাস্টার’। ওই বয়সে গেমটির সোর্স কোড বিক্রি করেই প্রথম উপার্জন তাঁর।
মহাকাশ বিজ্ঞান এবং মঙ্গল অভিযান নিয়ে আগ্রহী এলন হঠাৎই ঠিক করেন, মঙ্গলে গ্রোথ চেম্বার তৈরির অর্থ তিনি জোগাবেন। কিন্তু মহাকাশ যাওয়ার রকেট পেতে অসুবিধা হচ্ছিল তাঁদের। মাস্ক হঠাৎই ঠিক করেন কম দামে মহাকাশ অভিযানের রকেট তিনিই তৈরি করবেন। আমেরিকার মহাকাশযান প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর যাত্রা শুরু সেই থেকেই।
তবে সব সময়ই যে মাস্ক সোনা ফলিয়েছেন, তা নয়। যে ৭০০ ডলারের সংস্থা টেসলা ধনকুবের মাস্কের রাজ্যপাটের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে, সেই টেসলা এক সময়ে ১১ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি হতে বসেছিল গুগলের কাছে।
২০১৩ সালে ব্যবসায় মন্দা চলছিল মাস্কের। গুগলের সিইও ল্যারি পেজকে টেসলা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন মাস্ক।
তবে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ার আগের দিন থেকেই টেসলা-র ব্যবসা বাড়তে শুরু করে।
এলনের এমন হঠাৎ সিদ্ধান্তের আরও উদাহরণ আছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন মাস্ক। ঠিক দু’দিন পরেই তাঁর মত বদলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে আচমকাই ইন্টারনেটের ব্যবসা শুরু করেন মাস্ক।
এলন ২৮ জুন ৫১ বছরে পদার্পণ করলেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনকুবেরের জন্মদিনে তাঁর সম্পর্কে আরেকটি তথ্য— টেসলা-প্রধানের আরেক নাম ‘আয়রন ম্যান’।
মারভেল কমিক্সের চরিত্র আয়রন ম্যান মাস্কের জন্মেরও আগে তৈরি হয়েছে। তবে এই চরিত্রের উপর তৈরি সিনেমাটি যখন তৈরি হয়, তখন তা মাস্ককে দেখেই বানানো হয়েছিল।
আয়রন ম্যান ওরফে টোনি স্টার্কের চরিত্রাভিনেতা রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে যখন চরিত্রটির জন্য প্রস্তুত করাচ্ছিলেন পরিচালক জন ফ্যাব্রু, তখন তিনি এলনের সাহায্য নেন। কারণ ছবির টোনি স্টার্কও তাঁর মতোই একজন প্রযুক্তি বাণিজ্যের ‘ডন’। একজন ধনকুবের। ছবিতে মাস্ক অভিনয়ও করেছিলেন ছোট্ট একটি চরিত্রে।