হাঁড়কাপানো ঠান্ডায় স্নান করতে কার ভাল লাগে! শীতকালে অনেকেই বেজার মুখে এ কথা বলেন। ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে অনেকে আবার স্নান করেন না।
একটানা কত দিন স্নান না করে থাকতে পারবেন? এক-দু’দিন বা নিদেন পক্ষে তিন-চার দিন! উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হলে ইরানের এক বৃদ্ধের কাছে গো-হারা হেরে গেলেন।
মৃত্যুর আগে ইরানের ওই বৃদ্ধ নাকি টানা ৫০ বছর ধরে স্নানের জল গায়ে ঢালেননি। সে দেশের সংবাদমাধ্যমে তাঁর এ হেন ‘কীর্তি’ জেনে অনেকেরই চোখ কপালে। তাঁদের প্রশ্ন, তবে কি এই বৃদ্ধই দুনিয়ার সবচেয়ে ‘নোংরা, অপরিষ্কার’ ব্যক্তি?
‘তেহরান টাইমস’ নামে ইরানের একটি দৈনিক সংবাদপত্রের দাবি, কেরমানশাহ প্রদেশের দেজগাহ গ্রামের বাসিন্দা আমো হাজি স্নানঘরে ঢোকেননি পাঁচ দশক।
কেন স্নানের ঘরে ঢুকে আর পাঁচটা মানুষের মতো স্নান করেন না? গায়ে ধুলোবালি, কাদামাথা ৮৭ বছরের হাজির স্বীকারোক্তি, ‘‘জল দেখলে ভয় হয়। মনে হয় স্নান করলেই অসুস্থ হয়ে পড়ব!’’
বছরের পর বছর ধরে স্নান বাদ রাখার পরেও সুস্থ ছিলেন ওই বৃদ্ধ? হাজির কাহিনি শুনে অনেকেই সে প্রশ্ন তুলেছেন। ইরানের সংবাদমাধ্যম দাবি করে, দিব্যি ছিলেন বৃদ্ধ!
এত বছর ধরে সাবান-শ্যাম্পুর ছোঁয়া না পেয়ে হাজির চেহারা বেশ ‘খোলতাই’ হয়। তাঁর ‘রূপ’ দেখে অনেকেই বলেছেন, বৃদ্ধ যেন বাইবেলের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্রের মতো দেখতে হয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক যেন রান্নাঘরের চিমনি বেয়ে নেমে আসা মোজেস। তেমনই গোঁফদাড়িতে ঢাকা গোটা মুখ। অর্ধেক টাকমাথায় উস্কোখুস্কো চুল। গায়েমাথায় ছাইমাখা, নোংরা!
গোঁফদাড়ি বড় হলে নাপিতের কাছে দৌড়তেন না বৃদ্ধ। বরং, আগুন জ্বালিয়ে তাতে মুখটা এগিয়ে দিতেন। গোঁফদাড়ি আপনা থেকেই ‘ট্রিম’ হয়ে যেত।।
হাজির জীবনযাত্রা নিয়ে এখনই আবার বাঁকা মন্তব্য করতে শুরু করে দেবেন না যেন! স্নান না করা বা অপরিচ্ছন্ন থাকা ছাড়াও তাঁর খাদ্যাভ্যাসও বেশ ‘উদ্ভট’ মনে হতে পারে।
হাজির খাবারদাবারে হামেশাই মৃত পশুপ্রাণীর পচা মাংস থাকত। বিশেষ করে সজারুর মাংস বেশ জমিয়ে খেতেন তিনি। আর নেশা বলতে ধূমপান। তবে তামাক খেতে একেবারেই পচ্ছন্দ করতেন না। বরং, পশুর মল শুকিয়ে ফুটিফাটা পাইপে ঢুকিয়ে তাতে সুখটান দিয়ে মৌতাত জমাতেন হাজি।
স্নানের জলে ভয় থাকতে পারে। তবে ভাববেন না, জলপান করতেন না হাজি! মরচেধরা টিনের ক্যান থেকে প্রতি দিন পাঁচ লিটার জল ঢক ঢক করে গিলে ফেলতেন তিনি।
সাজপোশাকেও সতন্ত্র ছিলেন হাজি। যেন যুদ্ধে যাচ্ছেন, এমন হেলমেট মাথায়। তবে যুদ্ধে নয়, ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতেই এমন সাজ ছিল।
সাজপোশাক বা খাবারদাবারের মতোই হাজির থাকার জায়গাও কম অভিনব ছিল না। যেন কবরখানায় ঢুকছেন, এমন গর্তে থাকতেন তিনি। বসবাসের আরও একটা জায়গা ছিল তাঁর। বৃদ্ধের থাকার জন্য ইটের সারি দিয়ে খোলা ছাউনি গড়ে দেন গ্রামবাসীরা।
হাজির জীবনযাপন একটু ‘আলাদা’ মনে হচ্ছে? ইরানের সংবাদমাধ্যমের দাবি, যৌবনে মনে ব্যথা পাওয়ার পর থেকেই জনশূন্য জায়গায় বসবাস শুরু করেন তিনি। নিজের যাপনও বদলে ফেলেন বৃদ্ধ!