বেড়াতে গিয়ে নানা রকমের হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা আমাদের সকলেরই কমবেশি আছে। কেউ পছন্দ করেন বিলাসিতায় মোড়া নামীদামি হোটেল। কারও আবার ন্যূনতম সুযোগ সুবিধার বন্দোবস্ত থাকলেই যথেষ্ট। পৃথিবীতে এমন হোটেলের অস্তিত্ব রয়েছে যা দেখলে বা যার বর্ণনা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
এমন একটি খুদে হোটেল রয়েছে যার আকৃতি শুধুমাত্র বিস্ময়ই জাগায় না, সেখানে থাকার ব্যবস্থাও আর পাঁচটা সাধারণ হোটেলের তুলনায় আলাদা। জায়গা খুবই কম, তারই মধ্যে হোটেলের আরাম উপভোগ করার ব্যবস্থা করে পর্যটকদের নতুনত্বের স্বাদ দিতে তৈরি করা হয়েছে হোটেলটি।
যদি কোনও জায়গায় বেড়াতে গিয়ে দেখেন আপনাকে রাত কাটাতে হবে একটি নর্দমার পাইপের ভিতরে! শুনে গা ঘিনঘিন করে উঠলেও বাস্তবেই অস্তিত্ব রয়েছে এমন একটি হোটেলের, যেখানে পাওয়া যাবে সাধারণ হোটেলের মতোই আরামদায়ক ব্যবস্থা।
এই পাইপগুলিকে রূপ দেওয়া হয়েছে ছোট ছোট কক্ষের। সেখানে থাকতে গেলে অবশ্য চিন্তা করার তেমন কিছুই নেই। নামেই নর্দমার পাইপ, আসলে সেগুলি অব্যবহৃত, ঝকঝকে ও পরিষ্কার।
এমনই এক ছকভাঙা হোটেলের মধ্যে একটি হল দাস পার্ক হোটেল। জার্মানি জুড়ে প্রবল ভাবে জনপ্রিয় এটি। পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশনের জন্য যে দৈত্যাকৃতির পাইপ ব্যবহার করা হয়, তারই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে হোটেলের কামরা। মূলত পর্যটকদের জন্য কম খরচে থাকার ব্যবস্থা নিয়ে হাজির হয়েছে এই হোটেল।
শিল্পী আন্দ্রেয়া স্ট্রস কংক্রিটের ড্রেনপাইপগুলিকে শোওয়ার ঘরের আদল দিয়েছেন। এই ভাবে একটি সহজ, পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পসাইট তৈরি করেছেন তিনি।
কংক্রিটের তৈরি গোলাকার হোটেলের ঘরগুলির বাইরের দিকটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই চাকচিক্যহীন করে রাখা হয়। সামনের দিকে থাকে হালকা কাঠের দরজা। বাইরে থেকে দেখতে পাইপের মতো হলেও ঘরের ভিতরের অন্দরসজ্জা বেশ নজরকাড়া।
সাড়ে ছ’ফুট ব্যাসের প্রতিটি পাইপের কক্ষের দেওয়ালগুলি রঙিন ছবি দিয়ে চিত্রিত৷ কক্ষগুলি একটি বিছানা, আলো, পাখা এবং অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। এমনকি ফোন ইত্যাদি গ্যাজেট চার্জ দেওয়ার জন্য ছোট একটি চার্জিং স্টেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিটি ঘরের ওজন প্রায় নয় টন। তাই রাতে ঘুমোতে ঘুমোতে পাইপগুলি গড়িয়ে দূরে সরে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
কলম্বিয়া এবং মেক্সিকোয় এই ধরনের হোটেলের প্রচলন শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের দিকে। ‘টিউবোহোটেল’ নাম দেওয়া হয়েছিল পাইপের আকৃতির এই হোটেলের। দাস পার্ক হোটেলের থেকে গড়নে বেশ কিছুটা আলাদা এটি। দু’টি পাইপের উপর একটি পাইপ বসিয়ে ত্রিভুজের আকৃতি দেওয়া হয়েছে এই হোটেলটিকে।
অন্দরসজ্জা ছিমছাম, কাচের দরজা, লোহার সিঁড়ি বসানো আছে ‘টিউবোহোটেলে’। মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত টেপোজল্টান গ্রামে অবস্থিত হোটেলটি। দু’জন শোওয়ার মতো আরামদায়ক বিছানা রয়েছে এখানে।
পাইপ হোটেলগুলিতে বিনামূল্যে ওয়াই ফাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। অসুবিধা একটাই, তা হল বাথরুমের। হোটেলগুলিতে ঘর সংলগ্ন বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। নেই বার বা ক্যাফেটেরিয়ার বন্দোবস্তও। তার জন্য যেতে হবে বাইরে। ক্যাম্পসাইটে এর সুবিধা নেই।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই হোটেলের ভাড়া। দাস পার্ক হোটেলে রাত কাটাতে হল ভাড়াবাবদ নির্দিষ্ট অঙ্কের মূল্য দিতে হয় না। চেক আউট করার আগে পর্যটকেরা নিজেদের খুশিমতো অর্থপ্রদান করে চলে যেতে পারেন।