আগাপাশতলা বারুদে ঠাসা বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। যার প্রথমার্ধে বল গড়ানো থেকে শুরু হয়েছিল নাটক। শেষ পর্যন্ত গড়ায় রুদ্ধশ্বাস পেনাল্টি শুট আউট পর্যন্ত। লড়াই এবং পাল্টা লড়াইয়ে ঘনঘন বদলে গেল ম্যাচের রং। নাটকীয় পট পরিবর্তনে কখনও সমর্থকদের মুখে ছড়াল উদ্বেগের ভাঁজ। কখনও ফুটল চওড়া হাসি।
ফরাসিদের তিন কাঠি লক্ষ্য করে বাঁ দিক দিয়ে দৌড় শুরু করেছিলেন অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। কিন্তু ডেম্বেলের ট্যাকলে বক্সের মধ্যে পড়ে যান তিনি। ম্যাচের তখন বয়স মাত্র ২১ মিনিট। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।
সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এক গোলে এগিয়ে দেন লিয়োনেল মেসি। এ বারের বিশ্বকাপে তখন তাঁর গোল সংখ্যা হয়ে যায় ৬।
এর পর মেসির পাস পৌঁছয় ম্যাক অ্যালিস্টারের কাছে। ম্যাক অ্যালিস্টার সেই বল ঠেলে দেন দি মারিয়াকে। নির্ভুল লক্ষ্যে আবার ফরাসিদের দুর্গে আঘাত হানে আর্জেন্টিনীয়দের গোলা। ৩৬ মিনিটে গোল করে দলকে আরও খানিকটা এগিয়ে দেন দি মারিয়া।
এই সময় পর্যন্ত কিছুটা নিষ্প্রভই ছিল ফরাসিরা। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা কিছু ক্ষণ গড়াতেই দি মারিয়াকে তুলে আকুনাকে মাঠে নামান আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি।
২০০৬ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দি মারিয়ার মতোই আচমকা রিকলমেকে তুলে নিয়েছিলেন তৎকালীন কোচ পেকেরম্যান। ঘটনাচক্রে সেই ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। দি মারিয়াকে তুলে নেওয়ার পর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মনে আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে হারের সেই ইতিহাস।
দি মারিয়াকে তুলে নেওয়ার আগে পর্যন্ত কিছুটা নিষ্প্রভই ছিল ফরাসিরা। কিন্তু, এর পর জ্বলে ওঠেন ফরাসি তারকা এমবাপে। জ্বলে ওঠে ফরাসিদের সাপ্লাই লাইনও।
ম্যাচের ৮০ মিনিটে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানি আদায় করে নেন পেনাল্টি। তা থেকে গোল করেন এমবাপে। বিশ্বকাপে তাঁর গোল সংখ্যা হয়ে যায় ৬।
৮১ মিনিটের মাথায় আবার গোল করেন এমবাপে। জোরালো ভলিতে তিনি বল ঢুকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলে। ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনে ফ্রান্স।
৯০ মিনিটেও ম্যাচের ফয়সালা না হওয়ায় খেলা গড়ায় এক্সট্রা টাইম পর্যন্ত। ১০৯ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেস জোরালো শট করেছিলেন ফরাসিদের গোল লক্ষ্য করে। কিন্তু সেই শট আটকে দেন ফরাসি গোলকিপার লরিস। বল পেয়ে যান মেসি। ডান পায়ের শটে গোল করেন তিনি।
কিন্তু সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি আর্জেন্টিনার। ১১৮ মিনিটে মাথায় আবার জ্বলে ওঠেন এমবাপে। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে ইংল্যান্ডের ফুটবলার জিওফ হার্স্টের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। এ বারের বিশ্বকাপে মোট ৮টি গোল করেন ওই ফরাসি তারকা।
এর পর এক্সট্রা টাইমে আর কোনও গোল হয়নি। তবে ফরাসি স্ট্রাইকার কোলো মুয়ানির জোরালো শট আটকে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে লড়াইয়ে রেখে দেন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
এক্সট্রা টাইমেও ম্যাচের ফয়সালা না হওয়ায় তা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউট পর্যন্ত। সেই পর্বেও চলে রুদ্ধশ্বাস লড়াই।
পেনাল্টি শুট আউটে গোল করেন এমবাপে। গোল করেন মেসিও।
কিন্তু, আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্তিনেসের সোনালি হাত আটকে দেয় ফরাসি ফুটবলার কোমানের শট।
দিবালা গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন পেনাল্টি শুট আউটে। তত ক্ষণে বিপদের গন্ধ পেয়ে গিয়েছে ফরাসি শিবির। উদ্বেগ তৈরি হয় সমর্থকদের মনেও।
কিন্তু বিপদ বাড়িয়ে গোলের বাইরে শট মেরে বসেন ফরাসি তারকা চুয়ামিনি। এর পর অবশ্য আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ফ্রান্স। পর পর দু’বার বিশ্বকাপ পাওয়ার স্বপ্ন তাদের ফেলে আসতে হয় লুসাইল স্টেডিয়ামেই।