এ দুনিয়ায় ‘প্রেমের গল্প’ তো নেহাত কম নেই। কিন্তু মার্গারেট ম্যাকালামের গল্পটা একেবারেই আলাদা। স্বামীকে চোখের দেখাও দেখতে পান না প্রায় ১৬ বছর। তবু রোজ তাঁর কণ্ঠস্বর শুনবেন বলে ছুটে যান একই জায়গায়।
শীত হোক বা বর্ষা, মার্গারেটের রোজের পঞ্জি বদলায় না। রোজ তিনি যান লন্ডনের এমব্যাঙ্কমেন্ট মেট্রো স্টেশনে। বসে শোনেন তাঁর স্বামীর কণ্ঠস্বর। ২০০৭ সালে মারা গিয়েছেন তাঁর স্বামী। শুধু ওই স্টেশনে থেকে গিয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর।
মার্গারেটের স্বামী অসওয়াল্ড লরেন্স ছিলেন থিয়েটারের অভিনেতা। লন্ডনের মেট্রো তথা আন্ডারগ্রাউন্ডের ঘোষক ছিলেন তিনি। ১৯৫০ সালে তাঁর কণ্ঠস্বরে রেকর্ড করা হয়েছিল ‘অনুগ্রহ করে দূরত্ব বজায় রাখুন’।
লরেন্সের এই কণ্ঠস্বর যাত্রীদের সতর্ক করত। মেট্রোরেল যখন স্টেশনে প্রবেশ করত, তখন এই ঘোষণা শুনে তারাঁ দূরে সরে দাঁড়াতেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি একটি পর্যটন সংস্থার হয়ে কাজ করতেন লরেন্স। ১৯৯২ সালে মরোক্কোয় গিয়ে পরিচয় হয় মার্গারেটের সঙ্গে।
একে অপরকে ভাল লেগে যায় লরেন্স এবং মার্গারেটের। লন্ডনে ফিরে এসে বিয়ে করেন তাঁরা। সেই থেকে ১৫ বছর এক ছাদের তলায় কাটিয়েছিলেন দু’জন।
২০০৭ সালে মারা যান লরেন্স। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন মার্গারেট। খুব ফাঁকা লাগত তাঁর। সে সময় তাঁর মনখারাপের সঙ্গী হয় মেট্রো স্টেশনে বাজতে থাকা স্বামীর কণ্ঠস্বর।
সেই থেকে রোজ এমব্যাঙ্কমেন্ট মেট্রো স্টেশনে গিয়ে বসে থাকতেন মার্গারেট। বার বার শুনতেন স্বামীর কণ্ঠে ঘোষণা।
বিবিসিতে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় মার্গারেট বলেন, ‘‘ওঁর মৃত্যুর পর থেকে আমি রোজ বসে থাকতাম মেট্রো স্টেশনে। অপেক্ষা করতাম, কখন আসবে পরবর্তী ট্রেন, আর আমি শুনতে পাব ওঁর কণ্ঠ।’’
২০১২ সালের নভেম্বর মাস। এক দিন এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে বসেছিলেন মার্গারেট। হঠাৎই তিনি লক্ষ করেন, মেট্রো স্টেশনে আর শোনা যাচ্ছে না লরেন্সের কণ্ঠস্বরে ঘোষণা।
মেট্রোরেলের কর্তাদের দ্বারস্থ হন মার্গারেট। কেন লরেন্সের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না, প্রশ্ন করেন। তাঁরা জানান, নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘোষণা হচ্ছে মেট্রো স্টেশনে। সেই ব্যবস্থায় লরেন্সের কণ্ঠস্বর আর ব্যবহার করা হচ্ছে না।
মার্গারেট ভেঙে পড়েন। কর্তৃপক্ষকে জানান যে, স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনবেন বলে তিনি রোজ এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে এসে বসে থাকতেন।
শুনে খারাপ লাগে কর্তৃপক্ষের। তাঁরা লরেন্সের ঘোষণার রেকর্ড মার্গারেটকে দেন। পাশাপাশি স্থির করেন, অন্তত এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে যাত্রীদের সতর্ক করবে লরেন্সের কণ্ঠস্বর।
লন্ডনের মেট্রো পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে যে সংস্থা, তার মুখপাত্র বলেন, ‘‘মার্গারেটের কথা আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। ওই ঘোষণার রেকর্ডের নকল তৈরি করে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই স্টেশনে লরেন্সের কণ্ঠস্বরে ঘোষণা চালু করা হয়।’’
লন্ডনের সব মেট্রো স্টেশনে এখন ঘোষণা হয় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে। এক মাত্র ওয়েস্টমিনস্টারের এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনেই রয়েছে গিয়েছে লরেন্সের সেই পুরনো কণ্ঠস্বর, ‘অনুগ্রহ করে দূরত্ব বজায় রাখুন’।