মহিলাকে কুপিয়ে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিয়েছিলেন স্বামী। বাঁচার আশা প্রায় ছিল না বললেই চলে। তবু অদ্ভুত ভাবে বেঁচে গেলেন ৪২ বছরের তিনি। মাটি ভেদ করে নিজেই উঠে এলেন উপরে।
ইয়াং সুক অ্যান ওয়াশিংটনের বাসিন্দা। স্বামী চে কিয়ংয়ের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু অভিযোগ, ইয়াংয়ের প্রতি তাঁর স্বামীর আক্রোশ থেকেই গিয়েছিল।
আমেরিকাবাসী এই কোরিয়ান দম্পতির কাহিনি ওয়াশিংটনে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। কী ভাবে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পরও বেঁচে ফিরলেন মহিলা, তা নিয়ে চর্চা চলছেই।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি, গত ১৬ অক্টোবর, রবিবার ওয়াশিংটনের বাড়ি থেকে ইয়াংকে অপহরণ করা হয়। অভিযোগ, প্রাক্তন স্বামী কিয়ং ফাঁকা বাড়িতে হানা দেন আচমকা। তার পর মহিলাকে সেখান থেকে ধরেবেঁধে তুলে নিয়ে যান।
পুলিশ জানিয়েছে, বিচ্ছেদের পর থেকে ওয়াশিংটনের বাড়িতে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে থাকতেন ইয়াং। রবিবার তারা কেউ বাড়িতে ছিল না। সেই সুযোগকে কাজে লাগান তাঁর প্রাক্তন স্বামী।
ইয়াং পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী তাঁকে খুন করার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি জঙ্গলে। সেখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের একাধিক অংশে কোপ মারা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রক্তাক্ত অবস্থায় এর পর তাঁকে ওই জঙ্গলেই পুঁতে দেওয়ার তোড়জোড় করেন চে। মাটি খুঁড়ে জীবন্ত অবস্থাতেই প্রাক্তন স্ত্রীকে গর্তে ফেলে দেন। তাঁর শরীরের উপর চাপা দিয়ে দেন মাটি।
চে ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলেও মাটির নীচে তখনও তাঁর স্ত্রীর দেহে প্রাণ ছিল। হুঁশও খোয়াননি ইয়াং। নিজেই নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেন।
ইয়াং জানিয়েছেন, মাটির নীচে ক্রমাগত নাক নাড়াচাড়া করছিলেন তিনি। সমস্ত শক্তি দিয়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। নাকের মাধ্যমেই মাটি একটু একটু করে সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
বেশ কিছু ক্ষণের চেষ্টায় মাটি ভেদ করে মাথা তুলতে পারেন ইয়াং। কোনও রকমে উঠে আসেন উপরে। মাঝরাতে হাজির হন এক প্রতিবেশীর বাড়ি।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২.৫২। ইয়াংয়ের কড়া নাড়ার শব্দ শুনে দরজা খোলেন তাঁর প্রতিবেশী। তাঁকে সবটা জানানোর পর রাতেই ডাকা হয় পুলিশ।
ইয়াং যখন প্রতিবেশীর বাড়ি পৌঁছন, তখন তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে মোটা সেলোটেপ সাঁটা ছিল। সেলোটেপ দিয়েই তাঁকে বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন চে।
জানা গিয়েছে, গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগেই চে এবং ইয়াংয়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। চে-র বিরুদ্ধে ফতোয়াও জারি করেছিল আদালত।
ইয়াংকে যখন তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনই সমাজমাধ্যমে নিখোঁজ ব্যক্তির সতর্কতামূলক সঙ্কেত ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল তখন থেকেই। ইয়াংয়ের বাড়িতে গিয়ে তারা ধস্তাধস্তির চিহ্ন পায়।
বাড়ির গ্যারাজের দরজা খোলা দেখতে পায় পুলিশ। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু ব্যবহৃত সেলোটেপ।
প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চিকিৎসার জন্য ইয়াংকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তিনি এখন সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ১৭ অক্টোবর গ্রেফতার হন প্রাক্তন স্বামী চে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে জঙ্গলের কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন।
আপাতত জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে অভিযুক্তকে। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।