দু’মুঠো খাবারের জন্যই তো এত কিছু আয়োজন! এমনকি যুদ্ধও! এখন তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারেন লিভ রোজ়। কারণ শারীরিক জটিলতার কারণে গত আট বছর একটা দানাও খেতে পারেননি তিনি।
লিভের বয়স ২৫ বছর। তিন বছর যখন বয়স, তখন থেকে পেটে সমস্যা। সেই নিয়েই চলছেন তিনি। তাঁর পাকস্থলীতে পক্ষাঘাত হয়েছে। মেডিক্যালের ভাষায় যাকে বলে গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস।
ব্রিটেনের গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সোসাইটি (জিআই)-র সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীরে যত মানুষ রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকের এই রোগ রয়েছে।
ব্রিটেনের চেস্টারের বাসিন্দা লিভ। তাঁর তখন তিন বছর বয়স। খুব পেটে ব্যথা হত। চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তার বাবা-মা। কেউই তেমন কিছু ধরতে পারেননি।
সমস্যা কিন্তু কমেনি। লিভের বয়স যখন ১৭ বছর, তখন জটিলতা বৃদ্ধি পায়। সিদ্ধ চিকেন এবং সাদামাঠা পাস্তা ছাড়া আর কিছু খেয়েই হজম করতে পারতেন না লিভ। বমি করে ফেলতেন।
চিকিৎসকের কাছে ছোটেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস হয়েছে লিভের। তাঁর পাকস্থলীর মধ্যে দিয়ে খুব ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে খাবার। ক্রমে কার্যকারিতা কমতে থাকে তার নাড়ি (গাট)-র।
এই রোগের লক্ষ্মণগুলি কী কী? বমিভাব, কিছু খেলেই বমি, পেটে ব্যথা, পেটভার লাগা। একটু কিছু খেলেই লিভের মনে হত পেট ভর্তি হয়ে গিয়েছে।
লিভ জানান, তাঁর সমস্যাগুলো প্রথম মা-বাবাও বুঝতে পারেননি। তাঁরা ভাবতেন, লিভ অবাধ্যতা করছেন। কথা শুনছেন না। লিভের কথায়, ‘‘যত ক্ষণ তোমার থেকে খাবার কেউ ছিনিয়ে না নেয়, তত ক্ষণ বুঝবে না যে, এটা কত জরুরি।’’
লিভ জানিয়েছেন, প্রায়ই চিকিৎসকদের কাছে যেতেন তিনি। তাঁরাও তাঁকে ফেরত পাঠিয়ে দিতেন। মনস্তত্ত্ববিদের কাছে যেতেও বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কারণ, কেউ বুঝতেই পারতেন না, লিভের সমস্যাটা কোথায়।
এক বার একটি বিশেষ কেন্দ্রে সারা দিন রাখা হয়েছিল লিভকে। দেখা হয়েছিল, কী খান তিনি। কেন খান না। শেষে চিকিৎসকেরা বুঝতে পেরেছিলেন, ইচ্ছা করে এ সব করছেন না লিভ। ‘ইটিং ডিসঅর্ডার’ নেই তাঁর। অর্থাৎ ওজন কমানোর জন্য ইচ্ছা করে কম খাচ্ছেন, এমন নয়।
২০১৭ সালের মার্চে লিভের অসুখটা ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারেন তাঁর সমস্যা কোথায়।
প্রথমে লিভের পাকস্থলীতে বোটক্স ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। যাতে তাঁর পেশি খাবার ধরে রাখতে পারে, সেগুলি পরবর্তী অংশে চলাচলের জায়গা করে দিতে পারে।
এখন লিভের হৃৎপিণ্ডে তারের মতো হিকম্যান লাইন প্রবেশ করানো হয়েছে। তার মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে দেওয়া হয় লিভের শরীরে।
যদিও তাতে সমস্যা কমেনি। যে নলের (ফিডিং টিউব) মাধ্যমে খাবার যায়, তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হয়। নয়তো সেপসিস পর্যন্ত হতে পারে। ওই টিউবের কারণে লিভের কিডনি, লিভারেও চাপ পড়ছে।
গত আট বছর ধরে মুখ দিয়ে কিছু খেতে বা পান করতে পারেননি তিনি। সবটাই নলের মাধ্যমে শরীরে যায়। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে তাঁকে। খাবার দেখেও লোভ সংবরণ করতে হয়েছে।
লিভ জানান, এখনও প্রিয় খাবারের স্বাদ মুখে লেগে রয়েছে তাঁর। সেই স্মৃতি নিয়েই বেঁচে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘খাবার জীবনের একটা বড় অঙ্গ। একটা অভিজ্ঞতা। যখন পরিবারের সকলে খায়, আমি সেই ঘরে থাকি না। আইসক্রিম খুব মিস্ করি। পিৎজ়াও।’’