একটি, দু’টি নয়, ৭০টি খুন করেছেন বাবা। তাঁর মৃত্যুর ৯ বছর পর ফাঁস করলেন মেয়ে। বাবার খুনের কথা তিনি শুধু স্বীকারই করেননি, সেই খুনের সঙ্গে নিজের যুক্ত থাকার কথাও জানিয়েছেন।
আমেরিকার বাসিন্দা লুসি স্টাডি সম্প্রতি পুলিশের কাছে নিজের বাবার কীর্তির বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর বাবা ডোনাল্ড ডিন স্টাডি মারা গিয়েছেন ২০১৩ সালে। লুসির দাবি, মৃত্যুর আগে টানা তিরিশ বছর ধরে খুন করেছেন তাঁর বাবা।
মেয়ের দাবি অনুযায়ী, ডোনাল্ডের ‘শিকার’ হয়েছেন প্রায় ৭০ জন মহিলা। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন যৌনকর্মী।
লুসি জানিয়েছেন, খুনের পর দেহগুলি লোপাট করার কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন তিনি। তাঁর অন্যান্য ভাইবোনরাও এই কাজে হাত লাগিয়েছিলেন।
একটি সাক্ষাৎকারে লুসি বলেছেন, ‘‘আমার বাবা খুন করত। আমি জানি দেহগুলি কোথায় পোঁতা রয়েছে।’’ তাঁর দেখানো নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে মাটির নীচে মৃতদেহের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় খননকার্য চালিয়ে আরও বিস্তারিত তদন্তের পর লুসির দাবির সত্যতা জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মৃত্যুর আগে ডোনাল্ডের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি খুনের পর মৃতদেহগুলি ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে নিকটবর্তী পাহাড় বা অন্য কোনও নির্জন এলাকায় নিয়ে যেতেন বলে জানিয়েছেন লুসি। সঙ্গে যেতেন তাঁর ছেলেমেয়েরাও।
নির্দিষ্ট, নিরাপদ জায়গা বেছে এর পর মৃতদেহগুলি পুঁতে দেওয়া হত। কোনও কোনও মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হত ১০০ ফুট গভীর কুয়োতে। লুসি এবং তাঁর ভাইবোনরা মৃতদেহে মাটি চাপা দিতেন।
লুসি আরও জানিয়েছেন, এক-একটি খুনের পর নিজের সেই কীর্তি স্মরণীয় করে রাখতে একটি করে সোনার দাঁত সংগ্রহ করতেন ডোনাল্ড। সেগুলিই ছিল তাঁর ‘ট্রফি’ বা পুরস্কার।
লুসির দাবি আমেরিকায় রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই দাবি যদি সত্যি হয়, তবে ডোনাল্ডই হবেন আমেরিকার সবচেয়ে বেশি খুনের রেকর্ডধারী সিরিয়াল কিলার। আমেরিকার ইতিহাসে সিরিয়াল কিলার হিসাবে যে দু’জনের নাম এবং কীর্তি এই মুহূর্তে পরিচিত, তাঁরা হলেন জেফেরি ডাহ্মের এবং টেড বান্ডি। তাঁদের নামের পাশে খুনের সংখ্যা যথাক্রমে ১৭ এবং ৩৬।
লুসির দাবির পর তদন্তে নেমেছে আমেরিকার পুলিশ। তাঁদের বক্তব্য, এখনও কোনও মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। খননকার্য চালিয়ে তা উদ্ধার করার পর যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে মহিলার দাবি খতিয়ে দেখা হবে।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, লুসির দাবি যদি সত্যি হয়, তবে ডোনাল্ডের কাছে খুন করা নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যৌনকর্মীদের লোভ দেখিয়ে নিজের খামারবাড়িতে নিয়ে যেতেন তিনি।
পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গলের মাঝেও তাঁর ৫ একর জমি ছিল। সেখানেও কখনও কখনও নিয়ে যেতেন মহিলাদের। তার পর সেখানে খুন করতেন। ছেলেমেয়েদের সাহায্যে পুঁতে দিতেন দেহ।
কিন্তু বাবার মৃত্যুর এত বছর পর কেন তাঁর কীর্তি ফাঁস করলেন লুসি? পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন সে কথাও।
লুসি জানান, তাঁর বা তাঁর ভাইবোনদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর বাবার খুন নির্ভর করত না। খুনে তাঁদের হাতও ছিল না। বাবার কথায় তাঁরা কেবল মৃতদেহ সৎকারে হাত লাগাতেন।
লুসি চান, তাঁর বাবার হাতে খুন হওয়া সমস্ত মহিলার দেহ মাটি খুঁড়ে বার করা হোক। তার পর যথাযথ নিয়ম মেনে তাঁদের সৎকার করা হোক। সেই আশাতেই পুলিশের কাছে মুখ খুলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।