সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ মেলা। এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মহাকুম্ভ আয়োজিত হচ্ছে প্রয়াগরাজে। প্রয়াগরাজ আগে পরিচিত ছিল ‘ইলাহাবাদ’ নামে। তবে বর্তমানে শহরের নামটি বদলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আমলে তীর্থক্ষেত্রটির নতুন নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ।
সেই উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের সেই শহরকে। এ বছরের মহাকুম্ভে সব মিলিয়ে ৪৫ কোটিরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ১২ বছর অন্তর প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা হয়।
এ বছর ১৩ জানুয়ারি (পৌষ পূর্ণিমা), ১৪ জানুয়ারি (মকর সংক্রান্তি), ২৯ জানুয়ারি (মৌনী অমাবস্যা), ৩ ফেব্রুয়ারি (বসন্ত পঞ্চমী), ১২ ফেব্রুয়ারি (মাঘী পূর্ণিমা) এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি (শিবরাত্রি) শাহিস্নানের তিথি রয়েছে।
গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে ভক্তেরা জড়ো হয়েছেন পুণ্যস্নান করতে। পুণ্যস্নানের জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজে জড়ো হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। শনিবার থেকেই সাধু-সন্ন্যাসিনী ভিড় করতে শুরু করেছেন মহাকুম্ভ মেলায়। তবে তাঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে নজর কেড়েছেন, তিনি হর্ষা রিচারিয়া। প্রাক্তন নেটপ্রভাবী, অধুনা সাধ্বী।
হর্ষাকে মহাকুম্ভের আসরে দেখে হইচই পড়ে গিয়েছে। তাঁর অনুরাগীদের দাবি, সত্যিই জাগতিক মোহমায়া ছেড়ে শান্তির খোঁজে আধ্যাত্মিকতার পথে পা বাড়িয়েছেন তিনি। যদিও নেটাগরিকদের একাংশের মতে, পুরোটাই ‘লোকদেখানো’। নিজের অনুরাগীদের সংখ্যা আরও বাড়াতেই তিনি ‘সাধ্বী সেজে’ মহাকুম্ভের মেলায় ঘুরছেন।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, তিনি সত্যিই সন্ন্যাসিনীর জীবন গ্রহণ করুন বা না করুন, তাঁর সৌন্দর্যে মজেছেন অনেকেই। তাঁকে নিয়ে কৌতূহলও তৈরি হয়েছে নেটাগরিকদের মধ্যে।
কিন্তু কে এই হর্ষা? হর্ষার বাড়ি উত্তরখণ্ডে। অতীতে সঞ্চালিকা হিসাবে কাজ করতেন এই নেটপ্রভাবী। পরিচয় দিতেন ‘অ্যাঙ্কর হর্ষা’ নামে। সমাজমাধ্যমে নিয়মিত সঞ্চালনার ছবি-ভিডিয়োও পোস্ট করতেন।
হর্ষার দেশ-বিদেশে ভ্রমণের বহু ছবি তাঁর ইনস্টাগ্রামের পাতায় রয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ব্যাঙ্ককের হুয়া হিন সিটিতে একটি ‘ডেস্টিনেশন’ বিয়ের আয়োজন করেছিলেন হর্ষা। এর পরে মায়নমারের মান্দালয় শহরেও একটি ‘ডেস্টিনেশন’ বিবাহের আয়োজন করেছিলেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে হর্ষার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। গত কয়েক বছরে দু’হাজারের বেশি পোস্ট তিনি ইনস্টাগ্রামে ভাগ করে নিয়েছেন। তবে বছর দুয়েক আগে সন্ন্যাসিনীর জীবন বেছে নেন হর্ষা। আচার্য মহামণ্ডলেশ্বরের কাছে দীক্ষা নিয়ে সাধ্বী হন।
তার পর থেকে হর্ষা নিজের পরিচয় দেন ‘সমাজকর্মী এবং হিন্দু সনাতনী সিংহী’ হিসাবে। যদিও এখনও সঞ্চালিকা হিসাবে কাজ করেন তিনি। নেটপ্রভাবী হিসাবেও কাজ করেন।
যদিও হর্ষাকে সাধারণত যে সব পোশাকে দেখা যায়, তার থেকে সম্পূর্ণ অন্য রূপে মহাকুম্ভে ধরা দিয়েছেন তিনি। সাধ্বীর পোশাক, কপালে তিলক এবং ফুলের মালা পরে রথে চড়ে মহাকুম্ভে পৌঁছন তিনি।
সেখানে পৌঁছে একটি সাক্ষাৎকারে ৩০ বছর বয়সি নেটপ্রভাবী জানিয়েছেন, তিনি সব কিছু ছেড়ে নতুন পোশাক পরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার যা প্রয়োজন ছিল তা ছেড়ে দিয়ে এই পথ গ্রহণ করেছি। আমি অভ্যন্তরীণ শান্তির জন্য একজন সাধ্বীর জীবন বেছে নিয়েছি।’’
হর্ষা আরও জানিয়েছেন, গত দু’বছর ধরে সাধ্বী হিসাবে জীবনযাপন করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অভিনয়, অ্যাঙ্কারিং থেকে বিশ্ব ভ্রমণ— যখন আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়ে যাবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে এর মধ্যে কোনওটাই সত্যিকারের শান্তি আনে না। যখন ভক্তি আকর্ষণ করতে শুরু করে তখন জাগতিক সংযোগ থেকে দূরে সরে যেতে ইচ্ছে করে। নিজেকে প্রার্থনা, স্তোত্র এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিতে সমর্পণ করতে ইচ্ছা করে।’’
হর্ষার সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই তাঁকে নিয়ে হইচই পড়েছে। নেটাগরিকদের অনেকেই তাঁকে সন্ন্যাসিনীর জীবন বেছে নেওয়ার জন্য বাহবা জানিয়েছেন।
তবে নেটাগরিকদের অন্য একাংশ হর্ষার অতীতের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। তাঁদের দাবি, হর্ষা সবটাই করছেন খ্যাতি পাওয়ার জন্য। তাঁর এই রূপ ‘লোকদেখানো’।