উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নেমে বিপদে পড়েছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে গোটা দেশ।
সুড়ঙ্গে প্রায় ৬০ মিটার ধ্বংসস্তূপের পিছনে আটকে পড়েছিলেন শ্রমিকেরা। টানা ১৭ দিন অন্ধকারেই কেটেছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মঙ্গলবার সফল হয়েছে উদ্ধারকাজ।
সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ে আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের চারধাম প্রকল্পের অংশ এই সুড়ঙ্গ। এর মাধ্যমে চারধাম যাত্রা আরও সহজ করার চেষ্টা চলছিল।
চারধাম প্রকল্পের অংশ হিসাবে সিল্কিয়ারা থেকে বারকোট পর্যন্ত সুড়ঙ্গ তৈরিতে ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি। তার মাথায় ছিলেন স্বয়ং মোদী।
মোট চার কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কথা ছিল সিল্কিয়ারায়। গোটা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১,৩৮৩ কোটি টাকা। চার বছর আগে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদও ছিল চার বছরই। অর্থাৎ, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
উত্তরাখণ্ড দেবভূমি। তীর্থ করতে প্রতি বছর বহু পুণ্যার্থী এই রাজ্যে যান। চারধাম যাত্রা উত্তরাখণ্ডে পুণ্যার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। এই যাত্রার পথ সংক্ষিপ্ত করা চারধাম প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
উত্তরাখণ্ডের পবিত্রতম দুই স্থান গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রী। একটি গঙ্গা নদী এবং অন্যটি যমুনা নদীর উৎসস্থল। এদের মধ্যে দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার।
সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ হলে এই ২৮ কিলোমিটার দূরত্ব মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটারে অতিক্রম করা সম্ভব হবে। সেই কারণেই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু হয়।
কেন সুড়ঙ্গে আচমকা ধস নামল? কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ উঠে এসেছে। মনে করা হচ্ছে, সুড়ঙ্গের কোনও অংশে পাথর আলগা ছিল। কোথাও হয়তো ফাঁপা অংশে জল জমে ছিল। তাই খননের সময় প্রচণ্ড শব্দে ধস নামে এবং সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছিল না কিছুতেই। ছোট সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পাইপ ঢুকিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
পাইপের মাধ্যমেই পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আটকে পড়া শ্রমিকেরা। পাইপ দিয়েই তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে ৬০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছতে চেয়েছিলেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু ১০-১২ মিটার বাকি থাকতেই বাধা আসে। আমেরিকান অগার যন্ত্র ভেঙে যায়। তা সরিয়ে আবার খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করতে বেশ খানিকটা সময় যায়।
শেষ পর্যন্ত যন্ত্র ছেড়ে শাবল-গাঁইতি নিয়ে খনিশ্রমিকদের সুড়ঙ্গে নামানো হয়। হাত দিয়ে খুঁড়েই মেলে সাফল্য। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে ‘র্যাট-হোল মাইনিং’ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল।
টান টান ১৭ দিনের পর এখন প্রশ্ন একটাই, এই সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের ভবিষ্যৎ কী? চারধাম প্রকল্পেরই বা কী হবে? আবার কবে কাজ শুরু হবে? এই সুড়ঙ্গেই কি আবার নামবেন শ্রমিকেরা?
চারধাম প্রকল্পের জন্য সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ খোঁড়া জরুরি। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। বিশেষজ্ঞেরা সুড়ঙ্গটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করবেন। তার পর এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই সুড়ঙ্গেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আবার কাজ শুরু হবে, না কি বিকল্প কোনও রাস্তা খুঁজবেন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনের কাছেও তা আপাতত পরিষ্কার নয়। ফলে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের ভবিষ্যৎ বিশ বাঁও জলে।